শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে করণীয়
প্রিয় পাঠক শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে বর্তমানে অভিভাবকরা অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকে। তাই অভিভাবকদের সুবিধার্থে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে করণীয় কিছু কাজ সম্পর্কে আজকে আলোচনা করব। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোষ্ট সূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে করণীয় কারণগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
ভূমিকা
একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে মা-বাবা সহ পরিবারের সকলে মিলে শিশুটির শারীরিক সুস্থতার উপর অনেক খেয়াল রাখে। শিশুটির পোশাক আশাক থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া এবং বাহ্যিক অ্যাক্টিভিটির উপর সকলের নজর থাকে। শিশুটি যখন ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে তখন তার শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশের ওপর নজর দেওয়া উচিত।
একটি শিশুর মানসিক বিকাশের ওপর নির্ভর করছে তার পুরো ভবিষ্যৎ। একটি শিশুর শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যের তার মানসিক বিকাশের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে এ বিষয়ে মা-বাবাকে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
শিশুকে গুরুত্ব দেওয়া
বড়দের চিন্তাধারার সাথে শিশুদের চিন্তাধারা সম্পূর্ণ আলাদা। বড়দের কাছে যে বিষয়গুলোর কোন গুরুত্ব নেই অথচ শিশুদের কাছে সেই বিষয়গুলোই হয়তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা বড়দের দায়িত্ব। কেন না ভয় ভীতি নিয়ে কোন শিশু সুস্থ ভাবে মানসিক বিকাশ ঘটতে পারে না।
শিশুদের কথা শুনতে হবে তাদের কথা বুঝতে হবে এবং শিশুদের কথা বুঝে সে বিষয়ে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। শিশুদের সাথে ধীরগতিতে কথা বলতে হবে এবং বিভিন্ন খেলার ছলে তাদের ভয় ভীতি দূর করতে হবে। শিশুকে বোঝাতে হবে যে তোমার কথাটা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ শীতকালে বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন নিবেন যেভাবে
তুমি যে কথাটা বলেছ হয়তো ঠিক বলেছ। শিশু যেন এটি বুঝতে পারে যে আপনি তার কথাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। তাই তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করুন এতে আপনার সন্তান উৎসাহিত হবে।
অন্যের সঙ্গে তুলনা না করা
পৃথিবীতে কোন মানুষই এক না। সকল মানুষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রেও তাই। শিশুদের কখনো এক মাপকাঠিতে মাপা উচিত নয়। কেউ একটু ভালো করবে কেউ একটু খারাপ করবে এটাই স্বাভাবিক। কখনো আপনার সন্তানকে অন্য কারো সাথে তুলনা করবেন না। এতে তার মানসিক বিকাশে অবক্ষয় হয়।
ছোট থেকেই তার মনে হীনমন্যতা জন্ম নেবে। তাই এখনই সাবধান হন আপনার সন্তানকে কারো সাথে তুলনা করবেন না। আপনার সন্তানকে ভালো কাজের জন্য উৎসাহ দিন, তেমনি কোন দুষ্টুমিতে বাধা দিবেন না। মনে রাখবেন শিশুর দুষ্টুমি ও চঞ্চলতা সুস্থ বিকাশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আপনার শিশুকে অন্য সঙ্গে তুলনা না করে আপনি তাকে বোঝাতে পারেন তুমি যেটা করছ সেটাই ভালো। তুমি আমার কাছে সেরা। তাহলে দেখবেন আপনার সন্তান কাজের প্রতি উৎসাহ পাবে।
শিশুকে ভুল করতে দেওয়া
শিশুরা ভুল করবে এটি স্বাভাবিক। শিশু ভুল করছে বলেই যে সবসময় তার ভুল শোধরাতে যাবেন এই কাজটি করবেন না। কেননা ভুল করতে করতেই সে একসময় শিখবে তার কি করা উচিত। ঠিক ভুলের পার্থক্য বুঝতে শিখবে। শিশুরা যদি ভুল না করে তাহলে ভবিষ্যতে তার জীবন, টাকা, সময় ও কঠোর পরিশ্রমের গুরুত্ব বুঝতে পারবে না।
শিশুকে ছোট থেকে দিতে হবে তার নিজের কাজ ও দায়িত্বের ভার নিজের কাঁধেই নিতে হবে। অন্য কারো আশায় নিজের কাজ ফেলে রাখা যাবে না। ছোট শিশু হিসেবে প্রথম দিকে তার একটু সমস্যা হতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে সে এসব কিছুর সাথে ভাত খাইয়ে নিতে সক্ষম হবে। ভুল করতে করতেই একসময় সে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে শিখবে। যা তার আগামী দিন এবং ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
শিশুর ইচ্ছা ও স্বাধীনতার মূল্যায়ন করা
একটি শিশু যেটা ভালো লাগে তাকে সেটা করতে দিন। সব বাচ্চাই এক না ,কারো পছন্দ, কারো ভালো লাগা সবসময় আলাদা। আপনার শিশুর যে বিষয়ে প্রতি বেশি আগ্রহ তাকে সেটা করতে দিন। বরং আপনি এবং পরিবারের সকলে মিলে পারলে তাকে আরো সাপোর্ট করুন।
এতে তার ইচ্ছা শক্তি বাড়বে। আপনার যখন যেটা করতে ইচ্ছা করবে যেমন ধরুন আপনি তাকে পড়তে বসাবেন কিন্তু এখন বাচ্চাটি পড়তে বসবে না। এক্ষেত্রে আপনি তার ইচ্ছাটাকে প্রাধান্য দিন। কেননা জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দিলে তার ফল ভালো হয় না। একটা শিশুরও নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে। তার কথা শুনুন তাকে সময় দিন তার স্বাধীনতাকে মূল্যায়ন করতে শিখুন।
তাহলে দেখবেন আপনার শিশুর মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা গুলো রয়েছে আপনার সাপোর্টে সেগুলো সে ধীরে ধীরে প্রকাশ করছে। প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব কিছু ইচ্ছা ও স্বাধীনতা রয়েছে। শিশুদেরও ঠিক তেমন। স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করলে এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ভালো হবে।
শিশুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা
হঠাৎ একদিন আপনি কোন কিছু না ভেবেই আপনার সন্তানকে বলে বসলেন বিকেলে তোমাকে বেড়াতে নিয়ে যাব বা রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে যাব। কিন্তু কোন কারনে আপনি তাকে নিয়ে বাহিরে বেড়াতে যেতে পারলেন না। কিন্তু আপনার সন্তান তো আশা করে বসে আছে আপনার সাথে সে বিকেলে বেড়াতে যাবে বা রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে।
হঠাৎ আপনার এই না শব্দটি শুনে তার মনে কি প্রভাব পড়তে পারে ,আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আপনি হয়তো ভাবছেন ছোট বাচ্চা কিছুক্ষণ পর ভুলে যাবে। কিন্তু এই ছোট্ট একটি কথা তার মনে কি প্রভাব ফেলবে সেটা সম্পর্কে হয়তো আমাদের আইডিয়া নাই। এ ধরনের ছোটখাটো কিছু কথার জন্য বাচ্চারা অভিভাবকের উপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলে।
কেননা কোন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা না করলে এটা ভাবা স্বাভাবিক। তাই যখন আপনার সন্তানকে কোন প্রতিশ্রুতি দেবেন চেষ্টা করবেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তা রক্ষা করা। তাহলে আপনার সন্তানের আপনার প্রতি ভরসা বাড়বে। এবং সন্তানের কাছে নিজের সম্মানটাও বজায় থাকবে।
নিজের ইচ্ছা শিশুর উপর চাপিয়ে না দেওয়া
অনেক অভিভাবক রয়েছেন যারা নিজের ইচ্ছা সন্তানের উপর চাপিয়ে দেয়। যেমন আমার সন্তান ডাক্তার হবে বা আমার সন্তান ইঞ্জিনিয়ার হবে। আসল কথা হল আপনার সন্তান কি হতে চায় তা জানার চেষ্টা করুন। আপনার মন এবং আপনার সন্তানের মন তো আর এক নয়।
একটি শিশুর মানসিক বিকাশ ছোটবেলা থেকেই তৈরি হয়ে যায়। একটি শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে তার পরিবার এবং সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার আবেগ চাওয়া পাওয়া কখনো বাচ্চার উপর চাপাবেন না কি বাচ্চা যেমন তাকে সেভাবেই বিকশিত হতে দিন।
একজন অভিভাবক সব সময় চায় তার বাচ্চা সবার থেকে সেরা হোক। তাই বলে শিশুর উপর কখনো এমন চাপ সৃষ্টি করবেন না যার কারণে আপনাকে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।
শেষ কথা
একটি শিশুর শারীরিক স্বাস্থের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি প্রত্যেক অভিভাবকের যত্নবান হওয়া জরুরী। শুধুমাত্র শারীরিক বিকাশের দিকে খেয়াল না করে শিশুর মানসিক বিকাশের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
কেননা শারীরিক বিকাশটা আপনি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছেন আপনার বাচ্চা কেমন খাচ্ছে, কেমন ঘুমাচ্ছে, তার শরীরের কোন রোগ ব্যাধি আছে কিনা কিন্তু মানসিক বিকাশটা আপনি সামনাসামনি দেখতে পাচ্ছেন না। তাই এ বিষয়ে একটু বিশেষ যত্নবান হওয়া দরকার।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url