গোবর থেকে বাড়িতে জৈব সার তৈরি ও ব্যবহারের পদ্ধতি

প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো গোবর থেকে বাড়িতে জৈব সার তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি জানতে অনেক খোঁজাখুজি করেছেন? কিন্তু আপনি সঠিক কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না।আমরা আজকে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে বাড়িতে কি ভাবে জৈব সার তৈরি ও ব্যবহার করা হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।


যদি আপনি বাড়িতে জৈব সার তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।
বাড়িতে জৈব সার তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি
পোস্টসূচীপত্রঃএখানে আমরা আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে সার তৈরি, সার সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক কীটনাশক তৈরি, ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

ভূমিকা

আমরা সাধারণত বাড়িতে যে সকল জৈব সার তৈরি করি তার মধ্যে প্রধান হলো গোবর সার তৈরি,কম্পোস্ট সার তৈরি, তরল স্যার তৈরি পাশাপাশি গাছের পোকা মাকড় দূর করার জন্য জৈব কীটনাশক তৈরি । জৈব সার সব ধরনের গাছের জন্যই খুব উপকারী। পাশাপাশি জৈব সার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।জৈব সার খুব সহজে অনেকদিন সংরক্ষণ করেও রাখা যায়।

গোবর সার তৈরি ও সংরক্ষণ পদ্ধতি এবং ব্যবহারের পদ্ধতি

গোবর সার বলতে গরুর মল মূত্রকে একসাথে পঁচিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকেই গোবর সার বলে। আমাদের সংরক্ষণের অভাবে এই গোবর সার নষ্ট হয়। গ্রাম অঞ্চলে প্রত্যেক বাড়িতে কমবেশি গরু দেখতে পাওয়া যায়। সেই গরুর গোবর সরাসরি জ্বালানি হিসেবে না ব্যবহার করে বায়ো গ্যাস পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারি পরবর্তীতে সেই গোবর সার হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।

গরুর গোবর যেখানে সেখানে জমা করে রাখলে সারের গুণগতমান নষ্ট হয়। গরুর গোবর সারের গুণগতমান যাতে নষ্ট না হয় কিভাবে সংরক্ষণ করতে পারি, সেটা নিয়ে এখন আলোচনা করব।২ মিটার থেকে ৩ মিটার দৈর্ঘ্য অর্থাৎ গর্ত করব চওড়া অর্থাৎ প্রস্থ হবে ১.৫ থেকে ২ মিটার। গর্তের তলদেশে দেড় ফুটের মতো ঘর বালি ইটের খোয়া বিছিয়ে নিব।


এতে নিচের পানি খুব সহজেই শোষণ করে নিবে। গর্তের চারপাশে শক্ত করে প্লাস্টিক অথবা মাটি দিয়ে তিন থেকে চার ফুট উঁচু দেয়াল তৈরি করে দিতে হবে। যেন বর্ষা পানিতে ধুয়ে গোবর সার ধুয়ে না যায়। গোবর সার রাখার গর্তটি তৈরি হয়ে গেলে। প্রতিদিন করতে ঐ গর্তে গরুর গোবর ফেলুন ও গর্তের মুখটা ঢেকে রাখুন।

কয়েক মাস পর পর গর্তের গোবর গুলো ওলটপালট করে দিন। গোবর যদি শুকনা শুকনা ভাব দেখেন তাহলে গরুর প্রসাব ঢেলে দিন এতে জৈব সারের মান ভালো থাকবে। এভাবে সংরক্ষণ করলে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে গোবর থেকে উন্নতমানের সার তৈরি হবে যা জমিতে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে।

কম্পোস্ট সার তৈরি ও ব্যবহারের পদ্ধতি

গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান বেশি থাকে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে তৈরি করা যায় এমন সারের নামই হল কম্পোস্ট সার। কম্পোস্ট সারের গুণগত মান ও কিভাবে সংরক্ষণ করতে পারি সেটা নিয়ে এখন আলোচনা করব।কম্পোস্ট সার তৈরির সহজ উপায় হল যেখানে বন্যার পানি অথবা বৃষ্টির পানি আটকানোর মতো কোন সম্ভাবনা নেই ।

এমন জায়গায় হালকা একটু গর্ত করে নিচে প্লাস্টিকের পলিথিন জাতীয় কিছু বিছিয়ে নিব। যাতে তৈরি কৃত কম্পোস্ট সারের গুণাগুণ মাটি যেন শোষণ না করে। সেই গর্তে পরিমাণ মতো কচুরিপানা, আবর্জনা, হাঁস- মুরগির বিষ্ঠা, কাঠের গুড়া, ক্ষেতের ফসলের উৎকৃষ্ট অংশ ফেলে তার উপরে ১০০-২০০ গ্রাম ইউরিয়া ছিটিয়ে দিন। 

শুকিয়ে যেন না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুকনা অনুভব করলে গরুর প্রশাব কম্পোস্ট সারের উপরে ঢেলে দিন। ১৮-২০ দিনের মধ্যে ঐ মিশ্রিত জৈবসার ব্যবহারে উপযোগী হয়।

সবুজ সার তৈরি ও ব্যবহারের পদ্ধতি

মাটিতে জৈব পদার্থ ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য সবুজ সার ব্যবহার করা হয়। যেসব গাছে কান্ড নরম দ্রুতপচন শীল ডালপালা ও পাতা থাকবে অনূর্বর মাটিতে জন্মানোর ক্ষমতা থাকবে তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে। সে সমস্ত গাছকে ব্যবহার করে সবুজ সার প্রস্তুত করা হয়। যেমন- ধইঞ্চা, সোন, বরবটি, খেসারি, মাসকলাই, ছোলা, ধান, ভুট্টা ইত্যাদি। 

এই গাছগুলো অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণতা লাভ করে। এগুলো হতে ধইঞ্চা বরবটি খেসারি মাসকলিই ছোলা ধান ভুট্টা ইত্যাদি সংগ্রহের পর কাঁচি দিয়ে গাছ গুলো কেটে এক-দুইবার চাষ দিয়ে মই দিলেই গাছ গুলো মাটি চাপাপরে মাখানেকের মধ্যে মাটিতে পচে মাটির সঙ্গে মিশে য়ায়।

তরল সার তৈরি

ফসলের ফলন বৃদ্ধি রোগ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তরল সারের ভূমিকা অপরিহার্য। আমরা পরিবেশ থেকে যে সকল দ্রব্য পাই তা দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের সার তৈরি করা যায়। বিভিন্ন দ্রব্যাদি পচিয়ে উৎকৃষ্ট মানের যে অণুজীব দ্বারা গঠিত সার তৈরি করা হয় সেটাই তরল সার। এই পরিবেশ-বান্ধব সার গাছ ও জীবজাতিকে সুরক্ষিত রাখে।
  • তরল সার তৈরির জন্য বিভিন্ন আগাছার শিকড়, দুর্গন্ধযুক্ত পচা সবজির খোসা বিভিন্ন আগাছার পাতা সহ একই পরিমাণে ছাগল ,গরু বা অন্যান্য প্রাণী থেকে পাওয়া মল সবকিছু ভালোভাবে মিশাতে হবে।
  • এরপর মিশ্রণটি পুটলিতে ভরে বস্তার মধ্যে রেখে বস্তার মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। তারপর সেই বস্তাটি একটি বড় পাত্রে রাখতে হবে এবং সেই পুটলির থেকে প্রায় 21 গুন পরিমাণ বেশি পানি দিয়ে ভারী কিছু সাহায্যে পুটলিটিকে পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে।

  • এরপর পাত্রের মুখটি শক্ত করে লাগিয়ে দিতে হবে। কিছুদিন পর সেই পাত্র থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে। তাই একটা বড় লাঠির সাহায্যে মিশ্রণটিকে দিনে দুইবার করে নাড়িয়ে দিতে হবে। এতে করে সাড়ে অক্সিজেন সরবরাহ হবে।
  • সারের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে অল্প পরিমাণে ঝোলা গুড় বা চিটাগুড় মেশানো যায়।
  • গুড় মেশানোর পর লক্ষ রাখতে হবে মিশ্রণটি থেকে কোন দুর্গন্ধ বের হচ্ছে কিনা। যদি মিশ্রণটি থেকে কোন দুর্গন্ধ না বের হয় এবং মিশ্রণটি কালচে সবুজ রং ধারণ করে তাহলে বুঝা যাবে মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেছে। এক মাসের মধ্যে মোটামুটি একটি লক্ষ্য করা যাবে।

জৈব কীটনাশক তৈরি ও ব্যবহারের পদ্ধতি

বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক কীটনাশক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই বাড়িতে জৈব কীটনাশক তৈরি করে ব্যবহার করা উত্তম। জৈব কীটনাশক তৈরি করতে যেসব উপাদান লাগে তা নিচে দেওয়া হল।
  • ৩ লিটার পানি
  • পাতা সহ নিম গাছের ডাল ৬-৭ টি
  • ১০-১২ টি নিম গাছের ছাল
  • ৬ থেকে ৭ টি কর্পূর
  • বড় আকারের ৭-৮ টুকরা কাঁচা হলুদ
এখন একটা পাত্র গরম করে নিয়ে তাতে তিন লিটার পানি দিতে হবে। সাথে সবগুলো উপকরণ যেমন নিম পাতা ছোট টুকরো করে কেটে নেওয়া নিম গাছের ডাল ও ছাল এবং হলুদ গুলো সামান্য থেঁতলে নিতে হবে সবশেষে কর্পূর দিয়ে ভালো করে গরম করে নিতে হবে। মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশে যাওয়ার জন্য একদিন রেখে দিতে হবে। 

পরের দিন মিশ্রণটি ভালো ভাবে ছেকে একটি ঢাকনা যুক্ত পাত্রে রেখে দিতে হবে। মিশ্রণটি এখন ব্যবহারের উপযুক্ত হয়ে গেছে।কীটনাশকটি ব্যবহারের পূর্বে ১ লিটার পানির সাথে ২০ থেকে ২৫ মিলিলিটার কীটনাশক মিশিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ফুল অথবা ফল গাছের যে স্থানে পোকার আক্রমণ সেই স্থানসহ পুরো গাছে ভালোভাবে কীটনাশকটি স্প্রে করে দিতে হবে।

এই জৈব কীটনাশকটি গাছপালা এবং পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী। এই জৈব কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না।

লেখকের মন্তব্য

জৈব সার যা সব ধরনের গাছের জন্যই খুব উপযোগী। পাশাপাশি জৈব সার আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। জৈব সার তৈরি করতে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সাধারণত আমাদের কোন কাজে লাগে না। বিনা খরচে আমাদের আশেপাশে থাকা অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দিয়ে খুব সহজে জৈব সার তৈরি করা যায়।

তাই আমার মতে টাকা খরচ করে বাজার থেকে রাসায়নিক সার কেনার থেকে বাড়িতে জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করাটাই উত্তম।

এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত জনদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url