ডেঙ্গু জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব ডেঙ্গু জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার। ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক উপসর্গগুলো সাধারণত ভাইরাস জ্বরের মতোই। তাই কোন ধরনের জ্বর কে উপেক্ষা করা ঠিক নয়।
পোস্ট সূচিপত্রঃএই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার ছাড়াও আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। যাতে আপনি সঠিক সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিতে পারেন। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ
ডেঙ্গু জ্বর চার ধরনের ভাইরাসজনিত ট্রপিক্যাল বা উস্নানডলীয় রোগ। এটি সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা দাড়াই ছড়ায়।বিভিন্ন চিকিৎসকদের মতে এডিস মশা কামড়ালেই যে ডেঙ্গু জ্বর হবে ব্যাপারটা তেমন না। আমাদের পরিবেশে উপস্থিত যেসব ভাইরাস আছে সেই ভাইরাস যদি কোন এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হয় ঠিক ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাধারণত স্ত্রী এডিস মশাগুলো ভাইরাস বহন করে থাকে। যে ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত সেই ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে একবার যে ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, পরবর্তীতে যদি সেই ব্যক্তি আবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় তাহলে তার প্রাণঘাতী হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে ছোট বাচ্চা ও প্রথমবার আক্রান্তদের থেকে বয়স্ক, শিশু ও দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের মাঝে ডেঙ্গু জ্বরের তীব্রতা বেশি হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ।
- একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণত উচ্চ জ্বর হয় অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি বা তার থেকে বেশি হয়ে থাকে
- মাথা ব্যথা
- তীব্র মাথা ব্যথার সাথে চোখের পিছনের দিকে তীব্র ব্যথা অনুভব করা
- জয়েন্টে বা মাংসপেশীর হারে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করা
- হামের মত র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়
- নাক, দাঁতের মাড়ি থেকে অল্প রক্তপাত হতে পারে
- রক্তের শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যাবে
- ক্ষুধামন্দা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
ডেঙ্গু হলে কি কি জটিলতা দেখা দেয়
সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে জ্বরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। তবে কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
- তীব্র পেট ব্যথা ও ক্রমাগত বমি হলে
- ত্বকে লাল দাগ বা নাক ও মারি দিয়ে রক্ত পড়লে
- বমির সাথে রক্ত আসলে
- কালো বা আলকাতরার মত পায়খানা হলে
- ত্বক ফ্যাকাশে ঠান্ডা হলে
- স্যাঁতস্যাঁতে কিংবা শ্বাসকষ্ট হলে।
এ ধরনের উপসর্গ গুলো দেখলে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
সাধারণত এডিস মশা কামড়ানোর জন্য ডেঙ্গু জ্বর হয়। কিন্তু এডিস মশা কামড়ানোর সাথে সাথে ডেঙ্গুজ্বর হয় না। এডিস মশা কামড়ানোর প্রায় পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এই জ্বর থাকে পাঁচ থেকে ছয় দিন পর্যন্ত। তবে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত দিন।
ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা
ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে তৈরি হয় ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা। তাই এই সময় প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পানি,ডাবের পানি, স্যালাইন, ভিটামিন সি জাতীয় ফলের রস, স্যুপ এবং দুধ জাতীয় তরল খাবার খেতে হবে। এছাড়াও ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে।
আয়রন ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে লাল মাংস, মুরগির মাংস, মাছ, দুধ ও দুধ জাতীয় খাদ্য, ডিম এ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের সময় অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে যে ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে তা হল
- বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন ক্যান বা কৌটা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- চিনি যুক্ত কোমল পানীয় বা বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট জাতীয় জুস খাওয়া যাবেনা।
- অতিরিক্ত পরিমাণে মসলা যুক্ত খাবার তেল, লবণ ও চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ধরনের খাবার খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার
ডেঙ্গু রোগের কোন নির্ধারিত টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। জমে থাকা খোলা পাত্রের পানিতে মশা ডিম পাড়ে। পোষা প্রাণীর খাবার পাত্র, ফুল গাছের টব, এসি, ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানি, পানিরপাত্র, নারকেলের মালা ইত্যাদিতে পানি জমে থাকলে এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
দিনের আলোতেও এডিস মশা কামড়ায়। তাই দিনের বেলা ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেন কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই রোগের লক্ষণ গুলোর উপর চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখা, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করানো, স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর বারবার মুছে দেওয়া, প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়ানো, তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে Aspirin বা এ ধরনের ওষুধ না খেতে দেওয়া। সর্বোপরি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে এবং ওষুধ সেবন করলে এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হবে।
শেষ কথা
মশার কামড় এড়ানো ডেঙ্গু প্রতিরোধের মোক্ষম উপায়। এছাড়াও জোর দেওয়া উচিত লার্ভা নিধনে। বাসা বাড়ি বা কলকারখানার আশেপাশে যেন কোনভাবে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। সকলে মিলে সচেতন হলে এই ধরনের ডেঙ্গু রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। চলুন আজ থেকে আমরা সবাই সচেতন হই।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url