আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য কি

প্রিয় পাঠক আবহাওয়া ও জলবায়ু মধ্যে পার্থক্য কি এটা নিয়ে হয়তো আপনি অনেক খোঁজাখুঁজি করছেন? কিন্তু আপনি সঠিক কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না আমরা আজকে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাকে আবহাওয়া ও জলবায়ু মধ্যে পার্থক্য গুলো কি কি তুলে ধরার চেষ্টা করব। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
পোস্টসূচীপত্রঃএখানে আমরা আরো আলোচনা করেছি আবহাওয়া জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য, মিল ও অমিল, পরিবর্তন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মানবসৃষ্ট কারণ। আরো কিছু বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

ভূমিকা

আবহাওয়া ও জলবায়ু একই উপাদান দিয়ে গঠিত হলেও এদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। আবহাওয়া গতিশীল যা খুব দ্রুত পরিবর্তন হয় কিন্তু জলবায়ু দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তন হয়।বর্তমানে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ হিসেবে মানবসৃষ্ট কারণ কে দায়ী করে।

আবহাওয়া ও জলবায়ু কি

  •  আবহাওয়াঃ কোন স্থানের অল্প সময়ের যেমন ১ থেকে ৭ দিনের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুর আর্দ্রতা, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত এগুলোর গড় অবস্থাকে আবহাওয়া বলে ।
  •  জলবায়ুঃ কোন স্থানের ৩০-৪০ বছরের অধিক সময়ের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলা হয়।

আবহাওয়া ও জলবায়ু মধ্যে পার্থক্য

আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হল-
আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনশীলতাঃ
  • আবহাওয়া প্রতিদিন এমনকি কিছুক্ষণ পরপর পরিবর্তন হতে পারে।

  • একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দীর্ঘকালীন গড় অবস্থা নির্দেশ করে বায়ুমন্ডলের জলবায়ু।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানঃ
  • আবহাওয়ার প্রধান উপাদান হলো বায়ুর আর্দ্রতা, বায়ুর উষ্ণতা, বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত, বায়ুর চাপ প্রভৃতি।
  • আর জলবায়ুর প্রধান উপাদান দুটি হলো বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিস্তারঃ
  • আবহাওয়া খুব অল্প পরিসরে বিস্তার লাভ করে। অনেক সময় পাশাপাশি অবস্থিত অঞ্চলের মধ্যেও পার্থক্য দেখা যায়।
  • জলবায়ু বিশাল পরিসরে বিস্তৃত হয়। অনেক সময় একটি দেশের প্রায় সমস্ত স্থানের জলবায়ু একই ধরনের হয়ে থাকে।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর অধ্যায়নঃ
  • আবহাওয়া সম্পর্কে অধ্যায়নকে আবহবিদ্যা (Meteorology) বলে।
  • জলবায়ু সম্পর্কে অধ্যায়নকে জলবায়ু বিদ্যা (Climatology) বলে।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে মিল ও অমিল কোথায়

আবহাওয়া ও জলবায়ু এর মধ্যে মিল ও অমিল নিচে আলোচনা করা হলো
মিলঃ আবহাওয়া জলবায়ু একই উপাদান দ্বারা গঠিত। উপাদানগুলো যেমনঃ বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুর আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর চাপ, বৃষ্টিপাত ও মেঘাচ্ছন্নতা।
অমিলঃ
  •  আবহাওয়া হল কোন স্থানের সাময়িক অবস্থা। অপরদিকে জলবায়ু হল কোন স্থানের আবহাওয়ার দীর্ঘ দিনের গড় অবস্থা।
  •  আবহাওয়া খুব অল্প সময়ে পরিবর্তন হলেও জলবায়ু পরিবর্তন হতে প্রায় ৩০-৪০ বছর কেটে যায়।

আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ

আবহাওয়া গতিশীল যা সবসময় পরিবর্তন হয় কিন্তু জলবায়ু একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তন হয়। জলবায়ু একটি অঞ্চলের পরিসংখ্যানগত আবহাওয়ার গড় তথ্য । আবহাওয়া একটি নির্দিষ্ট স্থানে বায়ুমন্ডলের অবস্থা। কোন নির্দিষ্ট স্থানের অল্প সময়ের বায়ুমণ্ডল পরিবর্তনের অবস্থা হল আবহাওয়া পরিবর্তন।

কোন নির্দিষ্ট স্থানের দীর্ঘকালীন বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন হল জলবায়ু পরিবর্তন।বায়ুর আর্দ্রতা, বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুর তাপ, বায়ুর চাপ, বৃষ্টিপাত, মেঘাচ্ছন্নতা প্রভৃতির উপর নির্ভর করে আবহাওয়া জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে।

জলবায়ু পরিবর্তনের মানবসৃষ্ট কারণ

জলবায়ু পরিবর্তনে মানবসৃষ্ট কারণ গুলো হল- বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে, যার ফলে বায়ুতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণে রয়েছে মানব সৃষ্ট এই গ্রীন হাউজ গ্যাস।

জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপী পরিবেশ ও মানুষের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এতে পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দুই মেরুর বরফ গলার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের। যার ফলে সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে দেখা দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস,বন্যা ও পাহাড় ধ্বসের মতো দুর্যোগ।দুর্যোগপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম ঝুঁকিতে রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা সপ্তম। এতে বোঝাই যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য হুমকি স্বরূপ । ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর একটি পৃথিবী উপহার দিতে আমাদের যে কাজগুলি করা উচিত তা হল-
  •  বৃক্ষ নিধন রোধ ও গাছ লাগানোঃ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল অক্সিজেন যা আমরা গাছপালা থেকে পেয়ে থাকি। বর্তমানে যে হারে গাছ কাটা হচ্ছে এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে আমাদের বৃক্ষরোপণ করা খুব জরুরী। আমাদের প্রত্যেকের উচিত বাড়ির চারদিকে রেললাইনের দুই ধারে , রাস্তাঘাটের দুই ধারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগাতে হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা যাবে।
  • ইঞ্জিন চালিত গাড়ির ব্যবহার কমানোঃ আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করব ইঞ্জিন চালিত গাড়ি থেকে বিরত থাকার। কেননা ইঞ্জিন চালিত গাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন-মনো অক্সাইড গ্যাস বের হয়, যা পরিবেশ ও মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইঞ্জিন চালিত গাড়ির বিকল্প হিসেবে আমরা বৈদ্যুতিক চালিত অথবা ব্যাটারি চালিত গাড়ি, বাইসাইকেল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারি।
  • রিসাইকেল করাঃ বিভিন্ন রাসায়নিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা জিনিস যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা এবং সম্ভব হলে তা পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তোলা।
  • জনসচেতনতা সৃষ্টিঃ সবার মাঝে মানবসৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, প্রভাব ও করণীয় দিকগুলো নিয়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত ভাবে সভা সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। মিডিয়া ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে সবার মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের প্রত্যেককে সমানভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে আমরা একটি সুস্থ সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারব।

লেখকের মন্তব্য

আমার মতে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ হল মানবসৃষ্ট কারণগুলো। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যে হারে বৃক্ষ নিধন বাড়ছে এতে করে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়াটা স্বাভাবিক। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে ।যার ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বায়ুমন্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমাদের সকলের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে বেশি করে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। ইঞ্জিন চালিত গাড়ির ব্যবহার কমাতে হবে, রিসাইকেল ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে হবে, সব থেকে প্রয়োজন হল জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।

সর্বশেষ এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url