প্রতিদিন কতটুকু লেবু খাওয়া উচিত - লেবুর খোসার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো প্রতিদিন কতটুকু লেবু খাওয়া উচিত - লেবুর খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। কিন্তু সঠিক কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে প্রতিদিন কতটুকু লেবু খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোষ্ট সূচিপত্রঃএখানে আরো প্রতিদিন কতটুকু লেবু খাওয়া উচিত - লেবুর খোসার উপকারিতা ছাড়াও লেবু সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
ভূমিকা
আমাদের সকলের অতি পরিচিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার হল লেবু। আমরা সকলেই লেবুর উপকারিতার কথা জানি। লেবুর নানা ধরনের উপকারিতার জন্য প্রতিদিন খাওয়ার প্লেটে এক টুকরো লেবু রাখা প্রয়োজন। শুধুমাত্র খাওয়ার ক্ষেত্রেই লেবুকে ব্যবহার করা হয় না বর্তমানে রূপচর্চা এবং চুলের যত্নে লেবু ভীষণভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
লেবু খাওয়ার নিয়ম
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। সব বয়সের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি প্রয়োজন। সহজলভ্য ফল হিসাবে লেবুর জুড়ি মেলা ভার। সহজলভ্য ফল হওয়ায় সকল শ্রেণী পেশার মানুষ লেবু ক্রয় করতে পারে। যার ফলে ভিটামিন সি এর ঘারতি পূরণ করা খুব সহজ।
লেবুর শরবত লেবু অনেক ভাবে খাওয়া যায়, সাধারণত আমরা লেবু দিয়ে শরবত তৈরি করে খেয়ে থাকি। প্রচন্ড গরমে এক গ্লাস লেবুর শরবত শরীরকে চাঙ্গা করার জন্য যথেষ্ট।
ভাতের সাথে প্রতিবেলা ভাতের সাথে এক টুকরো লেবু না হলেই নয়। মুখের রুচি এবং খাবারের স্বাদ বাড়াতে লেবু অনেক উপকারী। পাশাপাশি ভিটামিন সি ঘারতি পুরনতো রয়েছেই।
লেবু চা লেবুর চা তৈরি করেও খাওয়া যায়। লেবু চা মাথা ব্যথা ক্লান্তি দূর করতে অনেক কার্যকরী।
মাংস ম্যারিনেট বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে মাংস ম্যারিনেট এর ক্ষেত্রে লেবু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লেবু ব্যবহার করার ফলে যেমন মাংসের স্বাদ বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি মাংস নরম করতে সাহায্য করে।
মুখরোচক খাবার বিভিন্ন ধরনের ভাজিপুরি, মুড়ি মাখা ইত্যাদি মুখরোচক খাবারের লেবু ব্যবহার করা হয়। এতে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায়।
প্রতিদিন কতটুকু লেবু খাওয়া উচিত
প্রতিদিন সাধারণত ১২০ মিলি লিটার লেবুর রস খেতে পারে। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তবে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি সেবন করলে এতে আমাদের শরীরের নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই যে কোন ভিটামিন শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খাওয়া ভালো। প্রতিদিন মাঝারি সাইজের একটা লেবুর রস খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরের যে উপকার গুলো লক্ষ্য করবেন তাহলো
- হজম শক্তি বাড়ায় লেবুর রস শরীর থেকে টক্সিন দূর করে। বদহজম, বুক জ্বলার সমস্যা সমাধান করে লেবুর রস।
- পেট পরিষ্কার রাখে শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকারক পদার্থ বের করতে সাহায্য করে লেবু পানি। ফলে ইউরিনেশন ভালো হয়। লিভার ভালো থাকে।
- এনার্জি বাড়ায় এনার্জি বাড়িয়ে মুড ভালো রাখে। লেবু খেলে শরীরে পজিটিভ এনার্জি বাড়ে। উৎকণ্ঠা ও অবসাদ দূরে রেখে মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে লেবু।
- ক্ষত সারায় লেবুর মধ্যে থাকা অ্যাবসরবিক অ্যাসিড ক্ষতস্থান দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। হাড়,তরুনাস্থি ও টিস্যুর স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় লেবুর মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি সর্দি কাশি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। স্নায়ু ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়। ফুসফুস পরিষ্কার করে হাঁপানি সমস্যার উপশম করতে সাহায্য করে।
- ওজন কমায় লেবুতে থাকা প্যাকটিন ফাইবার ক্ষিদে কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে লেবু দিয়ে কুসুম গরম পানি খেলে এতে উপকার পাবেন।
লেবুর খোসার উপকারিতা
লেবুর রসের উপকারিতার পাশাপাশি লেবুর খোসাতেও প্রচুর পরিমাণ উপকারিতা রয়েছে। লেবুর খোসাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। লেবুর রসের থেকে লেবুর খোসাতে প্রায় 5 থেকে 10 গুণ বেশি পুষ্টি বিদ্যমান।
হাড়কে মজবুত করে হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে এবং হারকে মজবুত করতে লেবুর খোসায় থাকা ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম অনেক উপকারী।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে লেবুর খোসায় থাকা লিমোনিন এবং সালভস্ট্রোল কিউ 40 উপাদানগুলো দেহের ভেতরে বাড়তে থাকা ক্যান্সার কোষ গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। যার ফলে ক্যান্সারের মতো বড় ধরনের রোগ কেউ প্রতিহত করা যায়।
ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিহত করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার এন্টিব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা সম্পন্ন হয়। যা আমাদের অন্ত্রের ভিতর থাকা বিভিন্ন পরজীবী জীবাণু ধ্বংস করে ফেলে। লেবুর খোসাতে থাকা এন্টিব্যাকটেরিয়াল দেহের ভিতর ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
সাধারণত আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস খেলে পেটের চর্বি কমতে সাহায্য করে। তাই যারা ওজন কমাতে যাচ্ছেন তাদের জন্য সকাল বেলা লেবু পানি পান করা উচিত। টক জাতীয় প্রায় সব ধরনের ফলে ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে। যেমন লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।
ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ লেবুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার কারণে শরীরের রোগ জীবাণু বাসা বাঁধতে বাধা সৃষ্টি করে। লেবু পানিতে সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস নামক এসিড রয়েছে যা পাকস্থলীর খাবার কে সহজেই হজম করতে সাহায্য করে। শরীরকে হাইড্রেট রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
যেহেতু পানির স্বাদ নেই তাই আমরা অতিরিক্ত তৃষ্ণার্ত না হলে পানি পানের আগ্রহটা হারিয়ে ফেলি। কিন্তু যদি লেবু দিয়ে শরবত তৈরি করা হয় তাহলে তুলনামূলক পানি পানের আগ্রহটা বাড়ে। অতিরিক্ত গরমে শরীরকে হাইড্রেট রাখতে লেবু পানি অত্যন্ত কার্যকরী। লিভারকে পরিষ্কার রাখতে লেবু পানি পান করতে পারেন।
কেননা লেবুতে রয়েছে সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস যা লিভার থেকে ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, সকালে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস লেবু পানি পান করুন। কিছুদিন এই ফর্মুলাটি পান করলে আপনি নিজের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। কিডনির পাথর প্রতিরোধ করতে লেবু পানি পান করতে পারেন। কিডনিতে পাথর সাধারণত পানি কম খাওয়ার ফলে হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং সঠিক নিয়ম
তাই বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হলে আপনি লেবুর শরবত তৈরি করে পান করতে পারেন। কিডনি ও পাকস্থলী পাথর গলাতে লেবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য লেবু পানি অনেক উপকারী। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা গর্ভবতী মায়ের এবং সন্তানের হাড়ের টিস্যুগুলোকে মজবুত করতে সাহায্য করে।
খালি পেটে লেবু খাওয়ার অপকারিতা
সকাল বেলা খালি পেটে কুসুম গরম পানিতে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। পাশাপাশি যদি আপনি এই লেবু পানি দীর্ঘদিন সেবন করেন বা অতিমাত্রায় সেবন করেন তাহলে এটি আপনার শরীরের উপকারের চেয়ে অপকার বেশি করবে। সকাল বেলায় অতিমাত্রায় লেবু পানি শরীরের জন্য যেসব ক্ষতি কারণ হতে পারে তা হল ক্ষতিকর এনজাইম তৈরি করে।
আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় উৎসেচক পেপসিন ভাঙার ক্ষেত্রে দায়ী খালি পেটে লেবু পানি খাওয়া। দাঁতের এনামেল ক্ষয় হওয়ার একটি কারণ হলো ঘন ঘন লেবু পানি পান করা কারণ লেবু অত্যন্ত এসিডিক। তাই সকাল বেলা খালি পেটে লেবু পানি পান করলে তাদের ক্ষতি হতে পারে। অতিমাত্রায় খালি পেটে লেবু পানি পান করলে আপনার হাড়ের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়াও আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে। মাত্র অতিরিক্ত লেবু পানি পান করার ফলে মাইগ্রেনের সমস্যা সহ আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে অতিরিক্ত আয়রন আপনার শরীরের অঙ্গগুলোর ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত এসিডিটি এবং পেট খারাপের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই জেনে রাখা ভালো লেবু খাওয়া ভালো কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ভালো না।
লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত
বেশির ভাগ মানুষ সকাল বেলা খালি পেটে কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে থাকে। এতে ভালো উপকারও পাওয়া যায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে খালি পেটে লেবু পানি খেলে এসিডিটির বা বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়।
তাই যাদের এই এসিডিটির প্রবলেম রয়েছে তারা খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা পরে লেবু পানি খেতে পারে। কারণ লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং লেবু পানিটা আমাদের মেটাবলিক সিস্টেমকে ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
শেষ কথা
লেবুর রস রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে লেবু ম্যাজিকের মত কাজ করে। যেমন জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদি। মুখের রুচি বাড়াতেও লেবু কার্যকরী। খাওয়ার পাশাপাশি লেবু ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে।লেবুর রস এবং খোসা উভয়েই শরীরের জন্য দেশ উপকারী।
আর্টিকেলটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে এবং আপনি উপকৃত হন তাহলে আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url