রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা সম্পর্কে আজ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি এই আর্টিকেলের সমস্ত বিষয়গুলো আপনার ভালো লাগবে এবং উপকারে আসবে । তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃএখানে আরো রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতার পাশাপাশি ইসলামের দৃষ্টিতে ঘুমানো সঠিক নিয়ম কখন ঘুমানো ভালো কখন ঘুমানো খারাপ বা ঘুমানো সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। বিষয়গুলো জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন ।
ভূমিকা
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ রাতে না ঘুমিয়ে দিনের বেলায় ঘুমানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যার ফলে দেখা দিচ্ছে বেশ কিছু মানসিক সমস্যা যেমন উদ্বিগ্নতা, বিষন্নতা ও মানসিক চাপ জনিত সমস্যা। ঘুমের সময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সহ হৃদপিন্ড ও রক্তনালী বিশ্রাম পায়। তাই ঘুম কম হওয়ার ফলে প্রতিনিয়ত কার্ডিওভাসকুলার বাড়তে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।
তাই সঠিক সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। প্রত্যেকটা মানুষেরই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। ঘুম কম হওয়ার ফলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে বিভিন্ন হাইপারটেনশন সহ বড় বড় রোগব্যাধি শরীরে সহজে বাসা বাঁধতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করুন নিজেকে সুস্থ রাখুন।
কমপক্ষে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত
ঘুম মানুষের মস্তিষ্কে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানবদেহের ইমিউনো সিস্টেম এবং বিপাক প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিরাতে কমপক্ষে ৬ ঘন্টা এবং সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
এবং শিশুদের ক্ষেত্রে শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য কমপক্ষে 12 ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমালে মস্তিষ্ক এবং দেহের নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। একজন মধ্যবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিরাতে ৭ ঘন্টা ঘুমানো যথেষ্ট।
আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
গবেষণায় দেখা গিয়েছে একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ ৭ ঘন্টা ঘুমালে তার স্বাস্থ্য ঠিক থাকে এবং বার্ধক্য জনিত সমস্যা যেমন ডিমেনশিয়া হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। আর বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ঘুম ভালো না। তবে শিশুদের মস্তিষ্ক গঠনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় কখন
বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন কাজের চাপ অথবা সময়ের অভাবে দেরি করে ঘুমাতে যায়। আবার অনেকে আছে স্বইচ্ছায় দেরি করে ঘুমায়। কিন্তু এভাবে দেরি করে ঘুমানোর ফলে আমাদের শরীরের নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয় । ঘুম কম হলে পরের দিন কর্ম ক্ষেত্রে গিয়ে কাজে মন না বসার প্রবণতা দেখা দেয়।
এবং বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা যেমন হতাশা ,উদ্বেগ এবং বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মানুষ মাঝরাতে বা মাঝরাতের পরে ঘুমাতে যায় তাদের শারীরিক ঝুঁকের মাত্রা অনেক বেশি থাকে।
ঘুমানোর সঠিক সময় হল রাত ৯ টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত। দেরি করে ঘুমালে কেউ কখনো সকালে উঠতে পারে না। আর সকাল সকাল ঘুম থেকে না উঠলে শরীরের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই চেষ্টা করবেন প্রতিদিন সঠিক সময়ে ঘুমানোর জন্য এর ফলে আপনার শরীর এবং মন দুটোই ভালো থাকবে।
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা
বর্তমানে রাতে দেরি করে ঘুমানোর মূল কারণ হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইস। আমরা প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে ফোনে বিভিন্ন জিনিস দেখার বদভ্যাস তৈরি করে ফেলেছি। ফোন চালাতে চালাতে বা গেম খেলতে খেলতে কখন যে মাঝরাত হয়ে যায় আমরা বুঝতেই পারি না।
এভাবে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করার ফলে আমাদের ঘুমের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার ফলে দেখা দিচ্ছে শরীরে বিভিন্ন জটিল সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাসটা তৈরি করে ফেলুন। চলুন জেনে নেওয়া যাক রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
কর্ম ক্ষমতা ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়ঃ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের যে কার্যকারিতা রয়েছে তাকে অ্যালকোহলের মত আসক্তি করে তোলে। ভালো ঘুম মানুষের কর্ম ক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি করে তেমনি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে এমন কিছু দিক হলো জ্ঞান , কর্মক্ষমতা এবং একাগ্রতা।
কম ক্যালোরি গ্রহণের সহায়তা করেঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা রাতে কম ঘুমায় তাদের ক্ষুধার প্রবণতা বেশি থাকে সাথে তারা বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করে ফেলে। যার ফলে ওজন দ্রুত বেড়ে যায় এবং নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। তাই চেষ্টা করবেন তাড়াতাড়ি ঘুমানোর। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালে কম ক্যালরি গ্রহণের সহায়তা করবে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়ঃ রাতে কম ঘুম হলে রক্তের শর্করা বৃদ্ধি পায় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা হ্রাস করে যার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো এতে আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়ঃ রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুম হলে রক্তচাপ বা হার্টের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। চেষ্টা করবেন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা রাতে দেরি করে ঘুমায় তাদের হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেক গুণ বেশি সহায়তা করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তাই চেষ্টা করবেন সঠিক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে।
হতাশা কমায়ঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে বিভিন্ন সময় মানুষ বিষন্নতাও হতাশায় ভোগে। রাতে যদি আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে আপনার হতাশা অভিশূন্যতা দূর হয়ে যাবে।
কোন কোন সময় ঘুমানো উচিত নয়
প্রত্যেকটা মুসলমানের সকাল শুরু হয় ফজরের নামাজের মধ্য দিয়ে। প্রতিদিন ফজরের আজানের সময় উঠে ফজরের নামাজ আদায় করে যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। আমাদের রাসুলুল্লাহ (সা.) সকলকে তার উম্মাদের জন্য বরকতময় করার দোয়া করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে আল্লাহ! আমার উম্মাদের ভোরবেলাতে বরকত ও প্রাচুর্য দান করুন।-(তিরমিজি, হাদিস :১২১২)
এই হাদিস থেকে এটা পরিষ্কার যে সকাল বেলা ঘুমানো মোটেই উচিত নয়। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ ফজরের পর ঘুমিয়ে থাকেন। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের পর ঘুমানো থেকে বিরত থাকতে বলেছেন এবং এশার পরপর ঘুমিয়ে যেতে আদেশ দিয়েছেন।
ফজরের পর ঘুমালে কি কি ক্ষতি হয়
সকাল বেলা মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রিজিক বন্টন করা হয়। তাই এই সময় ঘুমিয়ে থাকলে আল্লাহ তায়ালার বন্টনকৃত রিজিক থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে হয়। পূর্ববর্তী আলেমরা ফজরের পরে ঘুমালে সেই ঘুমকে মাকরুহ মনে করতেন।
ফজরের পরে ঘুমিয়ে না থেকে কোরআন তেলাওয়াত করা এবং বিভিন্ন জিকির আজগার করা এটাই ইসলামের শিক্ষা। রাতে বেশিক্ষণ জেগে না থেকে এশার নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং ফজরের আগে ঘুম থেকে ওঠা এটাই ইসলামের নিয়ম।
ইসলামে ঘুমানোর সঠিক নিয়ম
আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এশার নামাজের পর অহেতুক গল্পগুজব না করে ঘুমিয়ে যেতে এবং ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে ফজরের সালাত আদায় করতে বলেছেন। অতএব এশার পর থেকে ফজরের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ইসলামে ঘুমানোর সঠিক নিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকে আছেন ফজরের পরে আবার ঘুমিয়ে যায় কিন্তু এটা ঠিক না।
কেননা ফজরের পরে মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের মাঝে রিজিক বন্টন করে। এই সময় যদি ঘুমিয়ে থাকা হয় তাহলে আল্লাহ তায়ালার রিজিক থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ফজরের নামাজ আদায় করে তারপর কোরআন তেলাওয়াত করতে এবং বিভিন্ন দিকে বলা হয়েছে। এবং যার যার কাজ ফজরের পর থেকে শুরু করলে কাজে বরকত পাওয়া যায়।
শেষ কথা
বর্তমানে আধুনিক যুগে মানুষ তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কথা ভুলেই গেছে। বর্তমানে মানুষ রাতকে দিন এবং দিনকে রাতের মতো করে কাটায়। যেমন রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে ফজরের আগে ঘুমায় এবং দিনের বেলা প্রায় দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে।
এইসব বদ অভ্যাসের কারণে বর্তমানে নানা ধরনের মস্তিষ্কের সমস্যা সহ শরীরের বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ বাসা বাঁধছে। নিজেকে সুস্থ রাখতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাসটা তৈরি করে ফেলুন। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমান এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠুন। এর ফলে আপনার শরীর মন দুটোই ভালো থাকবে।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url