নফল নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো নফল নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ আর্টিকেলের মাধ্যমে নফল নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পোস্টসূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে নফল নামাজ সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
ভূমিকা
মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক হিসাবে মর্যাদা দান করেছেন। তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন “ আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি ’’(সূরা আন-নাজিয়াত :৫৬)।
মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভের জন্য ফরজ ইবাদাত গুলো আদায় করা যেমন অত্যাবশ্যক তেমনি ফরজ ইবাদতের ঘাটতি পূরণ করে অধিক মর্যাদা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় নফল ইবাদত আদায় ও রোজা পালন করা অতি জরুরী। যারা নফল নামাজ আদায় করেন তাদের প্রতি রয়েছে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত। ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত ছাড়া অন্যান্য নামাজকে নফল নামাজ বলে।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “রমজান মাসের নফল নামাজ অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য’’। নফল নামাজের কোন সীমা নেই। যে যত বেশি পড়বে সে তত বেশি সওয়াব লাভ করবে। মাকরুহ সময় ব্যতীত যখনি কেউ নফল নামাজ পড়তে চায় এবং যত বেশি পড়বে তত বেশি তার জন্য মঙ্গল এবং বরকতেরই কারণ হয়।
নফল নামাজ পড়ার নিয়ম
নফল নামাজ যে কোন সূরা দিয়ে পড়া যায়। দুই রাকাত দুই রাকাত করে যতবার ইচ্ছা পড়া যায়। প্রথমে অযু করে পবিত্র হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে। তারপর আল্লাহু আকবার বলে হাত বেঁধে ছানা পাঠ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ সাইবার ক্রাইম থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
এরপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে যে কোন একটি সূরা পাঠ করতে হবে। রুকু থেকে আল্লাহু আকবার বলে সেজদা করতে হবে। সেজদা থেকে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকাতের মতই দ্বিতীয় রাকাত আদায় করতে হবে। এরপর শেষ বৈঠকের মাধ্যমে নামাজ শেষ করতে হবে।
নফল নামাজের নিয়ত
নফল নামাজ বেশিরভাগই সুন্নত। তাই নিয়তে সুন্নত ও বলা যাবে বা নফল বললেও হবে। সুন্নত, নফল কোন কিছু না বলেও শুধু তাকবির তাহরিমা দিয়ে আরম্ভ করলেও হয়ে যাবে। নফল নামাজের নিয়ত করে তা ছেড়ে দিলে বা ভেঙে গেলে পরে তা আদায় করা ওয়াজিব হবে। আরবিতে নিয়ত করলে সহি শুদ্ধ ভাবে উচ্চারণ করে পড়তে হবে।
“নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া- লিল্লাহি তাআলা রাকাআতি ছালাতিল নফলি মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা বাতিশ শারীফাতি আল্লাহ আকবার”
নফল নামাজ পড়ার জায়গা
নবীজি (সাঃ) বলেছেন, ফরজ ব্যতীত উত্তম (নফল) নামাজ হলো ঘরে নামাজ আদায়। (বুখারি:৭৩১)
নফল নামাজ বাসা-বাড়ি মসজিদ সব জায়গায় পড়া যায়। তবে মসজিদের তুলনায় বাসা-বাড়িতে নফল নামাজ পড়া উত্তম।
নফল নামাজের সূরা ক্বিরাত
নফল নামাজে যেকোন সূরা বা আয়াত দিয়ে পড়া যায়। নফল নামাজের সূরা তারতিব বা ধারাক্রম জরুরি নয়। সূরা ক্বিরাত নীরবে পড়তে হয়। তবে রাতে নফল নামাজ ইচ্ছে করলে সরবেও পড়া যায়। নির্দিষ্ট সূরা ক্বিরাত পড়ার অনুমতি থাকলেও তা জরুরি নয়।
নফল নামাজের প্রকারভেদ
নফল নামাজ দুই প্রকার
- নির্ধারিত নফল নামাজ
- অনির্ধারিত নফল নামাজ
নফল নামাজের মধ্যে ০৫ ওয়াক্ত হলো নির্ধারিত নফল নামাজ।
- তাহাজ্জুদ নামাজ
- ইশরাক নামাজ
- চাশত নামাজ
- জাওয়াল নামাজ
- আউওয়াবিন নামাজ
এছাড়া রয়েছে আরও কিছু অনির্ধারিত নফল নামাজ।
- তাহিয়্যাতুল ওজু
- দুখলুল মসজিদ বা তাহিয়্যাতুল মসজিদ
- সালাতিত তাসবিহ্
- ইস্তেখারার নামাজ
- ছালাতিল হাজাত
- তওবার নামাজ
- ইস্তিগফার নামাজ
নফল নামাজের নিষিদ্ধ সময়
সূর্যোদয়ের সময় সব নামাজ নিষিদ্ধ, সূর্য মাথার ওপর স্থির থাকা অবস্থায় নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমি, সূর্যাস্তের সময় চলমান আসর ব্যতীত অন্য কোন নামাজ বৈধ নয়। এছাড়া ফজর নামাজের ওয়াক্ত হলে তখন থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসর ওয়াক্তে ফরজ নামাজ পড়া হলেও তখন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন ধরনের নফল নামাজ পড়া নিষিদ্ধ।
এই পাঁচটি সময় বাদে অন্য যেকোনো সময় নফল নামাজ পড়া যায়। (আওকাতুস সালাত) ফজর উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত থেকে অতিরিক্ত পড়া মাকরূহ (মুসলিম হাদিস:১১৮৫)। ইকামাতের সময় মাকরুহ (মুসলিম হাদিস:১১৬০) তবে ফজরের সুন্নতের অত্যাধিক গুরুত্বের কারণে ইকামাতের পরও কোন কোন মসজিদে তা আদায় করতে বলা হয়েছে।
যদি দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার পুরোপুরি সম্ভাবনা থাকে(মুসলিস হাদিস:১১৯৩, বুখারি হাদিস:১০৯৩)। খুব খুদা এবং থানার প্রতি তীব্র চাহিদা হলেও ওই অবস্থায় নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। কেননা এর ফলে খাবারের সঙ্গে মন লেগে থাকবে।
নামাজের সঙ্গে নয় (মুসলিম হাদিস:৮৬৯)। ঈদের নামাজের আগে নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। ঈদের নামাজের পর ঘরেও নামাজ নেই ঈদগাহেও নামাজ নেই (ইবনে মাজাহ:১২৮৩, মুসান্নাফে ইবনে আবি শয়বা:২/১৭৮,১৭৯, মুসনাদে আহমাদ হাদিস: ৩১৬২)
নফল নামাজ সম্পর্কে হাদিস
রবীআ ইবনে কা’ব (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি মহানবী (সা:) এর সাথে এক সফরে ছিলাম। তখন আমি তাঁর খিদমতে ওজুর পানি ও প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য দ্রব্যাদি (মিসওয়াক জায়নামাজ ইত্যাদি) পেশ করলাম।
তিনি খুশী হয়ে আমাকে বললেন তোমার কি চাহিদা আছে চাও। আমি নিবেদন করলাম জান্নাতে আপনার সঙ্গী হয়ে থাকতে চাই। তিনি বললেন, শুধু এটাই না অন্য আরো কিছু? আমি বললাম, আমার আকাঙ্কা শুধু এটাই। তিনি বললেন তাহলে বেশী বেশী সিজদা কর (অর্থাৎ বেশী পরিমানে নফল নামাজ আদায় কর) তোমার আকাঙ্খা পূরণে আমাকে সাহায্য কর (মুসলিম)।
যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূল (স:) অতিশয় আনন্দিত হতেন। তিনি সাহাবাদের বলতেন, “তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।”
সুতরাং ফরজ ও ওয়াজিবের পরিপূরক হিসেবে নফল ইবাদতের গুরুত্ব অনেক বেশী কেননা রমজানে প্রতিটি নেক কাজের বিনিময়ে সত্তর গুন বেশী সওয়াব দেয়া হয় আর রমজানে প্রতিটি নফল ইবাদত মর্যাদা ও সওয়াবের দিক দিয়ে ফরজের পর্যায়ভুক্ত। বুখারী বর্ণনায় আল্লাহর হাবীব (সা:) বলেন “বান্দা যত বেশী নফল ইবাদত তত বেশী আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে”।
শেষ কথা
নফল ইবাদতের ব্যাপারে আমাদের কয়েকটি ভুল ধারনা রয়েছে। যে কারনে আমরা আল্লাহর ভালবাসা থেকে বিরত হচ্ছি। অনেক মনে করে নফল নামাজ মানে অতিরিক্ত না ইবাদত করলেও সমস্যা নাই। কিন্তু নফল নামাজের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তা অতিরিক্ত কোন বিষয় নয়।
বরং ফরজ ইবাদত পালনের ঘাটতি পূরণ করে। অধিক মর্যাদা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় নফল নামাজ আদায় ও নফল রোজা পালন করা জরুরি। একজন পরিপূন্য ইমানদার ব্যক্তি ফরজ ,সুন্নত, নফল সব নামাজ সঠিক ভাবে আদায় করে।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url