কর্ণফুলী টানেল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো কর্ণফুলী টানেল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন। কিন্তু সঠিক কোন তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। আজ আমি আপনাকে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে কর্ণফুলী টানেল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব। টানেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃএখানে আরো কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে ইম্পরট্যান্ট কিছু পয়েন্ট আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
ভূমিকা
কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ করা হয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে একটি সুরঙ্গ সড়ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এই কর্ণফুলী টানেলটি উদ্বোধন করেন। তারপর থেকে এই কর্ণফুলী ট্যানেলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
কর্ণফুলী টানেলের অবস্থান, টানেলের ভিতরের চিত্র সমস্ত বিষয় নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়লে প্রায় সমস্ত তথ্যই জানতে পারবেন।
কর্ণফুলী টানেল কোথায় তৈরি হয়েছে
অনেকেই হয়তো ভাবছেন কি হবে হঠাৎ যদি কর্ণফুলী টানেলে দেওয়াল ফেটে যায়। নদীর তলদেশেই বা এত বড় সুরঙ্গ কিভাবে তৈরি হলো। কর্ণফুলী টানেল নিয়ে একটি ছোট বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেকেই মনে করে এটি নদীর ভিতরে তৈরি হয়েছে । বরং টানেল তৈরি হয়েছে নদীর ১৫০ ফুট মাটির নিচে।
নদীর নিচের মাটি খুঁড়ে রাস্তা টানার জন্য ব্যবহৃত হয় TBM বা টানেল বোরিং মেশিন নামে এক বিশাল যন্ত্র। ২০১৯ সালে চীন থেকে একটি টানেল বোরিং মেশিন আনা হয় চট্টগ্রামে। ৯৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২২ হাজার টন ওজনের দৈত্যকার এই যন্ত্রটি প্রায় তিন তালা ভবনের সমান। টানেল বোরিং মেশিনের সামনের দিকে রয়েছে ধারালো কাটার ব্লেড।
আরো পড়ুনঃ পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
পতেঙ্গী পয়েন্টে ৪০ ফুট গভীরে বসানো হয়েছিল দৈত্যকার এই যন্ত্রটি। যা মাটি কাটতে কাটতে ১৫০ ফুট গভীরা চলে যায়। একই সঙ্গে যন্ত্রটির অন্য প্রান্ত কাঁচা সুরঙ্গের দেয়ালে লেপ্ট দেয় সিমেন্টের প্লাস্টার। এরপর সেই প্লাস্টারে বসানো হয় কংক্রিটের দেওয়াল। আর এভাবেই বিশাল আকৃতির টানেল বোর্ডিং মেশিনটি যতই সামনে এগোয় ততই আকৃতি পেতে থাকে টানেলের।
কর্ণফুলী টানেলের কয়টি টিউব রয়েছে
টানেলটি চট্টগ্রাম নগরীর বেভাল একাডেমির পয়েন্ট দিয়ে তলদেশে ঢুকে তা বের হবে ওপারে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে। মোট দুটি টিউব দিয়ে নির্মিত হবে টানেলটি। এর একটি দিয়ে গাড়ি শহর প্রান্ত থেকে প্রবেশ করবে আরেকটি টিউব দিয়ে ওপার থেকে শহরের দিকে আসবে।
কর্ণফুলী টানেল নিয়ে সাধারণ জ্ঞান
- টানেলটির মুখে রয়েছে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় শক্তিশালী ২ জোড়া ফ্ল্যাগ গেট। জলোচ্ছ্বাসের মতো যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে এই ব্যবস্থা।
- দুটি টিউব যুক্ত টানেলে থাকছে তিনটি ক্রস প্যাসেজ এটি বিপদকালীন সময়ে এক টিউব থেকে অন্য টিউবে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হবে।
- টানেলের ভেতরে ভেন্টিলেশনের জন্য রয়েছে কিছুদূর পরপর বিশাল আকৃতির দুইটি করে জেড ফ্যান।
- অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় টানেলের ভেতরে রয়েছে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
- যানবাহনের দুর্ঘটনার রোধে রয়েছে পর্যাপ্ত সিসিটিভি মনিটরিং। যা টোল প্লাজা থেকে কন্ট্রোল হবে। এবং উদ্ধারকারী দল এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারবে।
- দুই পাশেই বসানো হয়েছে দুইটি বিদ্যুৎ সাব স্টেশন। এবং নির্মাণ করা হয়েছে টোল প্লাজা।
- কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে দশ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।
কর্ণফুলী টানেলের টোল নির্ধারণ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল টি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে , সেখানে বলা হয়েছে যানবাহন ভেদে ২০০ থেকে ১০০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাইভেট কার, জিপ ও পিকআপের টোল ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাইক্রোবাসের জন্য ২৫০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩১ এর কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ টাকা এবং ৩২ এর বেশি আসনের জন্য ৪০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
কর্ণফুলী টানেল পারাপার হতে ৫ টনের ট্রাকের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের জন্য ৫০০ টাকা এবং ৮ থেকে ১১ টনে ট্রাকের জন্য ৬০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এবং ট্রেইলর এর নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ টাকা।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সুরঙ্গ পথ
টানেল বোরিং মেশিন বা TBM তৈরির আগে প্লাস্টিং ও ডিলিং পদ্ধতিতে সুরঙ্গ তৈরি হতো। যা ভূমিধস বা রাস্তা ভাঙ্গনের মত ঘটনার কারণ হত। কিন্তু টানেল বোরিং মেশিন এতটাই মসৃণ ভাবে মাটি খনন করে যা নদীর উপর থেকে বিন্দু পরিমান বোঝার উপায় নেই।
কর্ণফুলী টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম সুরঙ্গ পথ। ঢাকা-কক্সবাজার যে রুটে পার হতে আগে সময় লাগতো দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সেখানে টানেল এ সময় লাগবে মাত্র দুই থেকে তিন মিনিট।
শেষ কথা
বাংলাদেশ সরকার কর্ণফুলী টানেলের নামকরণ করেছে বঙ্গবন্ধুর টানেল নামে। দক্ষিণ এশিয়ার যানবাহন চলাচলের জন্য প্রথম টানেল এটি যা নদীর তলদেশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামগামি যান চলাচলের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ সরকার এই টানেল টি প্রতিস্থাপন করে। এই টানেল টির কারণে যান চলাচলের সময় অনেক কমে গেছে।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url