দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই দৈনন্দিন জীবনে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন? কিন্তু আপনি সঠিক কোন উত্তর পাচ্ছেন না । আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচীপত্রঃএখানে আমরা আরো আলোচনা করার চেষ্টা করেছি ।আমরা দৈনন্দিন জীবনে কি কি প্রযুক্তি ব্যবহার করি সে সম্পর্কে ধারনা দেওয়া সহ আরো ইম্পরট্যান্ট কিছু পয়েন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো আমাদের সাথেই থাকুন।
ভূমিকা
বর্তমানে মানবজাতি প্রযুক্তির উপর এতটাই নির্ভর হয়ে গেছে যে, আমরা প্রযুক্তি ছাড়া সহজ ভাবে কোন কিছু কল্পনা করতে পারি না। আমাদের দৈনন্দিন রুটিনের প্রায় সকল কাজই প্রযুক্তি নির্ভর। তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি যোগাযোগ প্রযুক্তির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আগের যোগাযোগ ব্যবস্থা সাথে বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক পরিবর্তন এসেছে। যা শুধু মাত্র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে কি বুঝায়
আমরা প্রতিনিয়ত তথ্য প্রযুক্তির সাথে জরিয়ে আছি।অথচ অধিকাংশ মানুষ জানিনা এই তথ্য প্রযুক্তি কি।সহজ কথায় তথ্য সংরক্ষণ,আদান প্রদান এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করি সেটাই ITC বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।যেমন: কম্পিউটার,টেলিভিশন,মোবাইল ইত্যাদি।
দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত দশটি প্রযুক্তির নাম
বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তি নির্ভর।আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত দশটি প্রযুক্তির নাম নিচে দেওয়া হল:
- কম্পিউটার
- ল্যাপটপ
- টেলিভিশন
- মোবাইল
- টেলিফোন
- ইন্টারনেট
- রেডিও
- ফ্যান
- লাইট
- ফ্রিজ
মানব জীবনে প্রযুক্তির প্রভাব
দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেকটি কাজ প্রযুক্তি নির্ভর।লেখাপড়া থেকে শুরু করে প্রায় সকল কাজই ইন্টারনেটের মাধ্যমে করতে পারি।এর মধ্যে প্রধান কাজ গুলো নিচে দেওয়া হল:
- আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্য থেকে শুরু করে কাঁচা বাজার পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে অর্ডার করা যায়।
- আমরা সময় কাটানোর জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বই পড়তে পারি। এ ছারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা সারা বিশ্বের খবরা খবর জানতে পারি।
- বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল জানা যায়।ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব দ্রুত ফলাফল জানা যায়।
আরো পড়ুনঃ পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
- আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল,পানির বিল, ইন্টারনেট বিল পরিশোধ করতে পারি।এছাড়াও ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইল ব্যবহার করে টাকা লেনদেনও মোবাইল রিচার্জ করতে পারি।
- বাসায় বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারি।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
- চিকিৎসা সেবায় তথ্যপ্রযুক্তিঃ চিকিৎসা সেবায় তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের বাংলাদেশে অতি দ্রুত বিকাশ ঘটছে টেলি-মেডিসিন সেবার। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে, ডাক্তাররা এই টেলি-মেডিসিন সেবা ব্যবহার করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে।ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে একবার নিবন্ধন করলেই রোগী বাড়িতে বসে নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে তথ্য পেয়ে যাবে। রোগের চিকিৎসা এখন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে ,শুধুমাত্র এই সফটওয়্যার এর কারণ। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রাম অঞ্চল বা মফস্বলের রোগীরাও এই মেডিসিন সেবা নিতে পারছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
- কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তিঃ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের সেবা পাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির কৃষিতে ব্যবহার করার ফলে বিভিন্ন ধরনের বীজ কৃষকরা গবেষণা করে উদ্ভাবনের অনুপ্রাণিত হচ্ছে। যা আমাদের কৃষকদের জন্য অনেক উপকার হচ্ছে। কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের উন্নত বীজ রোপণ করার ফলে ভালো ফলন পাচ্ছে। এতে দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণ হচ্ছে।এছাড়াও কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহারের কথা না বললেই নয় । তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন উন্নত মানের যন্ত্রপাতি কৃষিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এতে যেমন কৃষকের সময় বেঁচে যাচ্ছে তেমনি খুব সহজে আমরা কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারছি ।যেমন ধান লাগানো থেকে ধান মাড়াই করা পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধাপই এখন যান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন করা যায়। শুধু ধান নয় প্রায় প্রত্যেকটি ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখন আমরা যন্ত্র-নির্ভর হয়ে পড়েছি শুধুমাত্র এই তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে।
- শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তিঃ শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল নজরদারিতে আনা হয়েছে। ক্লাসরুমগুলোতে প্রজেক্টর ব্যবহার করে খুব অল্প সময় শিক্ষার্থীদের সুন্দরভাবে শিক্ষা দান করা যাচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে তা হল অনলাইন ভর্তির আবেদন, ডিজিটাল আইডি কার্ড, প্রশংসাপত্র, বিদ্যালয় এর অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফলাফল, বিদ্যালয় সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করা নানান ধরনের সুবিধা আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পাচ্ছি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ও এখন তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গিয়েছে।বর্তমানে বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যাতে করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মনোযোগ অনেক বেড়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
- পরিবেশ ও আবহাওয়াঃ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা অনেক আগে থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়ে, জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস পেয়ে থাকি। বিভিন্ন রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে উপকূলীয় মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া যায় যার ফলে বর্তমানে দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক কমে যাচ্ছে। এবং পূর্ববর্তী প্রস্তুতি নিয়ে অনেক দুর্ঘটনা মোকাবেলা করা যাচ্ছে শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে।
আরো পড়ুনঃ আবহাওয়া ও জলবায়ু মধ্যে পার্থক্য কি
- বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ সব থেকে বেশি যে ক্ষেত্রে এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় তা হল বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানীরা যেসব জটিল কাজগুলো অনেক সহজে সম্পূর্ণ করছে শুধুমাত্র তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের উন্নত বীজ উদ্ভাবন করে কৃষি ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
- শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ শিল্প ও সংস্কৃতিতেও এখন তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অনেক বেশি। আগের সময় একটা কার্টুন তৈরি করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হতো ।বর্তমানে খুব দ্রুত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এনিমেশন কার্টুন তৈরি করা যাচ্ছে । শুধু কার্টুন নয় বিভিন্ন ধরনের সিনেমা নাটক প্রত্যেকটা জিনিসই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে। শিল্প ও সংস্কৃতিতে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
- ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ বর্তমানে এখন অধিকাংশ ব্যাংক কি অনলাইনে আওতাভুক্ত। আগে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা উত্তোলন করার প্রয়োজন হতো বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা এটি-এম অটোমেটেড টেলার মেশিন থেকে চব্বিশ ঘন্টা যেকোনো সময় টাকা উত্তোলন করতে পারছি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক লেনদেন আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেও করতে পারছি।
- বিনোদনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ আমাদের দৈনন্দিন কাজের বেশির ভাগ সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি জড়িয়ে আছে ।যেমন বিনোদনের ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জড়িয়ে আছে ।গান শোনা থেকে শুরু করে সিনেমা দেখা কম্পিউটারে গেমস খেলা বই পড়া প্রায় প্রত্যেকটি কাজেই আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকি। এমনকি মাঠে না গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় টুর্নামেন্ট আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে উপভোগ করে থাকি।
- প্রচার ও গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ বর্তমানে যে কোন খবর খুব দ্রুত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা পেয়ে যাচ্ছি। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন নিউজ খুব সহজেই আমরা ঘরে বসে পড়তে পারছি। টেলিভিশন থেকেও লাইভ টিভি চ্যানেলগুলো খুব দ্রুত আমাদের কাছে খবরগুলো পৌঁছে দিচ্ছে যা আমাদের জীবনযাত্রার মান অনেক সহজ করে দিচ্ছে।
- সামাজিক যোগাযোগ বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিঃ বর্তমানে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা মানুষের সাথে দেখা না করে মোবাইল ফোনে কথা বলে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করছি। এমনকি এসএমএস এর মাধ্যমে বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কথা বলে আমরা যোগাযোগ করে নিচ্ছি ।প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের এই যোগাযোগ ব্যবস্থাটার অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্ব
আধুনিক বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। দিন দিন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার তত আধুনিকায়ন হচ্ছে। আমাদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি একপ্রকার আশীর্বাদ স্বরূপ। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে সবাইকে দক্ষ হয়ে আধুনিক বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে হবে।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তির আমাদের সাথে যেভাবে জড়িয়ে আছে তার কোন বিকল্প হয় না। তাই প্রত্যেকটা মানুষের উচিত তথ্যপ্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে নিজের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
লেখকের মন্তব্য
আমার মতে দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একে অপরের সাথে জড়িয়ে আছে। আমাদের প্রায় প্রত্যেকটি কাজই তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভর করে করতে হয়। সকালে বেলা ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সাথে জড়িয়ে থাকি। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, গবেষণা ইত্যাদি কাজ প্রযুক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের বর্তমান বিশ্বটাই প্রযুক্তি নির্ভর।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url