ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালন লাভজনক হওয়ার কারণ

প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন লাভজনক হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আগে আর্টিকেলের মাধ্যমে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে কিভাবে লাভবান হতে পারবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন লাভজনক হওয়ার কারণ
পোস্ট সূচিপত্রঃব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বলতে আমরা সাধারণত কালো রঙের ছাগল কে বুঝে থাকি। তবে ব্ল্যাক বেঙ্গল হলো একটা ছাগলের জাতের নাম। ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের রং কালো, ধূসর, বাদামী, মেটে, হালকা লালচে অথবা সাদাকালো বর্ণের হয়ে থাকে। অন্যান্য ছাগলের জাতে তুলনায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালনে অধিক লাভবান হওয়া যায়। 

তাই অন্যান্য ছাগল পালনে তুলনায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের দিকে মানুষ বেশি ঝুঁকছে। তবে ব্লাক বেঙ্গল জাতে ছাগল বাছাই করার ক্ষেত্রে বা পালন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য বা চেনার উপায়

  • ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের দেহের লোম অনেক মোলায়েম ও নরম হয়।
  • ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের শিং ছোট ও মাঝারি আকারের হয়ে থাকে।
  • ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের কান সাধারণত ছোট ও সমান্তরাল হয়ে থাকে। ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের কান সাধারণত ১২ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার এর মধ্যে হয়ে থাকে।
  • এ ছাগলের বক্ষ অনেক চওড়া হয়।
  • ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের পা খাটো এবং এদের দেহের গরন আটসাট হয়।
  • ব্লাড বেঙ্গল ছাগলের শরীরের কাঠামো শক্তপোক্ত ও বেশি বহুল এছাড়াও এরা আকারে বেঁটে।
  • পূর্ণবয়স্ক ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের পুরুষ ছাগলের ওজন হয় ২৫-৩০ কেজি এবং মাদি ছাগলের ওজন ২০-২৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ছাগল ক্রয় করার সময় যেসব দিকগুলো লক্ষ্য রাখতে হবে

অবশ্যই খেয়াল রাখবেন অসুস্থ বা কোন কারণে দুর্বল ছাগল কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ অসুস্থ বা দুর্বল ছাগল কিনে বাসায় আনার পর তা অসুস্থ হয়ে মারা যেতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন এলাকার বাজার অথবা এলাকার কোন খামারের থেকে ছাগল সংগ্রহ করার। এবং ছাগল ক্রয় করার সময় নিচের বিষয়গুলোর উপর বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন।

পাঠার ক্ষেত্রেঃ
  • পিছনের পা সুঠাম ও শক্তিশালী যেন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের পাঠার মা বছরে দুইবার বাচ্চা দিত কিনা সেটা জেনে নিবেন এবং প্রতিবার কতটা করে বাচ্চা দিতো এবং দুধ উৎপাদন কেমন হয় সে বিষয়ে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
  • পাঠার বয়স যেন ১২ মাসের মধ্যেই থাকে এবং অণ্ডকোষ যেন সুগঠিত এবং আকারে বড় হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
ছাগির ক্ষেত্রেঃ
  • ছাগির বয়স যেন ৯ থেকে ১২ মাসের মধ্যে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। যদি ছাগী গর্ভবতী হয়ে থাকে তাহলে কোন সমস্যা নেই।
  • খেয়াল রাখবেন সাগির ওলান সুগঠিত ও বাট যেন সবগুলো সমান হয়।
  • জিজ্ঞেস করে নিবেন ছাগির মা বছরে দুইবার বাচ্চা দিতো কিনা এবং দুইয়ের অধিক বাচ্চা দিতো কিনা এছাড়াও দুধ কেমন হতো সে বিষয়ে জেনে নিবেন।
  • খেয়াল রাখবেন ছাগির পেট যেন তুলনামূলকভাবে বড় হার যেন চওড়া হয়।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দাম

অন্য সব ছাগলের তুলনায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের দাম অনেকটা কম হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি ছাগলের খামার করবেন ভেবে থাকেন তাহলে ব্লাড বেঙ্গল যাতে ছাগল দিয়ে শুরু করতে পারেন। একটি পাঁচ থেকে ছয় মাস বয়সী ব্ল্যাকবেঙ্গল জাতের ছাগলের বাচ্চার দাম আনুমানিক আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মধ্যে হয়ে থাকে। 


এছাড়াও ৮ থেকে ৯ মাস বয়সে খাসির দাম আনুমানিক ৬ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। ১২ থেকে ১৪ মাস বয়সী ব্লাড বেঙ্গল জাতের খাসির দাম সাধারণত ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা হয়ে থাকে। বর্তমানে যেহেতু সকল জিনিসের দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে তাই শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য এখানে দাম গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। আপনার অঞ্চল ভেদে দামের তারতম্য ঘটতে পারে।

ছাগলের দাঁত দেখে বয়স নির্ণয়

সবথেকে সহজ উপায় হলো গৃহপালিত পশুর দাঁত দেখে বয়স নির্ণয় করা। চলুন জেনে নেওয়া যাক কত মাস বয়সের কতগুলো দাঁত ওঠা স্বাভাবিক।
  • ০-১২ মাস বয়সী ছাগলের দুধের সবগুলো দাঁত উঠবে
  • ১২-১৮ মাস বয়সী ছাগলের একজোড়া স্থায়ী দাঁত উঠবে
  • ১৮-২৪ বয়স বয়সী ছাগলের দুই জোড়া স্থায়ী দাঁত উঠবে
  • ২৪-৩০ মাস বয়সী ছাগলের তিন জোড়া স্থায়ী দাঁত উঠবে
  • ৩১-৩৬ মাস বয়সী ছাগলের ৪ জোড়ায দাঁত উঠবে
  • ৩৭+ মাছ বয়সী ছাগলের দাঁত ভেঙে পড়ে যাবে বা মুখের ভেতর ভাঙ্গা ভাঙ্গা দাঁত থাকবে।
আপনি যে কোন জাতের ছাগল কেনার সময় এই বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখলে ছাগলে সঠিক বয়স নির্ধারণ করতে পারবে।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাসস্থান

ছাগলের জন্য ঘর প্রস্তুত করতে যে বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখা জরুরী চলুন জেনে নেওয়া যাক
অবশ্যই বাসস্থানের জায়গাটি উঁচু এবং শুষ্ক স্থানে হতে হবে। বাসস্থানটির দরজা বা খোলা জায়গা সব সময় চেষ্টা করবেন দক্ষিণ দিকে রাখার এবং লম্বালম্বি টা হবে পূর্ব পশ্চিমে। যেকোনো ধরনের পানি বা ছাগলের প্রস্রাব নিষ্কাশনের জন্য ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

খেয়াল রাখতে হবে ছাগলের ঘর যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকে কারণ ছাগল ঠাসাঠাসি জায়গা পছন্দ করে না তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা ছাগলের জন্য নির্ধারণ করতে হবে। একটা পূর্ণ বয়স্ক ছাগলের জন্য ১০ থেকে ১৪ বর্গফুট জায়গা নির্ধারণ করবেন ছাড়াও বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য তিন থেকে আট বছর জায়গা নির্ধারণ করা উচিত। 

সাধারণত ছাগলের ঘর যে কোন কিছু দিয়েই তৈরি করা যায়। যেমন ধরেন বাঁশ, ছন, গোলপাতা, খর, টিন বা ইট দিয়ে তৈরি হতে পারে। ছাগলের ঘরে চেষ্টা করবেন বাঁশ দিয়ে মাথা তৈরি করে দিতে। খেয়াল রাখবেন মাচা যেন মাঝে মাঝে একটু ফাঁকা থাকে এতে ছাগলের মলমূত্র সহজেই নিচে পড়তে পারবে। ছাগলকে যদি আপনি মাটিতে রাখার চেষ্টা করেন তাহলে ছাগলের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। 

তাই সাবধান থাকা ভালো। শীতকালে চেষ্টা করবেন ছাগলকে মাচার উপরে ঘর জাতীয় কিছু বিছিয়ে দিতে এবং প্রতিদিনের ক্ষর প্রতিদিন শুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করবেন। চেষ্টা করবেন শীতের সময় যেন বাহিরের বাতাস ছাগলের ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। তাই বেড়াগুলো পাটের বস্তা অথবা অন্য কিছু দিয়ে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলকে কি জাতীয় খাবার দেওয়া উচিত

ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের মূল বাড়ন্ত সময় হল তিন থেকে বারো মাস বয়স পর্যন্ত। এই সময়টাতে যে ছাগলগুলো প্রজনন অথবা মাংসের জন্য তৈরি করা হয় সেগুলোকে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ ও দানাদার আস জাতীয় খাবার দেওয়া প্রয়োজন।এছাড়াও ছাগলের সুস্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য ছাগলকে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ ও দানাদার আশ জাতীয় খাবার দেওয়া উচিত। 


দানাদার আশ জাতীয় খাবারের তালিকায় রয়েছে গম, ভুট্টা ভাঙ্গা, চাল, গমের ভুসি, আটাগুড়া, বিভিন্ন ডালের ভুষি, সয়াবিন খোল, শুটকি মাছের গোড়া, ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট, লবণ, ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ঘাস জাতীয় খাবার।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের রোগ ও প্রতিকার

ছাগলের বিভিন্ন ধরনের রোগের মধ্যে রয়েছে পরজীবী জনিত রোগ, বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, অসংক্রামক রোগ, বিপাকীয় রোগ ও অপুষ্টি জনিত রোগ। বিভিন্ন রোগের মধ্যে ছাগলের জন্য বেশ কিছু রোগ ক্ষতিকর এই ক্ষতিকর গুলোর মধ্যে রয়েছে কৃমি, নিউমোনিয়া, পিপিআর, গোটা পক্স ও একথাইমা। 

এছাড়া আরো কিছু রোগ রয়েছে যেগুলো ছাগলের সচরাচর দেখা যায়। তরকা, ওলান প্রদাহ, ক্ষুরা রোগ, জলাতঙ্ক, পায়ের ক্ষত রোগ ও পেটের পিরা ইত্যাদি। এ ধরনের রোগ হলে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

যে ছাগলের মাঝে রোগ গুলো লক্ষ্য করবেন চেষ্টা করবেন অন্যান্য ছাগলের থেকে সেই ছাগলকে আলাদা রাখার। এবং খাবার দাবার দেওয়ার পাশাপাশি বেশি বেশি যত্ন নেওয়ার। আর পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছাগলকে চিকিৎসা প্রদান করার। 

আর যদি অসুস্থ ছাগল মারা যায় তাহলে মাটিতে পুঁতে রাখার চেষ্টা করবেন। কেননা কোথাও ফেলে রাখলে সেই মৃত ছাগলের রোগ অন্যান্য পশুপাখির মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই চেষ্টা করবেন মৃত ছাগল বা পশু পাখিকে মাটির নিচে পুতে রাখার।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনে সুবিধা

ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালনে সুবিধা অনেক বেশি। কারণ ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল খুব অল্প বয়সেই বাচ্চা প্রসব করে এবং দুই থেকে পাঁচটি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করতে পারে। এই যাতে ছাগল সাধারণত চার থেকে পাঁচ মাস বয়সের বয়সন্দী হয়ে থাকে অর্থাৎ ডাক আসে। 


চার পাঁচ মাস বয়সে যেহেতু প্রথম ডাক আসে তাই সে ডাকটা বাদ দেওয়াই উত্তম। ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মাস বয়সী প্রথম বাচ্চা দিয়ে থাকে। পূর্ণবয়স্ক ছাগি বছরে দুইবার পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে। প্রথম বার এক থেকে দুইটি বাচ্চা দিলেও পরেরবার থেকে দুই থেকে পাঁচটি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল তাদের দৈহিক ওজনের প্রায় ৫০ থেকে ৬০% পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস অতি সুস্বাদু হওয়ায় এই মাংসের দামও বেশি প্রায় ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে এই মাংস বিক্রি হয়।

শেষ কথা

বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক শিক্ষিত ছেলে মেয়ে বেকার বসে আছে। বেকার বসে না থেকে অল্প খরচে কয়েকটা ব্ল্যাকবেঙ্গল জাতের ছাগল কিনে ছোট পরিসরে শুরু করতে পারে ছাগল পালন। খুব সহজে অল্প খরচে লাভজনক এই ব্যবসাটি সকলে করতে পারে। খুব অল্প সময়ে বাচ্চা দেয় এই ছাগল বাচ্চার দ্রুত বড় হয় এবং খুব তাড়াতাড়ি বংশবিস্তার করে। 

যার ফলে অল্প কিছু ছাগল দিয়ে শুরু করলে কিছুদিন পরে আপনি লক্ষ্য করবেন আপনার অনেকগুলো ছাগল হয়ে গেছে। যতদিন আপনি কোন চাকরি না করেন ততদিন অন্ততপক্ষে আপনি ছোট পরিসরে হলেও ব্ল্যাক বেঙ্গল যাতে ছাগল পালন করতে পারেন এতে আপনি অধিক লাভবান হবেন।

আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url