চর্মরোগ থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো চর্ম রোগ থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে বিভিন্ন চর্মরোগ থেকে কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি লাভ করবেন সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। চর্ম রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো জানত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃএখানে আরও চর্মরোগ সম্পর্কে বেশ কিছু ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট আলোচনা করার চেষ্টা করব। চর্ম রোগে কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার ছাড়াও ঘরোয়া উপায় নিয়ে বেশ কিছু বিষয় জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।
ভূমিকা
ছত্রাক জনিত একটি রোগ হল চর্মরোগ । আপনার ত্বকে বিভিন্ন ছত্রাক যখন আক্রমণ করে তার কারণে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়। মানব দেহ সাধারণত চামড়া দিয়ে আবৃত থাকে। এই আবৃত থাকা চামড়ার ওপরে যদি কখনো কোন ফুসকুড়ি, লালচে ভাব, ফোলা ভাব বা চামড়া উঠা উঠা ভাব হয় এবং সাথে প্রচুর পরিমাণ চুলকানি থাকে।
তাহলে সেই সমস্ত রোগকে আমরা চর্মরোগ বলে থাকি। তবে ডাক্তারি পরিভাষায় চর্মরোগ শুধু মানবদেহের চামড়াতে হয় না। এই রোগ নির্ণয় করতে হলে মাথার চুল,হাত পায়ের নখ, সংশ্লিষ্ট পেশী, গ্রন্থিকেও পর্যবেক্ষণ করা হয়। তবে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ রয়েছে।
সব চর্ম রোগের লক্ষণ এক নাও হতে পারে। চর্মরোগ যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ তাই এই রোগের রোগীকে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যের ব্যবহার্য জিনিস পত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
চর্ম রোগের লক্ষণ
মানব দেহের ত্বক, নখ ও চুলের গঠনে সহায়তা করে কেরাটি নামক এক ধরনের আমিষ আমাদের ত্বকের ক্ষতিসাধন করতে কেরাটিনকে ধ্বংস করে এক ধরনের ছত্রাক।আপনার শরীরের যে স্থানে মাত্রাতিরিক্ত চুলকানি অনুভব করবেন, ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বারবার আপনাকে সেখানে চুলকাতে হবে এবং চুলকানোর ফলে জায়গাটিতে চামড়া ওঠা ওঠা ভাব হবে।
অথবা ফুসকুড়ি জাতীয় কিছু একটা বের হবে। এই ধরনের কোন সমস্যা যদি আপনার ত্বকে দেখা দেয় তাহলে আপনি বুঝে নিবেন এটা কোন ধরনের চর্ম রোগের লক্ষণ। অবিলম্বে যার চিকিৎসা না করালে বা সাবধান না হলে আপনার সমস্ত শরীরে এই রোগটি ছড়িয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়
আপনার ব্যবহৃত বিছানার চাদর, তোয়াল, চিরুনি ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ব্যবহার করলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।আপনি যে মুহূর্তে এই লক্ষণগুলো উপলব্ধি করবেন তখন থেকে আপনার ব্যবহার্য সকল জিনিসপত্র বাড়ির সবার থেকে আলাদা করে নিবেন। এবং চেষ্টা করবেন সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে।
চর্ম রোগের কারণ
সাধারণত অপরিষ্কার বা অপরিচ্ছন্নতার কারণে চর্মর রোগ হয়ে থাকে। চর্মরোগ শরীরের বিভিন্ন অংশে হয়ে থাকে। যেসব কারণে চর্মরোগ হতে পারে যেমন
- বংশগত কারণে চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- কোন ইনফেকশনের কারণে চর্মরোগ হতে পারে।
- ঋতুগত পরিবর্তনের কারণে চর্মরোগ হতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের খাবার অথবা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্য চর্মরোগ হতে পারে।
- অপরিচ্ছন্নতা বা একজনের ব্যবহার্য জিনিস অন্যজন ব্যবহার করলে চর্মরোগ হতে পারে।
- কোন চর্মরোগ ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে তার থেকে চর্মরোগ ছড়াতে পারে।
সব সময় চেষ্টা করবেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার। চর্মরোগ যেন আপনাকে বা আপনার পরিবারের কোন সদস্যকে আক্রান্ত করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর যদি কোন কারনে আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাবধানে রাখতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
বিভিন্ন চর্মরোগ ও প্রতিকার
চর্মরোগ যেহেতু ছত্রাক জনিত রোগ তাই দেখা যায় কম বেশি সবাই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিশেষ করে অপরিচ্ছন্ন ও অপরিষ্কার জায়গায় বা ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করার কারণে এ ধরনের চর্মরোগ বেশি দেখা যায়।
বিশেষ করে গরমকালে চর্ম রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। বিভিন্ন চর্মরোগ গুলোর মধ্যে রয়েছে ঘামাচি, দাদ, ব্রণ, পাচড়া, একজিমা, সোরিয়াসিস, আর্সোনিক জনিত চর্মরোগ।
দাদ সাধারণত চামড়ার উপরে দেখা যায়। শরীরের যে কোন জায়গায় এই চর্মরোগটি দেখা দিতে পারে। ফাঙ্গাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ায় এই রোগকে দাদ বলে। দাদ সাধারণত সোয়াচে রোগ। দাদ দ্বারা আক্রান্ত জায়গা চাকার মত গোলাকৃতির হয়ে থাকে এবং প্রচুর পরিমাণে আক্রান্ত জায়গাতে চুলকায়।
দাদ থেকে প্রতিকার পেতে সব সময় জায়গাটি পরিষ্কার রাখবেন এবং শুকনো রাখার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও যদি কোন সাবান ব্যবহার করার ফলে এই রোগটি দেখা দেয় তাহলে কিছুদিন সাবান ব্যবহার বন্ধ রাখবেন।
ঘামাচি প্রায় সব মানুষেরই গরমের সময় ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা। সাধারণত ঘামাচি তখনই হয় যখন অতিরিক্ত ঘামার ফলে শরীরের লোমকূপ গুলো বন্ধ হয়ে যায় যার ফলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দানা দানা এবং লালচে ভাব দেখা দেয়। কিছু কিছু ঘামাচি ও অনেক পরিমাণে চুলকায়। তাই ঘামাচি থেকে পরিত্রাণ পেতে শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন এবং শরীর সবসময় শুকনা রাখার চেষ্টা করবেন।
ব্রণ সাধারণত অল্প বয়সিদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে যারা টিনেজার। এই বয়সে ছেলেমেয়েদের মুখে ব্রনের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। তাই ব্রণ থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই বেশি তেল মসলা জাতীয় খাবার এবং ঢাল ভাজা পড়া, চকলেট, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর শাক সবজির পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
পাচরা এ জাতীয় রোগ সাধারণত অপরিষ্কার থাকার জন্য হয়ে থাকে। তাই এই ধরনের রোগের হাত থেকে রেহাই পেতে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিয়মিত গোসল এবং পরিষ্কার কাপড় পরিধান হতে পারে এর থেকে মুক্তির উপায়।
চর্ম রোগের ঘরোয়া উপায়
চর্ম রোগ থেকে মুক্তি বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের আশেপাশে যেসব গাছ বা লতা দেখতে পাই সেগুলো দিয়েই আমরা চর্মরোগ নির্মূল করতে পারি। বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তিকর চর্ম রোগ থেকে রক্ষা পেতে ঘরোয়া ভাবে যে উপায়গুলো জানা দরকার তা হল
নিম যেকোনো ধরনের চুলকানি বা লাল লাল ছোপ দূর করতে নিম পাতার খুবই কাজে দেয়। আপনার যে স্থানে চুলকানি হবে সেই স্থানে যদি আপনি নিম পাতা বেটে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিবেন। এভাবে যদি আপনি এক সপ্তাহের মত নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার ত্বকের যে চুলকানিজনিত সমস্যা সেগুলো দূর হয়ে গেছে।
তুলসি পাতার গুণের কথা বলে শেষ করার মত নয়। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ জনিত সমস্যায় তুলসী পাতা বেটে যদি সেই রস লাগাতে পারেন তাহলে সাথে সাথে উপকার পাবেন।
এলোভেরার নানা ধরনের গুণ রয়েছে। ত্বক বা চুলের যেকোনো সমস্যায় এলোভেরা জেল খুবই উপকারী। তাই যে কোন সমস্যায় এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন ভালো উপকার পাবেন।
বেকিং সোডা ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে অনেক কার্যকরী। চুলকানি ও জ্বালাপোড়া ভাব দূর করার জন্য আক্রান্ত স্থানে বেকিং সোডা লাগাতে পারেন উপকৃত হবেন।
অলিভ অয়েল শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশ ভালো এই তেল। অধিকাংশ ত্বকের সমস্যা শুষ্কতার কারণে হয়ে থাকে। তাই অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ ধরে রাখবে এবং বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করবে।
চর্ম রোগের ঔষধের নাম
চর্ম রোগের বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও ক্রিম পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু ঔষধ ও ক্রিমের নাম।
চর্ম রোগের ঔষধের নামঃ
- ভিরক্সি (Viroxy)
- ইনসেপ্টা নোরাশ অয়েন্টমেন্ট (Incepta Norush Ointment)
- অনীকন (Anicon)
- ফ্লুজল 50 (Fluzol 50)
- বেনজাক (Benzac)
চর্ম রোগের ক্রিমের নামঃ
- ডি-র্যাশ (De-Rush)
- ইচনিল ক্রিম (Itchnil Cream)
- ডারমেইড (Dermaid)
- নিউট্রোজেনা অন দি স্পট (Neutrogena is on the spot)
চর্ম রোগের ক্ষেত্রে এই ঔষধ এবং ক্রিম বেশ ভালো কাজ করে। তবে অবশ্যই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে এই ধরনের ঔষধ বা ক্রিম ব্যবহার করার পূর্বে কোন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নিবেন। তিনি আপনার রোগটি নির্ণয় করে কোন ঔষধ বা ক্রিম আপনার জন্য ভালো হবে সেটি আপনাকে নির্বাচন করে দিবে।
শেষ কথা
কম বেশি প্রায় সবারই চর্মরোগ হয়ে থাকে। গরম কালে অতিরিক্ত গরমের জন্য মানুষের যেমন চর্মরোগ হয় তেমনি শীত কালে অতিরিক্ত শীতে রুক্ষতার কারণে মানুষের চর্মরোগ দেখা দেয়।
তবে নিয়ম মেনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে এবং নিয়মিত গোসল করলে এইসব রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আপনারা চেষ্টা করবেন প্রতিনিয়ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে এবং চর্ম রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url