বাচ্চাদের সর্দি কাশি সারাতে ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো বাচ্চাদের সর্দি কাশি সারাতে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। শীত শুরু হতে না হতেই প্রায় প্রতিটি ঘরে শিশুদের ঠান্ডা জনিত সর্দি কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বাচ্চাদের সর্দি কাশি সারাতে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। আশা করি মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়বেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃএই আর্টিকেলটিতে বাচ্চাদের সর্দি-কাশি হলে কোন কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন সে বিষয়ে বেশ কিছু ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
ভূমিকা
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শীতের মৌসুমে বড়দের তুলনায় বাচ্চারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেননা বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় অনেক কম থাকে। বিশেষ করে ঠান্ডা জনিত সমস্যা সর্দি কাশি নিউমোনিয়ার মত রোগ গুলো বাচ্চাদের একেবারে নাজেহাল করে তোলে। অনেক বাচ্চাকে তো দেখা যায় শীতের পুরো মৌসুম টাই ঠান্ডা জনিত সমস্যায় ভুগেন।
অনেক বাচ্চার আবার অতিরিক্ত সর্দির কারণে শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। শীতের সময় সর্দি হলে অধিকাংশ মানুষ নিউমোনিয়া ভেবে বাচ্চাদের অযথাই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো শুরু করে দেয়। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে অল্প কিছুতেই শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তাই ঠান্ডা জনিত সমস্যায় প্রথম পর্যায়ে আপনার শিশুকে এন্টিবায়োটিক না দিয়ে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা বাচ্চাদের সর্দি কাশি সারাতে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি সঙ্গেই থাকবেন।
বাচ্চাদের সর্দি কাশির সময় যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখবেন
প্রায় সব বাচ্চাই সর্দি কাশির মতো কমন এই সমস্যায় ভোগেন। সব বাচ্চাদের সর্দি কাশির সময় যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি তা হল
- পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। ছয় মাস বয়সের কম বাচ্চা হলে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াবেন।
- সব সময় শিশুর নাক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন।
- খেয়াল রাখবেন আপনার বাচ্চার যেন শ্বাস নিতে কষ্ট না হয়।
- সব সময় চেষ্টা করবেন শিশুকে আলো বাতাস পূর্ণ জায়গায় রাখতে।
আরও পড়ুনঃ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে করণীয়
- আপনার শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাচ্ছে কিনা সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
- রাতে ঘুমানোর সময় চেষ্টা করবেন বাচ্চাকে উঁচু জায়গায় বা উঁচু বালিশে শোয়াতে , এতে বাচ্চার শ্বাস নিতে সুবিধা হবে এবং নাকে জমে থাকা শ্লেষ্মা বের হতে পারবে।
- সব সময় চেষ্টা করবেন আপনার সন্তানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে। এ সময় আপনার সন্তানকে কোন ধরনের ধুলাবালির সংস্পর্শে যেতে দিবেন না।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন আপনার সন্তানের সর্দি-কাশির সময় কিভাবে খেয়াল রাখবেন। তবে যদি সর্দি কাশির মাত্রা বেশি হয় তাহলে অবশ্যই বাচ্চাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।
বাচ্চাদের সর্দি কাশি সারাতে ঘরোয়া উপায়
শীত শুরু হতে না হতেই যেহেতু সর্দি-কাশির উপদ্রব বেড়ে যায় তাই আপনাকে শীত শুরু হওয়ার আগে থেকেই বাচ্চার প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। যখন থেকে উত্তরের হিমেল হওয়া বইতে শুরু করবে তখন থেকেই আপনার বাচ্চাকে অবশ্যই এক্সট্রা কেয়ার নেওয়া উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক সর্দি কাশি থেকে বাচ্চা কে মুক্ত রাখতে কোন ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন।
- অবশ্যই বাচ্চার শরীরে গরম কাপড় পরিয়ে রাখবেন। এতে আপনার বাচ্চার শরীর উষ্ণ থাকবে।
- বাচ্চাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামের ব্যবস্থা করবেন।
- বাচ্চাকে গোসল করানোর সময় অবশ্যই কুসুম গরম পানি ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
- বাচ্চাদের সর্দি কাশি দূর করতে প্রতিদিন দুই চামচ কুসুম গরম পানিতে কয়েক ফোটা লেবুর রস এবং কয়েক ফোঁটা তুলসীপাতার রস এবং কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এতে আপনার বাচ্চা বুকের কফ অনেকটা হালকা হয়ে যাবে এবং বাচ্চা অনেক আরাম পাবে।
- আপনার বাচ্চার বয়স যদি ছয় মাসের কম হয় তাহলে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকের দুধ পান করাবেন।
- আপনার বাচ্চার বয়স যদি ১ বছরের বেশি হয় তাহলে তাকে বিভিন্ন সবজি দিয়ে পুষ্টিকর স্যুপ তৈরি করে খাওয়াতে পারেন এবং বাচ্চার বয়স যদি দুই বছরের বেশি হয় তাহলে দিনে এক থেকে দুই গ্লাস কমলা লেবুর রস খাওয়াতে পারেন।
- সামান্য একটু কালোজিরা, দুই কোয়া রসুন এবং এক কাপের মতো সরিষার তেল নিয়ে সবকিছু একসাথে গরম করে আপনার বাচ্চার বুকে ওপিঠে মালিশ করতে পারেন। ভালো উপকার পাবেন।
- আপনার বাচ্চার কাশি হলে তাকে গরম স্যুপ খাওয়াতে পারেন। এতে কাশি কমে যাবে এবং গলা ব্যথা থাকলে সেটাও কমতে সাহায্য করবে।
- কাশি থেকে মুক্তি পেতে আপনার বাচ্চাকে ঘরে থাকা তাল মিশ্রি দিতে পারেন। তাল মিশ্রি গলার আদ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি কাশি সময় গলার জ্বালাপোড়া কমায়।
- এছাড়াও সামান্য একটু আদা কয়েকটি তুলসী পাতা সাথে থেঁতো করে সাথে হাফ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। ভালো উপকার পাবেন।
- গরম দুধের সাথে সামান্য একটু হলুদ মিশিয়ে খাওয়ালে সর্দি কাশি ছাড়াও জমে থাকা কফের সমস্যা দূর করবে।
আপনার বাচ্চার বয়স অনুযায়ী এই ঘরোয়া উপায় গুলি মেনে চলতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন বাচ্চা সর্দি কাশির মাত্রা বেশি হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম
প্রতিনিয়ত আমাদের বাচ্চা সর্দি কাশি লেগেই থাকে। যার জন্য বিভিন্ন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়। তবে আপনি যদি সর্দি কাশির প্রথম পর্যায়ে আপনার বাচ্চাকে এই ওষুধগুলো দিতে পারেন তাহলে ভালো উপকার পাবেন আশা করা যায়।
ড. আহমেদ নাজমুল আনাম এর মতে সর্দির জন্য এলাট্রল, এলাট্রল বিভিন্ন ফর্মে পাওয়া যায় ট্যাবলেট ফরমে পাওয়া যায়, সিরাপ ফর্মে পাওয়া যায় এবং ড্রপ ফর্মে পাওয়া যায়। ওষুধটি কিভাবে খাওয়াবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক,২-৬ বছরের বাবুদের সিরাপ এলাট্রল আধা চা চামচ দিনে ২ বার এবং৬ মাস-২ বছর আধা চা চামচ দিনে ১ বার দিতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার
এবার জেনে নেওয়া যাক কাশির জন্য কোন ওষুধটি আপনার বাচ্চাকে দিবেন। কাশির জন্য আপনি এমব্রক্সস সিরাপটি দিতে পারেন। এমব্রোক্স সিরাপ খাওয়ানোর নিয়ম পাচার বয়স যদি ০ থেকে ছয় মাস হয় তাহলে .৫ এম এল করে দিনে দুবার আর ছয় মাস থেকে এক বছরের বাচ্চাদের জন্য ১ এমএল করে দিনে দুবার দিতে পারেন।
সর্দি কাশির প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া পায়ের পাশাপাশি এই ওষুধ দুটো দিতে পারেন। তবে যদি নিউমোনিয়ার কোন লক্ষণ দেখেন তাহলে অবশ্যই অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
বাচ্চাদের সর্দি কাশি প্রতিরোধে করণীয়
বাচ্চাদের সর্দি কাশি থেকে প্রতিরোধ করতে তার বয়স অনুযায়ী পদক্ষেপ গুলো নিতে পারেন। আপনার বাচ্চাকে কিছুটা সময়ের জন্য রোদে রাখতে পারেন। প্রতিদিন কিছুটা সময় রোধে দাঁড়ানোর ফলে ভিটামিন ডি আপনার বাচ্চা শরীরে ঢুকবে এবং শিশুরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
শীতের মৌসুম শুরু হলে আপনার বাচ্চাকে উষ্ণ গরম কাপড় পরিয়ে রাখুন বিশেষ করে রাতে এবং সকালের দিকে। ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সর্দি কাশি হলে কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে
আপনার বাচ্চার সর্দি কাশির মাত্রা যদি অতিরিক্ত হয় এবং সাথে যদি জ্বর থাকে, বাচ্চার শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাহলে অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। কারণ এগুলো নিউমোনিয়ার লক্ষণ।
এই লক্ষণ গুলো দেখা দিলে কখনোই বাচ্চাকে বাসায় রাখবেন না বা কোন হাতুড়ে চিকিৎসা দিবেন না। এতে আপনার বাচ্চা প্রাণ সংশয় হতে পারে। তাই যত দ্রুত পারেন বাচ্চাকে নিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে চলে যাবেন এবং দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।
শেষ কথা
বাচ্চাদের সর্দি কাশি সারাতে ঘরোয়া উপায় গুলো বেশ ভালো কাজে দেয়। যেকোনো মেডিসিনের কমবেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। তবে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্ভাবনা নেই। বেশিরভাগ সময় সর্দি কাশির ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করে সর্দি কাশি থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন ।ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url