গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু সঠিক কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার কিছু উপায় সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃএখানে আরো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় ছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
ভূমিকা
বর্তমানে গ্যাস্টিক একটি সাধারণ সমস্যা। ছোট বড় সকলেরই প্রায় গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম রয়েছে। যারা এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন শুধু তারাই জানেন এটি কতটা যন্ত্রণাদায়ক। একটু মসলা জাতীয় খাবার খেলে বা একটু ভাজা পোড়া খেলে শুরু হয়ে যায় অস্বস্তিকর বুক জ্বালা পোড়ার সমস্যা।
বর্তমানে পেটের সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রিক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে কারণ আমরা বাহিরের ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বেশি খেয়ে থাকি। যার ফলে পেটে অম্বল তৈরি হয় এবং সেখান থেকে বুক জ্বালাপোড়া এবং পেটের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ
গ্যাস্ট্রিকের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ হলো
- পেট ব্যথা
- বদহজম
- খিদে মন্দা
- বমি বমি ভাব
- খিদে পেলেও খেতে ইচ্ছে হয় না
- গলার কাছে কিছু একটা আটকে থাকা
গ্যাস্ট্রিক কমানোর উপায়
গ্যাস্টিক সমস্যা কমাতে আপনি নিজেই কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। যেমন দ্রুত খাবার না খেয়ে ধীরে ধীরে ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার খাওয়া। খাওয়ার সময় কথা বলা থেকে বিরত থাকা। খাওয়ার সময় কথা বললে খাবার হজম হতে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
মসলাদার এবং চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা। কোন খাবার ভালো লাগলে অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়া। নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়া-কলাপ এবং স্ট্রেস কম নেওয়া। এই অভ্যাস গুলি পরিহার করতে পারলে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেক অংশে কমে যাবে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় গাদা গাদা ঔষধ না খেয়ে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। কারণ বেশি পরিমাণে ওষুধ সেবন করলে পরবর্তীতে এর সাইড ইফেক্ট দেখা দিতে পারে। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারে।
- আদা কুচি করে লবণ দিয়ে কাঁচা চিবিয়ে খেলে পেট ফাঁপা এবং পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধান হয়। আদাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। দূর করতে সহায়তা করে।
- পেট পরিষ্কার রাখতে কলা খেতে পারেন। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কলা এবং কমলা পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। এর ফলে আপনি গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
- গ্যাস দূর করতে দই খেতে পারেন কারণ দই খুব দ্রুত খাবার হজম করতে সহায়তা করে। দই হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ ভালো কাজ করে।
- গ্যাসের সমস্যা দূর করতে পেঁপে খেতে পারেন। পেপে কাঁচা ও পাকা দুই ভাবে খাওয়া যায়। পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম যা হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন খাবার তালিকা পেপে রাখতে পারে।
- পেটের গ্যাস দূর করতে প্রতিদিন শসা খেতে পারেন। শসাতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও ইনফ্লামেটরি উপাদান যা পেটের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
- এটা সমস্যা দূর করতে দারুচিনি খেতে পারেন। আধা চা চামচ দারুচিনির গুড়া এক গ্লাস পানিতে দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে দিনে দুইবার খেতে পারেন। এতে গ্যাসের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
- পেটে সমস্যায় খুব কার্যকরী একটি উপাদান হলো জিরা। কিছুটা গোটা জিরা চিবিয়ে খেতে পারেন এতে আপনার পেটের গ্যাস, বমি, পায়খানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
- এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ মুড়ি ভিজিয়ে সেই পানি পান করুন। দেখবেন পেটের গ্যাস দূর হয়ে যাবে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম
পেটের গ্যাস দূর করতে কোন ওষুধ সেবন না করে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করার মাধ্যমে এই গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। যে কোন মুহূর্তে পেটের গ্যাস কমাতে আপনারা এই ব্যায়ামগুলো অনুসরণ করতে পারেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ঔষধের তুলনায় কিছু কিছু ব্যায়াম পেটের গ্যাস কমাতে অনেক বেশি কার্যকর। পেট ফাঁপা ও গ্যাস জনিত ব্যাথা থেকে দ্রুত নিস্তার পেতে যে ব্যায়াম টি সর্বপ্রথম করবেন সেটি হচ্ছে
- পিঠের উপর শুয়ে শূন্যে পা দুটিকে বাইসাইকেলের মতো চালনা করবেন। গবেষণা বলছে এই ব্যায়ামটি পাঁচ মিনিট একটানা করলে পেটের গ্যাস অতি দ্রুত নির্মূল হয়ে যাবে।
- আরো একটি ব্যায়াম হলো চাইল্ড পোচ মানে আপনার হাত দুটোকে সামনের দিকে রাখবেন নামাজের সেজদা দেওয়ার ভঙ্গিতে। অবশ্যই আপনার হাঁটু, হাত, নাক এবং কপাল মাটির সাথে লাগাতে হবে। এভাবে সর্বোচ্চ ১ থেকে দেড় মিনিট থাকুন। চাইলে এটা ৩-৪ বারো করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার
- এছাড়া প্রতিদিন নিয়মিত তিরিশ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন। খাওয়ার পরে বসে বা শুয়ে না থেকে কিছু সময় ধীর স্থির ভাবে হাটাহাটি করতে পারেন এতে পেটের গ্যাস অনেক অংশে কমে যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক হলে করণীয়
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। বাইরের ভাজাপোড়া, ফাস্ট, ফুড দাওয়াত ও পার্টিতে মসলাযুক্ত অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খালি পেটে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
নিয়ম মেনে খাবার খাওয়া, পেট খালি না রাখা, সব ধরনের ভাজাপোড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকা এসব নিয়ম গুলো মেনে চললে গ্যাস্ট্রিক অনেকাংশেই প্রতিহত করা যায়। অনিয়মিত জীবনযাপন করার ফলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা বাড়ছে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সাধারণ হলেও ঘন ঘন এই সমস্যায় ভুগলে মোটেও হেলা করা ঠিক হবে না। কারণ এই সমস্যা থেকে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের পেটের ক্যান্সারের লক্ষণ। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে পারেন।
শেষ কথা
বেশিরভাগ মানুষ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করে থাকেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া মোটেও ঠিক না। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঔষধ খাওয়ার সমাধান নয়। নিয়ম মেনে জীবন যাপন করা সব থেকে বেশি জরুরি।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url