অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করছেন। আজ আমি আপনাকে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুখ দিয়ে কিছু উপায় সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
পোস্টস সূচিপত্রঃঅতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় এর পাশাপাশি আরও কিছু ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট জানতে হলে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

ভূমিকা

কখনো কখনো আমাদের সামান্য বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। আগামীকাল কি হবে সে বিষয় নিয়ে আমরা আগে থেকেই নানা ধরনের দুশ্চিন্তা করে বসে থাকি। যা হওয়ার নয় সেটা নিয়ে ভেবে বসি। যা আমরা নিজের অজান্তেই মন ও শরীরের ক্ষতি করে ফেলছি। 

দুশ্চিন্তা যেভাবে আসুক না কেন, যেমন পরিবেশ থেকে বা পরিবার থেকে। বেরিয়ে আসতে হবে নিজেকেই। তা না হলে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে নানা ধরনের বিপত্তি দেখা দিবে।

অতিরিক্ত চিন্তা করলে কি ক্ষতি হয়

অতিরিক্ত চিন্তা করলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয়। বিশেষ কোন কিছু নিয়ে চিন্তা হলে অস্থির না হয়ে সেটা মোকাবেলা করার চেষ্টা করতে হবে। আপনারা খেয়াল করবেন প্রত্যেকের জীবনে যেকোনো সমস্যার গুরুত্ব সময়ের সাথে সাথে কমে যায়। 


তাই যে কোন সমস্যা আসলে সে সমস্যার গুরুত্ব কমে যাবে। তা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে ঘাবড়ে যাবেন না। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়ে থাকে।

স্নায়ুতন্ত্র অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে আমাদের শরীরের স্ট্রেস হরমোন দ্রুত নিঃসৃত হয়ে থাকে এই স্ট্রেস হরমোন আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ও হার্টবিট স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়িয়ে তোলে। হাত পায়ের রক্ত চলাচল বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের ব্লাড সুগারও বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে এর দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব আমাদের প্রত্যেকের হৃদযন্ত্র, শিরা ও ধমনী, পেশি এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পড়বে।

হৃদযন্ত্র অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ, স্টোক ও হার্টবিট এর আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে। অতিমাত্রার দুশ্চিন্তা আপনার হরমোনকে ট্রিগার করে। যা আপনার হৃদপিন্ডের পেশীকে শক্ত ও হৃদস্পন্দন দ্রুত করে দিতে পারে। প্রতিনিয়ত এমন চলতে থাকলে তবে আপনার রক্তনালী গুলো ফুলে যাবে এবং এর ফলে ধমনীতে হতে পারে ব্লক।

পরিপাকতন্ত্র অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে থাকে। যার ফলে কমে আসে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যার কারণে শরীরে কোন জীবাণু প্রবেশ করলে শরীর জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে না। এতে খুব সহজেই যেকোনো রোগ শরীরের বাসা বাঁধতে পারে। বিশেষ করে ভাইরাস ও জীবানু জাতীয় রোগ যেমন ফ্ল ও ভাইরাস জনিত রোগ। এছাড়াও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে আলসারসহ কিডনির সমস্যা ও তৈরি হতে পারে।

শ্বাস প্রশ্বাস বিশেষ করে যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ যেমন হাঁপানিও ফুসফুসের রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে হার্টবিট বেড়ে যায় এবং জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। যার ফলে নানা ধরনের বিপত্তি দেখা দেয়।

অপ্রয়োজনীয় চিন্তা দূর করার উপায়

বিশেষজ্ঞদের মতে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। তাই অলস সময় পার না করে সময়কে কাজে লাগাতে শিখুন। প্রত্যেক মানুষেরই কিছু না কিছু শখ থাকে। আপনারও নিশ্চয়ই আছে? অলস ভাবে বসে থেকে সে সময়টা নষ্ট না করে আপনার শখটা পূরণ করার চেষ্টা করতে পারেন। যার ফলে আপনি কর্মব্যস্ত থাকবেন আপনার মাথায় কোন অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাবে না। 

আপনার যদি কোন বড় ধরনের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সেটা চিহ্নিত করুন। দুশ্চিন্তা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এই দুশ্চিন্তা যখন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় সেটা মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনকে ব্যাহত করে। কোন কাজে মন বসানো যায় না। যার ফলে প্রতিনিয়ত আমাদের মন মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই কি কারনে দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার সমাধান খোঁজাটা খুব জরুরী। 

সমস্যার কথা ভেবে কখনো সমাধান আসে না বরং যেটা হওয়ার হয়ে গিয়েছে সেটা ভেবে সমাধান নিয়ে নিন। কারণ যা হয়েছে তার পরিবর্তন নাও হতে পারে। নিজেকে সময় দিন দিনের কিছুটা সময় নিজের জন্য আলাদা করে রাখুন। এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন অহেতুক দুশ্চিন্তার কারণে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। 


যা থেকে খিটখিটে মেজাজ এবং অল্পতেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। মন খুলে সবার সাথে কথা বলুন এবং হাসিখুশি থাকুন। চিন্তা করার দোষের কিছু না কিন্তু অতিরিক্ত চিন্তা করা আপনার জন্য ক্ষতিকারকও বটে। দুশ্চিন্তাকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করুন, দুশ্চিন্তা যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে মানুষ চাইলেও এই দুশ্চিন্তা ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে না। দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 

নিউইয়র্কের রচেস্টার মেডিকেল সেন্টারে মনোরোগবিদ্যার সহকারি অধ্যাপক ড. ক্যাথি হেফনার বলেন, বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে দুশ্চিন্তা স্বল্প পুষ্টিকর খাবার খাওয়া বা ব্যায়াম করার অনীহার ফলে যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা যায় মানসিক চাপের ফলের সৃষ্ট সমস্যা গুলো সাধারণত আরো ভয়াবহ হয়ে থাকে।

মেডিটেশন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ দূর করতে এবং মনকে শান্ত করতে মেডিটেশন অত্যন্ত কার্যকারী একটি ব্যায়াম। মেডিটেশন দেহের দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। যার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। নিয়মিত মেডিটেশন বা ইয়োগের ফলে শারীরিক সমস্যা অনেক অংশে কমে যায়।

ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুন যাদের মনের মধ্যে বিভিন্ন কারণ নিয়ে ক্ষোভ জমা করে রাখার মত বদ অভ্যাস রয়েছে তারাই হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় বেশি ভোগে। ক্ষমা করার পরিবর্তে মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যায়। তাই মনের মধ্যে ক্ষোভ পুষে না রেখে তা ঝেড়ে ফেলুন এবং মানুষকে ক্ষমা করার মানসিকতা তৈরি করুন।

নিজেকে ব্যস্ত রাখুন অলস ভাবে শুয়ে বসে না থেকে সময়কে কাজে লাগান। বলা হয়ে থাকে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আপনার হাত এবং মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে এমন কাজ করার চেষ্টা করুন। আপনার যা ভালো লাগে বই পড়া, গেম খেলা এবং হাতের কাজ যা খুশি করুন নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। দেখবেন দুশ্চিন্তা আপনার কাছে আসতে পারবে না।

নির্ভুল হওয়ার চিন্তা বাদ দিন মানুষ ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। নিজেকে নির্ভুল ভাবা একদমই বোকার মত চিন্তা ধারা। যারা এ ধরনের চিন্তাভাবনা করে যে তার কাজে কোন ভুল নেই সে একদমই নির্ভুল তাহলে সে এক ধরনের মানসিক রোগী। কেননা এ ধরনের মানুষ অতিরিক্ত খুঁতখুঁতি মনোভাবের কারণে ব্যক্তি চরিত্রের শত্রুতার মনোভাব তৈরি হয়। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হতে পারে যা পারে হৃদরোগ ডেকে আনে।

বন্ধুদের সাথে সময় কাটান বেশিরভাগ সময় যারা একা থাকে তাদের মন মানসিকতা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়। সব সময় একা থাকার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হয়। একাকী ঘরে না থেকে অবসর সময়টুকু বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঘুরে বেড়াতে পারে। এতে আপনার মন-মানসিকতা ভালো থাকবে এবং কাজে মন বসবে।

পর্যাপ্ত ঘুমান মানুষের সুস্থতার জন্য ঘুম অনেক জরুরী। কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘন্টা ঘুমাতে হবে। সারাদিনের যত ক্লান্তি আছে যত টেনশন আছে ঘুমালে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যখন কোন কিছু ভালো না লাগবে বা কোন কিছুতে মন দিতে না পারবেন তখন একটু শান্তনির বিলি জায়গা দেখে ঘুমিয়ে নিন দেখবেন সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। এরপর যে কোন কাজ প্রাণোচ্ছলভাবে শেষ করতে পারবেন।

প্রাণ খুলে হাসুন প্রাণ খুলে হাসলে মানুষের মন ভালো থাকে। সবসময় চেষ্টা করবেন হাসিখুশি থাকা। প্রাণ খুলে হাসলে শতকরায় 20 ভাগ ক্যালরি পড়ানো যায়। তুলনামূলক গম্ভীর চরিত্রের মানুষের তুলনায় হাসিখুশি মানুষের হৃদস্পন্দনের হার অনেক বেশি। যেসব মানুষ প্রতিনিয়ত হাসিখুশি থাকে তাদের শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং সব ধরনের কাজে মন বসাতে পারে। তাই হাসি খুশি থাকা আমাদের শরীর সুস্থ রাখার একটি বড় অংশ।

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সর্বপ্রথম উপায় হলো মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে কথা বলা। মানুষ দুশ্চিন্তা গ্রস্ত অবস্থায় যদি কোন শক্তিশালী কারো সাথে কথা বলে তাহলে কিছুটা নির্ভার অনুভব করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর থেকে আর শক্তিধর কেউ নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সব কিছু করতে তিনি সক্ষম।

অতএব আপনার দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য আল্লাহর সাথে কথা বলুন, সালাতে চলে যান, সিজদায় গিয়ে আল্লাহর সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলুন, তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করুন, কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন অংশ তেলাওয়াত করতে পারেন ধীরগতিতে। দেখবেন আল্লাহর রহমতে আপনার অন্তরে প্রশান্তি চলে আসবে। আল্লাহকে স্মরণ করুন দেখবেন আপনার অন্তরের প্রশান্তি চলে আসছে।

কি খেলে চিন্তা দূর হয়

চিন্তা ছাড়া মানুষের জীবন কল্পনা করা যায় না। মানুষের চলার পথে প্রতিনিয়ত ভালো-মন্দ দুই ধরনের কারণ জড়িয়ে আছে। ভালো দিকগুলো মানুষ মনে না রাখলেও খারাপ দিকগুলো মানুষের মনে গেঁথে থাকে, যা থেকে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হয়। দুশ্চিন্তা মানুষের মস্তিষ্কে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। 

তাই দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে কিছু খাবার আমাদের সাহায্য করতে পারে যেমন পালং শাক, গাজর, বেরি জাতীয় ফল, গ্রিন টি, টক দই, ডার্ক চকলেট, বাদাম, ভিটামিন সি,ওটসমিল ও রসুন এই খাবারগুলো আপনার দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকা এ ধরনের খাবার রাখতে পারেন।

শেষ কথা

দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনে চলার গতিতে বিঘ্ন ঘটায়। কিন্তু এমনও কিছু চিন্তা আছে যেটা না থাকলে জীবনে কাজ করার পেছনে উৎসাহ থাকতো না। কিছু কিছু চিন্তা কাজ করার পেছনে তালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। সব চিন্তাকে পজিটিভলি নিবেন, কোন ধরনের চিন্তায় ভেঙে পড়বেন না।

আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url