প্রাকৃতিক ভাবে চুল গজানোর উপায় ও চুলের যত্ন
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো প্রাকৃতিক ভাবে চুল গজানোর উপায় ও কিভাবে চুলের যত্ন নিবেন সে সম্পর্কে অনেক খোঁজাখুজি করছেন? কিন্তু আপনি সঠিক কোন উত্তর পাচ্ছেন না। আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে এবং চুলের যত্ন নিতে পারবেন সে সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
পোস্টসূচীপত্রঃএখানে আমরা আরো আলোচনা করেছি চুল পরা বন্ধ ও নতুন চুল গজানো সম্পর্কে ঘরোয়া উপায়। ইম্পরট্যান্ট আরও পয়েন্ট সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
ভূমিকা
চুল মানুষের চেহারা সৌন্দর্যের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের প্রত্যেকের বাসায় থাকা জিনিসগুলো দিয়ে নিয়মিত ভাবে চুলের যত্ন করা যায়। এবং আমরা যেসব খাবার খাই এগুলোর মধ্যে প্রায় সব খাবারেই বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়। যা আমাদের চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায়।
চুলের রুক্ষতা দূর করা ও চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের হেয়ার প্যাক আমরা ব্যবহার করতে পারি। এতে চুল পড়া বন্ধ হবে ওর নতুন চুল বাজাতে সাহায্য করবে।
যে সব ভিটামিন চুল পড়া বন্ধ ও চুল গজাতে সাহায্য করে
মানব দেহের চুলের সৃষ্টি লগ্ন হতে মাথার ত্বকে পুষ্টির জোগান দেয় বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন। খাদ্য তালিকায় যে সকল ভিটামিনের অভাবে আমাদের চুল অকালে ঝড়ে যায়। চুল পড়া কমাতে যে সকল ভিটামিন প্রয়োজন এবং যে যে খাবারে সেই ভিটামিন গুলো পাওয়া যায় পাশাপাশি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বাজারে যে ধরণের ভিটামিন পাওয়া যায় চলুন জেনে নেই।
- ভিটামিন সি- এটি চুলের জন্য বেশ উপকারী। ভিটামিন সি আমরা- কমলা, মাল্টা, লেবু, আঙ্গুর, পেয়ারা, পেঁপে থেকে পেয়ে থাকি। পাশাপাশি আমরা যেসকল সবজি খাই- যেমন- টমেটো, ব্রকলি এসব সবজি থেকে ভিটামিন সি পেয়ে থাকি।এসব প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে খুব পরিচিত একটি ট্যাবলেট হল সিভিট সেটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
- ভিটামিন ডি- চুলের বৃদ্ধির জন্য আরও একটি ভিটামিন হল ভিটামিন ডি। এটি আমরা প্রাকৃতিক ভাবে পেয়ে থাকি।যদি সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রোদে দাঁড়াই তাহলে আমরা ভিটামিন ডি পাবো। পাশাপাশি আমরা খাবারেও ভিটামিন ডি রাখতে পারি। যেমন- দুধ বা দুধ জাতীয় খাবারে আমরা ভিটামিন ডি পাই। পাশাপাশি সামুদ্রিক তেল জাতীয় মাছে ভিটামিন ডি রয়েছে।
- ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড- চুলের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড এটি আমরা পাই বিভিন্ন সামুদ্রিক তেল জাতীয় মাছে। যেমন-টোনা মাছ, স্যালমন মাছ পাশাপাশি আমাদের দেশীয় ইলিশ মাছ এটাতেও ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়।
- জিংক- জিংক আমরা পাবো লাল মাংস, ডিম, দুধ, পেয়ারা, কালো জাম, কাজু বাদাম এসব খাবারে জিংক পাওয়া যায়। যা আমাদের চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন ই- চুলের জন্য বেশ উপকারী একটি ভিটামিন হল ভিটামিন ই। ভিটামিন ই এর উৎস হল- সয়াবিন, বাদাম, পুইশাক, ব্রকলি, পালংশাক এবং ডিম এ প্রত্যেকটা ভিটামিন আমাদের চুল পড়া বন্ধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
চুল পড়া বন্ধ করে চুল গজানোর ঘরোয়া পদ্ধতি
চুল গজানোর ঘরোয়া পদ্ধতি আমরা কম বেশি সকলেই জানি। ঘরোয়া কিছু উপায় আছে যার মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
- প্রতিদিন অন্তত দুইবার পাঁচ মিনিট করে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। যাতে করে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং চুল পড়া বন্ধ ও নতুন গজাতে সাহায্য করবে।
- আমরা প্রতিনিয়ত রান্নার কাজে পিঁয়াজ ব্যবহার করি। পিঁয়াজের রস মাথার ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। যা আমাদের চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- মেথি মসলা হিসেবে ব্যবহার করলেও এটি আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারী। মেথি ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই ভেজানো মেথি পাটায় পিশে পানিসহ মাথায় ত্বকে এবং সমস্ত চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে শ্যাম্পু করলে চুল যেমন সিল্কি হয় তেমন চুলের গড়া মজবুত হয়।
- সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন তাজা অ্যালোভেরা মাথার ত্বকে লাগিয়ে দুই থেকে তিন ঘন্টা রেখে আয়ুর্বিদিক শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে।
চুলের রুক্ষতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
যেহেতু সামনে শীতকাল আসছে,শীতের সময় প্রকৃতি অনেক রুক্ষ হয়ে যায়।সেই সাথে আমাদের ত্বক ও চুল অনেক রুক্ষ হয়ে যায়।এই শীতের সময় সব থেকে বেশি আমাদের চুলের যত্ন নিতে হয়।চুলকে রুক্ষতার হাত থেকে বাঁচাতে তেমনই কমন কিছু ঘরোয়া চুলের যত্ন হল
- সপ্তাহে অন্তত তিনদিন চুলে তেল লাগাতে হবে।যা আমাদের চুলকে মসৃণ ও হেলদি করবে।
- যেহেতু শীতকালে আমাদের খুশকির সমস্যাটা বেরে যায় । এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য ভালো একটা হেয়ার অয়েল ব্যবহার করা উচিত।ঘরোয়া ভাবে আদার রসটাও আমরা ব্যবহার করতে পারি এতে ভাল ফর পাওয়া যাবে।আদার রস মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে খুশকি দুর হবে,চুরের গোরা মজবুত হবে এবং মাতার ত্বকও ভালো থাকবে।গোসলের সময় ভালো একটি শ্যাম্পু দিয়ে চুর ধুয়ে নিতে হবে এবং ভালো একটি কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। এতে চুলের রুক্ষতা দুর হবে ও চুল হেলদি হবে।
চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক ব্যবহার
চুলের যত্নের গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি উপাদান হল হেয়ার প্যাক। প্রাকৃতিক ভাবে ঘরে থাকা উপাদান দিয়ে আমরা বিভিন্ন হেয়ার প্যাক তৈরি করতে পারি
১. মেথি
চুলের যত্নে মেথির উপকারিতার কথা আমরা সকলে জানি।মেথির গুরার সাথে টকদই,ডিম, চায়ের লিকার ও সামান্য লেবুর রস দিয়ে একটা প্যাক তৈরি করে নিতে হবে।প্যাকটি ৩০ মিনিট মাথায় রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।মেথির হেয়ার প্যাকটা ব্যবহার করার ফলে চুলের গোরা মজবুত হবে চুল মসৃণ ও হেলদি হবে।
২.ডিম
চুলের জন্য অনেক কার্যকরী একটা হেয়ার প্যাক হল প্রোটিন হেয়ার প্যাক।আমরা জানি ডিম হল প্রাকৃতিক প্রোটিনের উৎস।এই হেয়ার প্যাক প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই তৈরি করা যায়।প্যাকটি তৈরি করতে তাজা অ্যালোভেরার রস ব্লেন্ড করে নিয়ে তাতে টকদই,ডিম ও লেবুর রস মিশিয়ে এই প্যাকটি তৈরি করতে হয়।এই প্যাকটি মাথার ত্বক ও সমস্ত চুলে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।এই প্রোটিন প্যাকটি চুলের গোরা মজবুত ও চুলকে সিল্কি সাইনি করতে সাহায্য করে।
৩.পেঁয়াজ
পেয়াজ আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করলেও চুলের যত্নে পেয়াজের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।তাজা অ্যালোভেরার জেল ও পেঁয়াজের রস এক সাথে মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে।তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে।পেযাজের রস ব্যবহার করার ফলে চুরের গোরা মজবুত ও চুল হেরদি হবে।
চুলের ঘনত্ব বাড়াতে প্রাকৃতিক উপায়
প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের ঘনত্ব বাড়াতে মেহেদী পাতার গুড়া, আমলকীর গুড়া আর চায়ের লিকার এক সাথে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারি। এই প্যাকটি অন্তত ৩০ মিনিট মাথায় রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। কিছু দিনের মধ্যে চুলের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে।ডিম আমাদের চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ মুখের কালো তিল দূর করার ক্রিমের নাম জানুন
একটি ডিমের সাদা অংশ নিয়ে ভালো ভাবে ফেটিয়ে চুলের গোরা থেকে আগা পর্যন্ত ব্রাশ অথবা হাতের সাহায্যে লাগাতে হবে।তারপর ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ডিম ব্যবহার করলে আলাদা করে কন্ডিশনার লাগানোর কোন প্রয়োজন নেই।সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করতে পারেন। ডিম ব্যবহার করার ফলে চুলের ঘনত্ব বাড়বে ও চুল মসৃণ হবে।
লেখকের মন্তব্য
আমার মতে চুল নারী পুরুষ উভয়েরই সৌন্দর্যের আধার। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে আমাদের চুল ঝরে যাচ্ছে। এই চুল পড়ার সমস্যা প্রায় প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই লক্ষণীয়। কারো চুল পড়ে যাচ্ছে বংশগত কারণে, কারো আবার শারীরিক নানা জটিলতার কারণে। কর্মব্যস্ত এই জীবনে বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা চুলের যত্ন নিয়ে থাকি যেটি চুল ঝরে যাওয়ার মূল কারণ।
তাই আমরা চেষ্টা করব সপ্তাহে অন্তত দুইদিন প্রাকৃতিকভাবে আর্টিকেলে উল্লেখিত হেয়ার প্যাকগুলি ব্যবহার করার। এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার। তাহলে আমাদের নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে এবং চুলের গোড়া শক্ত হবে চুল হবে মসৃণ ও ঝলমলে।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত জনদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url