মাসিকের সময় তীব্র ব্যথার কারন - মাসিকের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো মাসিকের সময় তীব্র ব্যথার কারণ - মাসিকের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়। এই উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃএখানে আরো আলোচনা করা হয়েছে মাসিকের সময় তল পেট ব্যথা, কোমর ব্যথা সহ আরো অনেক ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট। এছাড়াও এই ব্যথাগুলো থেকে কিভাবে উপশম পাবেন সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
ভূমিকা
মাসিক সাধারণত একটি শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা সকল নারীদের প্রজননের সঙ্গে সম্পর্কিত। সাধারণত প্রতি মাসেই এই শরীর বৃত্তীয় প্রক্রিয়াটি হয়ে থাকে বলে একে সচরাচর মাসিক বলা হয়। নারীদের এই মাসিক শুরু হয় সাধারণত ১০ বছর থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তবে কিছু কিছু মেয়েদের ক্ষেত্রে এর আগেও হতে পারে।
এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত শারীরিক শক্তি এবং ভৌগোলিক আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিমাসেই নিয়মিতভাবে এই চক্রটি চলতে থাকে। মাসিকের এই চক্রটি সাধারণত ২৮ দিন পর পর হয়ে থাকে বা কিছু আগে পরেও হতে পারে।
মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথার কারণ
মাসিকের সময় মেয়েদের সবচেয়ে কমন একটি বিষয় হলো তীব্র তলপেট ব্যথা। বেশিরভাগ মেয়েদেরই মাসিকের সময় এই সমস্যাটি দেখা দেয়। কিছু কিছু মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক শুরু হওয়ার ১ থেকে ২ দিন আগে অল্প অল্প ব্যথাটি অনুভব করা শুরু হয়। কিন্তু এই ব্যথাটি কেন হয় সে সম্পর্কে আমরা অধিকাংশ মানুষই জানিনা।
ব্যথার মাত্রা কতটুকু পর্যন্ত হওয়া স্বাভাবিক চলুন জেনে নেওয়া যাক। জরায়ুর সংকোচন এর কারণে মাসিকের সময় ব্যথা অনুভব হয়। এ সময় ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই ব্যথাটা তীব্র আকার ধারণ করে। যদিও এর পিছনে কিছু কারণ থাকে, চলুন জেনে নেই।পোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক হরমোনের মাধ্যমে মাসিকের সময় জরায়ু সংকোচন হয়।
কিছু কিছু মানুষের শরীরে এই পোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক হরমোন বেশি থাকায় তাদের তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা হয় কিন্তু কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়াই। তবে অনেক ক্ষেত্রে মাসিকের এই তীব্র ব্যথা কিছু রোগের লক্ষণ হতে পারে। যে সমস্ত রোগের কারণে মাসিকের সময় তীব্র তলপেট ব্যথা হয় চলুন জেনে নেই
- এন্ডোমেট্রিওসিস
- ফাইব্রয়েড
- সার্ভাইকাল স্টেনোসিস
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনন্ড্রোম
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
মাসিকের সময় কোমর ব্যথা হয় কেন
বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই কর্মমুখী। বিশেষ করে নারীরা ঘরে বসে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে ভীষণ পছন্দ করে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে বসে থাকার ফলে কোমর ধরে যাওয়ার সমস্যাটি দেখা দেয়। এর মধ্যে মাসিক হলে তো কথাই নেই।
মাসিকের সময় প্রাকৃতিকভাবে তলপেট এবং কোমরে ব্যথা অনুভব হয়। কিছু কিছু মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য এ ব্যথাটা আরো তীব্র আকার ধারণ করে। মাসিকের সময় যদি এই কোমর ব্যথাটা তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে অবশ্যই বেশিক্ষণ বসে থাকা ঠিক নয়।
পাশাপাশি একজন ভালো গাইনোলজিস্ট কে দেখাতে ভুলবেন না। অধিকাংশ মেয়েদেরই মাসিকের সময় তলপেট, কোমর, পিঠ এবং পায়ে ব্যথা অনুভব হয়। তবে ধীরে ধীরে মাসিক কমে যাওয়ার সাথে এই ব্যথা সেরে যায়।
মাসিকের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
ডা. তাসনিম জারার মতে মাসিকের সময় কোমর ও তলপেট ব্যথা কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
গরম সেক মাসিকের ব্যথা কমাতে গরম শেখ খুবই ভালো কাজ করে। গরম সেক দিলে তলপেটে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়, মাংসপেশী শিথিল হয় ফলে ব্যথা কমতে শুরু করে।
কুসুম গরম পানিতে গোসল মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। গরম সেক যেভাবে ব্যথা কমায়, কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল ঠিক একইভাবে ব্যথা কমায়।
আলতো হাতে মালিশ মাসিকের সময় যে জায়গাটাতে ব্যথা করছে সেখানে আলতো করে হাত বুলিয়ে মালিশ করতে পারেন। বৃত্তের আকারে মালিশ করবেন এতে আরাম পেতে পারেন।
আদা যাদের মাসিকে তীব্র ব্যথা হয় তারা নিয়মিত মাসিক শুরু হলে আদা খেতে পারে। মাসিকের শুরুতে ব্যথা হওয়ার আগে আদা খেতে পারে। আদা কুচি করে এমনিতেও খেতে পারেন ,আবার গরম পানির সাথে খেতে পারেন, অথবা আদা দিয়ে চা তৈরি করেও খেতে পারে। দিনে তিন বেলা করে মাসিকের প্রথম তিন চার দিন খেতে পারে ।এতে ব্যথা অনেকাংশে কমে যাবে।
হালকা ব্যায়াম মাসিকের সময় হালকা ব্যায়াম করলে ব্যথা কমতে পারে। যেমন হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, ইয়োগা, যোগব্যায়াম। মাসিকের সময় ছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করলে মাসিকের ব্যথা কমার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই এই অভ্যাসটা গড়ে তুলতে পারে।
শ্বাসের ব্যায়াম মাসিকের সময় শ্বাসের ব্যায়াম অনেক কার্যকরী। শুধু মাসিকের ব্যথায় নয় যে কোন ব্যথার ক্ষেত্রে আপনারা এই ব্যায়ামটি কন্টিনিউ করতে পারেন। এই ব্যায়ামটি যেভাবে করবেন কোন কিছুর সাথে বসে বা দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে পেট ফুলাবেন এবং মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে সার্চ বের করবেন।
মাসিকের সময় যা খাবেন যা খাবেন না
মাসিকের সময় মেয়েদের নানা ধরনের শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে সময় মেজাজ অতিরিক্ত খিটখিটে হয়ে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়, কারো কারো বেশি খিদে পায়, অনেকের আবার বমি বমি ভাব হয়। তাই তাই মাসিকের সময় যেসব খাবার আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়তা হল
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার মাসিকের সময় মেয়েদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্ত বের হয়ে যায়। যার ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খুবই জরুরী। মাসিকের সময় আপনি যেসব খাবার খেতে পারেন তা হল মাছ, মাংস, ডিম, কচু শাক,, ফুলকপি, ধনেপাতা, তরমুজ, খেজুর , আমড়া খেতে পারেন
মাছ মাসিকের সময় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীরের জন্য খুবই উপযোগী। মাছের মধ্যে আপনি ইলিশ, রূপচাঁদা,, চিংড়ি, লইট্টা ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন কারণ সামুদ্রিক মাছের রয়েছে ওমেগা 3 ফাটি এসিড, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি। যার শরীরের ক্ষয় পূরণ করতে সহায়তা করে
কলা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন। যা আপনার মাসিকের সময় আপনাকে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব পূরণ করতে সহায়তা করবে।
পানি মাসিকের সময় রক্তের পাশাপাশি শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায় যার ফলে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। তাই মাসিকের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
ফলমূল মাসিকের সময় খেতে পারেন কারণ ফর্মূলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন। বিশেষ করে ভিটামিন সি জাতীয় ফল খাওয়ার উচিত।
মাসিকের সময় যেসব খাবার না খাওয়াই ভালো তা হল
চর্বিযুক্ত খাবার মাসিকের সময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। কেননা এ সময় বিভিন্ন হরমোনাল পরিবর্তন দেখা যায়
অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার পিরিয়ডের সময় এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে রক্তের সুগারের পরিমাণ পরিবর্তন হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
চা ও কফি কম খাওয়া উচিত। কারণ এতে থাকা ক্যাফেইনের কারণে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায়
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের প্রতিমাসে নিয়মিত মাসিক হওয়াটা স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। এই নিয়মিত প্রক্রিয়াতে যদি কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় তাহলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়। তখন আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন আপনার শরীরে কোন সমস্যা হয়েছে।
অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে যেমন অতিরিক্ত কাজের চাপ, থাইরয়েডের সমস্যা, মানসিক চাপ, ওজনরা, ওভারির সমস্যা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অতিরিক্ত ব্যায়াম এসব কারণগুলোর কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। তবে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে সেগুলো অবলম্বন করে আপনি অনিয়মিত মাসিকে নিয়মিত করতে পারেন।
ব্যায়াম নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে আপনার অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম আছে যেমন যোগ ব্যায়াম, ইয়োগা এবং প্রতিদিন হাটাহাটি করার ফলে আপনার পেশি বাধা পেয়ে থাকে, এতে পেশি সংকোচন শুরু হয়। যার ফলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়।
টক জাতীয় ফল তেতুল, মাল্টা ও জলপাই অনিয়মিত মাসিক কে নিয়মিত করতে সহায়তা করে। এক কাপ পানিতে পরিমাণ মতো তেঁতুল ভিজিয়ে সামান্য চিনি অথবা লবণ মিশিয়ে সে পানি পান করুন নিয়মিত দুইবেলা পান করলে অনিয়মিত মাসিক কে নিয়মিত করে দেবে।
আদা অনিয়মিত মাসিকে নিয়মিত করার জন্য আদা যথেষ্ট ভাল একটি উপাদান। এক গ্লাস পানিতে হাফ চা চামচ আদা কুচি নিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ করে দিনে দুইবার সে পানি পান করলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হবে।
আপেল সাইডার ভিনেগার অনিয়মিত মাসিককে নিয়মিত করতে খাওয়ার আগে দুই টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে সে পানি পান করতে পারেন। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার রক্তের ইনসুলিন ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে যার ফলে অনিয়ত মাসিক নিয়মিত করে থাকে।
স্বাস্থ্যকর জীবন অনিয়মিত মাসিকে নিয়মিত করতে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যাদের মাসিকের সময় হয়ে এসেছে সেই সকল মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের ফলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতে সহায়তা করে।
শেষ কথা
মনে রাখবেন বছরের ৯ বার মাসিক হওয়া স্বাভাবিক।তবে নয় বারের কম যদি মাসিক হয় তাহলে অবশ্যই যেকোনো গাইনোলজিস্ট এর সাথে কথা বলে নিবেন। প্রতিবার মাসিক হওয়ার মাঝে যদি ৩৫ দিনের বেশি সময় লেগে যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কেননা মাসিক সাধারণত ২৮ দিন পর হয়ে থাকে।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে বা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url