অটিজম শিশুর লক্ষণ - অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি

প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয় অটিজম শিশুর লক্ষণ - অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব কিভাবে আপনি অটিজম শিশু নির্ণয় করবেন সেই সম্পর্কে কিছু তথ্য। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে। অটিজম সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অটিজম শিশুর লক্ষণ-অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি
পোস্ট সূচীপত্রঃএই আর্টিকেলটিতে অটিজমের লক্ষণ বৈশিষ্ট্য সহ বেশ কিছু ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের চিনতে ও জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

একটি মা যখন গর্ভে সন্তান ধারণ করে তখন থেকেই সেই পরিবারে আনন্দ শুরু হয়ে যায়। দীর্ঘ নয় মাস অপেক্ষার পর যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় আসে তখন ভয়ের পাশাপাশি বাচ্চা আসার আনন্দে সবাই মুখিয়ে থাকে। একটি পরিবারে যখন একটি শিশুর জন্ম হয় তখন পরিবারের আনন্দ সীমাহীন হয়ে যায়। 

কিন্তু যখন পরিবারটি জানতে পারে তাদের শিশুটি স্বাভাবিক নয় তখন সেই পরিবারের উপর বিশেষ করে বাবা-মার ওপর যে ঝড়টা বয়ে যায় সেটা অকল্পনীয়। সব বাবা মাই চায় তার একটি সুস্থ সন্তান হোক। কিন্তু সেই সন্তানটি যদি অসুস্থ হয় তাহলে বাবা-মার কষ্ট হয় সীমাহীন।

সুস্থ সন্তান মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহম। শিশুদের বেশ কিছু শারীরিক ত্রুটির মধ্যে অটিজম অন্যতম। চলুন জেনে নেওয়া যাক অটিজম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

অটিজম কি

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত সমস্যাই হলো অটিজম।অটিজম হলো একটি শিশুর মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্থতাকে বোঝায়। শিশুর যদি অটিজম থেকে থাকে তাহলে তা ১৮ মাস থেকে ৩ বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। শিশুর আচরণের দিকে লক্ষ্য রাখলেই বুঝতে পারবেন শিশুটির মানসিক ত্রুটি আছে কিনা। 


যদি শিশুটির মানসিক ত্রুটি লক্ষ্য করেন যেমন একই কাজ বারবার করা এ ধরনের প্রবণতা থেকে আপনি শিশুটিকে শনাক্ত করতে পারবেন। একটি শিশুর জন্মের পর এই অটিজমের সমস্যাটি না বোঝা গেলেও ১৮ মাস থেকে ৩ বছরের মধ্যে আপনি বেশ কিছু লক্ষণ দেখতে পাবেন।

অটিজম শিশুর লক্ষণ

আপনি যেভাবে বুঝতে পারবেন আপনার শিশুটি অটিজম আছে কিনা। চলুন জেনে নেওয়া যাক অটিজমের কিছু লক্ষণঃ
  • অটিজম শিশুরা নিজের মতো করে চলতে পছন্দ করে।
  • অটিজম শিশু অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশা করতে পছন্দ করে না।
  • অন্য সবার সাথে কথা বলা কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজে নিজে কথা বলা পছন্দ করে।
  • অটিজম শিশুরা হয়তো প্রথম থেকেই কারো সাথে কথা বলে না অথবা বললেও ১৮ মাস বয়স থেকে কথা বলা কমিয়ে দেয়।
  • আক্রান্ত শিশুরা একই কাজ বারবার করতে পছন্দ করে।
  • অটিজম শিশু একই খেলা বারবার খেলে এবং একই ভাবে বারবার অঙ্গভঙ্গি করে।
  • অটিজম শিশুরা কিছু নির্দিষ্ট জিনিসের বাইরে অন্য কিছু পছন্দ করেনা যেমন নির্দিষ্ট জামা কাপড়ের বাইরে অন্য কিছু পড়তে পছন্দ করে না।
  • এছাড়াও নির্দিষ্ট খাবার খেতে পছন্দ করে।
অটিজম শিশুদের মধ্যে পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ বারবার করার প্রবণতা বেশি থাকে।

অটিজম শিশুর খাবার

যে সকল শিশুর অটিজম রয়েছে চলুন জেনে নেওয়া যাক তাদের কোন খাবার খাওয়া যাবে এবং কোন খাবার খাওয়া যাবে না।

অটিজম শিশুদের ক্ষেত্রে গ্লুটিন ও কেজিনযুক্ত খাবার বর্জন করা উচিত। গ্লুটিন বলতে সাধারণত গম, বার্লি,যব ইত্যাদি কে বোঝায়। আর কেজিন বলতে দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার কে বোঝায়। গ্লুটিন ও কেজিনযুক্ত খাবার শিশুদের মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি করে। তাই অটিজম বাচ্চাদের খাবার তালিকা থেকে ধীরে ধীরে গ্লুটিন ও কেজেনযুক্ত খাবার সরিয়ে ফেললে বাচ্চাদের অস্থিরতার পরিমাণ কমবে।

অটিজম শিশুদের খাদ্য তালিকা থেকে মিষ্টি জাতীয় খাবার বা চিনি দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে থাকে। এর ফলে অটিজম শিশুদের হাইপার অ্যাক্টিভিটি বা অস্থিরতার মাত্রা বাড়ে।

এছাড়াও টেস্টিং সল্ট ও সয়া সস যুক্ত খাবার শিশুর অস্থিরতা বাড়ানোর অন্যতম কারণ।

অটিজম শিশুর হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা দেওয়ার কারণ হলো থাইরক্সিন হরমোন এর নিঃসরণ কম থাকা। স্নায়বিক দুর্বলতা, মানসিক অক্ষমতা, অস্পষ্ট কথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। থাইরক্সিন হরমোন নিঃসরণ কম হওয়ার কারণে থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম খাওয়ালে অটিস্টিক শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি ও স্নায়বিক, শিশুর মানসিক উন্নতি হয়।

অটিজম শিশুদের শিক্ষা পদ্ধতি

সাধারণ শিশুদের তুলনায় অটিজম শিশুদের শিক্ষা পদ্ধতি অনেকটা ভিন্ন। অটিজম শিশুদের যেহেতু মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত সমস্যা রয়েছে তাই তারা কোন কিছু সহজে বুঝতে পারে না। বা বুঝলেও একই জিনিস বারবার করতে থাকে। বর্তমানে অটিজম শিশুদের জন্য বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। সেখানে শুধু অটিজম বাচ্চাদের শিক্ষা প্রদান করা হয়। 


ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধৈর্য ও আন্তরিকতার সাথে শিক্ষা প্রদান করা হয়। যেহেতু অটিস্টিক শিশুরা এক দুইবার কোন কথা বললে বুঝতে পারে না তাই তাদেরকে একটা জিনিস বুঝাতে হলে বারবার সে কথা বলতে হয় বা সেই কাজ করে দেখাতে হয়। 

যেমন নিজের নাম শেখানোর ক্ষেত্রে তাকে বলতে হবে আমার নাম অমুক এভাবে বারবার তার হাত তার বুকে রেখে এই কথাটি বললে সে বুঝতে পারবে যে তার নাম অমুক। এছাড়া বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে অটিজম শিশুদের শিক্ষা প্রদান করা হয়।

অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি

অটিজমের সঠিক কোন চিকিৎসা পদ্ধতি বা সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো আবিষ্কার হয় নাই এবং অটিজমের কোন ওষুধও এখনো নির্দিষ্ট করে আবিষ্কার হয়নি। 

তবে অটিজম যত দ্রুত শনাক্ত করতে পারবেন ততো দ্রুত বিভিন্ন থেরাপির মাধ্যমে, বিভিন্ন কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে এবং তার সাথে সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে চিকিৎসক, পরিবেশ, মা-বাবা এবং পরিবারের সকলের সাহায্যের মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন না হলেও অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যাবে। 

এতে সে পরিবারের বোঝা না হয়ে পরিবারের বিভিন্ন কাজে এবং সমাজের বিভিন্ন কাজে অটিজম বাচ্চারা সাহায্য সহযোগিতা করতে পারবে। আপনার সন্তানের মাঝে যদি অটিজমের কোন একটি লক্ষণ দেখতে পান তাহলে যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চাকে নিয়ে অটিজম চিকিৎসা কেন্দ্রে যোগাযোগ করবেন।

অটিজম শিশুর মা-বাবার করণীয়

যে সকল বাচ্চার অটিজম শনাক্ত হয়েছে সে সকল বাচ্চার ক্ষেত্রে করণীয়। অটিজম এমন একটি সমস্যা যা একটি শিশুর মানসিক এবং স্নায়বিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায় এবং একটি স্বাভাবিক শিশুর মত বেড়ে উঠতে বাধা সৃষ্টি করে। যার কারনে অটিজম বাচ্চারা অন্যান্য বাচ্চার থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকে। 

অন্য বাচ্চাদের সাথে কথা বলা এবং সামাজিক যোগাযোগে ব্যর্থ হয় এছাড়াও এক এক সময় এক এক ধরনের আচরণ করে থাকে। এই সময় অনেক মা বাবা দেখা যায় বাচ্চার সমস্যাগুলো গোপন করে অন্যান্য বাচ্চার সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। এই জিনিসগুলো করা থেকে সকল মা বাবাকে বিরত থাকতে হবে। 

এই সময় আপনার বাচ্চাকে সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি সে যা চায় সে অনুযায়ী তাকে স্বাধীনতা দিতে হবে। অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে উৎসাহ দিতে হবে। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে সাহায্য করতে হবে। সমাজের সকল মানুষের সাথে তার কমিউনিকেশন টা ভালো করার চেষ্টা করতে হবে। এই মেশার মাধ্যমে তার যে স্নায়ুবিক ক্ষতিটা হয়েছে সেটা অনেকটাই পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

শেষ কথা

অটিজম কোন রোগ নয় এটি হলো বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত সমস্যা। যদিও অটিজমের এখনো কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি তবুও যদি আপনি,আপনার পরিবার এবং আশেপাশের সবাই অটিজম বাচ্চাকে অন্যান্য বাচ্চার মতোই দেখেন বা অন্যান্য বাচ্চার তুলনায় একটু বেশি যত্ন করেন তাহলে দেখবেন এই সমস্যাটি থেকে অনেকটা ডেভেলপমেন্ট হবে আপনার বাচ্চার।

আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url