ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম - ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম - ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে ড্রাগন ফল সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশা করছি এতে আপনাকে জানা-অজানা কিছু তথ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে পারব। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম - ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
পোস্ট সূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে আরও ড্রাগন ফলের দাম, পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। আরো কিছু ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট রয়েছে যেগুলো জানলে আপনারা উপকৃত হবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

ভুমিকা

ড্রাগন এক ধরনের ফনিমনসা প্রজাতির ফল। এই ড্রাগন ফলের একাধিক রং রয়েছে। তবে গোলাপি রঙের ড্রাগন ফলটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই ফলটি বিদেশি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে এর বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। যে কারণে দেশের বিভিন্ন বাজারে এখন প্রচুর পরিমাণে ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। 

এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ওমেগা ফ্যাটি এসিড ও লাইকোপেন এর মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই ফলটি খেলে ওজন বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই কারণ ড্রাগন ফলে ক্যালরির মাত্রা একেবারেই কম। এছাড়াও এই ফলে রয়েছে আয়রন ও ফাইবার যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী।

ড্রাগন ফলের দাম

ড্রাগন ফল মূলত বিদেশি একটি ফল সে সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই জানি। বর্তমানে বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তাই বাংলাদেশের সব মানুষই কমবেশি ড্রাগন ফল সম্পর্কে এখন জানে। খুবই কম সময়ের মধ্যে এই ড্রাগন ফলটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 

পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটির দাম একটু বেশি হলেও মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে ফলটিকে খাবার তালিকায় রাখার। যদিও সিজনের সময় এই ফলটির দাম একটু কম হলেও আন সিজনে এর দাম অনেকটা বেশি থাকে। আপনি যদি ড্রাগন ফলের দাম সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে বিক্রেতা আপনার থেকে বেশি দাম নিতে পারে। 


তাই আপনি ফলটি কেনার আগে অবশ্যই দাম জেনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ভালো কোয়ালিটির ড্রাগন ফল কিনতে চান তাহলে প্রতি কেজি দাম হবে ৫০০-৬০০ টাকা। 

আর যদি কোয়ালিটির দিক থেকে একটু কমে কিনতে চান তাহলে সেই ফলগুলোর দাম হবে ৪০০-৫০০ টাকা। আর আপনার বাজেট যদি একেবারেই কম থাকে সেক্ষেত্রে একটু লো কোয়ালিটি হবে সেই ড্রাগন গুলোর প্রতি কেজি দাম হবে৩০০-৩৫০ টাকা।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম

প্রথম প্রথম এই ফলটি খাওয়ার সময় একটু চিন্তা করতে হয়। কিভাবে খোসাটি ছাড়াবো বা কিভাবে কাটবো এবং কিভাবে খাব। কিন্তু এই ফলটি খাওয়া খুবই সহজ।
  • বাজার থেকে একটি পাকা ড্রাগন ফল বেছে নিন।
  • বটি কিংবা ছুড়ির সাহায্যে মাঝ বরাবর কেটে নিন।
  • এরপর ছুরি অথবা একটি চামচ দিয়ে খোসা থেকে ফলের নরম অংশটি উঠিয়ে নিতে পারেন অথবা খোসা সহ পাকা আমের মতো করে ছিলে খেতে পারে।
  • আপনার বাসায় কোন মেহমান আসলে ড্রাগন ফল ছোট ছোট টুকরো করে বাটিতে চামচ সহ পরিবেশন করতে পারেন।
  • সকালের নাস্তা হিসেবে টক দইয়ের সাথে খেয়ে থাকে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা।
  • এছাড়াও ড্রাগন ফল বিভিন্ন ফলের সাথে মিক্সড করে খেতে পারেন অথবা ভেজিটেবল সালাদে মিশিয়ে খেতে পারেন।

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ

মানব দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে দৈনিক খাদ্য তালিকায় নানা ধরনের ফল ও শাক সবজি রাখতে হয়। এমন একটি ফলের নাম হল ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলের আকার আকৃতি ও পরিপক্কতার উপর এর পুষ্টিগুণ নির্ভর করে। 

একটি ১০০ গ্রাম গোলাপী মাংস যুক্ত ড্রাগন ফলে ৫০-৬০ গ্রাম ক্যালরি,১-২ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার,৯-১৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট,১-২ গ্রাম প্রোটিন,৮-১২ গ্রাম চিনি এবং ১ গ্রামের কম চর্বি থাকে।


ড্রাগন ফলে যে সব ভিটামিন ও খনিজ রয়েছেঃ ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি২ , ভিটামিন বি১, আয়রন । এছাড়াও আরো রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন বি৩ এছাড়া অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে অল্প পরিমাণে।

দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রেখে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ড্রাগন ফল অত্যন্ত কার্যকরী কেননা ড্রাগন ফলে রয়েছে ফাইবার বা আঁশ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

ড্রাগন ফল বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকায় এই ফলের উপকারিতার অনেক বেশি। যে সকল ভিটামিন ও মিনারেল মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী ড্রাগন ফলের মধ্যে এর প্রায় সবগুলো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তবে সকলের ক্ষেত্রেই ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান গুলো কার্যকর নয়।

কিছু কিছু মানুষের দেহে ড্রাগন ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং কিছু অপকারিতা সম্পর্কে।

ড্রাগন ফলের উপকারিতাঃ
  • ড্রাগন ফল হলঅ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল
  • ড্রাগন ফল খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
  • ড্রাগন ফল হজমে সাহায্য করে
  • ড্রাগন ফল হার্ডকে সুস্থ রাখে
  • ড্রাগন ফল ক্যান্সারের ঝুকি কমায়
  • ড্রাগন ফল ওজন কমাতে সাহায্য করে
  • ড্রাগন ফল মুখের ব্রণের সমস্যা দূর করে
  • ড্রাগন ফল হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে
  • ড্রাগন ফল রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে
  • ড্রাগন ফল খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে
  • ড্রাগন ফল দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
  • ড্রাগন ফল হাইড্রেশনের সাহায্য করে
  • মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে
  • ড্রাগন ফল বয়সের ছাপ দূর করে
  • ড্রাগন ফল ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে সাহায্য করে
  • ড্রাগন ফল কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
  • ড্রাগন ফল চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে
ড্রাগন ফলের অপকারিতাঃ
  • যাদের পেটে সমস্যা রয়েছে তারা ড্রাগন খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
  • ড্রাগন ফল খেলে এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ড্রাগন ফলের দামটা অনেক বেশি
  • ড্রাগন ফল খুব কম সময় পাওয়া যায়
  • যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রাগন ফল খেতে পারে

ড্রাগন ফল দিয়ে রূপচর্চা

যে সময় প্রচুর ড্রাগন ফল বাজারে পাওয়া যায় আপনি চাইলে সেই সময় ড্রাগন ফল খাওয়ার পাশাপাশি ড্রাগন ফল দিয়ে রূপচর্চা সেরে নিতে পারেন। ড্রাগন ফল রূপচর্চায় ম্যাজিকের মত কাজ করে।ড্রাগন ফল দিয়ে যেভাবে রূপচর্চা করবে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

ড্রাগন ফল পেস্ট তৈরি করে নিয়ে তুলোর সাহায্যে আপনার মুখে যে স্থানে ব্রণ রয়েছে সেখানে লাগিয়ে এক ঘন্টা রেখে ধুয়ে নিন। এতে আপনার মুখ থেকে ব্রণের সমস্যা দূর হবে। ড্রাগন ফলে থাকা জিংক, ভিটামিন সি এবং নিয়াসিনামাইট ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।


ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল করতে ড্রাগন ফলের সাথে এলোভেরা জেল অথবা ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আপনার ত্বকে লাগাতে পারেন। ড্রাগন ফল তোকে আদ্রতা যোগ করে এবং তাকে করে তোলে নরম ও কোমল।

এক টেবিল চামচ টক দই এর সাথে ১ চা চামচ ড্রাগন ফলের রস মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে।পারেন এতে আপনার ত্বক হাইড্রেট করতে সাহায্য করবে। ত্বকের বলী রেখা দূর করতেও ড্রাগন ফল বেশ কার্যকর।

ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

ড্রাগন ফল কমবেশি সবাই খেয়ে থাকেন। তবে ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সবার জানা থাকলেও ড্রাগন ফলের খোশার যে উপকারিতা রয়েছে সেটা অধিকাংশ মানুষেরই অজানা। আজ আপনাদের জানাবো ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করছি খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে ড্রাগন ফলের খোসা আর ফেলবেন না। 

দুইটি ড্রাগন ফলের খোসা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে অথবা থেঁতো করে নিয়ে আড়াইশো গ্রাম ফুটন্ত পানিতে খোসা গুলো দিয়ে পাঁচ সাত মিনিটের মতো জ্বাল করে নিন। ধীরে ধীরে দেখবেন পানির রং পরিবর্তন হয়ে আসছে এবং খুব সুন্দর একটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। 

এরপর পানিটি ছেঁকে নিয়ে সামান্য একটু হিমালয়া পিংক সল্ট অথবা রেগুলার লবণ সাথে অর্ধেকটা লেবুর রস মিশিয়ে শরবত তৈরি করে খেতে পারেন। এভাবে যদি আপনি সাত দিন খেতে পারেন তাহলে আপনার যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা অতি সহজে দূর হয়ে যাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন সমস্যা ছাড়াতে এই সর্বোচ্চ কার্যকর।

আপনার যদি অতিরিক্ত ওজন বা মেদ ভুরি থেকে থাকে তাহলে খুব অল্প সময়ে আপনার মেদ ভুড়ি কমাতে সাহায্য করবে।

আপনি যদি ডায়াবেটিকসের রোগী হয়ে থাকেন অথবা আপনার হৃদরোগ থেকে থাকে তাহলে এই শরবত সেবন করলে অত্যাধিক উপকার পাবেন।

এছাড়া মুখের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে এবং চুলের গোড়া শক্ত করতে এই শরবত বেশ উপকারী।নিয়ম করে যদি আপনি সাত দিন এই শরবতটি পান করতে পারেন তাহলে আপনি নিজেই আপনার পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। এখন থেকে আর ড্রাগন ফলের খোসা না ফেলে এভাবে ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

শেষ কথা

বিদেশি ফল হওয়ার পরেও বাংলাদেশের মাটিতে যেহেতু বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ করা হচ্ছে তাই কম বেশি বাংলাদেশের সকলেই ড্রাগন ফলে স্বাদ নিতে পারছে। এই ফলটিতে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। আশা করা যায় বাণিজ্যিকভাবে আরও বেশি পরিমাণে ড্রাগন ফলটি চাষ করা হলে এই ফলের দামটি সকল মানুষের ক্রয়ম ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।

আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url