ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা পালনের নিয়ম - ব্রয়লার মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

কবুতর পালন পদ্ধতি জানতে এখানে ক্লিক করুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা পালনের নিয়ম - ব্রয়লার মুরগির রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব ব্রয়লার মুরগি পালনের বেশ কিছু নিয়ম সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা পালনের নিয়ম-ব্রয়লার মুরগির রোগ ও চিকিৎসা
আর্টিকেলটিতে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন পদ্ধতি, ব্রয়লার মুরগী পালনের নিয়ম, ওজন বৃদ্ধি, রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও আরো বেশ কিছু ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট রয়েছে যেগুলো জানা থাকলে আপনারা মুরগি পালনের ক্ষেত্রে অনেক উপকৃত হবেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃতাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই ব্রয়লার মুরগি পালনের প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য সম্পর্কে।

ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন পদ্ধতি

প্রত্যেক পশু-পাখি ও প্রাণী বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে বছরের পর বছর তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। পোল্ট্রির ক্ষেত্রেও ডিম হলো বংশবৃদ্ধির প্রধান মাধ্যম। যে ধরনের ডিম থেকে পরবর্তীতে বাচ্চা ফুটানো যায় সেই ডিমকে হ্যাচিং ডিম বলে। হ্যাচিং ডিম নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাড়তি সর্তকতার প্রয়োজন। সেই সাথে ডিম ফোটানোর পদ্ধতি জানা খুবই প্রয়োজন। 

ডিম সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি খাওয়ার জন্য ও অন্যটির বাচ্চা ফোটানোর জন্য। বাচ্চা ফুটানোর ডিম নিষিক্ত বা উর্বর হতে হবে। আদিকাল থেকেই ডিম ফোটানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে পরিচয় ঘটেছে কৃত্রিম পদ্ধতি। 


কৃত্রিম পদ্ধতিতে একসাথে অনেক ডিম ফুটানো যায়। বৈদ্যুতিক ইনকিউরেটরে ডিম ফোটানোর ক্ষেত্রে কিছু বিষয় যেমন তাপমাত্রা, আদ্রতা বা চলাচল ও ডিম নড়াচড়া ইত্যাদি বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে খেয়াল রাখতে হয়। চলুন জেনে নেই ডিম ফোটানোর দুটি পদ্ধতি সম্পর্কে।

প্রাকৃতিক পদ্ধতিঃ ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের প্রাকৃতিক পদ্ধতিটি হচ্ছে সর্বাধিক প্রচলিত প্রাচীন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটির সঙ্গে কম বেশি সকলেই পরিচিত। গ্রাম অঞ্চলে অল্প পরিসরে যারা হাঁস মুরগি পালন করে তারা সাধারণত এই পদ্ধতিতে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে। ডিম দেওয়ার পর যখন মুরগি কুচে হয়। 

একটি নিরবস্থানে বাক্সে অথবা ঝুড়িতে কিছু বিছানা পত্র যেমন শুকনা পাতা বা তুস অথবা খড় রেখে তার উপরে ১০ থেকে ১২ টি ডিম দিয়ে বসানো হয়। এ সময় মুরগির কাছাকাছি পাত্রে পানি এবং কিছু খাবার রাখা হয়। যাতে মুরগির ক্ষুধা লাগলে খেতে পারে। ডিমে বাতাস চলাচল এবং মুরগির স্বাস্থ্যের জন্য দিনে একবার করে মুরগিকে উঠিয়ে দিতে হয়। 

খেয়াল রাখতে হবে ৩০ মিনিটের বেশি যেন না বাহিরে থাকে। এভাবে করে ২১ দিন পর ডিম থেকে বাচ্চা পাওয়া যায়। ডিম বসানোর উপযুক্ত সময় হল রাত। রাতে যদি আপনি ডিম বসান তাহলে ২১ দিন পর রাতেই সবগুলো বাচ্চা ডিম থেকে বেরিয়ে আসবে। এই পদ্ধতিতে গ্রাম অঞ্চলে দেশি মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো হয়।

কৃত্রিম ইনকিউবেটর পদ্ধতিঃ ডিম ফোটানো সর্বাধিক পদ্ধতি এটি। এই পদ্ধতি সবচেয়ে বড় সুবিধা হল একসাথে কয়েক হাজার ডিম ফোটানো যায়। তবে ধারণ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ছোট মাঝারি ও বড় আকারের ইনকিউবেটর পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করে এমন জায়গায় ইনকিউবেটর বসাতে হবে। 

ইনকিউবেটর সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটি দেখে নিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে সেখানে ডিম বসাতে হবে। প্রধান দুটি অংশ হচ্ছে সেটার ও হ্যাচারি। এই পদ্ধতিতে খুব সহজে আপনি একসাথে কয়েক হাজার ব্রয়লার মুরগি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে পারবেন। 

বর্তমানে অনেক হ্যাচারি রয়েছে যেখানে এই কৃত্রিম ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফুটিয়ে সারা দেশের খামারিদের কাছে বাচ্চা সরবরাহ করছে। এতে তারা প্রচুর লাভবান ও হচ্ছে। আপনি চাইলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে অথবা কৃত্রিম ইনকিউবেটরের মাধ্যমে মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে পারেন। অথবা বিভিন্ন হ্যাচারি থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে খামার তৈরি করতে পারেন।

ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা পালনের নিয়ম

ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা পালনের বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। যে নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার ব্যবসায় সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আজ আমরা জেনে নেব বয়লার মুরগির বাচ্চা পালনের কিছু নিয়ম সম্পর্কে।

বাচ্চা উঠানোর পূর্বে করণীয় সমূহঃ
  • সম্পূর্ণ সেডটি খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে কোন ময়লা সেখানে না থাকে।
  • এরপর চারপাশের পর্দা উঠিয়ে জীবাণু নাশক দিয়ে সম্পূর্ণ ফ্লোর ধুয়ে নিতে হবে অথবা স্প্রে করে দিতে হবে। জীবাণুনাশক হিসেবে চুন অথবা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
  • বাচ্চা উঠানোর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করা একদমই ঠিক না। এক ব্যাচ বাচ্চা বিক্রি করার কমপক্ষে তিন দিন এবং সর্বোচ্চ সাতদিন পরে বাচ্চা উঠানো উত্তম। সাধারণত জীবাণুশক ব্যবহার করার তিনদিন পর বাচ্চা উঠানো উত্তম।
  • এরপর ধানের তুষ অথবা চট বিছিয়ে নিতে হবে। যে পাশে মানুষের চলাচল কম সেই পাশে মুরগির বাচ্চা গুলো রাখার জন্য জায়গা তৈরি করে নিতে হবে। এরপর ধানের তুষ অথবা গুড়া দিয়ে তৈরি লিটারের উপরে পেপার বিছিয়ে নিতে হবে।
  • এরপর হোবারে ১০০ ওয়ার্ডের চারটি লাইট রেডি রাখতে হবে গরমের দিনের জন্য। শীতের দিনে তাপমাত্রা বেশি প্রয়োজন তাই ২০০ ওয়ার্ডের বাল্ব লাগানোর প্রয়োজন পড়ে।
  • এরপর খামারের চারপাশের পর্দা নামিয়ে দিতে হবে। বাচ্চা আসার কমপক্ষে ১ ঘন্টা আগে থেকে হোবার লাইটটি জ্বালিয়ে রাখতে হবে।
  • বাচ্চাগুলোকে ব্রুডারে দেওয়ার আগে অবশ্যই গ্লুকোজ এবং স্যালাইনের পানি আগে থেকে দিতে হবে। প্রথম দুই ঘন্টা শুধুমাত্র গ্লুকোজ এবং স্যালাইনের পানি খাওয়াতে হবে কোন প্রকার খাবার দেওয়া যাবে না।
  • চিফগার্ডটি সেট করার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন বেশি ছোট যেন না হয়। বেশি ছোট করে যদি আপনি চিফগার্ড সেট করেন তাহলে বাচ্চার নড়াচড়া করতে অসুবিধা হবে। অবশ্যই বাচ্চা নড়াচড়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রেখে আপনি চিফগার্ড সেট করবেন।
  • ২ ঘন্টা পর বাচ্চাকে ব্রয়লার স্ট্যাটার ফিড অর্থাৎ বাচ্চার জন্য নির্ধারিত খাবার দিতে হবে। খাবারগুলো অবশ্যই পেপারের ওপর ছিটিয়ে দিতে হবে। যাতে করে বাচ্চার খাবার গ্রহণ করতে সুবিধা হয়।

  • বাচ্চার ক্ষেত্রে প্রথম সাতদিন অর্থাৎ ব্রুডিং পিরিয়ডটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্য রাখবেন পানির পাত্র থেকে পানি পড়ে চারদিক যেন ভিজে না যায়। ভিজে গেলে বাচ্চার সর্দি অথবা যে কোন ফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারে। তাই অবশ্যই পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে সারাক্ষণ।
  • শীতের সময় সাধারণত ৭ দিন অথবা তার বেশি ব্রুডিং করা লাগতে পারে এবং গরমকালে ৩ থেকে ৫ দিন ব্রুডিং করলে হয়ে যায়।
  • ব্রুডিং পিরিয়ডটি যদি ভালোভাবে কমপ্লিট করতে পারেন তাহলে আশা করা যায় বাচ্চার গ্রোথ ভালো হবে।
  • সাধারণত ৩৩ গ্রামের উপরের বাচ্চাগুলোকে এ গ্রেডের বাচ্চা বলা হয় এবং ৩০ গ্রামের নিচের বাচ্চাগুলোকে বি গ্রেডের বাচ্চা বলা হয়। এছাড়াও বাচ্চাগুলো অনেক চঞ্চল এবং ফ্রেশ থাকবে। তাহলে বুঝতে পারবেন বাচ্চাগুলো এ গ্রেডের।
  • চেষ্টা করবেন নিচের পেপারগুলো ৮ ঘন্টা পর পর পরিবর্তন করে দিতে। কারণ পেপার ভিজে গেলে বাচ্চা অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

১০০ ব্রয়লার মুরগি পালন খরচ

আপনি কতগুলো মুরগি পালন করবেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার ব্রয়লার মুরগি পালনের খরচ। আপনার খামারের আয়তনের উপর নির্ভর করছে আপনি কতগুলো বাচ্চা পালন করতে পারবেন। তবে আপনি যদি বর্তমান সময়ের বাজার অনুযায়ী ১০০ ব্রয়লার মুরগি পালন করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনার খরচ কেমন আসবে চলুন জেনে নেই।

  • বর্তমান বাজারদর হিসেবে অনেক জায়গায় দেখা গিয়েছে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ৬০-৭০ টাকা পর্যন্ত হয়ে গেছে এমনকি জায়গা ভেদে ৭৫ টাকা পর্যন্ত দাম গিয়েছে।
  • ব্রয়লার মুরগির খাবারের বস্তা ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৬৫০ পর্যন্ত উঠে গেছে। বাজারে মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম প্রচুর।
বর্তমান সময়ের হিসাব অনুযায়ী আসুন এবার আমরা হিসাব করে দেখি ১০০ ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা পালন করতে কত টাকা খরচ হবে। প্রতি পিস বাচ্চার দাম যদি ৭০ টাকা করে হয় তাহলে ১০০ পিস বাচ্চার দাম হবে ৭ হাজার টাকা। 

এছাড়াও ১০০ পিস মুরগির বাচ্চা ৩২ দিন পর্যন্ত ফিড খাবে ৭ বস্তা অর্থাৎ ৩৬০০ টাকা করে যদি বস্তার দাম হয় তাহলে ৭ বস্তার দাম হবে ২৫ হাজার ২ শত টাকা। এছাড়াও ওষুধের খরচ, লিটার খরচ ,কারেন্ট বিল এবং এভারেজ খরচ দিয়ে আরও ৪ হাজার টাকা। তাহলে এক সম্পর্কে পালন করতে আপনার খরচ হবে মোট ৩৬ হাজার দুইশত টাকা।

ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ

বর্তমান সময়ে যে হারে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সব দিক বিবেচনা করলে বর্তমান সময়ের ব্রয়লার মুরগি পালনে খামারিরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে যারা নতুন খামারি আছে তাদের ক্ষতির পরিমাণটা আরো বেশি। 

মুরগির খামারে লাভবান হওয়ার মূল বিষয়টি হচ্ছে মুরগির ওজন বৃদ্ধি। আমরা সবাই এ বিষয়ে জানি মুরগির ওজন যত বৃদ্ধি পাবে মুরগীর ব্যথা তত লাভবান হওয়া যাবে। তাই আমি চেষ্টা করব আপনাদের সাথে ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির কিছু ঔষধ সম্পর্কে জানাতে। 


যদি আপনি পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধগুলো খাওয়ান তাহলে মুরগির ওজন বৃদ্ধি পাবে। এবং আপনারা লাভবান হতে পারবেন। আপনাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে নিজে ওষুধ গুলোর নাম উল্লেখ করা হলো।
  • প্রোফিট প্লাস
  • এমাইনো ভিট প্লাস ভেট
  • প্রি বুস্টার
  • জি-প্রো মিন লিকুইড
  • ক্যালগো পস

ব্রয়লার মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

ব্রয়লার মুরগি সাধারণত কি কি রোগে আক্রান্ত হয় এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। ব্রয়লার মুরগির সাধারণত ৪ থেকে ৫টি রোগের বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই সেই রোগগুলো সম্পর্কে এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে।

রোগের নামঃ
  • রানীক্ষেত
  • গাম্বুরা
  • কলেরা
  • এভিয়ান পক্স বা বসন্ত
  • ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশয়
রানীক্ষেত রোগের লক্ষণঃ
  • রানীক্ষেত রোগের সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো সবুজ রঙের পাতলা পায়খানার সাথে অনেক সময় রক্ত দেখা যায়।
  • মুরগি ঝিম ধরে থাকে, ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে এবং চলা ফেরা কমে যায়।
  • পাখা নেতিয়ে পড়ে বা হঠাৎ করে বসে পড়ে
  • মুরগির গলার ভেতরে ঘড় ঘড় শব্দ হয়, শ্বাসকষ্ট হয় এবং মুখ হাঁ করে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে।
  • ডিম পাড়া কমিয়ে দেয়, পাতলা খোসা ডিম পাড়ে অথবা ডিম পাড়া একেবারে বন্ধ করে দেয়।
রানীক্ষেত রোগের চিকিৎসাঃ

রানীক্ষেত যেহেতু ভাইরাসজনিত রোগ তাই এই রোগের তেমন কোন চিকিৎসা নেই। সময়মতো মুরগিকে টিকা প্রদান এই রোগের একমাত্র উপায়। মুরগি বাচ্চা থাকা অবস্থায় বিসিআরডিভি টিকা ও বড় মুরগির ক্ষেত্রে আরডিভি টিকা প্রদান করতে হয়। 

তবে যদি সমস্ত মুরগি রানীক্ষেত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে গৌণ সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও মৃত্যুহার কমাতে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার দিতে পারে।

গাম্বুরা রোগের লক্ষণঃ
  • গাম্বুরা রোগ হলে সাদা চুনের মতো পাতলা পায়খানা করে।
  • মুরগির গায়ের পালক উস্কো খুশকি থাকে।
  • দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
  • মুরগির শরীর পানি শুন্য তার পাশাপাশি তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়।
  • এবং মলদ্বার সবসময় ভিজে থাকে।
গাম্বুরা রোগের চিকিৎসাঃ

অন্য সব ভাইরাসজনিত রোগের মত ঘামুরা রোগের ও তেমন কোন চিকিৎসা নেই। তবে গাঙ্গুরা রোগ হলে মুরগির শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয় এবং শরীরে লবণে শূন্যতা দেখা দেয়। এসব ঘাটতি পূরণের জন্য মুরগিকে নিয়মিত স্যালাইনের পানি খাওয়াতে হবে। 

এর সাথে ব্যাকটেরিয়াজনিত পরবর্তী পর্যায়ে সংক্রমণ রোধে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো যেতে পারে। সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সময়মতো টিকা প্রদান করা একমাত্র উপায়।

কলেরা রোগের লক্ষণঃ
  • কলেরা রোগ হলে মুরগি পাতলা সবুজ সবুজ পায়খানা করে।
  • পিপাসা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ,মুরগির শ্বাসকষ্ট হওয়ায় হা করে নিঃশ্বাস নেয়।
  • কলেরা আক্রান্ত মুরগির মাথা ও হাঁটু ফুলে যায়।
  • মুরগি দুর্বল হয়ে যাওয়ার ফলে ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়।
  • এছাড়াও মুরগির মাথার ঝুটি ও কানের লতি নীলচে অথবা কালো বর্ণ ধারণ করে
কলেরা রোগের চিকিৎসাঃ

কলেরা রোগের বেশ কিছু ঔষধ রয়েছে বিশেষ করে ট্যাবলেট। ট্যাবলেট খাওয়ানোর মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্ত করা সম্ভব। অক্সিভেট, রেনামাইসিন অথবা ব্যাকটিট্যাব এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি আপনি আপনার মুরগিকে খাওয়াতে পারেন। 

একটি ট্যাবলেট চারটি মুরগির জন্য পানিতে গুলিয়ে খাওয়াতে হবে। যে কোন ঔষধ অথবা প্রতিষেধকের পূর্বে পশু ডাক্তারের সাথে অবশ্যই কথা বলে নিবেন।

এভিয়ান পক্স বা বসন্ত রোগের লক্ষণঃ
  • মুরগির যে অংশে পালক থাকে না সেই অংশে যেমন কানের লতি বা ঝুঁটিতে গুটি তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে সেই গুটি থেকে ক্ষত তৈরি হয়।
  • চোখের পাতাতে গুটি তৈরি হওয়ার ফলে চোখ আংশিক বন্ধ হয়ে যায় এছাড়া ঠোঁটের পাতাতেও গুটি তৈরি হয়।
  • পরিপাকতন্ত্রের রোগ সংক্রমিত হওয়ার ফলে মুরগির খাবার খাওয়া অনেক অংশে কমে যায় ফলে দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে না এবং ওজন কমে যায়।
  • এছাড়াও খাদ্যনালী শ্বাসনালী সাধাবা হলুদ রঙের ঘা দেখা দেয়।
এভিয়ান পক্স বা বসন্ত রোগের চিকিৎসাঃ
ভাইরাস জনিত রোগের যেহেতু কোন চিকিৎসা নেই সে ক্ষেত্রে ফিটকিরি বা পটাশ পানিতে ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থানে দিনে তিন থেকে চারবার মুছে দিলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। পরবর্তীতে যেন মুরগি এই রোগে আক্রান্ত না হয় তার জন্য রেনামাইসিন জাতীয় ঔষধ প্রতিদিন একটি করে ছয়টি বড় মুরগির জন্য এবং একটি করে ১২ টি ছোট মুরগির জন্য তিনদিন খাওয়াতে হবে।

ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশয় রোগের লক্ষণঃ
  • রক্ত আমাশয় রোগে অনেকটা গুড়ের মতো রক্ত মিশ্রিত পাতলা মলত্যাগ করে। মলত্যাগের পরেও মলদ্বারে মল লেগে থাকে।
  • পালক উস্কো খুশকো হয়ে থাকে এবং মুরগির ডানা ঝুলে যায়।
  • আক্রান্ত মুরগির ঝিমাতে থাকে।
  • খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেওয়ার ফলে ওজন কমে যায়।
  • রক্ত তীব্র আকার ধারণ করলে মনের সাথে তাজা রক্ত দেখা যায়।
ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশয় রোগের চিকিৎসাঃ

রক্ত আমাশয় রোগের চিকিৎসা আছে। অ্যামপ্রোলিয়াম পাউডার অথবা ইএসপি৩ ৩০% ,কক্সিকিউর পাউডার এই ওষুধগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি এক লিটার পানিতে আড়াই গ্রাম মেশাতে হবে। এভাবে তিন থেকে পাঁচ দিন এই ওষুধ খাওয়াতে হবে। তাহলে রক্ত আমাশয় প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। তবে যে কোন চিকিৎসার আগে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করছি আজকের আর্টিকেল থেকে ব্রয়লার মুরগি সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য আপনারা জানতে পেরেছেন। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি পালনের নিয়ম, ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ ও ব্রয়লার মুরগির রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু ধারনা দেওয়া হয়েছে। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

ভালো লাগলে ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখবেন এবং কোন কিছু জানতে বা বুঝতে না পারলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url