ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় - ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

মাথা ব্যথার ঘরোয়া সমাধান জানতে ক্লিক করুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় - ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব কিভাবে ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি করবেন এবং ভ্যাকসিন সিডিউল মেনে চলবেন।
ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়-ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল
পোস্ট সূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি ও খাদ্য তৈরির উপাদান, ভ্যাকসিন সিডিউল, ঠান্ডার ঔষধ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আজকে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম কত

বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সবকিছু সাথে সাথে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত যে বাচ্চার দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে কিন্তু বর্তমান সময়ে এই ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে ক্ষুদ্র খামারীরা বেশির ভাগই লসের সম্মুখীন হচ্ছে। 

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জে ধীরে ধীরে অনেক ফার্ম গড়ে উঠেছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির জন্য সেই ফর্মগুলো লসের সম্মুখীন হচ্ছে। মুরগির বাচ্চার সাথে সাথে মুরগির খাবারের দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে খামারিরা পর্যাপ্ত দাম পাচ্ছে না বিধায় তাদের খামার করে ক্ষতি পোহাতে হচ্ছে। 


বর্তমান সময়ে ১ পিস বয়লার মুরগির বাচ্চার দাম দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আবার অনেক জায়গায় অঞ্চল ভেদে বা জায়গা ভেদে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এত দাম দিয়ে বাচ্চা কিনে ক্ষুদ্র খামার ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে লাভবান হওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য অনেক ক্ষুদ্র খামারি তাদের খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তৈরির উপাদান সমূহ

বর্তমান সময়ে যে হারে ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে সব খামারি ক্ষতির মুখে পড়বে। যার ফলে ধ্বসে পড়তে পারে পোল্ট্রি ব্যবস্থাপনা বা খামার ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই স্বল্প আয়ের। 

তাদের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে থাকে এই ব্রয়লার মুরগির মাংস। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধি করার ফলে খামারীরা এই ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে এই ব্যবসায় ধস নেমে আসছে। তাই খামারিরা যদি তৈরিকৃত ফিড না খাইয়ে নিজেরা তৈরি করে খাওয়ায় সেক্ষেত্রে লাভবান হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। 

ব্রয়লারের ফিড তৈরিতে যে সকল উপাদান ব্যবহার করা হয় সেই উপাদান গুলো যদি নিজেরাই একসাথে তৈরি করে খাবার তৈরি করা হয় তাহলে পোল্ট্রি ব্যবসায় লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই একজন খামারির অবশ্যই ব্রয়লার মুরগির খাবার তালিকা সম্পর্কে জানা উচিত। 

আমাদের প্রকৃতিতেই বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যেগুলো বয়লার মুরগিকে সঠিকভাবে প্রদান করা হলে অতি দ্রুত ওজন বাড়বে এবং সাইজেও বড় হবে। চলুন জেনে নেই উপাদান গুলো সম্পর্কে।

  • পুষ্টি উপাদান - শর্করা - গম, ভুট্টা, চাল, চালের গুড়া, ধান, গমের ভুসি ইত্যাদি
  • পুষ্টি উপাদান - আমিষ - শুটকি মাছের গুঁড়া, তিলের খৈল, সয়াবিন মিল, সরিষার খৈল ইত্যাদি
  • পুষ্টি উপাদান - স্নেহ - বিভিন্ন উদ্ভিদ তেল যেমন. পাম তেল, তিলের তেল, সয়াবিন তেল ইত্যাদি
  • পুষ্টি উপাদান - খনিজ পদার্থ - ঝিনুক খোসা চূর্ণ, খাদ্য লবন, হাড়ের গুড়া, ডিমের খোসা, চুনাপাথর ইত্যাদি
  • পুষ্টি উপাদান - ভিটামিন - শাকসবজি, ভিটামিন মিনারেল, প্রিমিক্স ইত্যাদ
  • পুষ্টি উপাদান - পানি - পরিষ্কার বিশুদ্ধ জীবাণুমুক্ত পানি

ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়

একটি খামারে ব্রয়লার মুরগি সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর্যন্ত পালন করা হয়। ব্রয়লার মুরগির ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করতে হলে মুরগিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার সরবরাহ করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ব্রয়লার মুরগির ফিড কিনতে পাওয়া যায়। আপনার খামারের জন্য যে কোন একটা ভালো কোম্পানির ফিড বেছে নিতে হবে। 


এরপর খাবার সিডিউল এবং নিয়ম অনুযায়ী সেই সব ফিড ব্রয়লার মুরগিকে খাওয়ালে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ছাড়াও বাজারে বর্তমানে বেশ কিছু ঔষধ রয়েছে যেগুলো খাওয়ানোর ফলে বয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধি হয়। যদিও এ ধরনের ওষুধ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তবুও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা অধিক লাভের আশায় এ ধরনের ওষুধ মুরগিকে সরবরাহ করে থাকে। 

এ ধরনের পথ অনুসরণ করলে মুরগির দ্রুত বৃদ্ধি হয় ঠিকই কিন্তু খুব দ্রুত মুরগি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই আপনার খামারের মুরগিকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই মুরগির জন্য নির্ধারিত ফিড খাওয়াতে হবে। আপনি যদি মুরগিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফিড খাওয়াতে পারেন তাহলে আপনার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।

ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

ব্রয়লার যেহেতু একটি উন্নত মানের হাইব্রিড জাতের মুরগি। ব্রয়লার মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য মুরগীর তুলনায় অনেক কম। যার কারণে বয়লার মুরগি পালন করতে বেশ কিছু নিয়ম পালনের সাথে সাথে সতর্ক থাকতে হয়। 

যেহেতু ব্রয়লার মুরগি একটি স্বল্পকালীন মুরগি তাই সাধারণত দুই প্রকারের ভ্যাকসিন প্রদান করলে হয়ে যায় যেমন রানীক্ষেত ও গাম্বুরা। তবে একটি আদর্শ বয়লার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল মেনে চললে নিশ্চিত থাকা যায়। চলুন জেনে নেই ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল।

প্রথম ধাপঃ ১ থেকে ৩ দিন বয়সে রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিস রোগের জন্য আইবি প্লাস এনডি ভ্যাকসিন সরাসরি ব্রয়লার মুরগির এক চোখে এক ফোঁটা করে দিতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপঃ ৭ থেকে ১০ দিন বয়সে গাম্বুরা রোগের জন্য আই বি ডি ভ্যাকসিন সরাসরি মুখে এক ফোঁটা খাওয়াতে হবে অথবা খাবার পানিতে দিতে হবে।

তৃতীয় ধাপঃ ১৪ থেকে ১৭ দিন বয়সে গাম্বুরা রোগের জন্য আইবিডি ভ্যাকসিন সরাসরি মুখে এক ফোটা অথবা খাবার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

চতুর্থ ধাপঃ১৮ থেকে ২০ দিন বয়সে রানীক্ষেত রোগের জন্য এনডি ভ্যাকসিন সরাসরি এক চোখে এক ফোটা দিতে হবে ।

ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার ঔষধ

ব্রয়লার মুরগি বেশিরভাগ সময় ঠান্ডা জনিত সমস্যায় ভুগে থাকে। তবে বিভিন্ন কারণে ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডা সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে যেগুলোর কারণে বয়লার মুরগি প্রায়শই ঠান্ডা জনিত সমস্যা। চলুন জেনে নেই সেই কারণগুলো সম্পর্কে।
  • লিটার অত্যাধিক শুকনো অথবা ভেজা থাকার কারণে মুরগির ঠান্ডা লাগতে পারে।
  • হ্যাকারীর ভ্যাকসিনেশন স্প্রে এর কারণে মুরগির ঠান্ডা লাগতে পারে।
  • কম জায়গায় বেশি মুরগি পালন করার ফলে এ ধরনের ঠান্ডা জনিত রোগ দেখা দিতে পারে।
  • লিটারের ডাস্টের পরিমাণ বেশি থাকলে মুরগির ঠান্ডা জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  • শীতকালে যদি ফার্মেস সরাসরি বাতাস ঢোকে এ কারণে মুরগির ঠান্ডার জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • খামারে অধিক পরিমাণে এমোনিয়া গ্যাস জমলে মুরগির ঠান্ডা জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার খামারে যেন উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলি না দেখা দেয়। নিয়মিত লিডার পরীক্ষা করার পাশাপাশি শীতকালে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। এরপরেও যদি মুরগির ঠান্ডা লেগে যায় সে ক্ষেত্রে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভালো মানের এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে AZIN vet ঔষধ টি আপনার মুরগিকে দিতে পারেন।

AZIN vet ১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। যদি আপনার মুরগির সর্দির সাথে কাশিও থেকে থাকে তাহলে ব্রংকোভেট ১ এম এল ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে ব্রয়লার মুরগী সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য আপনারা জানতে পেরেছেন। ব্রয়লার মুরগি পালন করতে হলে এই বিষয়গুলোর সম্পর্কে জানা উচিত। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মন্তব্য কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

ভালো লাগলে ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখবেন এবং কোন কিছু জানতে বা বুঝতে না পারলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url