দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি - দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি - দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেলটিতে দেশি মুরগি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। আপনারা যারা দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তারা আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন বেশ কিছু তথ্য জেনে নিতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃএখানে আরো দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বেশ কিছু ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি - ভূমিকা
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই যুগ যুগ ধরে বাড়ির গৃহিণীরা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বারতি আয় হিসেবে দেশি মুরগি পালন করে থাকে। এছাড়াও কিছু মানুষ রয়েছে যারা শখের বসে দেশি মুরগি পালন করতে চায়। যাদের বাড়িতে মুরগি পালন করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রয়েছে তারা খুব সহজেই অল্প খরচে দেশি মুরগি পালন করতে পারেন।
এর ফলে আপনার শখ ও পূরণ হবে পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে। দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই ভালো। তাই যেকোনো পরিবেশে দেশী মুরগি খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
দেশি মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতি
প্রথমত যখন কোন কুচে মুরগি দিয়ে বাচ্চা ফোটানোর জন্য খাঁচাতে বসাবেন তখন থেকে ঠিক ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাচ্চা গুলো ফুটে যাবে। বাচ্চা গুলো ফোটার পর বাচ্চা গুলোকে ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক দেশী মুরগীর বাচ্চা পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য।
মুরগির বাচ্চা ফোটার পর যখন বাচ্চাগুলোকে মুরগি সহ খাঁচা থেকে নামাবেন তখন অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিবেন। কেননা বাচ্চাগুলো যখন ফোটা শুরু করে সেক্ষেত্রে এক থেকে দুই দিন সময় লাগে। এই সময়টুকু কুচে মুরগি ডিমের তা দিতে থাকে যার ফলে শেষের দিকে এসে মুরগি তেমন একটা খাবার খায় না।
আরেও পড়ুনঃ সোনালি মুরগি পালনের সঠিক পদ্ধতি
এছাড়াও কিছু বাচ্চা আগে ওঠে ও কিছু বাচ্চা পরে ওঠে যার কারণে মুরগি সহ বাচ্চাকে মাটিতে নামানোর সাথে সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দেওয়া জরুরি। এরপর খেয়াল রাখতে হবে কোন বাচ্চা অসুস্থ আছে কিনা।
যদি অসুস্থ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সুস্থ বাচ্চার থেকে অসুস্থ বাচ্চাগুলো আলাদা করে নিবেন এবং অসুস্থ বাচ্চাকে খুব ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে। কোন ওষুধের প্রয়োজন হলে ডাক্তারের থেকে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াতে পারেন বা ভ্যাকসিন প্রদান করতে পারে। মা মুরগির থেকে বাচ্চাগুলোকে আলাদা করতে কমপক্ষে পাঁচ দিন সময় নিবেন।
কেননা এই পাঁচ দিনে মা মুরগি বাচ্চাগুলোকে ভালোভাবে তা দিবে এবং বাচ্চাগুলো খাবার খাওয়া শিখে যাবে। অন্যান্য মুরগির মত দেশি মুরগি পালন তেমন ঝামেলার নয়। শুধুমাত্র খাবার পানি এবং কোন রোগ বালাই আক্রমণ করল কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়।
দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি
দেশি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে সেটা হলো জাত নির্বাচন। অনেক সময় দেখা যায় আপনি কিছু দেশি মুরগি পালনে ইচ্ছুক হলেন কিন্তু আপনাকে বিক্রেতা দেশি মুরগি বলে অন্য কোন জাতের মুরগি দিয়ে দিল এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই জাত নির্বাচনে সচেতন হতে হবে।
প্রথম অবস্থায় অল্প কিছু দেশি মুরগি নিয়ে আপনি পালন শুরু করতে পারেন। এর ফলে আপনাকে প্রথমে চিন্তা করতে হবে মুরগির রাতে থাকার জন্য ঘর বানাতে হবে। মুরগির ঘর হবে মাটি থেকে একটু উঁচু বাঁশ বা কাঠ দিয়ে সেই ঘর তৈরি করতে পারেন এবং মেঝেতে খড় বা ধানের তুষ দিয়ে মেঝে তৈরি করে নিতে পারেন ।খেয়াল রাখবেন ঘর যেন শুকনো ও পরিষ্কার হয়।
আরো খেয়াল রাখবেন ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকে। প্রতিটি মুরগির জন্য ঘরে তিন বর্গফুট জায়গা ধরে রাখবেন। দেশি মুরগি সাধারণত চরে বেরিয়ে তার খাবারটা সংগ্রহ করে নেয়। তবুও ভালো মাংস ও ডিম উৎপাদন করতে চাইলে মুরগিকে অল্প পরিমাণে সুষম খাবার দেওয়া প্রয়োজন।
১০০ দেশি মুরগি পালনের খরচ
দেশি মুরগি পালন লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে দেশি মুরগি অনেক উদ্যোক্তায় পালন করতে চাচ্ছে। তাই আজ ১০০ দেশি মুরগি পালনের খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব। চলুন জেনে নেওয়া যাক ১০০ দেশী মুরগি পালন করতে কেমন খরচ হবে।
দেশি মুরগির ০ বয়সের বাচ্চার দাম ৪৫ টাকা প্রতি পিসতাহলে দেশি মুরগির ১০০ বাচ্চার দাম ৪৫০০ টাকা ০ বাচ্চাকে প্রথম এক মাস ব্রুডিং করতে হবে। সাথে কিছু ভ্যাকসিন রয়েছে যেগুলো প্রয়োগ করতে হবে। গরমের সময় মুরগির বাচ্চাকে 8 থেকে 10 দিন ব্রুডিং করলে হয়ে যায় কিন্তু শীতের সময় 15 দিনের মত ব্রুডিং করতে হয়।
এছাড়াও প্রথম মাসে বিভিন্ন ভ্যাকসিন ও কিছু ওষুধ যেমন ক্যালসিয়াম ভিটামিন লাগবে। এবং খাবার খরচ প্রথম মাসে অনেকটাই কম যেমন ১০০ মুরগির বাচ্চার জন্য হাফ বস্তা খাবার লাগে। দ্বিতীয় মাসে গিয়ে খাবার খরচটা একটু বাড়বে সেখানে দেড় বস্তার মত খাবার প্রয়োজন পড়বে। ৪৫ দিন পর পর একটি ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।
তৃতীয় মাসে গিয়ে খাবার খরচটা আরেকটু বাড়বে সেখানে আপনার আড়াই বস্তা খাবার প্রয়োজন পড়বে। চতুর্থ মাসে গিয়ে খাবার খরচটা আরো বেড়ে যাবে ভাবে করে ১০০ মুরগির ডিম আসা পর্যন্ত খরচ পড়বে প্রায় ২০ হাজার টাকার মত। তবে বাজার অনুযায়ী দাম কম বেশি হতে পারে।
দেশি মুরগির প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া খাবার তৈরি
দেশি মুরগি পালনে খরচ কম বিধায় মানুষ দেশি মুরগি পালনের দিকে বেশি ঝুঁকছে। সে ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া খাবার খাওয়ালে মুরগি পালন আরো সহজ ও খরচ কম হবে। বাসার উচ্ছিষ্ট খাবার দিয়েও দেশি মুরগি পালন করা যায়।
দেশি মুরগি সব ধরনের খাবারই খেয়ে থাকে যেমন চাল ,গম, ভাত ও শাক সবজি ইত্যাদি। দেশি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে খাবারের খরচ যদি কমিয়ে আনতে চান তাহলে বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি যেমন পুঁইশাক, কলমি শাক, হেলেঞ্চা ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন।
এছাড়াও বাসার সবজি কাটার পর যে উচ্ছিষ্ট অংশ থেকে যায় সেগুলো ছোট ছোট টুকরো করে মুরগিকে দিতে পারেন। এর ফলে আপনার খাবার খরচ অনেক অংশ কমে আসবে।ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সহ বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে। পূরণ করতে সহায়তা করবে।
দেশি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
যে সমস্ত দেশি মুরগি ছেড়ে পালা হয় সে সমস্ত দেশি মুরগির ডিম দিতে সাড়ে ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আর যদি দেশি মুরগিতে আপনি ফার্মে পালন করেন ফিট জাতীয় খাবার খাওয়ান তাহলে সাড়ে ৫ মাস বয়সে ডিম দেওয়া শুরু করবে। দেশি মুরগি বছরে ১৫০-১৬০ টা ডিম দিয়ে থাকে।
তবে উন্নত জাতের মোরগের সাথে ক্রস করলে সে ক্ষেত্রে ১৮০-২০০ টা পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। দেশি মুরগি সাধারণত যতদিন বাঁচবে ততদিনই ডিম দেয় মুরগির বয়স বেশি হয়ে গেলে ডিম দেওয়ার পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তবে ২০-২২ মাস পর্যন্ত দেশি মুরগি বেশি ডিম দিয়ে থাকে।
দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা
দেশি মুরগি যেহেতু সম্পূর্ণ খোলা পদ্ধতিতে পালন করা হয় সেক্ষেত্রে এ মুরগির রোগ বেশি হওয়ার কথা থাকলেও দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই ভালো যে কারণে তেমন একটা রোগের সম্মুখীন হতে হয় না। তবে কিছু কমন রোগ রয়েছে যেগুলো দেশি মুরগিতে দেখা যায়।
সাধারণত বাচ্চা বয়সে দেশি মুরগি মৃত্যুহার বেশি থাকে এবং অপুষ্টি জনিত কারণে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। তাই বাচ্চা বয়সে দেশি মুরগির সঠিক যত্ন নিলে দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। দেশি মুরগিকে যেকোনো এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দেশি মুরগিকে বিভিন্ন ভ্যাকসিন নিয়মিত প্রদান করবেন।
শেষ কথা
অন্যান্য বিদেশি মুরগির তুলনায় দেশি মুরগির মাংস ও ডিম অধিক সুস্বাদু। বাজারে অন্যান্য মুরগির তুলনায় দেশি মুরগির দামও দ্বিগুণ। বর্তমানে দেশি মুরগির চাহিদার উপর নির্ভর করে অনেক খামারি দেশি মুরগি পালন শুরু করেছে। এতে তারা দ্বিগুণ পরিমাণে লাভবান হচ্ছে। যাদের হাতে সময় রয়েছে এবং মুরগি পালন করার মতো জায়গা রয়েছে তারা চাইলে দেশি মুরগি পালন শুরু করতে পারে।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url