রাতে ঘুম না হলে করনীয় - রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায়

প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই রাতে ঘুম না হলে করণীয় - রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায় সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। আপনি যদি এই সমস্যা গুলো সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
রাতে ঘুম না হলে করণীয় - রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায়
পোস্ট সূচিপত্রঃএই আর্টিকেলটিতে রাতে ঘুমানোর বেশ কিছু ইম্পোর্টেন্ট পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আপনার ভালো লাগবে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

রাতে ঘুম না হলে করণীয় - ভূমিকা

বর্তমান সময়ে শহরমুখী মানুষেরা রাত জাগতে বেশি পছন্দ করে। গভীর রাত পর্যন্ত তারা বাহিরে ঘোরা ফেরা, মুভি দেখা, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাওয়া এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিতে পছন্দ করে। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুমানো সহমুখী মানুষের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। যা আপনার মস্তিষ্কের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। 


কেননা রাতের ঘুম আর দিনের ঘুমের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। রাতে সঠিক সময় না ঘুমিয়ে দিনের বেলায় দুপুর পর্যন্ত ঘুমালে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। যে কারণে পরবর্তীতে রাতে সঠিক সময়ে আর ঘুম আসে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক রাতে ঘুম না হওয়ার কিছু কারণ সম্পর্কে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায় সম্পর্কে।

ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত

ঘুম মানুষের জীবনে একটি অপরিহার্য অংশ। আর এই ঘুমে যদি প্রতিনিয়তই ব্যাঘাত ঘটে সেক্ষেত্রে নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় যেমন কোন কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায়, ক্লান্তি আর অবসাদ ঘিরে ধরে। তাই সকল মানুষের রাতে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ভালো ঘুমের জন্য যে উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারে চলুন জেনে নেই।
  • লক্ষ্য রাখবেন প্রতিদিন রাতে যেন আপনি একই সময় ঘুমাতে যান এবং সকালে একই সময় ঘুম থেকে ওঠেন। চেষ্টা করবেন আপনার ছুটির দিনগুলোতেও যেন ঘুমের একই রুটিন থাকে।
  • বিশেষজ্ঞদের মতে গরম ঘর এবং গরম বিছানায় ঘুমালে ঘুম ভালো হয় না। তাই ঘুমের জন্য ঠান্ডা ঘর এবং ঠান্ডা বিছানা বাছাই করবে।
  • ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা, কফি এ ধরনের খাবার সন্ধ্যার পর খাবেন না। এ ধরনের খাবার অন্ততপক্ষে ঘুমের কয়েক ঘন্টা আগে খেতে পারেন। কেননা ঘুমের আগে যদি আপনি এগুলো পান করেন তাহলে আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
  • ভালো ঘুমের জন্য প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট ব্যায়াম করতে পারে। যেমন ধরেন জোরে হাটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, দড়ি লাফ, দৌড়ানো ইত্যাদি। এই কাজগুলো আপনাকে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করবে।
  • বিশেষ করে যারা দুপুরে ঘুমায় তাদের রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হয়। তাই চেষ্টা করবেন দুপুরে ভাত ঘোমটা যেন ৩০ মিনিটের জন্য হয়। তবে না ঘুমানোই ভালো।
  • ভালো ঘুমের জন্য চেষ্টা করবেন আরামদায়ক ম্যাট্রেস ও নরম বালিশ ব্যবহার করা।

রাতে ঘুম না হলে করনীয়

প্রতিদিন রাতে ভালো ঘুম না হলে মানুষের দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যে কারণে মানুষের মেজাজ খিটখিটে হওয়ার পাশাপাশি অবসাদে ভুগেন। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি শরীরে বাসা বাধা শুরু করে।
  • রাতে ঘুম না হলে আপনি চেষ্টা করবেন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ক্যাফেইন জাতীয় খাবার সেবন থেকে বিরত থাকতে। কারণ এ ধরনের খাবার আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।

  • ঘুমাতে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে যে কোন ডিভাইস থেকে দূরে থাকবেন। যেমন ধরেন কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এগুলো ব্যবহার করবেন না। অনেকের অভ্যাস ঘুমানোর আগে শুয়ে শুয়ে মোবাইল টেপা। এধরনের অভ্যাসের কারণেও অনেক সময় ঘুম আসতে চায় না।
  • ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি চাইলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিতে পারেন। এতে আপনার শরীর ঠান্ডা থাকবে ঘুম ভালো হবে।
  • এছাড়াও দিনে অন্তত ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকতে পারে। এতে আপনার মস্তিষ্ক রাত দিনের তফাৎ বুঝতে পারবে এবং রাতের তাড়াতাড়ি ঘুমাতে সহায়তা করবে।

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায়

বেশ কিছু কারণ রয়েছে যে কারণগুলোর জন্য রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো সম্ভব হয় না। চলুন জেনে নেওয়া যাক রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কিছু উপায় সম্পর্কে।

  • দুশ্চিন্তা মানুষের রাতে তাড়াতাড়ি নাঘুমানোর জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে যারা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভোগে তাদের রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হয় না। যে কারণে তারা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন। তাই আপনি রাতে দুশ্চিন্তা না করে দিনের বেলায় একটা সময় দুশ্চিন্তা করার জন্য বেছে নিতে পারেন। যার ফলে আপনার ঘুমানোর সময় দুশ্চিন্তা আসবেনা আপনি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে পারবেন।
  • ঘুমানোর আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ খেতে পারেন। এতে আপনাকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে সাহায্য করবে।
  • তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস থেকে দূরে থাকবেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে টিভি দেখা এবং কম্পিউটার এবং মোবাইল দেখা থেকে বিরত থাকবেন। কেননা এ ধরনের ডিভাইসের উজ্জ্বল আলো আপনার মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে ব্যাঘাত ঘটে।
  • ১০ থেকে ২০ মিনিট বিছানায় শুয়ে থেকে আপনার যদি ঘুম না আসে তাহলে বিছানা থেকে উঠে পড়ুন। পাশের রুমে গিয়ে আপনি তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য যে কাজগুলো করতে পারেন তাহলো হালকা আলোতে বই পড়া, গান শোনা, কবিতা পড়া আপনার যেটা ভালো লাগে। এরপর যখন আপনার ঘুম আসবে তখনই কেবল বিছানায় যাবেন।

ঘুম কম হলে কি কি ক্ষতি হয়

ঘুম আমাদের শরীরের অপরিহার্য একটি অংশ। প্রতিদিন নিয়মিত ৬ ঘন্টা ঘুমালে শরীর স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকে। তবে কোন কারণে যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হয় সে কারণে আপনার শরীরের নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘুম কম হলে মানব দেহে কি কি ক্ষতি হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপঃ রাতের বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে রক্তচাপ অনিয়মিত হয়ে পড়ে। যার জন্য বেড়ে যায় হৃদরোগে ঝুঁকি। রক্তচাপ উচ্চ মাত্রায় বাড়ার ফলে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকভাবে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যার ফলে শরীরে হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকিঃ দীর্ঘদিন যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হয় তাহলে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন হতে সমস্যা হয়। তাই দীর্ঘদিন যদি আপনি কম ঘুমিয়ে থাকেন তাহলে আপনার ডায়াবেটিসের মাত্রা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।


হজমের সমস্যাঃ রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ঠিক মত কাজ করতে পারে না ফলে পাচন ক্রিয়া ব্যাঘাত ঘটে। যার ফলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়ঃ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর বিশ্রাম পায়না ফলে লিভিং অর্গানিজম কাজ করতে সমস্যা হয়। এজন্য কম ঘুমের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

হার্টের সমস্যাঃ কম ঘুম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে সহায়তা করে। মানুষ যখন ঘুমায় তখন তাদের রক্তনালী ও হার্টের স্পন্দন একটি নির্দিষ্ট হারে চলতে থাকে। ঘুম কম হওয়ার ফলে সেই স্পন্দন অনিয়মিত ভাবে চলে।

ঘুম বৃদ্ধির খাবার

গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেশ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে শরীরের মেলাটোনিম এবং কটিসল হরমোন নিঃসরণ হয়। যার ফলে রাতে ভালো ঘুম হয়।খাদ্য তালিকা থেকে ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে যুক্ত করতে পারেন কম ক্যালরিযুক্ত ও সহজে হজম হয় এমন খাবার। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ধরনের খাবার ঘুম বৃদ্ধি করতে করে সহায়তা করে।

ডিমঃ ডিমের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ডি যা ঘুমের উপর একটি ভালো প্রভাব ফেলে। যাদের ভিটামিন ডি এর অভাব থাকে তাদের সহজে ঘুম আসতে চায় না ।কারণ ডিমের মধ্যে থাকা ভিটামিন ডি মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশে নিউরন রয়েছে সেখানে কাজ করে।

দুধঃ ঘুমানোর আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ খেলে ঘুম ভালো হয়। কেননা গরম দুধে রয়েছে বিদ্যমান অ্যামাইনো এসিড ট্রিপটোফ্যান যা ভাল ঘুমাতে সাহায্য করে।

কলাঃ ভালো ঘুমের সহায়তা করে। কারন কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম।

মিষ্টি আলুঃ ঘুমের মাসি, হিসেবে আখ্যায়িত দেওয়া হয় মিষ্টি আলোকে। আলোতে থাকা বিদ্যমান পটাশিয়ামের কারণে ঘুম ভালো হয়।

কাঠ বাদামঃ স্নায়ু ও মাংসপেশী শান্ত হলে ভালো ঘুম হয়। কাঠ বাদামে থাকা প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও ট্রিপটা ফ্যানের কারণে স্নায়ু ও মাংসপেশি শান্ত হয়।

এছাড়া আরো বেশ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে ভালো ঘুমাতে সহায়তা করে যেমন আমন্ড, আখরোট, লেটুস, মধু, আপেল, বাদাম, কিসমিস ও বিভিন্ন ধরনের সবজির স্যুপ। খাবার আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন এতে শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি রাতের ঘুমও ভালো হবে।

ঘুম আসার ব্যায়াম

পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরী। আপনার যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হয় তাহলে আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যাদের ঘুম কম হয় তারা যদি সহনীয় মাত্রায় অ্যারোবিক ব্যায়াম করে তাহলে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না। 

অ্যারোবিক ব্যায়াম হলো সেই ধরনের ব্যায়াম যার ফলের স্পন্দন দ্রুত হয় এবং শরীর ঘামতে থাকে। যেমন জোরে জোরে হাটা, সাইকেলিং, দড়ি লাফ, জগিং, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি শারীরিক পরিশ্রমকে অ্যারোবিক ব্যায়াম বলা হয়ে থাকে। 

একজন সুস্থ মানুষের জন্য দৈনিক 30 মিনিট অ্যারোবিক ব্যায়াম করা জরুরী। ঘুমানোর অন্তত দুই ঘন্টা আগে ব্যায়াম করলে শরীর ক্লান্ত থাকে এবং ভালো ঘুম হয়। তাই চেষ্টা করবেন ভালো ঘুমানোর জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করা।

শেষ কথা

সুস্থ সুন্দর জীবন সবারই কাম্য। সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই শরীর ও মনকে ভালো রাখতে হবে। শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের দরকার। তাই রাতে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হয় সেই সম্পর্কে আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আরটিকালটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url