ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার ১১ টি উপকারিতা জানুন
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার ১১ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ইসবগুলের ভুষি আমাদের শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজন সে সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃযে সকল রোগের জন্য সবগুলোর ভুসি অনেক কার্যকরী নিচে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত তথ্য।
ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা - ভূমিকা
সকলের কাছে ইসবগুলের ভুষি একটি পরিচিত নাম।ইসবগুলের ভুষি বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। অন্যান্য খাবারের মতো ইসবগুলেরও রয়েছে বেশ কিছু উপকারিতা। নিয়মিত ইসুবগুলের ভুষি খেলে ছোট-বড় অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। ইসবগুলের ভুষিতে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রত্যেকটি পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
১ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুষিতে রয়েছে ৫৩ শতাংশ ক্যালরি, ০ শতাংশ ফ্যাট, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম ও ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন। এসব পুষ্টি উপাদান মানব দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আজ এ আর্টিকেলটিতে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগেন এবং পায়খানা করতে ব্যথা হয় তাহলে ইসবগুলের ভুষি খেলে উপকার পাবে। ইসবগুলের ভুষি তার ওজনের ১৬ গুণ বেশি পানি শোষণ করতে পারে। যে কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় ইসুবগুলের ভুসি খেলে পায়খানা নরম ও পিচ্ছিল হয়। যে কারণে পায়খানা সহজে ক্লিয়ার হয়।
তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখা খুবই দরকার আপনি যদি নিয়মিত ইসবগুলের ভুষি খান তাহলে অবশ্যই বেশি বেশি পানি খেতে হবে তবে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা পাবেন। বেশি পরিমাণে পানি যদি না খান তাহলে এসব ভুল আপনার উপকারের থেকে অপকার বেশি করবে। আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দিবে।
পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
আপনার যদি পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা থেকে থাকে কোন কিছু হজম হতে দেরি হয় বা পরিপাকতন্ত্র ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে তাহলে দুই চা চামচ ইসুবগুলের সাথে তিন চা চামচ দই মিশিয়ে দুই তিন ঘন্টা পর পর আপনি নিয়মিত ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন।
এই পদ্ধতিতে আপনি ইসবগুলের ভুষির সাথে দই মিশিয়ে খান তাহলে আপনার পরিপাকতন্ত্রের ফাইবার প্রিবায়োটিক যা আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
অতিরিক্ত ওজন দূর করতে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
ইসবগুলের ভুষি ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী। যারা না চাইতেও অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে ফেলে বা খাবার কন্ট্রোল করতে পারে না তাদের জন্য ইসবগুলের ভুষি বেস্ট অপশন। ইসবগুলে থাকা খায়বার আপনার পরিপাকতন্ত্রকে ধীড় করবে। পেট অনেক সময় পর্যন্ত ভরা লাগবে ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহন থেকে বিরত থাকবেন। এর ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
কোলেস্টেরলের সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
কোলেস্টেরলে বাড়লে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। কোলেস্টরেল যদি অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায় তাহলে হার্ট অ্যাটাক ও স্টকের মত ভয়াবহ রোগ গুলো শরীরে বাসা বাঁধে। এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে আপনি ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
ইসবগুলের ভুষিতে থাকা ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল কমাতে সাহায্য করবে এবং ভালো কোলেস্টরেল এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করবে ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা সমান থাকবে।
ডায়াবেটিসের সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
ইসবগুলের ভুষি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ উপকারী। সুগার নিয়ন্ত্রণে ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ডায়াবেটিসের খাবারে ইসবগুল যোগ করলে খাবারের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কমিয়ে দেয়।
ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিসের খাবারগুলো অনেকাংশে ডায়াবেটিস ফ্রেন্ডলি হয়ে ওঠে। আপনার ডক্টরের সাথে কথা বলে ইসবগুলের ভুষি খাওয়া শুরু করতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
আমাদের ভুলভাল খাদ্যাভ্যাসের জন্য প্রতিনিয়ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়েই যাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গ্যাস্ট্রিক ঔষধ কিনে খেয়ে থাকি। এতে দিন দিন স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েই যাচ্ছে। এই স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের প্রথম কাজ হবে নিয়ম তান্ত্রিক খাদ্য অভ্যাস।
এই খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন ঠাণ্ডা এক গ্লাস দুধের সাথে দুই চা চামচ এসব গুলো ভুষি মিশিয়ে খাবেন। এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করলে আশা করি গ্যাস্ট্রিক হতে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বাতের ব্যথা দূর করতে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
আপনার ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি জনিত বাতের ব্যথা জনিত সমস্যা আপনি নিশ্চিন্তে ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন বেশ ভালো উপকার পাবেন। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েডের সমস্যাতেও ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন। এইসব সমস্যার জন্য যদি আপনি কোন ওষুধ সেবন করেন তাহলে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।
প্রসাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
যাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ইসবগুলের ভুসি বেশ উপকারী একটি খাবার। দিনে দুইবার ইসুবগুলের ভুষির সাথে আখের গুড় মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি নিয়মিত সাত দিন খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
ডায়রিয়া জনিত সমস্যায় ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
ডায়রিয়ার সময় অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন। ডায়রিয়া থেকে খুব তাড়াতাড়ি সেরে ওঠার জন্য দুই চা চামচ ইসুবগুলের সাথে তিন চা চামচ দই মিশিয়ে দুই তিন ঘন্টা পর পর খেতে পারেন।
কারণ দইয়ে রয়েছে প্রবায়োটিক যা পাকস্থলীকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে আর ইসুবগুল তরল মলের পানি শোষণ করে মল কে শক্ত করতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ডায়রিয়া পাশাপাশি আমাশয় অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
পেট ব্যথায় ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
ইসবগুলের ভুষি পেট ব্যথা কমাতে বেশ ভালো কাজ করে। ইসুবগুলের ভুষিতে থাকা মিউসিলেজিনাস আলসারজনিত পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের আলসারজনিত পেট ব্যথার সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ইসুবগুলের ভুষি খেতে পারেন।
আইবিএস সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
আইবিএস রোগীদের সাধারণত অল্টারড হয়। রেগুলার পায়খানা কখনো লুজ বা পাতলা আবার কখনো কন্সটিপেশন বা কষা হয়ে থাকে। তাই আইবিএস রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার পরামর্শ দেয়। আপনি যদি আইবিএস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।
শেষ কথা
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দৈনিক চার গ্রাম অর্থাৎ এক চামচ ইসবগুলের ভুষি যথেষ্ট। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা ইসবগুলের ভুষি থাকাটা প্রয়োজন। তবে আপনার রোগ বুঝে ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url