করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - করলার পুষ্টি উপাদান
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-করলার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে করলা বিভিন্ন উপকারিতা ও অপকারিতা জানানো চেষ্টা করবো। করলা সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
করলার অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যদিও এর তেতো স্বাদের জন্য অনেকেই পছন্দ করেন না। এই সবজিটির ঔষধি গুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে আপনারা অবাক হবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআপনাদের সুবিধার জন্য চেষ্টা করেছি করলার বিভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরার জন্য। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই করলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
করলা খাওয়ার উপকারিতা - ভূমিকা
করলা তেতো স্বাদ যুক্ত হলেও অনেকের কাছে এই সবজিটি খুবই প্রিয়। করোলা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমন ভাজি, ভর্তা ও রান্না করে। তবে গরম ভাতের সাথে করলা ও আলু ভাজির জুড়ি মেলা ভার। অনেকের খাবারটি খুবই পছন্দের। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে করলা বেশ কার্যকরী।
করলা উচ্চ রক্তচাপ ও চর্বি কমাতে সাহায্য করে। করলাতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও বার্ধক্য ঠেকিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে করলার জুড়ি নেই। যারা কৃমি জনিত সমস্যায় ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে ভাইরাস ও কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে এই করলা।
যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম তাদের হিমোগ্লোবিন তৈরি করে রক্তের উপাদান বাড়াতে সহায়তা করে করলা। তাই যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তাদের জন্য করলা হতে পারে উত্তম পথ্য।
করলার পুষ্টি উপাদান
বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে তেতো খাবারের জুড়ী মেলা ভার। তেতো খাবারের মধ্যে অন্যতম খাবার হল করলা। করোলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। তো চলুন আজ আমরা এই তেতো সবজিটির গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নেই।
যেকোনো খাবারের স্বাস্থ্য গুণ নিয়ে যখন আলোচনা করি সর্বপ্রথম আমাদের জানা উচিত খাবারটির পুষ্টিগুণ কি কি রয়েছে। আজ আমরা জানবো করলার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। চলুন তাহলে জেনে নেই ১০০ গ্রাম করলার মধ্যে পুষ্টি উপাদান কি পরিমাণে আছে।
- ক্যালোরি ১৭ ক্যালোরি
- কার্বোহাইড্রেট ৩.৭ গ্রাম
- ফাইবার ২.৪ গ্রাম
- ভিটামিন সি ৯৩%
- ভিটামিন এ
- আয়রন
- পটাশিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফোলেট
একজন মানুষের সারাদিনে যতটুকু ভিটামিন সি দরকার তার ৯৩% করলা থেকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ আপনি যদি ১০০ গ্রাম করলা খেতে পারেন তাহলে এর মধ্যে থাকা ৯৩% ভিটামিন সি আপনি গ্রহণ করতে পারবেন। যা আপনার সারাদিনের ভিটামিন সি চাহিদা অনেকাংশে মেটাতে পারে।
এছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান তো রয়েছেই । তাই নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাসটি গড়ে তুলুন। যা আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
করলা খাওয়ার উপকারিতা
করলা তেতো হলেও অনেকের প্রিয় একটি সবজি। বিভিন্ন সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এই সবজি। করলা সাধারণত ভর্তা, ভাজি ও তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এই সবজিটি অনেক বেশি উপকারী ।
তাই খাদ্য তালিকায় নিয়মিত করোলা রাখা উচিত। বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের মতে করলার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা অনেক। চলুন জেনে নেই করলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ করলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষণ দূর করে। হজম প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে সাহায্য করে। করলা রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহ জনিত সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।লিভার ভালো রাখতেঃ আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত করলা খাওয়া উচিত।
নিয়মিত করলার রস খেলে লিভারের ভেতর জমে থাকা টক্সিন থেকে বের করতে সাহায্য করে। করলায় থাকা পুষ্টিগুন লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই লিভারের যেকোনো অসুখ দূরে রাখতে নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।
ওজন কমাতেঃ আপনি যদি বাড়তি ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় আজ থেকে যোগ করুন করলা। কারণ করলাতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এছাড়াও আপনার অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে এই সবজি দারুন উপকারি। তাই অতিরিক্ত ওজন থেকে মুক্তি পেতে আজ থেকে নিয়মিত করলা খাওয়া শুরু করুন।
সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখেঃ আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে হলে রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই জরুরী। না হলে ডায়াবেটিকসহ নানান সমস্যা আমাদের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এছাড়াও আপনি যদি ডায়াবেটিক সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনার জন্য অনেক খাবার খাওয়া বারণ থাকবে।
কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত করোলা রস খেতে পারেন তাহলে এই সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারেন।
হজমের সমস্যা দূর করেঃ হজম প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা কমাতে নিয়মিত করলা খাওয়া উচিত। বিভিন্ন সময় আমরা হজম জনিত সমস্যায় ভুগে থাকি। হজম জনিত এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত করলার রস খেতে পারেন। আপনি যদি নিয়মিত করলা রস খান তাহলে আপনার হজম ক্ষমতা অনেক উন্নত হবে।
আপনি যদি নিয়মিত করলা জুস খেতে পারেন তাহলে হজমসহ নানা ধরনের জটিল সমস্যা খুব সহজেই সমাধান হয়ে যাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ আপনি যদি নিয়মিত করলা খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের রোগ ধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি শরীরকে সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করবে এই করলার পুষ্টি উপাদান।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ করলা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি। উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যার সমাধান এবং চর্বি কমাতে বেশ কার্যকর এই করলা। করলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ধরে রাখতে করলার জুড়ি মেলা ভার।
কৃমির সমস্যাঃ অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন ভাইরাস ও কৃমির সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন বিশেষ করে বাচ্চারা এ ধরনের সমস্যায় বেশি ভোগে। তাই যারা ভাইরাস ও কৃমির সমস্যায় ভুগেন তারা চাইলে করলা রস খেতে পারেন। যা আপনাদের এই ধরনের সমস্যা থেকে খুব সহজে মুক্তি দেবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ নিয়মিত করোলা খেলে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি ক্যান্সারের মত মরণব্যাধি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। করলাতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী লুটিন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধই লাইকোপিন নামক উপাদান।
করলা খাওয়ার অপকারিতা
করলা স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এই কারণে করোলা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত করলা খেলে যে ক্ষতি হতে পারে চলুন জেনে নেই।
- অতিরিক্ত পরিমাণে করোলা খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে। যাদের শর্করার পরিমাণ কম রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করলা গ্রহণ করবেন।
- শিশুদের জন্য করলা নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা ও বমি হতে পারে। তাই শিশুদের জন্য করলার রস দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
- অত্যাধিক পরিমাণে তিতা করলা খেলে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতি হতে পারে। অত্যাধিক তিতা করলা খাওয়ার ফলে মাসিকের প্রদাহ বৃদ্ধি এবং গর্ভনিরোধক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে করলা না খাওয়াই ভালো। আক্রান্ত হওয়ার ফলে এভাবে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- যদিও করলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। তবে আপনি যদি নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধের সাথে করলা খেয়ে থাকেন তাহলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর।তাই চেষ্টা কোরবেন একটি করলার চার ভাগের এক ভাগ খেতে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আশা করছি আর্টিকেলটি থেকে করলার পুষ্টি উপাদান,করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।আপনার কাছে যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনার মন্তব্য লিখে জানাবেন।
ভালো লাগলে ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখবেন এবং কোন কিছু জানতে বা বুঝতে না পারলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url