লাউ এর পুষ্টি উপাদান - লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

কলার উপকারিতা জানতে এখানে ক্লিক করুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো লাউ এর পুষ্টি উপাদান - লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব লাউ সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য। লাউ এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
লাউ এর পুষ্টি উপাদান - লাউ এর উপকারিতা  ও অপকারিতা
পোস্ট সূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে লাউয়ের পুষ্টি উপাদান লাউয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

লাউ খেলে কি ঠান্ডা লাগে

বাংলাদেশের জনপ্রিয় সবজির মধ্যে লাউ অন্যতম। লাউয়ের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পানি। যে কারণে লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং রাতে ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে। গরমের দিনে লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে যার ফলে হিট স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। 

গরমের সময় ঘামার কারণে শরীর থেকে যে পরিমাণ পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায় তার অনেকটাই পূরণ করতে সহায়তা করে লাউ। লাউ সাধারণত গ্রীষ্মকাল এবং শীতকাল মিলিয়ে সারা বছরই পাওয়া যায়। সুস্বাদু এই সবজিটি বিভিন্নভাবে রান্না করে যেমন নিরামিষ, ভাজি ও ঝোল হিসেবে খাওয়া যায়। লাউয়ের পাতা, ডগা এমনকি খোসা সবই খাওয়া যায়। 

লাউ এর সাধারণত ৯৬ শতাংশই পানি। এছাড়াও লাউ একটি ঠান্ডা জাতীয় সবজি। তাই অনেকের ধারণা লাউ খেলে হয়তো ঠান্ডা লাগতে পারে। কিন্তু এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কেননা আপনি যদি গরমের দিনে লাউয়ের তরকারি খান তাহলে আপনার শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে। লাউ পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। শরীরের অনেক ধরনের রোগ সারাতে সহায়তা করে এই পুষ্টি সমৃদ্ধ লাউ। 


নিয়মিত লাউ খেলে আপনার পেটের সমস্যা থেকে শুরু করে গ্যাস থেকে সমস্যা সবই দূর হয়ে যাবে। তবে চেষ্টা করবেন গরমের দিনে বেশি বেশি লাভ হওয়ার এবং শীতের দিনে একটু কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ লাউ যেহেতু ঠান্ডা সবজি তাই শীতের দিনে খেলে আপনার ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। তবে একেবারেই যে খাবেন না সেটা না খেতে পারেন কিন্তু পরিমিত। 

তবে মানুষের মনে যে ধারণাটি রয়েছে যে লাউ খেলে ঠান্ডা লাগবে সেটা আসলে ঠিক নয়। শীতের দিনে লাউ খেলে ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে কিন্তু লাউ খেলে জ্বর সর্দি কাশি এ ধরনের কোন সমস্যা হয় না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন লাউ খেলে ঠান্ডা লাগে কিনা।

লাউ এর পুষ্টি উপাদান

পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজির মধ্যে লাউ অন্যতম। লাউয়ের মূল উপাদান হল পানি। লাউ আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী একটি সবজি। আপনার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে রান্না করে লাউ খেতে পারেন। লাউ যেমন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর তেমনি লাউয়ের পাতাতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। চলুন জেনে নেই প্রতি ১০০ গ্রাম লাউ এ কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে সে সম্পর্কে।
  • কার্বোহাইড্রেট ২.৫ গ্রাম
  • প্রোটিন ০.২ গ্রাম
  • ফ্যাট ০. ৬ গ্রাম
  • ভিটামিন সি ৬ গ্রাম
  • ফসফরাস ১০ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম
  • নিকোটিনিক এসিড ০.২ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম
এছাড়াও লাউয়ের রয়েছে খনিজ লবণ,ভিটামিন বি১, বি২, আয়রন সহ আরো নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। এছাড়াও লাউ এ রয়েছে ৯৬ শতাংশ পানি। লাউ খেলে শরীরের পানি শূন্যতা জনিত সমস্যায় খুব দ্রুত সমাধান হয়। তাই বছরের সব সময় অনায়াসে লাউ খেতে পারবেন। যা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান।

লাউ এর উপকারিতা

পুষ্টিগুণে ভরপুর লাউয়ের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, বি এবং ডি। এছাড়াও আরো রয়েছে সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম। আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে নিয়মিত আপনার খাদ্য তালিকায় লাউ রাখতে পারেন। এখন তাহলে চলুন জেনে নেই লাউ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
  • লাউয়ের মূল উপাদান হলো পানি। লাউয়ে রয়েছে ৯৬ শতাংশ পানি। আপনি যদি নিয়মিত লাউ খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীর হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করবে।
  • এছাড়া লাউ ওজন কমাতে বেশ ভালো কাজ করে। না রয়েছে লো ক্যালোরি এবং উচ্চমাত্রার আশ যা আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করবে। তাই যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত লাউ রাখতে পারেন বেশ ভালো উপকার পাবেন।

  • যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য লাভ হতে পারে উৎকৃষ্ট একটি খাবার। পেটে সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, পেট ফাঁপার মতো সমস্যা প্রতিরোধ করতে লাউ বেশ কার্যকরী একটি সবজি।
  • আপনি যদি নিয়মিত লাউ খাওয়ার অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারেন তাহলে আপনার কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
  • বিশেষ করে যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন নিয়মিত লাউ খাওয়ার ফলে হজম জনিত যে কোন সমস্যা অনায়াসে দূর হয়ে যাবে।
  • নিয়মিত লাউ খাওয়ার ফলে লাউ থাকা পটাশিয়াম ও ফাইবার রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে বেশ কার্যকর পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুকি কমাতেও সহায়তা করে থাকে।
  • রক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে লাউ কার্যকরী। তাই আপনার যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত আপনার খাদ্য তালিকায় লাও রাখতে পারেন।
  • নিয়মিত লাউ খেলে ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন, মিনারেল ও উচ্চমাত্রার পানি আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারী। তাই চেষ্টা করবেন নিয়মিত খাদ্য তালিকায় লাউ রাখার।
  • লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং রাতে ভালো ঘুমাতে সহায়তা করে।
  • লাউ এ থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ঘাম জনিত খনিজ লবণের ঘারতি দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়াও আমাদের দাঁত ও হাড়কে মজবুত করতে বেশ সহায়তা করে। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন নিয়মিত খাদ্য তালিকা লাউ রাখার।

লাউ এর অপকারিতা

লাউ পুষ্টিকর সবজির মধ্যে একটি। অনেকের কাছে লাউ খুবই প্রিয়। সাধারণত লাউ সারা বছরই কম বেশি পাওয়া যায়। লাউ ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও প্রচুর পরিমাণে পানি থাকার পাশাপাশি উপকারী ফাইবার রয়েছে। লাউয়ের প্রচুর পরিমাণে উপকারিতার দিক রয়েছে তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিও করে থাকে। তাই চলুন জেনে নেই লাউয়ের অপকারিতা সম্পর্কে।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে লাউ খেলে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তারা লাউ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
  • অনেক সময় দেখা যায় লাউয়ের রস তেতো হয়ে থাকে। লাউ এর রস যদি তেতো হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে লাউ টি বিষাক্ত ছিল। এই লাউ খেলে আপনার ডায়রিয়া বমি ও বদ হজম হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে লাউ খাওয়ার ফলে শরীরের রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।
  • এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে লাউ খেলে রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে যেতে পারে।

লাউ এর রসের উপকারিতা

মানবদেহের জন্য লাউ যেমন উপকারী এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। তেমনি লাউয়ের রসেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ।চলুন জেনে নেই লাউ এর রসের উপকারিতা সম্পর্কে।
  • আপনি যদি দৈহিক পরিশ্রম বেশি করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য লাভের রস বেশ কার্যকরী হবে। কেননা দৈহিক পরিশ্রম করার পর লাভের রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। দৈহিক পরিশ্রম করার ফলে আমাদের শরীরের গ্লুকোজ এবং কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ কমে যায়। আর সেই ঘারতি পূরণ করতে সহায়তা করে লাউয়ের রস।

  • পেট ঠান্ডা রাখতে লাউয়ের রস বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। পেট ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। এছাড়াও লাউয়ের রস হজমে সাহায্য করে।
  • ওজন কমানোর জন্য আপনি লাউয়ের রস খেতে পারেন। কারণ লাউয়ের রস কম ক্যালরি এবং কম স্নেহ পদার্থ যুক্ত পানীয়। শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থ সরাতে সহায়তা করে, সার্বিকভাবে চর্বি কমায় এবং অক্সিডেটিভ ভ চাপ কমায় বলে ওজন কমতে সাহায্য করে।

লাউ শাক এর উপকারিতা

আমাদের দেশের জনপ্রিয় শাক গুলোর মধ্যে লাউশাক অন্যতম । লাউশাক পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। খেতে সুস্বাদু এবং এর উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ প্রচুর রয়েছে। লাউ শাক আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। একটি চলুন জেনে নেই লাউ শাকের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে।
  • লাউ শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকার কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে এবং পাইলস প্রতিরোধ করতে বেশ ভালোভাবে কাজ করে। তাই তাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা চেষ্টা করবেন নিয়মিত লাউ শাক খাওয়ার।
  • লাউ শাক দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে এবং ঘুমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
  • লাউশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি যা ঠান্ডা জনিত সমস্যা এবং যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
  • লাউ শাক ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় গর্ভস্থ শিশুর স্পাইনাল কর্ড এবং মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য খুবই কার্যকর। সাধারণত ফলিক এসিডের অভাবে গর্ভস্থ শিশুর স্পাইনাল কর্ডের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় যার কারণে মস্তিষ্ক বিকৃতি, প্যারালাইসিস অথবা মৃত শিশু জন্মাতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন প্রেগন্যান্ট অবস্থায় বেশি বেশি লাউশাক খেতে।
  • ক্যালসিয়াম জনিত সমস্যা দূর করতে লাউ শাক বেশ কার্যকরী। এছাড়াও লা শাকে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যা হারকে শক্তও মজবুত করতে সাহায্য করে।
  • লাউ শাকে ক্যালরি কম থাকে এবং কোলেস্টরেল ও ফ্যাট মুক্ত তাই লাউ শাক ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী।
  • রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে পটাশিয়াম। আর লাউ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। তাই নিয়মিত লাউ শাক খেতে পারে।
  • লাউ শাক আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় শরীরের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় লাউশাক রাখার চেষ্টা করবেন।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি থেকে লাউয়ের পুষ্টি উপাদান ও লাউয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পেরেছেন। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় লাউ এবং লাউ শাক রাখার। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মন্তব্য কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

ভালো লাগলে ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখবেন এবং কোন কিছু জানতে বা বুঝতে না পারলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url