মাথা ব্যথার ঘরোয়া সমাধান জানুন

প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো মাথা ব্যথার ঘরোয়া সমাধান সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ আর্টিকেলটিতে ডা. তাসনিম জারার মতে মাথা ব্যথার ঘরোয়া সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মাথা ব্যথার ঘরোয়া সমাধান জানুন
পোস্ট সূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে মাথাব্যথা সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

মাথা ব্যথার ঘরোয়া সমাধান - ভূমিকা

আপনার যদি হঠাৎ হঠাৎ বা প্রায়ই মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন তাহলে আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়তে পারেন। মৃদু থেকে শুরু করে তীব্র সব ধরনের মাথাব্যথা নিয়ে আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে। মাথা ব্যথার কারণগুলো আপনাদের বোঝানোর জন্য আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। আপনার কেন মাথা ব্যথা করছে সে সম্পর্কে যেন আপনি জানতে বা বুঝতে পারেন। 

বিষয়টি জানা থাকলে সমাধান মেনে চলতে আপনার সহজ হবে। প্রথমে জানতে হবে সবচেয়ে কমন মাথাব্যথা সম্পর্কে। আপনার মাথা ব্যথা থাকলে শুরুর বিষয়টি হওয়ার সম্ভাবনাই সবথেকে বেশি। এই মাথা ব্যথাটা এতটাই কমন যে প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে ৭৮ জন মানুষেরই এই মাথাব্যথায় ভোগেন জীবনের কোন এক সময়। চলুন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

টেনশন টাইপ মাথাব্যথা

টেনশন টাইপ মাথাব্যথা কি সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের মাথাব্যথা হয়। খুব তীব্র ব্যথা হয় না। প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া যায়। সাধারণত এ ধরনের মাথাব্যথার সাথে বমি ভাব বা বমি হয় না। আলো কিংবা আওয়াজে অস্বস্তি লাগে না। হাঁটাচলা করলে মাথা ব্যথা বাড়ে না। 


টেনশন টাইপ মাথা ব্যথা টা সাধারণত মাথা দুই পাশেই দেখা দেয়। মনে হয় ব্যথাটা যেন মাথায় চাপ দিয়ে ধরে আছে। কারো কারো ক্ষেত্রে মনে হয় ব্যথাটা মাথায় টুপির মত টাইট হয়ে ধরে আছে। আবার কারো ক্ষেত্রে মনে হয় মাথার উপরে ভারী ওজন বসে আছে। 

আবার অনেকেরই মনে হয় ব্যথাটা মাথার বাইরে থেকে আসছে। সাধারণত ব্যথা মাথার সামনে থেকে পেছনদিকে অর্থাৎ ঘাড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে মাথার অন্য যে কোন জায়গায় হতে পারে।টেনশন নামটি থাকলেও এই মাথাব্যথা টেনশন ছাড়া অন্যান্য কারণেও হতে পারে। চলুন জেনে নেই কারণগুলো সম্পর্কে।

১.ঘুমের জন্য মাথা ব্যথাঃ আপনি সারা সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা করে কাজ করেও সুস্থ বোধ করেন। অথচ ছুটির দিনে লম্বা একটা ঘুম দিয়ে উঠে দেখেন মাথা ব্যথা করছে। এটার কারণ হলো হঠাৎ মানসিক চাপ কমে যাওয়ার কারণে মাথায় এক ধরনের হরমোন কমে যাওয়া। 

আপনার যদি এ ধরনের মাথা ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে ঘাবড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। বেশি ঘুমালে সবার মাথাব্যথা না হলেও এটা বেশ কমন শুধু আপনার একার ক্ষেত্রে এটা ঘটে না।

সমাধানঃ আপনার যদি এমন মাথা ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে ছুটির দিনের বেশি ঘুমানো থেকে বিরত থাকুন।৮ ঘন্টার বেশি ঘুমানোর কারণে এ ধরনের মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।

২.কম ঘুমানোর জন্য মাথা ব্যথাঃ অনেকের ঘুম কম হলে মস্তিষ্কের ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। অল্প কারণেই ব্যথা অনুভব হয়। সে সময় মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। আর প্রতিনিয়ত ঘুম কম হতে থাকলে এ ধরনের মাথাব্যথা বারবার দেখা দিতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো উচিত।

৩. নির্দিষ্ট কিছু খাবারঃ চা, কফি বা কোমল পানীয় খুব বেশি পরিমাণে খেলে অনেকের এ ধরনের মাথা ব্যথা হতে পারে। কারণ এ ধরনের খাবারের রয়েছে ক্যাফেই ন যা মাথা ব্যথা সৃষ্টিকর্তে পারে।

সমাধানঃ যদি দেখেন এসব পানীয় পান করলে আপনার মাথা ব্যথা করছে তাহলে এগুলো কম পরিমাণে পান করতে হবে বা পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪. পানি কম খাওয়াঃ যে পরিমাণ পানি আপনি খাচ্ছেন তার থেকে বেশি পরিমাণ পানি যদি আপনার শরীর থেকে বের হয়ে যায় তাহলে মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে। আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনা কখন আমাদের শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। শুধুমাত্র বমি বা ডায়রিয়া নয় অতিরিক্ত পরিমাণে শরীর ঘামলে বা পানি কম খেলে পানি স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।

সমাধানঃ প্রতিদিন অন্তত ২ লিটার করে পানি পান করতে হবে। মাথা ব্যথা শুরু হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন।

৫. কোন বেলার খাবার না খাওয়াঃ এক বেলা খাবার না খেলে বা খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করলে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। আমরা যা খাই সেই খাবার থেকে শরীর এক প্রকার চিনি তৈরি করে। যেটা ব্রেনের খাদ্য। আপনি না খেলে রক্তে সেই চিনির পরিমাণ কমে যায় সে কারণে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।

সমাধানঃ কোন বেলার খাবার বাদ দেওয়া যাবেনা। মাথা ব্যথা হলেও সময় মত খাবার খেয়ে নিতে হবে।

৬. সারাদিন শুয়ে বসে থাকাঃ আপনার যদি শারীরিক পরিশ্রম কম হয় তাহলে মাথা ব্যথা দিতে পারে।

সমাধানঃ নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে।

৭. মানসিক চাপঃ মানসিক চাপ খুবই কমন একটা কারণ। কোন কিছু নিয়ে মানসিক চাপে থাকলে মাথা ব্যথা হতে পারে।

সমাধানঃ তাই যা নিয়ে মানসিক চাপে আছেন সে বিষয়টার সমাধান করে ফেলার চেষ্টা করবেন।

মাথা ব্যথার ঔষধ

টেনশন টাইপ মাথা ব্যথা হলে কি ওষুধ কত দিন খাবেন চলুন জেনে নেই।

টেনশন টাই মাথাব্যথা কমাতে ১০০০ মিলির প্যারাসিটামল কার্যকরী। আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত ৫০০ মিলি প্যারাসিটামল পাওয়া যায়। ৫০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট হলে ২ টা ট্যাবলেট খাবেন। তবে মাথা ব্যথা চলে গেলে এই ওষুধ খাবেন না। কিন্তু যদি মাথাব্যথা থেকে যায় তবে ৪-৬ ঘন্টা পর পর খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন দিনে যেন ৮ টা ট্যাবলেটের বেশি না খাওয়া হয়। 


এই ওষুধের মাত্রাটা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য যার ওজন ৫০ কেজি বা তার বেশি এবং শরীরে কোন রোগ নেই। আপনার ওজন যদি ৫০ কেজির নিচে হয় বা কোন রোগ থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন করবে।

মাইগ্রেনের বোঝার উপায়

টেনশন টাইপ মাথা ব্যথা যন্ত্রণাদায়ক তবে নির্বিশ। জীবনের জন্য হুমকি নয়।টেনশন টাইপ মাথা ব্যথা থেকে মাইগ্রেনের ব্যথাটা অন্যরকম হয়। সাধারণত মাইগ্রেনের মাথা ব্যথা একপাশে হয়। আর ব্যথাটা টনটন করতে থাকে। মাথা ব্যথার সাথে বমি ভাব বা বমি হলে এবং আলো বা শব্দ যন্ত্রণাদায়ক মনে হলে। এছাড়াও মনে হয় একটা রক্তনালী সংকুচিত আর প্রসারিত হচ্ছে।

মাথাব্যথায় ডাক্তারের পরামর্শ

চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ধরনের মাথা ব্যথায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

১. ঘনঘন মাথা ব্যথা দিলে বা মাথাব্যথা তিব্র হলে।

২. ব্যাথা নাশক ওষুধ খেয়েও মাথা ব্যথা না কমলে আর ক্রমশ খারাপ হতে থাকলে।

৩. মাথার সামনের দিকে কিংবা একপাশে তীব্র টনটনে ব্যথা হলে। এই ব্যথাটি মাইগ্রেন হতে পারে অথবা কিছু ক্ষেত্রে ক্লাস্টার হেডেক হতে পারে।

৪. মাথাব্যথার সাথে বমি ভাব বা বমি হলে এবং আলো বা শব্দ যন্ত্রণাদায়ক হলে এটা মাইগ্রেন হতে পারে।

৫. আপনার বয়স যদি ৪০ এর বেশি হয়ে থাকে। আগে কখনো মাথা ব্যথা হত না, কিন্তু এখন নতুন করে মাথা ব্যথা শুরু হলো। সেটা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

৬. আপনার সাধারণত যেমন মাথা ব্যথা হয় তার ধরন অনেকটা পাল্টে গেলে সেটাও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

শেষ দুটো লক্ষণ দেখা দিলেই যে ক্যান্সার হবে সেরকম নয়। এছাড়া অনেক কারণে ব্যথা হতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে পারবে।

কখন দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে

চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ধরনের মাথা ব্যথার জন্য অতি দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। কোনক্রমে দেরি করা যাবে না।

১. মাথা ব্যথা হঠাৎ শুরু হলে এবং শুরুতেই মাথা ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি হলে। অথবা মাথা ব্যথার তীব্রতা এত বেশি হলে যা আপনার জীবনে আগে কখনো হয়নি। এগুলো ব্রেইনের রক্ত ক্ষরণের লক্ষণ।

২. মাথায় কোন গুরুতর আঘাত পেলে যেমন কোন দুর্ঘটনার কারণে অথবা কোথাও পড়ে যাওয়ার ফলে।


৩. প্রচন্ড মাথা ব্যথার সাথে আরো লক্ষণ থাকে যেমন কথা বলতে বা কোন কিছু মনে করতে হঠাৎ অসুবিধা হলে অথবা হাত বা পা দুর্বল বা অবশ হয়ে আসলে। এগুলো স্টোকের লক্ষণ। ঝিমিয়ে পড়লে অথবা অসংলগ্ন আচরণ করলে, কিংবা গায়ে জ্বর আসলে, কাপুনি হলে, ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে, অথবা চামড়ায় র‌্যাশ উঠলে এগুলো ব্রেনে ইনফেকশনের লক্ষণ। খিচুনি হলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে ব্রেনের রক্তক্ষরণের লক্ষণ।

৪. এছাড়াও প্রচন্ড মাথা ব্যথার সাথে খাবারের সময় চোয়ালে ব্যথা হলে, চোখে ঝাপসা দেখলে অথবা একটা জায়গায় দুটো দেখলে মাথার তালুতে চাপ দিয়ে ব্যথা অনুভব করলে হাসপাতালে যাবেন। এই লক্ষণগুলো মাথা ও ঘাড়ের রক্তনালি প্রদাহের কারণে দেখা দিতে পারে। এক বা দুই চোখে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

শেষ কথা

টেনশন জনিত মাথা ব্যথায় চেষ্টা করবেন ঘরোয়া সমাধান গুলো মেনে চলার এছাড়াও উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চেষ্টা করবেন ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়ার। আজকের আর্টিকেলটি ডা.তাসনিম জারা ম্যাম এর থেকে সংগৃহীত।

আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

সংগৃহীতঃ ডা. তাসনিম জারা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url