শিশুর মেধা বিকাশের প্রয়োজনীয় কিছু খাবার - শিশুর মেধা বিকাশে করণীয়

প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো শিশুর মেধাবিকাশে প্রয়োজনীয় কিছু খাবার - শিশুর মেধাবিকাশে করণীয় কি সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে একটি শিশুর মেধা বিকাশে কি কি করণীয় সে সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
শিশুর মেধা বিকাশের প্রয়োজনীয় কিছু খাবার-শিশুর মেধা বিকাশে করণীয়
পোস্ট সূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে শিশুর মেধা বিকাশের বেশ কিছু ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যা আপনাদের উপকারে আসবে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

শিশুর মেধা বিকাশে করণীয় - ভূমিকা

সকল মা-বাবার ইচ্ছা তার আদরের সন্তান তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন ও মেধাবী হোক। সেজন্য ছোটবেলা থেকেই শিশুর স্বাস্থ্যের পাশাপাশি কিভাবে তার ব্রেনের ডেভেলপমেন্ট হবে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিশু জন্মের পর থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই মস্তিষ্কের সার্বিক গঠন ও বিকাশ সম্পন্ন হয়ে যায়। 

শিশুর মেধা বিকাশের জন্য বেশ কিছু পন্থা রয়েছে। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে চেষ্টা করব আপনার শিশুকে মেধাবী বানানোর কিছু কৌশল সম্পর্কে। চলুন আর দেরি না করে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

শিশুর মেধা বিকাশে করণীয়

একটি সুস্থ জীবন ধারার জন্য শিশুর বেড়ে ওঠার সময় পড়ালেখার পাশাপাশি প্রত্যেকদিন অন্যান্য ভালো কাজের মাধ্যমে একটি শিশুর মানসিক বিকাশ সম্ভব। এই সময়টাই একটি শিশুর মেধা বিকাশের জন্য জরুরী। একটি শিশুকে মানসিক ভাবে ভালো রাখতে ও দক্ষ ব্রেনের অধিকারী করতে যেসব বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি চলুন জেনে নেই।


খেলাধুলা করাঃ খেলাধুলা করলে শারীরিক ভাবে ফিট থাকার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও সুস্থ থাকা যায়। অক্সিজেন ফ্লো স্বাভাবিক রাখতে শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে হবে ,যা আপনার শিশুর মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

ধাঁধার উত্তরঃ শিশুর বুদ্ধি বিকাশ করতে তাকে বিভিন্ন ধরনের ধাঁধা জিজ্ঞেস করতে পারেন। যেহেতু ধাঁধার উত্তরগুলো প্রশ্নের মধ্যেই থাকে সেহেতু এই উত্তর খুঁজে বের করলে শিশুর চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়বে। এর ফলে শিশুর বুদ্ধি বিকাশ ঘটবে।

পাজল মেলানোঃ আপনার শিশুর বয়স অনুযায়ী তার হাতে পাজল তুলে দিন। কেননা পাজল মেলানোর সময় কিশোর মস্তিষ্কে ডোপামিন লেবেল বাড়তে থাকে। ফলে শিশুর মেধা বিকাশের উন্নতি হয়।

গণিতে মনোযোগঃ আপনার শিশুর ব্র্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করার জন্য তাকে অংক করতে উৎসাহ দিন। কেননা যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ এ ধরনের অংক গুলো করলে শিশুর মেধা বিকশিত হয়।

পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমঃ সন্তানের মেধা বিকশিত করার জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন এক্টিভিটি যেমন ছবি আঁকা শেখাতে পারেন। এর ফলে আপনার সন্তানের মেধা বিকশিত হবে।

শিশুর মেধা বিকাশে খাবার

একটি সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় তার বেশিরভাগ মেধাবিকাশ হয়ে যায়। সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় মা যে সকল পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গুলো খায় সেগুলো থেকেই তার সন্তানের মেধা বিকশিত হয়। তবে মানুষের বিকাশ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বয়সের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্নভাবে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে থাকে। 

তবে প্রথম বছরগুলোতে শিশুর বিকাশ খুব দ্রুত সম্পূর্ণ হয়। বড় হওয়ার সাথে সাথে শিশুর বিকাশের প্রক্রিয়াটা ধীরগতিতে সম্পন্ন হয়।। একটি শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করতে যে সমস্ত পুষ্টিকর খাবার গুলো প্রয়োজন চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

শিশুর জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ পান করবে।এর বাহিরে অন্য কোন খাবার তাকে দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। ছয় মাস পর থেকে শিশুর মেধাবিকাশের জন্য বেশ কিছু পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার অল্প পরিমানে দেওয়া শুরু করতে পারেন। 

যে খাবার গুলো শিশুর মেধা বিকাশের জন্য বেশ কার্যকরী সেগুলো হল কলা, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি, লাউ এবং কুমড়া, ছোলা, মাছ এবং মাংস, ডিম, দানাদার শস্য জাতীয় খাবার, বিভিন্ন ধরনের ডাল,ওটস ও দই এ ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারগুলো আপনার সন্তানকে দিতে পারেন। এই খাবারগুলোতে থাকা পুষ্টি উপাদান আপনার সন্তানের মেধা বিকাশে সহায়তা করবে।

শিশুর মেধা বিকাশের প্রয়োজনীয় কিছু খাবার

সব ধরনের খাবারই শিশুর জন্য খুবই প্রয়োজন। তবে শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুর মেধাবিকাশ ও মস্তিষ্কের গঠনের সম্পূর্ণ করতে কিছু খাবার রয়েছে যেগুলোকে সুপার ফুড হিসেবে বেশ ভালো কাজ করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেইসব সুপার ফুড গুলো সম্পর্কে যেগুলো আমাদের সন্তানের মেধা বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


কলাঃ শিশুর মস্তিষ্কের প্রখরতা ও বিভিন্ন বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে শিশুর শরীরে শক্তির প্রয়োজন। আর কলাতে রয়েছে শর্করা যা দীর্ঘক্ষণ শরীরে শক্তি ধরে রাখতে পারে। তাই শিশুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে কলা রাখা খুবই প্রয়োজন।

ডিমঃ শিশুর চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে ডিমের ভূমিকা অপরিসীম। মস্তিষ্কের গঠনের পাশাপাশি মেধাবিকাশে ডিম বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন লোহিত কণিকা যা শিশুর রক্তের উপাদান সঠিক মাত্রায় বজায় রাখে। যার ফলে শিশুর মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়।

মধুঃ প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে মধুতে রয়েছে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম । মধু শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শিশুর হার্ট ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় দারুন কাজ করে।

বাদামঃ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য বাহিরের খাবার না খাইয়ে বিকেলের নাস্তা হিসেবে আপনার শিশুকে বাদাম খাওয়াতে পারেন। বাদামে থাকা ভিটামিন ই শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পালং শাকঃ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন খাবার তালিকায় পালং শাক রাখতে পারেন। পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে এবং বিটা ক্যারোটিন।

মাছের তেলঃ মাছের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থিস ফ্যাটি এসিড ড যা শিশুর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা দ্রুত বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই শিশুর খাবারে প্রতিদিন মাছের তেল রাখার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করবেন সামুদ্রিক মাছের তেল শিশুকে খাওয়াতে।

এ ধরনের খাবারের পাশাপাশি আপনার শিশুকে আরো বেশ কিছু খাবার দিতে পারেন যেমন শুকনো ফল, পনির, স্ট্রবেরি, কালোজিরা, লাল আপেল, আমলকি, কর্লপ্লেক্স, আখরোট ইত্যাদি ।এ ধরনের খাবার আপনার শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

শিশুর মেধা বিকাশে পরিবারের ভূমিকা

শিশুরা সাধারণত অনুকরণ প্রিয়। বড়রা যা করে তাদের দেখে দেখে শিশুরা সেই কাজটি করতে আগ্রহী হয়। তাই এমন কোন কাজ শিশু সামনে করা যাবে না যা শিশুর মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে বাবা-মাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। একটি শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই একটি শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা সবার আগে বাবা-মার দায়িত্ব। 

আপনার শিশুকে উন্নত চরিত্র ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আপনাকে ছোট থেকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি কোন শিশুর চরিত্রচ্যুতি ঘটে তাহলে সেটা পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসবে। তাই শিশুর চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে পরিবার কে সদা সচেতন থাকতে হবে। 

সকল বাবা-মারই একটা স্বপ্ন থাকে তাদের সন্তান যেন কোন প্রকার কষ্ট না পায়। যখন যা চায় বাবা-মারা সেটা তার সামনে হাজির করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই কাজটা করা মোটেও ঠিক নয়। সামর্থের মধ্যে তার সন্তানকে গড়ে তোলা উচিত এবং তাকে বোঝানো উচিত এটাই তোমার জন্য সঠিক পথ। পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। 


তাকে যেভাবে গড়ে তোলা হবে সে ওইভাবেই গড়ে উঠবে। একটি শিশুকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পিতা মাতা তার নিজেদের ব্যক্তিত্ব দিয়ে এবং ধর্মীয় নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের প্রতিপালন করার চেষ্টা করবেন। মানব শিশুর বেড়ে ওঠার সময় তিনটি ধাপে বেড়ে ওঠে। যেমন শিশুকাল, কৈশোর কাল ও যৌবনকাল। 

একটি শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে সবার আগে বাবা মাকে সচেতন হতে হবে। শিশু সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একটি শিশুর মেধাবিকাশের জন্য পরিবারের মা-বাবার পাশাপাশি অন্যান্য সদস্যেরও সচেতন থাকতে হবে। আশেপাশের পরিবেশ ভালো থাকতে হবে এবং শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দিতে হবে।

শিশুর মেধা বৃদ্ধির দোয়া

মেধাবী সন্তান সকলেই চায়। সুন্দর পরিবেশ, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দাবার খাওয়ানোর পরও অনেক সময় দেখা যায় সন্তানের মেধা তেমন একটা ভালো নয়। তবে যদি আপনি নিচে উল্লেখিত এই দোয়াটি পাঠ করেন তাহলে আপনার সন্তানের মেধা বিকাশে সহায়তা করবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সন্তানের মেধাবিকাশের জন্য দোয়াটি।

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ফাক্কিহহু ফিদ দ্বিন।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করুন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইবনে আব্বাস (রা.) এর জন্য এই দোয়া করেছিলেন। (বুখারী, হাদিস :১৪৩)

শেষ কথা

শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে বাবা-মার চিন্তা শেষ থাকে না। বাবা-মার সমস্ত চিন্তা জুড়ে শুধু তার সন্তান। মেধাবী সন্তান সবারই কাম্য। তবে মেধাবী সন্তান পেতে হলে অবশ্যই কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানকে সুন্দর পরিবেশের পাশাপাশি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খুবই প্রয়োজনীয়। তাই চেষ্টা করবেন উপরে উল্লেখিত নির্দেশনা গুলি মেনে চলা।

আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url