মরিয়ম ফুলের আশ্চর্যজনক কিছু উপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই মরিয়ম ফুলের আশ্চর্যজনক কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মরিয়ম ফুলের আশ্চর্যজনক কিছু উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে মরিয়ম ফুলের বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি পুরোপুরি পরলে আপনারা কিছু ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবেন। বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।
মরিয়ম ফুলের উপকারিতা-ভূমিকা
মরিয়ম ফুলের আরবি নাম হল জান্নাতুল ফুল। মরিয়ম ফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুন রয়েছে। তবে কুরআন বা হাদিসের মরিয়ম ফুল সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য দেওয়া নেই। যা থেকে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে মরিয়ম ফুলের ইসলামী গুনাগুনের কথা।
তবে বৈজ্ঞানিকভাবে মরিয়ম ফুলের বেশ কিছু পুষ্টিগুণ পাওয়া গিয়েছে। যা মানব দেহের জন্য ভীষণভাবে কার্যকর। ভেষজ উদ্ভিদ গুলোর মধ্যে মরিয়ম ফুল সর্বোত্তম একটি ভেষজ ফুল। মরিয়ম ফুলের বিভিন্ন উপকারিতা জানতে আর্টিকেলটি পড়ুন।
মরিয়ম ফুলের ইতিহাস
চলুন জেনে নেওয়া যাক মরিয়ম ফুলের ইতিহাস সম্পর্কে। মরিয়ম ফুলের জন্ম মরু অঞ্চলে। সাহারার বিস্তীর্ণ মরু অঞ্চল ও মধ্য প্রাচ্যে বছরের পর বছর শুকনো গাছ মাটি আঁকড়ে থাকে। মরিয়ম ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, দস্তা এবং লোহা। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম একসঙ্গে পেশির সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে।
এর কোন নেতিবাচক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। মরিয়ম ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম এনস্তেটিকা হায়রোচুনটিকা। মরুভূমির অসহনীয় গরমের মধ্যে থাকা শুকনো এই গাছ ক্রমে নির্জীব পাথরের মত হয়ে যায়। কখনো বৃষ্টির পরশ পেলে জীবন ফিরে পায় এবং এর বংশ বিস্তার ঘটে।মরিয়ম ফুল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ব্যবহার হয়ে আসছে।
সকল মুসলমানদের ধর্মীয় দিক থেকে এই ফুলের গুরুত্ব অনেক। মরিয়ম ফুলে রয়েছে আশ্চর্যজনক কিছু উপকারিতা। হযরত ঈসা আঃ এর মায়ের নাম অনুসারে এই ফুলের নামকরণ করা হয়েছে মরিয়ম ফুল বা মরিয়ম বুটি বলা হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা ফাতেমার নাম অনুসারে ফাতেমার হাত বা হ্যান্ডস অফ ফাতেমা এবং এর বৈশিষ্ট্য অনুসারে পুনরুত্থান উদ্ভিদ বলা হয়।
কারণ মরিয়ম ফুল দেখতে খরখরে শুকনো বা মরা মনে হয়। তবে মরিয়ম ফুল কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এই ফুল ফুটন্ত ফুলের মতো তাজা পরিপূর্ণ প্রস্ফুটিত হয়ে যায়। মরিয়ম ফুল একটি আশ্চর্য ফুল। মরিয়মপুর যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।
মরিয়ম ফুল সম্পর্কে হাদিস
মরিয়ম ফুল সম্পর্কে ইসলামের হাদিসে তেমন কোন কিছু নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা নেই। তবে কিছু হাদিসে মরিয়ম ফুলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অন্যান্য ফুলকে উল্লেখ করা হয়েছে ।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের দিন ফুল কিনবে তার উপর আল্লাহ তালা রহমত বর্ষণ করবেন।
অন্য আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈদুল আযহার দিন ফুল কিনবে, তার ওপর আল্লাহ তায়ালা রহমত বর্ষণ করবেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দিবেন।
মরিয়ম ফুল কিভাবে খেলে বাচ্চা হয়
মরিয়ম ফুল সম্পর্কে কুরআন হাদিসে তেমনভাবে কিছু বলা নাই। তবে প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী মরিয়ম ফুল পানিতে ভিজিয়ে রেখে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় খেতে হয় অথবা সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালেও খেতে পারেন ।অনেকে বিশ্বাস করে মরিয়ম ফুলের উসিলায় তার গর্ভে সন্তান ধারণ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং সঠিক নিয়ম
আপনি যদি মনে বিশ্বাস নিয়ে সন্তান ধারণের আশায় মরিয়ম ফুল ভেজানো পানি খেতে চান তো খেতে পারেন। তবে কুরআন হাদিসের এ সম্পর্কে স্পষ্ট করে কোন কিছু বলা নাই। অতএব মরিয়ম ফুল খেলে বাচ্চা হয় এই কথার কোন ভিত্তি নেই। তবে সমাজে প্রচলিত আছে সন্তান প্রসবের সময় মরিয়ম ফুলের পাপড়ি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে।
এটিও একটি কুসংস্কার। সম্পর্কেও কোরআন ও হাদিসে মরিয়ম ফুলের কার্যকারিতা প্রমাণিত নয়। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে যদি মরিয়ম ফুলের ঔষধি গুণ প্রমাণিত হয় তাহলে এই ফুল ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই।
মরিয়ম ফুলের উপকারিতা
মরিয়ম ফুল সম্পর্কে মানুষের মধ্যে অনেক ভক্তি রয়েছে। অনেকে হজ করতে গিয়ে এই ফুল কিনে নিয়ে আসে এবং এর পানি দ্বারা উপকার গ্রহণ করে থাকে। এটা সত্য যে মরিয়ম ফুল একটা শ্রেষ্ঠ ঔষধি ফুল। অনেকেই এই ফুলের পাপড়ি পানিতে ভিজিয়ে পান করেন। এর ফলে প্রসবকালীন ব্যথা লাঘব হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ সন্তান সম্ভবা নারীর ঘরে ফুলটি সব সময় ভিজিয়ে রাখেন।
কেননা আরব বিশ্বে অনেকেরই ধারণা ফুলটা গর্ভবতী মহিলার ঘরে থাকা মানে হচ্ছে প্রসব যন্ত্রণা কমে যাওয়া। এবং প্রসব প্রক্রিয়া সহজতর হওয়া। তবে হযরত আশরাফ আলী থানবী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি গর্ভপাত আসন্ন নারীদেরকে এই ফুলের একটা বিশেষ রেমিডি দিয়েছিলেন।
জগত বিখ্যাত এই আলেম বলেছেন, তোমরা দশ মাস যতদিন তোমাদের গর্ভে সন্তান রয়েছে এর পুরোটা সময় প্রতিদিন ১০ গ্রাম পরিমাণ মরিয়ম ফুলের পাপড়ি ১২৫ গ্রাম পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর পরের দিন সেই পানিটা ছেকে তার সাথে মিশ্রি বা যে কোন মিষ্টি জাতীয় কিছু মিশিয়ে সকালে শ্বাস বন্ধ করে পান করবে।
ইনশাআল্লাহ এতে গর্ভবতী নারীরা দুই থেকে তিন গুণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং তারা খুব সহজে চলাফেরা করতে পারবে। এবং তাদের প্রসব প্রক্রিয়া সহজেতর হবে। এটা রয়েছে (বেহস্তি জোড়, খন্ড নাম্বার: ৯ পৃষ্ঠা: ৫৪)
মরিয়ম ফুল কিভাবে ব্যবহার করতে হয়
প্রচলিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে মানুষ মরিয়ম ফুল ব্যবহার করে থাকে। ইসলামের হাদিসে মরিয়ম ফুল সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য দেওয়া নেই। প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী গর্ভধারণের ক্ষেত্রে মরিয়ম ফুল ভিজিয়ে সেই পানি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। আবার প্রসব যন্ত্রণা লাঘব করার জন্য মরিয়ম ফুল ভিজিয়ে সেই পানি পান করানো হয়। তবে ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই।
আরও পড়ুনঃ নফল নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানুন
তবে বৈজ্ঞানিকভাবে বা নিজের মনের বিশ্বাসের ওপর যদি মরিয়ম ফুলের পানি পান করেন এতে কোনো ক্ষতি নেই। যদিও মরিয়ম ফুল একটি সম্পূর্ণ ফুল তাই এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। মরিয়ম ফুলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন রয়েছে। মরিয়ম ফুল বিভিন্ন রোগের জন্য ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
শেষ কথা
ঔষধি গাছ হিসেবে চিকিৎসার জন্য এই ফুল থেকে উপকার গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু এর ধর্মীয় বিশেষ কোনো ফজিলত বা তাৎপর্য আছে বলে বিশ্বাস করা যাবে না। মরিয়ম ফুলটি আরব দেশ সহ আফ্রিকার দেশগুলোতে বেশ কদর রয়েছে। এই ফুলটি ভেষজ চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
অনেকে যা মনে করেন কোরআন হাদিসে এমন অমূলক কিছু ধারণা পোষণ করেন এবং যা লোকমুখে শোনা যায় তা সঠিক নয়।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url