পেঁপে পাতার রসের উপকারিতা - পেঁপে পাতার রসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা জানতে ক্লিক করুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো পেঁপে পাতার রসের উপকারিতা - পেঁপে পাতার রসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে পেঁপে পাতার রস খাওয়ার নিয়ম এবং পেঁপে পাতার রস তৈরি করার নিয়ম সহ বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পেঁপে ফলের মত পেঁপে পাতাতেও রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। যা আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারে। আমরা যদি নিয়ম মেনে পেঁপে পাতার রস খেতে পারি তাহলে এর উপকারিতা খুব সহজেই গ্রহন করতে পারব।
পোস্ট সূচিপত্রঃআর যদি নিয়ম না মেনে পেঁপে পাতার রস গ্রহণ করা হয় তাহলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আমাদের শরীরে দেখা দিবে। তাই অবশ্যই চেষ্টা করা উচিত নিয়ম মেনে পেঁপে পাতা রস গ্রহণ করা।
পেঁপে পাতার রস কিভাবে খেতে হয়
সুস্থ থাকার জন্য পেঁপের পাশাপাশি পেঁপে পাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। ফলের পাশাপাশি পেপা তার রসেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আপনি যদি নিয়মিত পেঁপে পাতার রস খান তাহলে প্লাটলেট কাউন্ট বাড়াতেও সাহায্য করে । এছাড়াও পেপে পাতার মধ্যে রয়েছে পাপাইন এবং কাইমোপাপাইন নামক এনজাইম।
যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং যাদের পুরাতন হজমের সমস্যা রয়েছে সেগুলো ঠিক করতে সাহায্য করে এই পেঁপে পাতার রস। এছাড়াও পেপে পাতার রসে রয়েছে বিভিন্ন গুনাগুন যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এখন চলুন জেনে নেই পেঁপে পাতার রস কিভাবে খেতে হয়।
আপনি পেঁপে পাতার রস দুই ভাবে তৈরি করতে পারেন চলুন জেনে নেই প্রস্তুত প্রণালী।
১. দুই থেকে তিনটি তাজা পেঁপে পাতা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে কুচি করে কেটে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে রস বের করে নিতে হবে। এরপর রস ছাঁকনির সাহায্যে ছেকে নিতে হবে। আপনি চাইলে রস এভাবেও খেতে পারেন অথবা একটু স্বাদের পরিবর্তন করার জন্য এতে মধু অথবা লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন।
১০০ মিলিলিটার তিন ভাগে ভাগ করে তিন বেলা খেতে পরামর্শ দেয়ন ডাক্তাররা। এই রস আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
২. তিন থেকে চারটি তাজা পেঁপে পাতা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে কুচি করে কেটে নিতে হবে। এরপর এক গ্লাস পানি দিয়ে পাতাগুলো ভালোভাবে অল্প আচে ফুটিয়ে নিতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত পাতা থেকে সম্পূর্ণ রস বের হয়ে আসে। পানি যখন সবুজ রং ধারণ করবে তখন চুলা বন্ধ করে দিয়ে রসটি ছেঁকে নিতে হবে।
এরপর আপনি রসটি ঠান্ডা হলে খেয়ে নিতে পারেন অথবা স্বাদের পরিবর্তনের জন্য মধু অথবা লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে করে ১০০ মিলি লিটার তিনভাগে ভাগ করে তিন বেলায় খেতে পরামর্শ দেয় ডাক্তাররা। অথবা আপনি চাইলে দুই বেলাতে ৩০ মিলিলিটার করে খেয়ে নিতে পারেন। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ মিলি লিটার দিতে হবে।
পেঁপে পাতার রস বানানোর নিয়ম
গবেষণায় পেঁপে পাতার রসে যে উপাদানটি প্লাটিলেট বাড়ায় বলে প্রমানিত হয়েছে তা হলো অ্যাসিটোজেনিন এছারাও পেঁপে পাতায় আরও রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড ও ক্যারোটিনের মতো প্রাকৃতিক উদ্ভিদজাত যৌগ।যেমন কার্পেইন,এন্থ্রোকুইনাইন ও সাপোনিনসের সদৃশ অ্যালকালয়েড।
যা এন্টি-ইনফ্লামেটরি ও এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।এছারাও শরীরের জমাকৃত ফ্রি রেডিক্যালগুলোকে দেহকোষ থেকে বের করে দেয় এবং রক্তকোষকে সুরক্ষা দেয় ও লোহিত রক্ত কনিকার আবরণকে স্থিতিশীল রাখে।
পেঁপে পাতার রস বানানোর নিয়মঃ ৩-৪ টি তাজা পেঁপে পাতা ভালো করে ধুয়ে কুচি করে কেটে নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে হাফ কাপ পানি সহ অল্প আচে ফুটাতে থাকুন। কয়েক মিনিট নাড়াচাড়ার পর পানীয়টি যখন সবুজ রং ধারণ করবে তখন ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে নিন।
এই রস শিশুদের জন্য ৫-১০ মিলিলিটার দিনে ২ বার করে দিতে হবে।আর বড়দের জন্য ৩০ মিলিলিটার করে দিনে ২ বার খেতে হবে। আশা করছি পেঁপে পাতার রস বানানোর নিয়ম আপনি বুঝতে পেরেছেন।
পেঁপে পাতার রসের উপকারিতা
পেঁপের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে মোটামুটি সবারই জানা। এই ফল এবং পাতা আমাদের শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি আমাদের ত্বকের এবং চুলের জন্য বেশ উপকারী। কাঁচা পেঁপে আমরা সবজি হিসেবে খেয়ে থাকি এবং পাকা পেঁপে সুস্বাদু ফল হিসাবে খাই। তবে আমরা অনেকেই জানিনা পেপে পাতার অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।
এছারাও পেঁপে পাতা আমাদের শরীরের নানান জটিল রোগ ব্যাধি সারাতে বেশ কার্যকর। পেপে পাতাতে রয়েছে সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন এ, বি, ই, সি, কে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। চলুন আর দেরি না করে আমরা জেনে নেই পেঁপে পাতার রসের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
হজমে সহায়তা করেঃ পেপে পাতার রস আলসারের মতো সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। পেপে পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম যা প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভেঙে হজমে সাহায্য করে থাকে।
পেঁপে পাতার রসে থাকা উচ্চ অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান মলাশয় এবং পেটের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। তাই আপনার যদি এই ধরনের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নিয়ম করে পেঁপে পাতার রস খেতে পারেন।
লিভার ভালো রাখেঃ লিভার ভালো রাখতে পেঁপে পাতার রসের উপকারিতা অনেক। পেপে পাতার রস লিভারের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও লিভার সিরোসিস ও জন্ডিসের মতো সমস্যা হওয়ার ভয় অনেকাংশে কমে যায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য পেঁপে পাতার রস মহাঔষধের মতো কাজ করে। আপনি যদি নিয়মিত পেপে পাতার রস খান তাহলে এটি আপনার ইনসুলিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করবে যার কারণে রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে।
মানবদেহে ডায়াবেটিসের ফলে যে জটিলতা দেখা দেয় যেমন কিডনি ড্যামেজ এবং ফ্যাটি লিভারের মত সমস্যা দেখা দেয় যা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে পেঁপে পাতার রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান।
ক্যান্সার দূর করতেঃ পেপে পাতাতে রয়েছে এসিডোজেনিন যৌগ যা অ্যান্টি ক্যান্সার উপাদান বহন করে। এথনোফার্মাকোলজির জার্নালের গবেষণা থেকে জানা যায়, পেঁপে পাতাতে যে এনজাইম রয়েছে সেই এনজাইম ফুসফুসের ক্যান্সার, অগ্নাশয়ের ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
ছাড়াও পেপে পাতাতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে বেশ কার্যকরী। কেমো থেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে পেঁপে পাতা।
মাসিকের ব্যথা দূর করেঃ পেপে পাতার রস মাসিকের সময় হরমোন এবং মাসিক চক্র ঠিক রাখতে সহায়তা করে। মাসিকের সময় সব মেয়েদেরই কমবেশি পেটে ব্যথা হয়। আপনি যদি পেঁপে পাতার রস খান তাহলে মাসিকের সময় ব্যথা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবেন।
ডেঙ্গু সারাতে সাহায্য করেঃ বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে গিয়েছে। তার জন্য ডাক্তাররা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে পেঁপে পাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। কারন ডেঙ্গু হলে শরীর থেকে প্লাটিলের কমতে শুরু করে এবং পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ডাক্তাররা পেঁপে পাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দেয়।
এছাড়াও পেঁপে পাতার রসে রয়েছে অ্যান্টি ম্যালেরিয়া উপাদান। ডেঙ্গুর পাশাপাশি ম্যালেরিয়া সারিয়ে তুলতে পেঁপে পাতাতে থাকা এসিটোজেনিন যৌগ খুবই উপযোগী।
ত্বকের যত্নেঃ পেঁপে পাতার রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং এ যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে ছাড়াও তোকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তোলে। এছাড়া পেঁপে পাতাতে রয়েছে কারপইন যৌগ যা ব্রণ থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করে।
চুলের যত্নেঃ পেঁপে পাতাতে থাকা উপাদান চুল পড়া বন্ধ করে, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে পেঁপে পাতার রস। এছাড়াও যাদের অতিরিক্ত খুশকি সমস্যা রয়েছে সেই খুশকি দূর করতে দারুণ কাজ করে পেঁপে পাতার রস।
পেঁপে পাতার রসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আপনি যদি পেঁপে পাতার রস ব্যবহারে সঠিক উপায় না জানেন তাহলে আপনি পেঁপে পাতার রস পান করে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্মুখীন হতে পারেন।সব উপকারি উপাদানেরই কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তেমনি পেঁপে পাতার ও যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমন কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আজ আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব পেঁপে পাতার রসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।
গর্ভবতীদের জন্য ক্ষতিকরঃ গর্ভবতী মহিলা এবং যারা গর্ভধারণ করতে চান তাদের জন্য পেঁপে পাতার রস একেবারেই অনিরাপদ। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে পেঁপে ফল বা পেঁপে পাতার রস গর্ভপাত বা মৃত সন্তানের জম্ম দিতে পারে। এছাড়াও আপনারা যারা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন সেই মহিলাদের গর্ভধারণের উপর ও খারাপ প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং সঠিক নিয়ম
পেঁপেতে থাকা রাসায়নিক গুলোর মধ্যে অপ্রক্রিয়াজাত প্যাপেইন ভ্রুনকে বিষাক্ত করে এবং জন্মগত ত্রুটির কারণ হতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে এবং পেঁপে পাতার রস খাওয়া থেকে বিরত থাকার। পাকা পেঁপে খেতে পারেন তবে পরিমিত।
হজমে সমস্যাঃ পেঁপে পাতাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত প্যাপেইন কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে। তবে কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে প্যাপেইন পেটে গেলে অস্বস্তি, বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে। তাই যাদের পেঁপে পাতাতে অস্বস্তি হবে তারা এই পাতাটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
এলার্জি সমস্যাঃ আপনি যদি পেঁপে পাতা খাওয়ার পরে লক্ষ্য করেন আপনার শরীর চুলকাচ্ছে, ফুলে যাচ্ছে বা আপনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তাহলে অবশ্যই এই পেঁপে পাতার রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই পেঁপে পাতার রস খাওয়ার পরে যদি আপনি কোন রকম এলার্জির উপসর্গ অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
রক্ত পাতলা করার প্রভাবঃ পেঁপে পাতার রসে এমন যৌগ রয়েছে যা প্রাকৃতিক রক্তকে পাতলা করে দিতে পারে। ইতিমধ্যে যারা রক্ত পাতলা করার ঔষধ সেবন করছেন তাদের জন্য পেঁপে পাতার রস খাওয়া মোটে উচিত নয়।
তাই আপনারা যদি রক্ত পাতলা করা ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি পেঁপে পাতার রস খেয়ে থাকেন তাহলে আজকে থেকেই এই উপাদানটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অথবা আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আশা করছি আর্টিকেলটি থেকে পেপে পাতার রসের উপকারিতা, পেপে পাতার রস তৈরির নিয়ম, পেপে পাতার রস খাওয়ার নিয়ম এবং পেঁপে পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন। আপনার যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনার মন্তব্য লিখে জানাবেন।
ভালো লাগলে ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখবেন এবং কোন কিছু জানতে বা বুঝতে না পারলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url