কুকুর বিড়াল পোষা কি ইসলামে জায়েজ জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই কুকুর বিড়াল পোশাকে ইসলামে জায়েজ জেনে নিতে চাচ্ছেন। চলুন আজ এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করি কুকুর এবং বিড়াল পালন করা ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু জায়েজ সেই সম্পর্কে। এই বিষয়ে যদি আপনি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
কুকুর বিড়াল পোষা কি ইসলামে জায়েজ জেনে নিন
পোস্ট সূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে কুকুর বিড়াল সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আলোচনা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন হাদিস সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

কুকুর বিড়াল পোষা কি জায়েজ-ভূমিকা

ইসলাম ধর্মের ইবাদতের মধ্যে জীবে দয়া অন্যতম একটি ইবাদত। পৃথিবীর সকল পশু পাখি আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি। সকল পশু পাখির মধ্যে মানুষ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে। 

নবীজি বলেছেন হাদিসে, যে ব্যক্তি প্রাণীর উপরে দয়াবান হয়, যত্নশীল হয়, রহম করে মহান আল্লাহ তার উপরে রহমশীল হয়ে যায়। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত জীবে দয়া করা। চলুন এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক কুকুর-বিড়াল পোষা ইসলামে কতটুকু জায়েজ।

কুকুর পোষা কি জায়েজ

কুকুর প্রতিপালন সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু (সাঃ) এর সহি হাদিসের মধ্যে সুস্পষ্ট বর্ণনা ও নীতিমালা উল্লেখিত রয়েছে। যেমন বুখারী শরীফের মধ্যে এক হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন আবু তালহা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসটি, যে বাড়ির মধ্যে কুকুর থাকে অথবা কোন প্রাণীর আকৃতি থাকে সেই বাড়ির মধ্যে কোন রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। 


এজন্য কোন বাড়িতে কুকুর রাখা অথবা বাড়ির মধ্যে কোন প্রাণীর আকৃতি রাখা ঢুকতে বাধা দেওয়ার নামান্তর। এর পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়ংকর। সুতরাং ওই বাড়ির মধ্যে যদি কারো মৃত্যু ঘটে তখন সেই বাড়িতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বা কিছু বিশেষ উদ্দেশ্যে ইসলামী শরীয়তের মধ্যে কুকুর পালন করা বৈধ করা হয়েছে। 

এক্ষেত্রে আমরা হাজতে ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসটি হল, বুখারী এবং মুসলিম শরীফ উভয় কিতাবের মধ্যে এবং অন্যান্য কিতাবের মধ্যে হাদীসটি বলা হয়েছে হযরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন শিকারের উদ্দেশ্য ছাড়া অথবা কৃষি কাজে ব্যবহারের প্রয়োজন ছাড়া এছাড়াও বাড়ির পাহারার উদ্দেশ্যে কুকুর পালন করা জায়েজ আছে। 

সেক্ষেত্রে কুকুরকে বাড়ির ভেতরে রাখা যাবে না বাড়ির বাহিরে রাখতে হবে । যে ব্যক্তি প্রয়োজন ব্যতীত কোন কুকুর লালন পালন করবে প্রতিদিন তার আমল থেকে দুই কিরাত করে সাওয়াব কেটে নেওয়া হবে। অন্যান্য হাদিসের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে এক কিরাত সমান ওহুদ পাহাড়ের সমান। ওহুদ পাহাড় হল আরবে প্রচলিত পাহাড় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় পাহাড় । 

অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি শরীয়তে বর্ণিত কোন প্রয়োজন ছাড়া শখের বসে ঘরের মধ্যে কুকুর পালন করে তাহলে প্রতিদিন তার আমল থেকে বিশাল পরিমাণ নেকি এটা তার আমল থেকে কেটে নেওয়া হবে।

কুকুর সম্পর্কে কুরআন কি বলে

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কাফের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে তাদের সঙ্গে যে কুকুরটি ছিল সেই কুকুরের কথা বলেছেন। কুকুরটির কথা মোট চারবার এসেছে আসহাবে কাফের ঘটনায়। মহান আল্লাহ তায়ালা একটি আয়াতে বলেন,

তুমি মনে করবে তারা সজাগ, অথচ তারা ঘুমন্ত ছিল, আমি তাদের ডানে বামে পাশ পরিবর্তন করাতাম। আর তাদের কুকুরটি গুহার সামনে তার পা দুটি সামনের দিকে প্রসারিত করেছিল। তুমি যদি তাদের দেখতে, তাহলে অবশ্যই পেছন ফিরে পালিয়ে যেতে, আর অবশ্যই ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠতে। (সূরা: কাহফ ১৮)

অন্য আর একটি আয়াতে আল্লাহতালা বলেন, অজানা বিষয়ে সন্দেহের উপর অনুমান করে কিছু লোক বলবে ,তারা ছিল তিনজন এবং ৪ নাম্বারটি ছিল তাদের কুকুর। আবার কিছু লোক বলবে ,তারা ছিল পাঁচজন এবং ছয় নাম্বারটি ছিল তাদের কুকুর। যদিও অল্প কয়েকজন ছাড়া তাদের সম্পর্কে কেউ জানে না। বলো, তাদের সম্পর্কে আমার প্রতিপালকই বেশি জানে। 

কাজেই সাধারণ কথাবার্তা ছাড়া তাদের ব্যাপার নিয়ে তোমরা বিতর্ক করো না। আর তাদের সম্পর্কে কারো কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করো না। (সূরা: কাহফ ২২)

বিড়াল পোষা কি জায়েজ

বিড়াল হল সবচেয়ে সুন্দর একটা প্রাণী। বিড়াল পোষা জায়েজ। কিন্তু কিছু বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। যারা বাসায় বিরাল পোষে তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে বিড়ালের যেন কোন অবহেলা না হয়, কোন অযত্ন না হয়। বিড়ালের খাবার প্রয়োজন হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিতে হবে। যত্নের প্রয়োজনে যত্ন করতে হবে। বিড়ালের জন্য আলাদা করে ঘুমানোর জায়গা দিতে হবে। 


এছাড়াও হাদিসে এসেছে ,একজন মহিলা একটি বিড়ালকে আটকে রেখেছিল। সেই মহিলা বিড়ালের খাবার দেয় নাই, তাকে যত্ন করে নাই এবং তাকে ছেড়েও দেয় নাই। এজন্য মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে, নাউজুবিল্লাহ। 

এজন্য আপনি যদি বিড়ালকে ভালোবেসে থাকেন, যত্ন করতে পারেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিতে পারেন এবং বিড়ালের বিভিন্ন রোগ হলে তাকে চিকিৎসা দিতে পারেন তাহলে বিড়াল পোষা আপনার জন্য জায়েজ আছে। নবীজি বলেছেন হাদিসে, যে ব্যক্তি প্রাণীর উপরে দয়াবান হয়, যত্নশীল হয়, রহম করে মহান আল্লাহ তার উপরে রহমশীল হয়ে যায়।

ইসলামে বিড়াল পালনের উপকারিতা

ইসলামে বিড়াল পালনের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে চলুন জেনে নেওয়া যাক বিড়াল পালনের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।

আপনার ঘরে যদি কোন জিনের অস্তিত্ব থেকে থাকে তবে তার সাথে মোকাবেলা করার মত শক্তি আল্লাহ তা'আলা বিড়ালকে দিয়েছেন। বিড়াল জিনের সাথে থাকা খারাপ শক্তি গুলোকেও শোষণ করতে পারে। শুধুমাত্র তাই নয়, বিড়ালের শরীরে আল্লাহ তা'আলা এমন একটা ব্যাকটেরিয়া দিয়েছেন যা আমাদের আশেপাশে থাকা সব ধরনের খারাপ শক্তি শোষণ করে নিতে পারে। 

এছাড়াও বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা যখন রাতে ঘুমাতে যাই তখন ঘরে পুষে রাখা বিড়াল সারারাত ধরে আমাদের শরীর থেকে খারাপ শক্তি শোষণ করতে থাকে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিড়ালের মধ্যে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। 

যার জন্য এমন সুন্দর একটা মাখলুক আমাদের রোজগার জীবনের বিশেষ অংশ হয়ে উঠেছে। আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ) বিড়াল খুব পছন্দ করতেন। এ কারণেই রাসূল (সাঃ) তার প্রিয় এক সাহাবীর ছদ্মনাম দিয়েছিলেন আবু হুরায়রা। যার শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় বিড়ালের বাবা।

যে কারণে বিড়াল পালন করা উচিত

একজন মুসলিমের কেন বিড়াল পালন করা উচিত চলুন জেনে নেই। গবেষণা করে জানতে পারা যায় আজ থেকে প্রায় আট হাজার বছর পূর্বে জঙ্গল থেকে বিড়ালরা খাবারের খোঁজে মানুষের জনবসতিতে আসতে শুরু করে। সে সময় ফসলি জমিতে ইদুরের অত্যাধিক উৎপাত ছিল। সেই সকল ইদুরগুলোকে তাড়া করতে করতে একসময় বিড়াল মানুষের বসতিতে এসে পৌঁছায়।

বিড়ালের কোন খাদ্য না থাকায় ওই সময় জমিতে থাকা ইঁদুরগুলো বিড়ালের প্রিয় খাদ্য হয়ে উঠেছিল পাশাপাশি ইঁদুরগুলো মানুষের জন্য একটি বড় সমস্যার কারণ ছিল। বিড়াল সেই ইঁদুরগুলোকে মেরে ফেলা তখনকার সময়ের মানুষ আর বিড়ালের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর ফলে তারা ধীরে ধীরে একে অপরের প্রতি আরো আপন হতে শুরু করে। 


বর্তমানে বিশ্বের সকল পোষা প্রাণীর তালিকা বিড়ালের স্থান এক নাম্বারে। আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, শুধুমাত্র বিড়ালকে কষ্ট দেওয়ার কারণে এক বনী ইসরাইলের নারীকে কবরে আজাব দেওয়া হয়। তাকে আজাব দেওয়ার কারণ হলো একটি বেলালকে আটকে রেখেছিল তাকে কোন খাবার দেয়নি এবং তার কোন প্রকার যত্ন করেনি যার ফলে বেড়ালটি মারা যায়। 

যার কারণে তার কবরে শাস্তি দেওয়া হয়।(সহীহ বুখারী হাদিস:৩৪৮২)। রাসুল (সাঃ) আরো বলেন বিড়াল সর্বদা নাপাক বস্তু থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। বিড়াল এমন এক প্রাণী যে কিনা মানুষের আশেপাশে ঘুরতে পছন্দ করে। আমাদের প্রিয় নবীজি বিড়ালের সাথে অত্যন্ত ভালো এবং নমনীয় আচরণ করতেন।
 
তাই আমাদেরও উচিত আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু (সাঃ) প্রদর্শিত পথে চলা এবং বিড়ালের সাথে সুন্দর আচরণ করা। তবে কোন বিড়াল যদি অতিরিক্ত হিংস্র হয়ে যায় বা মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তাহলে সেই বিড়ালকে না মেরে দূরে কোথাও ছেড়ে আসা শ্রেয়।

বিড়াল নিয়ে ইসলামিক হাদিস

ইসলামে বিড়াল পোষা জায়েজ। এক হাদিসে এসেছে নবীজি একবার ঘরে প্রবেশ করলে তখন দেখলেন জামার এক সাইডে ছোট্ট একটি বিড়াল আরামে ঘুমাচ্ছে। হাদিসে এসেছে নবী তখন বিড়ালকে ডাকেন নাই এবং তার শরীরে স্পর্শ করেন নাই। নবীজির জামার যে অংশে বিড়ালটি ঘুমিয়ে ছিল আমাদের প্রিয় নবীজি জামার সেই অংশটুকু কেটে ফেলেছে তবুও বিড়ালের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় নি। 

নবীজি সেই ছেড়া জামা পড়ে নামাজ পড়তে গিয়েছেন তবুও বিড়ালের কোন অযত্ন বা অবহেলা করেন নাই। তাই আমরা নবীজির উম্মত হয়ে কখনো যেন বিড়ালের ওপর অন্যায় বা অবিচার না করি। বিড়াল যদি পুষতে চায় তাহলে যেন বিড়ালের কোন অযত্ন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

আরো একটি হাদিসে এসেছে, একজন সাহাবী নবীজির কাছে প্রতিদিন আসতো। তবে সেই সাহাবীর কোলে একটা বিড়াল থাকতো। তো একদিন নবীজি সেই সাহাবীকে ডাকলেন বিড়ালের বাবা বলে, তখন সেই সাহাবীর নামটি এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে সে তার আসল নাম পরিবর্তন করে ফেলেছেন। 

সেই সাহাবী ছিলেন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও প্রসিদ্ধ এক সাহাবী এবং যে সাহাবী সবচেয়ে বেশি হাদিস রেওআয়াত করেছেন তার নাম হলো আবু হুরায়রা। এজন্য ইসলামে বিড়াল পোষা জায়েজ।

শেষ কথা

আর্টিকেলটি যদি আপনি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরে গেছেন কুকুর এবং বিড়াল পোষার মধ্যে পার্থক্য। হাদিসে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে কুকুর পোষা জায়েজ সেই বিষয়গুলো ব্যতীত কুকুর পোষা যাবেনা। 

এদিকে বিভিন্ন হাদিসে বলা হয়েছে বিড়াল পোষা জায়েজ। আমাদের নবীজি বিড়ালকে খুব পছন্দ করতেন। যেহেতু আমরা তার উম্মত আমাদেরও উচিত বিড়ালকে যত্ন করা এবং ভালোবাসা।

আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url