ছাগল পালন পদ্ধতি - কোন জাতের ছাগল পালনে বেশি লাভ

ফাউমি মুরগি সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো ছাগল পালন পদ্ধতি - কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশি সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব কোন জাতের ছাগল পালন করলে আপনি লাভবান হতে পারবেন। ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ছাগল পালন পদ্ধতি - কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশি
এখানে আরো ছাগল পালন সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ছাগলের বাসস্থান, খাবার তালিকা এসব বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পোস্ট সূচিপত্রঃতাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই ছাগল পালনের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে।

ছাগল পালন পদ্ধতি

ছাগল আমাদের গৃহপালিত পশু মধ্যে মূল্যবান সম্পদ ও বিপদের সঙ্গী। বাজারে ছাগলের মাংসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ছাগলকে অল্প পরিসরে ও কম খরচে লালন-পালন করা যায়। আমাদের দেশে ছাগল যে কোন পদ্ধতিতে লালন-পালন করা যায়। 

তবুও বিশেষজ্ঞদের মতে ছাগল ৪ টি পদ্ধতিতে পালন করা যায়। যেমন-বাড়ির আঙ্গিনায় বা মাঠে বেঁধে ছাগল পালন, মুক্ত অবস্থায় ছাগল পালন, সামান্য আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন ও আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন। এই চারটি পদ্ধতি বিস্তারিত নিম্নে আলোচনা করা হলো।

বাড়ির আঙ্গিনায় বা মাঠে বেঁধে ছাগল পালনঃ বাড়ির আঙ্গিনায় বা মাঠে ৪-৫ টি ছাগল বেঁধে লালন-পালন করা যায়। সারাদিনের শেষে ছোট্ট একটি ঘরে রেখে পরের দিন সকালে আবার বাড়ির আঙ্গিনায় বা সবুজ ঘাস আছে এমন মাঠে বেঁধে রাখা যায়। 

কারণ ছাগল সবুজ ঘাস লতাপাতা সামান্য কিছু কাঁঠালের পাতা পেলে এরা সন্তুষ্ট থাকে। সকাল দুপুর সন্ধ্যায় ভুষিযুক্ত একটু পানি পেলেই ছাগলের আর কোন কিছুর দরকার পড়ে না। এগুলোর পাশাপাশি বিশেষ যত্ন হিসেবে একটু দানাদার খাদ্য এদের মাঝে সরবরাহ করা যেতে পারে।


মুক্ত অবস্থায় ছাগল পালনঃ এই অবস্থায় ছাগল পালন বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো চাষাবাদের অনুপযোগী উচু জমি যেমন- পাহাড়, পুকুরের পাড়, রাস্তার পাশে, অথবা পতিত ভূমিতে সারাদিন চড়িয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে নিয়ে আসা কেই বলে মুক্ত অবস্থায় ছাগল পালন। 

এ পদ্ধতিতে ছাগলকে আলাদাভাবে ঘাস খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। এদেরকে রাতে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করলেই চলে। এই পদ্ধতিতে ছাগল পালনে কমপক্ষে একজন লোক হলেই যথেষ্ট। আজকাল এই অবস্থায় দেশের অধিকাংশ এলাকায় ছাগল চড়ানো প্রায় অসম্ভব।

সামান্য আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালনঃ সামান্য আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন বলতে সারাদিন মুক্ত ভাবে ছাগল মাঠে চড়িয়ে রাতে বাড়িতে এনে আবদ্ধ অবস্থায় পালন করাকে বুঝায়। এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছাগল পালন করা হয় বিধায় ছাগলে পুষ্টি প্রযোজন ও স্বাস্থ্য বিষয়ে যথাযথ যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়। এ পদ্ধতিতে ছাগলের উৎপাদন আশানুরূপ হয়।

আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালনঃ আপনি যদি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ছাগল পালন করতে চান। সে ক্ষেত্রে আপনাকে আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন করাই উত্তম। এই পদ্ধতিতে ছাগল পালন করতে গেলে একটু বেশি যত্ন নিতে হয়। 

আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন করতে গেলে ছাগলের ভালো-মন্দ, পুষ্টি, প্রজনন ও স্বাস্থ্য বিষয় সকল দিকের অভিজ্ঞতা রাখতে হবে। আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালনের সময় বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ যেমন-চর্মরোগ, একথাইমা, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দিতে পারে। 

বাজার থেকে অথবা কারো মাধ্যমে ছাগল ক্রয় করে সঙ্গে সঙ্গে আবদ্ধ অবস্থায় রাখাটা ঠিক নয়। কারণ সাধারণত আমাদের দেশের ছাগল আবদ্ধ অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে না তাই। এ সকল দিক বিবেচনা করে আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন করা পদ্ধতি শুরু করা যেতে পারে।

ছাগলের বাসস্থান নির্বাচন

ছাগলের বাসস্থানের বিষয়ে আমাদেরকে যত্নবান হতে হবে কারণ ছাগলের রোগ বালাই কম হলেও এরা তাপ সংবেদনশীল প্রাণী। অল্পতেই ঠান্ডা জনিত অসুখ হতে পারে। ছাগলের বাসস্থান নির্মাণের জন্য উঁচু জায়গায় বেছে নিতে হবে কারণ বৃষ্টির পানি অথবা বর্ষাকালে ছাগলের ঘরে যেন পানি না জমে। 

আপনার সাধ্যের মধ্যে টিন, বাশঁ, কাঠ, রড বা সিমেন্ট দিয়ে দক্ষিণ মুখী করে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা করে ছাগলের জন্য ঘর তৈরি করতে পারলে ভালো হয়। ছাগলের ঘরে প্রচুর আলো বাতাসে ব্যবস্থা ও ঘরের মেঝে সবসময় শুষ্ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 

২০ থেকে ২৫ টি ছাগল রাখার জন্য দরকার ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ একটি ঘর এবং উক্ত ঘরের ভেতরে প্রয়োজন মাফিক দুই থেকে তিনটি প্রসবকালীন ছোট ঘর তৈরি রাখা উচিত। এছাড়া বাচ্চা ছাগলের জন্য ৩ থেকে ৮ ফুট জায়গা প্রয়োজন হয়। এখন আমরা জানবো কিভাবে ছাগলের ঘর মাঁচা পদ্ধতিতে নির্মাণের করা যায়।
  • ঘরের ভিতরে বাঁশ কাঠ বা প্লাস্টিকের মাঁচা তৈরি করা যায়। মাঁচার ফাঁকাগুলো এক সেন্টিমিটার হতে হবে।
  • মেঝে থেকে মাঁচার উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট হতে হবে এবং মাঁচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৭ থেকে ৮ ফুট হতে হবে।

  • ঘরের মেঝে মাঝখানে উঁচু রেখে চারপাশে ঢালু রাখতে হবে। কারণ ছাগলের গোবর, চনা ও অন্যান্য পানি সহজে ই সরানো যায় বা ঘুরে পড়ে যেতে পারে সেই রকম অবস্থায় ঢালুর রাখতে।
  • ছাগলের ঘরের মেঝে মাটির হলে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ বালি মাটি দিতে হবে। যেন খুব সহজেই পানি জাতীয় জিনিস মাটি শোষণ করে নিতে পারে।
  • বৃষ্টিতে ছাগলের ঘরে সরাসরি পানি যেন না ঢুকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
  • শীতকালে রোদ না ওঠা পর্যন্ত মাচার উপরে অর্থাৎ চারপাশের দেয়াল ভালোভাবে চটের ছালা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে কোন অংশ যেন ফাঁকা না থাকে। কারন এই সময় ছাগলে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা একটু বেশি থাকে।
  • প্রসবকালীন ছাগলকে ছাগল হতে আলাদা রাখাটাই উত্তম। এই সময় ঘরের ভেতরে কাট, বাঁশ ও লোহার পাত দিয়ে ছোট করে ঘর বানাতে হবে।
  • এই প্রসবকালীন ঘরগুলি ছাগলের লম্বা, চওড়া ও উচ্চতা চেয়ে দুই ফুট বেশি বড় করে ঘর তৈরি করাই উত্তম।
  • এই ঘর গুলিতে মোটা করে পরিষ্কার খড় বিছিয়ে রাখতে হবে।
  • শীতকালে প্রতিটা ছোট ঘরে ১০০ ওয়াটের একটি করে বাল ঝুলিয়ে রাখতে হবে।

ছাগলের দৈনিক খাদ্য তালিকা

নিজের বাড়িতে অথবা খামারে বিভিন্ন বয়সী ছাগলের দৈনিক খাদ্য তালিকা নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব। কারণ একেক ছাগলের খাদ্য তালিকা একেক রকম। ছাগলের শারীরিক গঠন অনুযায়ী খাদ্য তালিকা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
  • বাচ্চা ছাগলের খাবার
  • বাড়ন্ত বয়সী ছাগলের খাবার
  • গর্ভবতী ছাগীর খাবার
  • দুগ্ধবতী ছাগীর খাবার
  • খাসী ছাগলের খাবার 
বাচ্চা ছাগলের খাবারঃ মা ছাগী একসাথে বেশ কয়েকটি ছাগল ছানা প্রসব করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ছাগল ছানাকে জন্মের পর থেকে সমপরিমাণে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। সাধারণত ছাগল ছানা গুলোর ওজনের উপর নির্ভর করে দৈনিক ৮ থেকে ১০ বারের মত শাল দুধ খাওয়াতে হবে। 

বেশি দেরি করে ছাগল ছানাকে শাল দুধ খাওয়ানো যাবে না এতে হজমের সমস্যা ও বিভিন্ন রকম দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। ছাগল ছানা জন্মের পর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের দুধ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ছাগলছানা গুলো দুধ খাওয়া ধীরে ধীরে ছেড়ে দিবে। 

সাধারণত দেড় মাস বয়স থেকেই ছাগলের ছানার পাকস্থলীর বিভিন্ন রকমের ঘাস হজম করার মত উপযোগী হয়ে ওঠে। তাই এই সময় তাদেরকে কাঁচা ঘাস খাওয়ানো অভ্যাস করাতে হবে। সেই সাথে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ও কম আশযুক্ত দানাদার জাতীয় খাবার ধীরে ধীরে প্রদান করতে হবে। উপরোক্ত খাবার সমূহ নিয়মিত প্রদানের মাধ্যমে খাবার হজমের অভ্যাস গড়ে উঠবে।

বাড়ন্ত বয়সী ছাগলের খাবারঃ বাড়ন্ত বয়সী ছাগলের খাবারের প্রতি একটু বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। কারণ এ সময় তাদের শক্তি ও পুষ্টি উভয় প্রয়োজন হয়। ঠিকমতো পুষ্টি ও শক্তির অভাবে ছাগল অপুষ্ট জনীত রোগে ভুগতে পারে এবং বৃদ্ধি ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই এ সময় প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়াতে হবে। 

এই সময় ছাগলের ওজনের উপর নির্ভর করে খাবার নির্ধারণ করতে হবে। ছাগলের ওজন যখন তিন থেকে চার কেজি হবে তখন প্রতিটি ছাগলের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে সেই সাথে ০.৪ কেজি ঘাস জাতীয় খাবার দিতে হবে।

পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী ছাগলের জন্য ২০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে সেই সাথে ০.৬ কেজি ঘাড় জাতীয় খাবার দিতে হবে। সাত থেকে আট বছর বয়সী ছাগলের জন্য ২০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে সেই সাথে ০.৮ কেজি ঘাস জাতীয় খাবার দিতে হবে। 

ঘাস জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে যা একটি ছাগলের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করবে। ছাগলকে যদি দানাদার খাদ্য একটু বেশি পরিমাণে দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ১% অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করতে হবে। এতে ছাগলের প্রস্রাবের রাস্তায় পাথর হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।

গর্ভবতী ছাগীর খাবারঃ গর্ভবতী অবস্থায় ছাগী পরিচর্যা ও যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব ছাগল পালনকারীদের। কারণ এ সময় গর্ভবতী ছাগীকে আলাদাভাবে বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এই সময় গর্ভবতী ছাগীর খাদ্য চাহিদা তুলনামূলক হারে বৃদ্ধি পায়। 

তাই এই সময় গর্ভবতী ছাগীকে তিন গুণ পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে। এই পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্যের উপর নির্ভর করেই গর্ভে থাকা ছাগল ছানার সুস্থতা ও দৈহিক বৃদ্ধি ঘটবে। এই সময় ছাগল পালনকারীদের উচিত ছাগলকে তুলনামূলক হারে নরম খাদ্য প্রদান করা। 

যাতে তাদের হজমে কোন সমস্যা না হয়। গর্ভধারণের শেষ সপ্তাহে ছাগীর গর্ভের বাচ্চা দুই তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি ঘটে। সেজন্য এই সময় প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে দিতে হবে সেই সাথে ভাতের মাড় ও খড় জাতীয় খাবার দিতে হবে।

দুগ্ধবতী ছাগীর খাবারঃ গর্ভবতী অবস্থায় ছাগীর খাদ্য যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল ঠিক তেমনি বাচ্চা প্রসবের পরবর্তীতে ছাগীর খাদ্যততটুকুই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চা প্রসবের পর থেকে ঠিক তিন মাস পর্যন্ত দুগ্ধকালীন সময় বলে। এ অবস্থায় একটি গর্ভবতী ছাগীকে সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা হলে পরবর্তীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাওয়ার আশা করা যেতে পারে। 

তাই গর্ভবতী অবস্থায় ছাগীকে যে পরিমানে দানাদার জাতীয় খাদ্য প্রদান করা হতো সেই পরিমাণ দানাদার জাতীয় খাদ্য প্রসবের পরবর্তী ৬ মাস পর্যন্ত প্রদান করতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে দানাদার জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে এবং দশ মাসের মধ্যে সম্পন্ন দানাদার খাবার বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

খাসী ছাগলের খাবারঃ খাসি ছাগলের ওজন সাধারণত অন্যান্য ছাগলের চাইতে বেশি থাকে তাই খাসি ছাগলকে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি দানাদার জাতীয় খাদ্য বেশি দিতে হয়। তাই অবশ্যই মনে রাখতে হবে দানাদার খাবার সাথে অল্প পরিমাণে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড মিশ্রণ করে খাবার পরিবেশন করতে হবে।

কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশি

ছাগল পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেকারত্ব দূরীকরণ ও দারিদ্র বিমোচন করা সম্ভব। ছাগলকে এক কথায় বলা হয় গরীবের গাভী কারণ ছাগল পালনে ঝুঁকি কম। একটি দেশি জাতের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম দুধ দেয় তবে ভালোভাবে লালন পালনের মাধ্যমে একটি ব্ল্যাক বেঙ্গল ১ লিটার থেকে দেড় লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। 

একাধারে ৫০ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। ছাগলের খাদ্যের টাকা এই দুধ বিক্রির মাধ্যমেই আয় করা সম্ভব।এই বেকারত্ব ও দারিদ্র বিমোচনের জন্য ৬-১৫ মাস বয়সী সুস্থ ও রোগমুক্ত ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগী বা পাঁঠা নির্বাচন করতে হবে।

ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের বৈশিষ্ট্যঃ এ জাতের ছাগলের গায়ের রং সাধারণত কালো হয়ে থাকে তবে সাদা ব্রাউন রং এর হতে পারে। এদের পা ছোট ও কান সোজা থাকবে। এ জাতের ছাগল দশ থেকে বারো মাসের ভিতরে প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। 


একটি ছাগী ছয় মাস পরপর দুই থেকে তিনটি বাচ্চা প্রসব করে থাকে। বারো মাস বয়সে একটি ছাগীর ওজন ১৪-১৫ কেজি হয়ে থাকে এবং একটি পাঠার ওজন ২০ কেজি হয়ে থাকে। একটি ছাগী হতে আট থেকে নয় কেজি এবং একটি পাঠা হতে দশ থেকে বারো কেজি মাংস পাওয়া যায়।

পাঠা নির্বাচন পদ্ধতিঃ পাঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দিক গুলো বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
  • পাঠা ক্রয়ের সময় পাঠার বয়স সর্বোনিম্ন ১বছর হতে হবে।
  • অন্ডকোষ দুইটির আকার একই সমান ও সুগঠিত হতে হবে।
  • পিছনের দুই পা সুস্থ ও সুঠাম হতে হবে।
  • শরীরের চামড়া পরিষ্কার ও লোমগুলো উজ্জল দেখে নিতে হবে।
  • সরাসরি খামার অথবা ছাগল পালনকারী নিকট হতে ক্রয় করতে পারলে আরও ভালো হয়।
ছাগী নির্বাচন পদ্ধতিঃ ছাগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দিক গুলো বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
  • শরীরের চামড়া পরিষ্কার ও লোমগুলো উজ্জল দেখে নিতে হবে।
  • ছাগীকে আকারে বড় হতে হবে।
  • সরাসরি খামার অথবা ছাগল পালনকারী নিকট হতে ক্রয় এর পূর্বে ছাগীর মা, দাদী ও নানী বছরে ২ বার প্রসবে দুই বা ততোধিক বাচ্চা প্রদান করেছে কিনা সেই টা যাচাই করে নিতে পারেন।
  • গর্ভবতী কিংবা গর্ভধারণ করেছে এমন ছাগী নির্বাচন করতে পারেন।
  • নির্বাচিত ছাগীর ওলান সুগঠিত কিনা এবং দুই টি বাট একই সমান কিনা তা যাচাই করে দেখবেন।
  • ছাগীর মাথা মাঝারী লম্বাটে এবং আকর্ষণীয় হতে হবে।
  • পিঠ, কাঁধ ও ঘার একটি সরল রেখার পড়ছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
  • চার পা সমান থাকতে হবে।
  • কান খাড়া থাকতে হবে।
  • ছাগীর চাহনী ও সজাগতা দীপ্তমান হতে হবে। কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশি
অল্প পুজিতে বেশি লাভবান হওয়া যায় এমন কয়েকটি জাতের ছাগল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

যমুনাপারী জাতের ছাগলঃ 
  • এ জাতের ছাগলের উৎপত্তি ভারত উপমহাদেশে। আমাদের অঞ্চলে এ জাতের ছাগলকে রাম ছাগল বলে।
  • এরা ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের চেয়ে বড় আকারের হয়ে থাকে।
  • এই জাতের ছাগলের শরীরের রং কালো, বাদামি, সাদা বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণ হয়ে থাকে।
  • এদের কান ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা ঝুলন্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে।
  • এদের শরীরে যে পরিমাণ লোম থাকে তার চাইতে বেশি লম্বা লোম পিছনের পায়ের দিকে থাকে।
  • পুরুষ এবং স্ত্রী জাতের ছাগলের ওজনের পার্থক্য দেখা যায়। পূর্ণবয়স্ক একটি পুরুষ ছাগলের ওজন ৭০ থেকে ৭৫ কেজি এবং স্ত্রী জাতির ৫০ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • এ জাতের ছাগল বছরে একবার ১ থেকে ২টি বাচ্চা প্রসব করে এবং দুই থেকে আড়াই লিটার দুধ প্রতিদিন দেয়।
  • এ জাতের ছাগল খামারে পালনের জন্য উপযোগী।
বিটল জাতের ছাগলঃ 
  • এ জাতের ছাগলের উৎপত্তি ভারত ও পাকিস্তানে।
  • এ জাতের ছাগল সাদা, কালো, বাদামি রঙের হয়ে থাকে।
  • এদের কান বড় ও ঝুলানো অনেকটা যমুনাপারি ছাগলের মত।
  • এদের সিং পিছনের দিকে বাঁকা হয়ে থাকে।
  • এ জাতের ছাগল আকারে বেশ বড় হয় এবং পা গুলো লম্বা হয়। তাই এই বিটল জাতের ছাগলের থেকে প্রচুর পরিমাণে দুধ ও মাংস পেতে চাইলে ভালো যত্নের পাশাপাশি ভালো খাবার প্রদান করতে হবে।
  • একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ছাগল ৬০ থেকে ৭০ কেজি এবং একটি স্ত্রী ছাগল ৪০ থেকে ৫০ কেজি হয়ে থাকে।
  • এ জাতের ছাগল অন্যান্য ছাগলের চাইতে একটু বেশি দুধ দিয়ে থাকে। একটি ছাগে দৈনিক ৫ থেকে ৬ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।
  • এ জাতের ছাগল বেশ লাভজনক হওয়ায় খামারে পালনের জন্য উপযোগী।
ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগলঃ
  • চামড়া ও মাংসের জন্য ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের চাহিদা অনেক বেশি।
  • এ জাতের ছাগল বাংলাদেশের প্রধান জাতের ছাগল।
  • এ জাতের ছাগল অনেক ছোট হওয়ার কারণে একে বারবারি জাতের ছাগল বলে থাকে।
  • এ জাতের ছাগল ৯ থেকে ১০ মাস বয়সে প্রজনন ক্ষমতা পেয়ে যায়। ১৪ থেকে ১৫ মাস বয়সে এরা প্রথমে ১টি বাচ্চা প্রসব করে এবং পরবর্তীতে ২ থেকে ৩টি করে বাচ্চা প্রসব করে বছরে ২ বার।
  • এরা কালো রং ছাড়াও বাদামি সাদা কালো মিশ্রিত রংয়ের দেখা যায়।
  • এ জাতের ছাগী অন্যান্য ছাগলের চাইতে দুধ খুবই কম দেয়। দৈনিক প্রায় এক থেকে দেড় লিটার দুধ পাওয়া যায় দুই থেকে তিন মাস দুধ দিয়ে থাকে।
  • যে জাতের ২০ কেজি ওজনের ছাগল হতে প্রায় ১১ কেজি মতো মাংস পাওয়া যায়।

ছগলের প্রজনন পদ্ধতি

পাগল প্রজননের পূর্বে দেখতে হবে ছাগির বয়স কত। কারণ ৫ থেকে ৬ মাস বয়সে ছাগীদের প্রথম শরীর গরম হয়। এ অবস্থায় কোনভাবে ছাগীকে পাঠার সংস্পর্শে নিয়ে আসা যাবে না। কারণ এই সময় ছাগীর সাথে পাঠা মিলনে মাধ্যমে বাচ্চা হলে সে বাচ্চার মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। ন্যূনতম নয় থেকে দশ মাস বয়সে একটি ছাগি পুরোপুরি যৌবনপ্রাপ্ত হয়। 

এতে সব ঋতুতে প্রজনন করানো যেতে পারে। তবে এরা ২১ দিন পর পর ঋতুবতী হয়ে থাকে। একটি ছাগী ঋতুবতী হওয়ার ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা পর পাঠার সংস্পর্শে মিলন ঘটানো উত্তম। মিলনের পূর্বে পাঠা সুস্থ নাকি, ভালো জাতের ব্লাক বেঙ্গল নাকি এই সব দিক দেখে নেয়া ভালো।

দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী ছাগীর যত্নএকটি দুগ্ধবতী ছাগল তার ওজনের চাইতে তিন থেকে চার শতাংশ হারে শুষ্ক পদার্থ খেয়ে থাকে একটি তিন বছরের বয়স্ক দ্বিতীয় বাচ্চা দেয়া ছাগল ওজন ৩০ কেজি হারে দৈনিক ১.৫-১.৮ শুষ্ক খাবার বলতে কাঁচা ঘাস গ্রহণ করে থাকে। পাশাপাশি ০.৫-০.৮ কেজি শুষ্ক পদার্থ দানাদার জাতীয় খাবার দেয়া উচিত।

  • একটি গর্ভবতী ছাগির ক্ষেত্রে ১-১.৫ পরিমাণে শুষ্ক পদার্থ ঘাস খেয়ে থাকে বাকি। পাশাপাশি ০.৫-০.৮ কেজি শুষ্ক পদার্থ দানাদার জাতীয় খাবার দেয়া উচিত। যেহেতু ছাগী বাচ্চা দেওয়ার ১.৫-২ মাসের মধ্যে গর্ভবতী হয় সেজন্য প্রায় একই পরিমাণে খাদ্য গর্ভ অবস্থায় ছাগলকে দিতে হবে।
  • গর্ভবতী অবস্থায় ছাগীকে দিনে দুইবার অর্থাৎ সকালে ও বিকেলে দানাদার মিশ্রিত খাবার সরবরাহ করতে হবে।
  • বাচ্চা প্রসবের পর ছাগীকে দৈনিক ২-৩ লিটার পর্যন্ত প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম চিটাগুড়ের সাথে ২ গ্রাম লবণ মিশ্রিত পানি সরবরাহ করতে হবে এতে বাচ্চা প্রসবের ধকল কিছুটা কমে আসবে।
  • বাচ্চা প্রসবের পর ছাগীকে অল্প জাউ ভাত ও ভালো ঘাস সরবরাহ করতে হবে।
  • বাচ্চার প্রসবের পর সময় মত ফুল পড়লে তখন সাথে সাথে তার সরিয়ে নিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের আর্টিকেল থেকে ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পেরেছেন। ছাগল পালন করতে হলে যে তথ্যগুলো আপনার জানা প্রয়োজন সে সব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাই আপনার সুবিধার জন্য আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনার মন্তব্য কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

ভালো লাগলে ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখবেন এবং কোন কিছু জানতে বা বুঝতে না পারলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url