সোনালী মুরগী পালনের সঠিক পদ্ধতি
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো সোনালি মুরগি পালনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে অনেক খোঁজাখুঁজি করছেন? কিন্তু সঠিক কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। আমরা আজকে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে সোনালি মুরগি পালনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানাবো। বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্টসূচীপত্রঃএখানে আমরা সোনালি মুরগি পালন সম্পর্কে আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
ভূমিকা
আমাদের দেশে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি। অন্যান্য মুরগির তুলনায় বাজারে সোনালি মুরগির চাহিদা অনেক বেশি। সোনালি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভালো। সোনালি মুরগির বেশিরভাগ জাত বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী।
অন্যান্য মুরগির তুলনায় সোনালি মুরগির ওপর আবহাওয়া পরিবর্তনের তেমন কোন প্রভাব পড়ে না। আমার লেখাটি মূলত নতুন খামারিদের উদ্দেশ্য করে লেখা। তবে অভিজ্ঞ খামারিরাও লেখাটি পড়ে উপকৃত হবেন।
কেন সোনালি মুরগি পালন করবেন
অন্যান্য মুরগির তুলনায় সোনালি মুরগির জাত বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হওয়ায় সোনালি মুরগি পালনের দিকে খামারিরা বেশি ঝুঁকছে। বাজারে অন্যান্য মুরগির তুলনায় সোনালি মুরগির মাংসের চাহিদা বেশি। অন্যান্য হাইব্রিড জাতের মুরগির তুলনায় সোনালি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।
আরো পড়ুনঃ শীতের আগে বিভিন্ন সবজি চাষ পদ্ধতি
নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রদান করলে অজৈব নিরাপত্তা মেনে চললে খামারে রোগবালাই অনেক কম দেখা যায়। বাজার দর ভালো থাকার কারণে বাণিজ্যিক ভাবে সোনালি মুরগির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সোনালি মুরগির বাচ্চা নির্বাচন
সোনালী জাতের মুরগি একটি স্বতন্ত্র মুরগির জাত হলেও বাজারে বর্তমানে এর কিছু ভ্যারিয়েশন বিদ্যমান রয়েছে। সোনালী মুরগির বাচ্চা বিভিন্ন নামে বাজারজাত হয়ে থাকে যেমন সোনালী, হাইব্রিড সোনালী ও সোনালী ক্লাসিক। আসল সোনালী অর্থাৎ ফাউমি মুরগির সংকরায়নে সোনালি মুরগির জাত উদ্ভাবিত হত।
বর্তমানে বিভিন্ন ইনব্রিডিং এর কারণে মূল জাতের বৈশিষ্ট্য কমে যাচ্ছে। সে কারণে বিভিন্ন হ্যাচারি সোনালী জাত উন্নয়নের জন্য অন্যান্য ভারী জাতের মুরগির সাথে ক্রসব্রিড করে সোনালির জাত উন্নয়নে কাজ করছে। যার কারনে বাজারে সোনালি মুরগির বিভিন্ন জাত বিদ্যমান রয়েছে।
সোনালি মুরগির ঘর প্রস্তুত করার নিয়ম
সোনালি মুরগি পালনের জন্য ঘর তৈরি করতে হবে লম্বালম্বি ভাবে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর। ঘরের প্রস্থ সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট বা যার যার চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে নিতে পারবেন সোনালি মুরগির ঘরের মেঝে হবে মাটি থেকে কমপক্ষে এক ফুট উঁচুতে।
ঘরের চারদিক ভালো নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে যেন বাহির থেকে কোন কিছু খামারে প্রবেশ করতে না পারে।৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি প্রতিটি সোনালি মুরগির জন্য ০.৮৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ১৫০০ সোনালি মুরগির জন্য ১২৭৫ বর্গফুট জায়গা দিতে হবে।
ডিম পাড়ানোর জন্য সোনালি মুরগি পালন করলে জাইগা বেশি দেওয়া প্রয়োজন যেমন একটা মুরগির জন্য ১.৫ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। অল্প জায়গায় মুরগি পালন করলে সাধারণত মুরগির বৃদ্ধি ভালো হয় না পাশাপাশি বেশ কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন রক্ত আমাশয়, গাম্বুরা ইত্যাদি। আবার অতিরিক্ত জায়গা দেওয়াটাও ঠিক না।
লিটার ব্যবস্থাপনা
মুরগির লিটার হিসাবে ধানের তুষ, কাঠের গুড়া ও বালি ব্যবহার করা যায়। তবে এগুলোর মধ্যে সোনালি মুরগি লিটার হিসাবে ধানের দোষটা ব্যবহার করাই শ্রেয়। লিটার সাধারণত ১ থেকে দেড় ইঞ্চি পরিমাণ উঁচু করে দিতে হয় প্রয়োজন অনুযায়ী লিটার নাড়িয়ে দিতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে লিটারে যেন গ্যাস না জমে। পাশাপাশি মুরগির ঠান্ডা যেন না লাগে।
ব্রুডার ঘর ব্যবস্থাপনা
- বাচ্চা আসার প্রায় তিন ঘন্টা আগে থেকে সোনালীর বাচ্চার প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস লিটার পেপার, পানি খাবারের পাত্রসহ সব তিন ঘণ্টা আগেই রেখে দিতে হবে বাচ্চা আসার পর প্রথম ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত।
- বাচ্চা আসার আগে হোভারের লাইট ২ থেকে ৩ ঘন্টা আগে জ্বালিয়ে রাখতে হবে। এক ঘন্টা পর পর থার্মোমিটারের রিডিং মাপতে হবে।
- বাচ্চা ব্রুডারে রাখার 10 মিনিট আগে খাবার এবং পানির পাত্র রেখে দিতে হবে। এবং দুর্বল বাচ্চাগুলো বাছাই করে তাদের গ্লুকোজের পানি খাওয়াতে হবে।
- বাচ্চা সবল থাকলে শুধুমাত্র জীবাণুমুক্ত সাদা পানি দিতে হবে প্রথম দুই ঘন্টা। এবং দুর্বল বাচ্চা বাছাই করে তাদের গ্লুকোজের পানি খাওয়াতে হবে।
- বাচ্চাগুলোকে ব্রুডারে রাখার 10 মিনিট পর শুধু প্রথমবার পেপারের ওপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে। তারপর অবশ্যই ট্রেতে করে খাবার দিতে হবে।
- প্রায় তিন ঘন্টা পর পর বাচ্চার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। খাবার শেষ হয়ে গেলে খাবার দিতে হবে। পানি শেষ হয়ে গেলে পানি দিতে হবে। তাপমাত্রা ঠিক আছে নাকি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মৃত বাচ্চা থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। পেপার ভিজে গেলে পেপার পরিবর্তন করে দিতে হবে। এবং ২৪ ঘন্টা পরে পুরোপুরি ভাবে পেপার সরিয়ে ফেলতে হবে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা
অন্যান্য হাইব্রিড মুরগির তুলনায় সোনালি মুরগির খাদ্য চাহিদা নেই। হাইব্রিড মুরগি যত খাবে তত বাড়বে তবে সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। সোনালী গ্রোথ কম। বিধায় অন্যান্য হাইব্রিড মুরগির তুলনায় সোনালী মুরগীর খাদ্যে প্রোটিন এনার্জীর মান তুলনামূলক কম থাকে।
সোনালি মুরগির খাবারের পাত্র কোন একটা রশির সাথে ঝুলিয়ে দিতে হয়। এবং খেয়াল রাখতে হবে খাবারের পাত্র যেন মুরগির বুক বরাবর থাকে এতে খাবার অপচয় কম হয়।
পানি ব্যবস্থাপনা
মুরগির খামারে সাধারণত তিন বেলা পরিষ্কার পানি দিতে হয়। শীতের সময় বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়, যেন পাত্রে ঠান্ডা পানি জমে না থাকে। পানির পাত্র মুরগির চোখ বরাবর দিতে হবে। এতে পানিতে ময়লা আবর্জনা কম পড়বে। ফলে পানি বাহিত রোগ কম হবে। প্রায় প্রতিদিনই পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হবে। মুরগির অধিকাংশ রোগ পানির মাধ্যমে হয়ে থাকে।
সোনালি মুরগি রোগ সমূহ
সোনালি মুরগির বেশিরভাগ রোগীর ঠান্ডা জনিত রোগ। সাধারণত রোগ সমূহের মধ্যে রয়েছে রানীক্ষেত, গাম্বুরা, করাইজা, কলেরা সহ বেশ কিছু ঠান্ডা জনিত রোগ। খামারে সঠিক জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে এবং নিয়মিত ভ্যাকসিন দিলে অধিকাংশ রোগ থেকেই মুক্ত থাকা যায়।
লাভজনক খামার ব্যবস্থাপনা
আপনাদের খামারকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বেশ কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। খামারে মুরগির মৃত্যুহার শূন্যের কোটায় রাখতে হবে। সঠিক ওজনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং মার্কেট বুঝে বাচ্চা উঠাতে হবে।
খামারকে রোগবালার মুক্ত রাখতে হবে এবং ভালো মানের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। খামার এবং খামারের আশেপাশে সর্বদা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। মনে রাখা উচিত চিকিৎসা করার চেয়ে প্রতিরোধ করা লাভজনক খামার ব্যবস্থা অন্যতম শর্ত।
লেখকের মন্তব্য
সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে ভালো জাতের সুস্থ মুরগির বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে। এবং ভালো মানে সুষম খাবার নিশ্চিত করতে হবে পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এবং খামারের আশেপাশে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
এই আর্টিকেলটি থেকে যদি কিছু শিখতে পারেন বা আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url