স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি - স্ট্রবেরির উপকারিতা
ড্রাগন ফল সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুনউজ্জল টুকটুকে লাল রঙে রসালো ফলটি হল স্ট্রবেরি। সুস্বাদু ও অধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি বেশ জনপ্রিয়। তাই আজ আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি - স্ট্রবেরি উপকারিতা সম্পর্কে। অবশ্যই আমি চেষ্টা করেছি সঠিক পরামর্শটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরা। স্ট্রবেরি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
স্ট্রবেরি হলো বিদেশি একটি ফল। একসময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই ফলের চাষ হতো। তবে বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বেই এটি পাওয়া যায়। আমাদের বাংলাদেশের বর্তমানে স্ট্রবেরি চাষ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে লাভবান হচ্ছে। টক মিষ্টি স্বাদের স্ট্রবেরি দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি স্বাদেও অনন্য।
পোস্ট সূচিপত্রঃতাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই স্ট্রবেরি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য।
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি-ভূমিকা
অধিক পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ফল হলো স্ট্রবেরি। স্ট্রবেরিতে রয়েছে ভিটামিন সি, এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে। আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবো স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
স্ট্রবেরি চাষ করার জন্য আপনার কি কি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সেই সবকিছু সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।স্ট্রবেরির বীজ বপন পদ্ধতি, স্ট্রবেরি চারা কোথায় পাওয়া যায়, স্ট্রবেরি গাছের দাম এই বিষয়গুলো জানা থাকলে আপনার জন্য স্ট্রবেরি চাষ করা অনেকটাই সহজে তর হবে।
তাই আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন তাহলে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা পাবেন। স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায়, ছাদে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সিজনাল ফল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই কোন সময় স্ট্রবেরি বেশি পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে তথ্য দেওয়া রয়েছে। স্ট্রবেরির উপকারিতা আর সব থেকে ইম্পরট্যান্ট বিষয় হল স্ট্রবেরি উপকারিতা।
আপনার যদি জানা থাকে স্ট্রবেরি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবারে স্ট্রবেরি রাখবেন। তাই এই বিষয়ে জানার জন্য অবশ্যই আপনাকে আর্টিকেলটি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি
স্ট্রবেরি হল একটি লতানো প্রকৃতির গাছ। স্ট্রবেরী গাছের শক্ত কোন ডালপালা নেই। তবে এই গাছের পাতা সবুজ এবং চারিপাশে খাচকাটা হয়ে থাকে, স্ট্রবেরি গাছ দেখতে অনেকটা থানকুনি পাতার মতো। স্ট্রবেরি গাছ যেহেতু ঝোপালো তাই এই ঝোপের মধ্যেই সরু লতার মতো বোটার সাথে সাদা ফুল ফোটে। এরপর সেই বোটার মাথায় ছোট লিচুর মত ফল ধরে।
এই ফলটি স্ট্রবেরি নামে পরিচিত। এই স্ট্রবেরি ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজাভ এবং পাকলে টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করে। স্ট্রবেরি ফলটি উচ্চমূল্যের হলেও এই ফলের আকর্ষণীয় রং, গন্ধ ও উচ্চপুষ্টি মানের জন্য খুবই জনপ্রিয়। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের পরিপূর্ণ এই ফলটি। এই স্ট্রবেরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।
স্ট্রবেরি ফল হিসেবে যেমন জনপ্রিয় তেমনি বিভিন্ন খাবারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও বিভিন্ন খাবারের স্ট্রবেরি ফ্লেভার খুবই জনপ্রিয়।
স্ট্রবেরির জাতঃ স্ট্রবেরি জাতের মধ্যে বারি স্ট্রবেরি-১ উল্লেখযোগ্য একটি জাত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি স্ট্রবেরি-১ নামের উচ্চ ফলনশীল একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এই জাতটি বাংলাদেশের সব জায়গায় চাষ যোগ্য।
বারি স্ট্রবেরি-১ জাতের গাছে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফুল আসা শুরু করে এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। এই জাতের এক একটি গাছ থেকে গড়ে ৩২ টির মত ফল সংগ্রহ করা যায়। এই গাছটি সরলতার মাধ্যমে বংশবিস্তার করে।
এছাড়াও আরো কিছু জাত রয়েছে যেগুলো আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচুর চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত জাত রাবি -১,রাবি-২ ও রাবি-৩ এছাড়াও মর্ডান হর্টিকালচার সেন্টার, নাটোর থেকে প্রচলিত জাত মডার্ন স্ট্রবেরি-১, মডার্ন স্ট্রবেরি-২, মডার্ন স্ট্রবেরি-৩ ও মডার্ন স্ট্রবেরি-৪।
স্ট্রবেরি চাষযোগ্য মাটি ও আবহাওয়াঃ স্ট্রবেরি যেহেতু হালকা শীত প্রধান দেশের ফসল তাই এই ফসলটি আমাদের দেশে শীতের শেষের দিকে পাওয়া যায়। স্ট্রবেরির ফুল ও ফল যেহেতু শুকনো মৌসুমে আসে তাই এই ফল চাষের জন্য বাংলাদেশের রবি মৌসুম সব থেকে উপযোগী।
অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে ধরনের জমিতে পানি জমে থাকে যেমন উর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ এই ধরনের জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করা যাবে না। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন যে ধরনের জমিতে পানি জমে থাকে না সেই ধরনের জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করতে।
স্ট্রবেরি চাষের জমি তৈরিঃ স্ট্রবেরি চাষের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ভালোভাবে জমি তৈরি করতে। স্ট্রবেরি চাষের জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ভালোভাবে অন্ততপক্ষে ১ ফুট গভীর করে জমি চাষ দিতে হবে। কারণ স্ট্রবেরি চাষের জন্য নরম ও ঝুরঝুরে মাটি প্রয়োজন। এছাড়াও জমিতে শেষ চাষ দেওয়ার সময় পরিমাণ মতো সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
স্ট্রবেরি চাষের চারা রোপনঃ স্ট্রবেরির চারা রোপনের জন্য উপযুক্ত সময় হল মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত। তবে আপনি চাইলে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেও চারা লাগাতে পারেন।
- চারা রোপনের জন্য অবশ্যই আপনাকে জমিতে বেড তৈরি করে নিতে হবে।
- চেষ্টা করবেন প্রতিটি বেড যেন ৩ ফুট প্রশস্ত হয়।
- এছাড়াও দুই বেডের মধ্যে ১-১.৫ ফুট চওড়া নালা রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ শীতের আগে বিভিন্ন সবজি চাষ পদ্ধতি
- প্রতিটি বেডের দুই লাইনের মধ্যে ১.৫-২ ফুট দূরত্ব রাখতে হবে।
- এছাড়াও অবশ্যই প্রতিটি লাইনে ১-১.৫ ফুট দূরে দূরে চারা রোপন করতে হবে।
- এই হিসাব অনুযায়ী চারা রোপন করলে প্রতি শতকে প্রায় ১৫০ টি চারা রোপন করা যাবে।
স্ট্রবেরি জমিতে সার প্রয়োগঃ অবশ্যই ভালো ফলন পেতে হলে নিয়ম অনুযায়ী পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে। আপনার ক্ষেত্রে যদি সম্ভব হয় তাহলে মাটি পরীক্ষা করে সার দেওয়া ভালো। ছাড়াও সাধারণ হিসাবে প্রতি শতক জমিতে যে পরিমাণ সার লাগবে চলুন জেনে নেই।
- শুকনা পচা গোবর সার ১০০ থেকে ১২০ কেজি
- ইউরিয়া সার ১ কেজি
- এমওপি সার ৯০০ গ্রাম
- টিএসপি সার ৮০০ গ্রাম
- জিপসাম স্যার ৬০০ গ্রাম
স্ট্রবেরি চাষের জমিতে শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম ও অর্ধেক পরিমাণ এমওপি সার জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর এম ও পি ও ইউরিয়া অবশিষ্ট অংশ চারা রোপনের ১৫ দিন পর থেকে ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর ৪-৫ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
স্ট্রবেরি গাছের সেচঃ স্ট্রবেরি গাছ যেহেতু অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারে না তাই জমিতে রসের অভাব দেখা দিলে প্রয়োজন মত পানি সেচ দিতে হয়। এছাড়াও বৃষ্টি বাশেজের অতিরিক্ত পানি দ্রুত বের করে দিতে হবে।
স্ট্রবেরির চারা উৎপাদনঃ স্ট্রবেরি সাধারণত লতানো প্রকৃতির গাছ। এজন্য স্ট্রবেরি রানারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন পূর্ববর্তী বছরের গাছ নষ্ট না করে জমি থেকে তুলে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ স্থানে রোপন করে রাখার। যখনই দেখবেন ওই গাছ থেকে রানারের মাধ্যমে শিকড় বেরিয়ে এসেছে তখনই কেটে অন্য একটি পলিব্যাগে রোপন করবেন।
অবশ্যই চেষ্টা করবেন ৫০ ভাগ গোবর এবং 50 ভাগ পলিমাটি যুক্ত পলিথিন ব্যাগে লাগাতে। এরপর পলিথিন ব্যাগ সহ চারাগুলো হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন কোন প্রকার পানি যেন গাছের গোড়ায় না জমে ।সেজন্য বৃষ্টির সময় উপরে পলিথিন ব্যাগের ছাউনি দিতে হবে।
তবে প্রতিবছরই যদি আপনি রানারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকেন তাহলে স্ট্রবেরি ফলন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তাই ফলন যেন না কমে সেদিকে খেয়াল রেখে অবশ্যই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা ব্যবহার করা ভালো।
স্ট্রবেরি চারা কোথায় পাওয়া যায়
বর্তমানে বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। তাই আপনার আশেপাশে যে কোন নার্সারিতে খোঁজ করলেই স্ট্রবেরি চারা পেয়ে যাবেন। এছাড়াও বর্তমান সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে স্ট্রবেরি চারা বিক্রি হচ্ছে। আপনারা চাইলে সেখান থেকেও স্ট্রবেরি চারা সংগ্রহ করতে পারেন।
তবে যারা সংগ্রহ করার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন তারাটি যেন টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়ে থাকে। কারণ রানার এর মাধ্যমে তৈরি করা চারা থেকে অনেক সময় ফলন কম পাওয়া যায়। তাই চেষ্টা করবেন টিস্যু কালচারে উৎপাদিত চারা ক্রয় করতে।
এবং আরও একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে আপনার চারটি যেন হয় সুস্থ সবল এবং সতেজ। কারণ রোগাক্রান্ত চারা রোপন করলে পরবর্তীতে গাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই দেখা দেয়।
স্ট্রবেরি গাছের দাম
আমাদের বাংলাদেশে অন্যান্য ফলের তুলনায় স্ট্রবেরি হল উচ্চ মূল্যের একটি ফল। তাই এই ফলটি চারার দাম ও একটু বেশি। তবে আপনি যদি একটি চারা ক্রয় করেন তারপর থেকে রানার এর মাধ্যমে আপনি নিজেই বছরে প্রায় ১০০ টা পর্যন্ত চারা তৈরি করতে পারবেন।
এরপর থেকে আপনার আর স্ট্রবেরি চারা না কিনলেও হবে। তাই চলুন এবার জেনে নেই স্ট্রবেরি চারা মূল্য কত। অঞ্চল ভেদে স্ট্রবেরি চারা একেক জায়গায় একেক রকম। তবে বেশিরভাগ জায়গায় বা বেশিরভাগ নার্সারিতে স্ট্রবেরির চারা দাম ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায়
স্ট্রবেরি হলো সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ একটি ফল। স্ট্রবেরি ফলটি শীতের শেষের দিকে পাওয়া যায়। স্ট্রবেরি চারা রোপনের সময় হল সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তবে অনেকে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসেও এই চারা রোপণ করে থাকে আর স্ট্রবেরি ফলন দেওয়া শুরু করে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।
এই ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে বাজারে প্রচুর পরিমাণে স্ট্রবেরি পাওয়া যায়। এই কয়েক মাস অন্যান্য সময়ের তুলনায় দাম অনেকটাই শিথিল পর্যায়ে থাকে। আর এই সময়ে স্ট্রবেরির স্বাদটাও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে।
ছাদে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি
ছাদে স্ট্রবেরি লাগানোর উপযুক্ত সময় হল অক্টোবর ও নভেম্বর এই দুই মাস। আপনাদের যাদের বড় পরিসরে স্ট্রবেরি লাগানোর মতো জায়গা নেই তারা চাইলে ছাদে অথবা বারান্দায় খুব সহজেই স্ট্রবেরি চাষ করতে পারেন। নিজেরা চাষ করার ফলে সতেজ ও ফরমালিন মুক্ত ফল খাওয়া যায়। চলুন এবার জেনে নেই ছাদে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
ছাদে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতিঃ তাদের স্ট্রবেরি চাষ করার জন্য টপ অথবা পাঁচ লিটারের তেল অথবা পানির বোতল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও বস্তার মধ্যে মাটি ভরে ও স্ট্রবেরি চাষ করতে পারেন। তবে আপনি যদি তেলের বোতলে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন তাহলে অবশ্যই বোতলটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
এরপর আপনাকে গাছ লাগানোর জন্য মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে। মাটি প্রস্তুতির জন্য শুকনো গোবর বা জৈব সার মিক্সড করে মাটি উর্বর করে নিতে হবে। গোবর সার যদি আপনার হাতের কাছে না পান তাহলে যে কোন নার্সারি থেকে গোবর সার সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়াও আপনি বাড়িতে শাক সবজির উচ্ছিস্টাংশ পচিয়ে ও সার তৈরি করে নিতে পারেন।
এই সারও গাছের জন্য বেশ উপকার। স্ট্রবেরি গাছের জন্য রোদ যেমন উপকারী তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণে রোদ গাছের ক্ষতি করতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন সকালের রোদ এবং বিকেলের হালকা রোদ গাছে লাগানোর জন্য। এবং খেয়াল রাখতে হবে রাতের শিশির যেন গাছের উপরে পড়ে। স্ট্রবেরি গাছের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদ এবং শিশির খুবই প্রয়োজন।
চেষ্টা করবেন অবশ্যই নার্সারি থেকে ভালো জাতের চারা সংগ্রহ করার। পরবর্তীতে একটি চারা থেকেই আপনি অনেকগুলো চারা তৈরি করতে পারবেন। স্ট্রবেরি গাছ যেহেতু লতানো গাছ এই গাছের রানার এর মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায়।
স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যাঃ সব গাছেরই পরিচর্যা ভালো হলে ফলনও ভালো দেয়। তাই অন্যান্য গাছের মতো স্ট্রবেরি গাছেরও নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন। স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা বলতে আগাছা পরিষ্কার, মরা পাতা কেটে ফেলা এবং মাঝে মাঝে মাটি আলগা করে দেওয়া ভালো। এছাড়াও প্রতিদিন অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। স্ট্রবেরি কাছে ফুল আসার পরে বাড়তে পরিচর্যার প্রয়োজন।
এছাড়াও গাছে ফল ধরার পরে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ফল যেন মাটির সাথে লেগে না যায়। ফল ধরার পর ফলের নিচে খর অথবা পেপার বিছিয়ে দিতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে ফল ধরার পর কোন পোকামাকড় বা পাখি কেন ফল নষ্ট করতে না পারে। তাই ফল ধরার পরে নেট দিয়ে গাছ ঢেকে দিতে হবে। স্ট্রবেরি গাছে তেমন কোন স্যারের প্রয়োজন হয় না।
তবে ১৫-২০ দিন অন্তর সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার টবের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন। সার দেওয়ার পর অবশ্যই গাছে পানি দিতে হবে। এর ফলে গাছ প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন সংগ্রহ করবে এবং সতেজ থাকবে।
স্ট্রবেরির উপকারিতা
সৌন্দর্য এবং সুস্বাদুর দিক দিয়ে স্ট্রবেরি ফলটি অন্যতম। পাশাপাশি এর উপকারিতার দিকের কথা না বললেই নয়। আমাদের শরীরকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে স্ট্রবেরি বেশ কার্যকর। আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব স্ট্রবেরি বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই স্ট্রবেরির উপকারিতা কি কি।
- স্ট্রবেরীর গায়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বীজ যা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিডে পরিপূর্ণ। এই স্ট্রবেরির বীজে থাকা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিডে আমাদের হার্ট কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- আপনারা যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন তারা স্ট্রবেরি খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। কারণ স্ট্রবেরিতে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ খুবই কম এবং স্ট্রবেরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি।
- স্ট্রবেরিতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা আপনার শরীরের রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করতে পারে। এর ফলে স্ট্রোকের মতো সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়
- আপনার যদি দাঁতও হাড়ের সমস্যা থেকে থাকে ।তাহলে আপনার খাবার তালিকায় রাখতে পারেন স্ট্রবেরি। স্ট্রবেরি আপনার দাঁত ও হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে বেশ কার্যকর।
- নার্ভের সক্রিয়তা বাড়াতে আপনি প্রতিদিন স্ট্রবেরি খেতে পারেন। কারণ স্ট্রবেরিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়োডিন, ভিটামিন সি, ফাইটোকেমিক্যাল। এছাড়াও মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বাড়াতেও স্ট্রবেরিতে থাকা পটাশিয়াম বেশ কার্যকর।
- স্ট্রবেরীতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করবে।
- স্ট্রবেরিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস পাওয়া যায়। আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় সারাদিন তিন থেকে চারটি স্ট্রবেরি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করবে।
- আপনি যদি ত্বকের তারুণ্যতা বজায় রাখতে চান তাহলে প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় স্ট্রবেরি রাখুন।
- আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্লান্ট কম্পাউন্ড বেশ কার্যকর। এছাড়াও ফ্রি র্যাডিকালসের সমস্যা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার ফলে ক্যান্সারের মতো সমস্যা দূরে থাকে।
- স্ট্রবেরি আপনার চোখের নানা ধরনের জটিলতা দূর করতে সাহায্য করবে। স্ট্রবেরিতে থাকা পুষ্টি উপাদান চোখ শুকিয়ে যাওয়া, মাসকুলার ডিজেনারেশন এবং দৃষ্টি শক্তি সমস্যা সহ বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে।
- এছাড়াও টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত স্ট্রবেরি খেতে পারেন।
- এছাড়াও স্ট্রবেরিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ সর্দি কাশি সারাতেও বেশ উপকারী।
তাই সিজনের সময় চেষ্টা করবেন আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় স্ট্রবেরি রাখতে। বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ডেজার্ট এর মাধ্যমেও স্ট্রবেরি খেতে পারেন। এছাড়াও স্মুদি তৈরি করেও খেতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
আপনারা নিশ্চয়ই আর্টিকেলটি পড়ে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এখন নিশ্চয়ই আপনারা চাইলে খুব সহজে স্ট্রবেরি চাষ করতে পারবেন। আপনারা যদি বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ না করেন অল্প পরিসরে স্ট্রবেরি চাষ করে আপনার পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে পারবেন।
কারণ স্ট্রবেরিতে থাকা পোস্টটি উপাদান আমাদের শরীরের কি পরিমান উপকার করতে পারে সে সম্পর্কেও আর্টিকেলটি থেকে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
ভালো লাগলে ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখবেন এবং কোন কিছু জানতে বা বুঝতে না পারলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url