তেঁতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা - ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম
পেঁপে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুনবেশিরভাগ বাঙালির তেঁতুলের নাম শুনলে মুখে পানি চলে আসে। বিশেষ করে মেয়েদের। তেঁতুল ফলটি পছন্দ করে না এমন মেয়ে খুব কমই আছে। তেঁতুল এবং তেঁতুলের আচার মানেই মুখে পানি চলে আসার মত ব্যাপার। এছাড়াও তেঁতুলের রয়েছে বেশ কিছু উপকারিতা। তাই এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আজ আমরা জানব তেঁতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা - ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন প্রাচীন কাল থেকে তেঁতুল তার ঔষধি গুণের জন্য অনন্য। এই তেঁতুল গলা ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য এমনকি সানস্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
পোস্ট সূচিপত্রঃআজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানব তেঁতুলের বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই তেঁতুল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
তেঁতুলের উপকারিতা - ভূমিকা
বিভিন্ন খাবারে সাত বাড়াতে যেমন তেঁতুল খুবই জনপ্রিয় তেমনি শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সারাতে তেঁতুলে জুড়ি মেলা ভার।
তাই আজ আমরা জানব তেঁতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এছাড়াও পাকা তেঁতুলের উপকারিতা, ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম, মেয়েদের তেঁতুল খেলে কি হয়, ছেলেদের তেঁতুল খেলে কি হয় এবং তেঁতুলের বিচি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
পাকা তেঁতুলের উপকারিতা
পাকা তেঁতুলের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। পাকা তেঁতুল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকার। আজ আমি আপনাদের জানাবো পাকা তেঁতুলের উপকারিতা সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই পাকাতে তেঁতুলের উপকারিতা সমূহ।
- পাকা তেঁতুল দ্রুত হজমে সহায়তা করে।
- পেটের বদহজম জনিত সমস্যা উপশমে খুবই উপকারী।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা খুব সহজে নিরাময় করে।
আরও পড়ুনঃ কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
- শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- বিভিন্ন ধরনের হার্টের সমস্যা দূর করে হাটকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
- শরীরে থাকা বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে।
- ক্ষুদা বাড়াতে সহায়তা করে
- পাকা তেঁতুল কফ ও বায়ুনাশক
আমাদের শরীরের জন্য পাকা তেঁতুলের বিভিন্ন উপকারিতার মধ্যে উপরে উল্লেখিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা। এছাড়াও আরো বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর পাকা তেঁতুল যা আপনি পরিমাণ মতো সেবন করলে এর উপকারিতা গুলো পাবেন অনায়াসে।
ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম
তেঁতুলের রয়েছে একাধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তবে আমরা সাধারণত তেঁতুল খাই শুধুমাত্র টক খাওয়ার জন্য। তবে তেঁতুল আমাদের শরীরের চর্বি কমাতে বেশ কার্যকর। তেঁতুলের রস আমাদের শরীরের এইচসিএ বাড়াতে সহায়তা করে। এই এইচসিএ বাড়ানোর ফলে পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমতে সহায়তা করে।
শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে তেঁতুলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ খুবই কার্যকর। আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করার পাশাপাশি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
এছাড়াও শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে ও তেঁতুল বেশ কার্যকর। আপনি যদি অতিরিক্ত চর্বি কমাতে চান তাহলে খেতে পারেন তেঁতুলের শরবত। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই তেঁতুলের কয়েকটি শরবতে রেসিপি সম্পর্কে।
তেঁতুল ও পুদিনা শরবত
উপকরণ: এক গ্লাস পানি,তেঁতুলের কাঁথ এক টেবিল চামচ পরিমাণ, চিনি অথবা মধু এক টেবিল চামচ পরিমাণ, বিট লবণ সামান্য পরিমাণ, পুদিনা পাতা ১০ থেকে ১২ টি, ১/৪ চা চামচ জিরা গুড়া, পরিমাণ মতো কয়েক টুকরা বরফ।
প্রস্তুত প্রণালী: দুইটির মতো পাকা তেঁতুল ভালো করে ধুয়ে দশ মিনিটের মত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর হাত দিয়ে চটকিয়ে ভালো করে তেঁতুলের কাঁথ বের করে নিন।পুদিনা পাতা ১০ থেকে ১২ টি ভালো করে ধুয়ে নিন।
এরপরে ব্লেন্ডারের জারে এক গ্লাস পানি ও তেঁতুলের কাঁথ এক টেবিল চামচ পরিমাণ নিন এবং চিনি অথবা মধু এক টেবিল চামচ পরিমাণ, বিট লবণ পরিমাণ মতো,১/৪ চা চামচ জিরা গুড়া ও পরিমাণ মতো কয়েক টুকরা বরফ নিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। অতঃপর একটি গ্লাসে ঢেলে উপরে কয়েকটি পুদিনা পাতা দিয়ে পরিবেশন করুন তেঁতুল ও পুদিনা শরবত।
তেঁতুল ও আদার শরবত
উপকরণ: এক গ্লাস পানি, এক টেবিল চামচ তেঁতুলের কাঁথ, এক চা চামচ আদা কুচি, হাফ চা চামচ গোল মরিচ গুঁড়া, এক চা চামচ দারুচিনির গুড়া, সাত থেকে আটটি পুদিনাপাতা।
প্রস্তুত প্রণালী: একটি তেঁতুল ভালো করে ধুয়ে দশ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর তেঁতুলটি হাতের সাহায্যে ভালো করে চটকিয়ে তেঁতুলের কাঁথ বের করে নিতে হবে।
এরপর ব্লেন্ডারের জারে এক গ্লাস পানি দিয়ে একে একে এক চা চামচ আদা কুচি, হাফ চা চামচ গোল মরিচ গুঁড়া, এক চা চামচ দারুচিনির গুড়া, সাত থেকে আটটি পুদিনাপাতা দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে একটি গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করতে পারেন তেঁতুল ও আদার শরবত।
মেয়েদের তেঁতুল খেলে কি হয়
তেঁতুল এমন একটি মুখরোচক খাবার এই খাবারটি মেয়েরা খুবই পছন্দ করে। বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়ায় এই তেঁতুল। যেমন মুখরোচক খাবারের মধ্যে রয়েছে ফুচকা ও চটপটি। তেতুল ছাড়া যেন এই খাবারগুলো জমেই না। তবে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়, মাসিক বা সন্তান জন্মদানের সমস্যা হয়। তবে এ ধরনের ধারণা একদমই ভুল।
তেঁতুল শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। আপনি যদি নিয়মিত পরিবার মত তেঁতুল খান তাহলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমতে সহায়তা করবে। এছাড়াও তেঁতুল মুখের রুচি ফেরাতে খুবই কার্যকর। আবার অনেক সময় দেখা যায় গর্ভবতী মহিলারা অতিরিক্ত বমি করে থাকে। বমি বমি ভাব দূর করতে তেঁতুল বেশ কার্যকর।
এছাড়াও তেঁতুলের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে যা এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তবে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তেঁতুল আপনারা খালি পেটে খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। খালি পেটে তেঁতুল খাওয়ার ফলে এসিডিটির মতো সমস্যায় ভুগতে পারেন।
আর অবশ্যই চেষ্টা করবেন পরিমাণ মতো তেঁতুল খাওয়ার। অতিরিক্ত পরিমাণে যদি তেঁতুল খেয়ে ফেলেন তা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ছেলেরা তেঁতুল খেলে কি হয়
তেঁতুল সম্পর্কে অনেক প্রান্ত ধারণা রয়েছে যেমন তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়,তেঁতুল বা টক খেলে লিঙ্গ ছোট হয় বা সন্তান জন্মদানের সমস্যা হয় অনেক আগে থেকে এ ধরনের ভুল ধারণা মানুষের মনে রয়ে গেছে। তবে এই ধারণাটি পুরোপুরি ভাবে একটি ভ্রান্ত ধারণা। তেঁতুল অধিক পুষ্টিগুণে সম্পন্ন একটি ফল। তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, টারটারিক এসিড, আয়রন ও ক্যালসিয়াম।
এছাড়াও তেঁতুলে উপস্থিত বেশ কিছু এনজাইম আপনার যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও তেঁতুল খেলে ছেলেদের মুখের রুচি বাড়ে এবং তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি ছেলেদের শুক্রানুর বৃদ্ধি করে থাকে এছাড়াও ভেতরে যেসব শুক্রাণু মারা যায় সেগুলোর মৃত্যু বন্ধ করতে তেঁতুল বেশ কার্যকর।
অনেক সময় দেখা যায় শুক্রানুর অভাবের জন্য পুরুষরা সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম হয়ে থাকে। তাই যদি আপনি নিয়মিত পরিমাণমতো তেঁতুল খান তাহলে ভিটামিন সি এর ফলে শুক্রাণু বৃদ্ধি পাবে। তবে অবশ্যই তেঁতুল খাওয়ার সময় পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে তেঁতুল খেয়ে ফেলেন তা আপনার শরীরের জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। আর্টিকেলটি যদি আপনি পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারেন তাহলে জানতে পারবেন তেঁতুলের আরো উপকারিতা সম্পর্কে।
তেঁতুলের উপকারিতা
বেশ জনপ্রিয় ফল গুলোর মধ্যে তেঁতুল অন্যতম। বিশেষ করে মেয়েরা এই তেঁতুল ফলটিকে খুবই পছন্দ করে। বেশিরভাগ তেঁতুল ফল টক স্বাদের জন্য সুপরিচিত তবে কিছু কিছু তেঁতুল মিষ্টিও পাওয়া যায়। তেঁতুলে রয়েছে বেশ কিছু পুষ্টিগুণ। প্রাচীনকাল থেকেই তেঁতুল বিভিন্ন ওষুধই গুণের জন্য সুপরিচিত। বিভিন্ন ভেষজ চিকিৎসায় তেঁতুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে অনেক আগে থেকে।
তবে বর্তমান সময়ে তেঁতুল ত্বক ও চুলের যত্নেও ব্যবহার হচ্ছে। তেঁতুলে থাকা এএইচএ অ্যাসিড ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই তেঁতুলের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
ওজন কমাতে কার্যকর
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে তেঁতুল বেশ কার্যকর। এছাড়াও তেঁতুল আমাদের দেহের খারাপ কোলেস্টরেল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলে আমাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন হৃদরোগ, লিভারের সমস্যা এবং কিডনির বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে তেঁতুল খুবই ভালো ভূমিকা রাখে।
লিভারের সমস্যায় কার্যকর
লিভারের লিপিড সামগ্রী গুলোকে ফ্রি র্যাডিকাল আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে তেঁতুলে থাকা ভিটামিন ই এবং সেলোনিয়াম বেশ কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে লিভারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস পেতে তেঁতুলের নির্যাস গ্রহণ বেশ উপকারী।
তেঁতুলে থাকা প্রোকিয়ানিডিন গুলো লিভারের ফ্রি র্যাডিকাল ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। তেঁতুলে থাকা খনিজ পদার্থ শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে বেশ কার্যকর।
ক্ষত সারাতে কার্যকর
যেকোনো ক্ষত সারাতে তেঁতুলের পাতা ও ছাল খুবই কার্যকর। কারণ তেঁতুল গাছের পাতা ও ছালে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান।
হজম শক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
আমাদের অন্ত্রের গতিবিধি সহজ করতে তেঁতুল বেশ কার্যকর। তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তেঁতুল নিয়মিত খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তেঁতুলের অনেক গুনাগুণ রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে তেঁতুল কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে টারটারিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড। এছাড়াও তেঁতুলের মূল এবং ছালের নির্যাস কার্যকর ভাবে ডায়রিয়াজনিত পেট ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
ক্যান্সার রোধ করতে সহায়তা করে
তেতুলে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তেতুলে থাকা এনটিঅক্সিডেন্ট কিডনি ফেলিওর এবং ক্যান্সার রোধ করতে দারুণ ভাবে কাজ করে।
সর্দি কাশি সারাতে সাহায্য করে
তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।এছাড়াও তেঁতুলে রযেছে অ্যান্টিহিস্টামিনিক প্রপার্টিজ।অ্যান্টিহিস্টামিনিক প্রপার্টিজ শরীরে এলার্জি হতে বাধা দেয় যার ফলে সর্দি কাশি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।
চোখ ভালো রাখতে সহায়ক
প্রাচীনকাল থেকে চোখ সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় তেঁতুল ব্যবহার করা হতো। বর্তমান সময়েও তেঁতুল চোখের ড্রপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।তেঁতুল কনজেক্টিভাইটিসের চিকিৎসায় সহায়তা করে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর
তেঁতুল শরীরের কার্বোহাইড্রেট শোষণে সহায়তা করে এছাড়া তেঁতুলের পাল্পে রয়েছে কার্ব -ব্লকিং বৈশিষ্ট্য। রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমায় বলে ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য তেঁতুল বেশ কার্যকরী। অগ্ন্যাশয়কে প্রদাহ জনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে তেঁতুল বেশ কার্যকর। কারণ তেঁতুলে রয়েছে অ্যান্টি- ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
তেঁতুল খুবই হার্ট ফ্রেন্ডলি।এছাড়াও তেঁতুল উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ। শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে তেঁতুল। আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টরেল বা এলডিএল কমাতে বেশ কার্যকর এই ফলটি। যার কারণে আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে
ত্বকের উজ্জ্বলতায় তেঁতুল বেশ কার্যকর। তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের ক্ষতিকারক ইউ ভি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে থাকে। তেঁতুল অ্যাকনে সমস্যার জন্য বেশ কার্যকর। ত্বকের এক্সফলিয়েশন করতে সহায়তা করে তেঁতুলে উপস্থিত হাইড্রোক্সি এসিড। যার ফলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয় এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।
চুলের যত্নে তেঁতুলের ব্যবহার
চুলকে প্রাকৃতিক-ভাবে উজ্জ্বল করতে তেঁতুল বেশ উপকারী। তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি চুলকে ক্ষতিকারক ইউপি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। মাথার ত্বকে তেঁতুলের পাল্প লাগালে চুল শক্তিশালী করতে সহায়তা করে এবং মাথার ত্বকের ফলিকলের বৃদ্ধি ঘটায়।
তেঁতুলের অপকারিতা
আমরা এতক্ষণ জানলাম তেতুলের উপকারিতা সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো তেঁতুলের কিছু অপকারিতা সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই তেতুলের অপকারিতা কি কি।
তেঁতুল হাইপোগ্লাইসেমিয়া কারণ হতে পারে
তেঁতুলে থাকা প্রচুর পরিমাণে টারটারিক অ্যাসিড শরীরের কার্বোহাইড্রেট ভাঙ্গনকে ধীড় করে দিতে পারে এবং রক্তের চিনির মাত্রা কমিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিকস রোগীদের ক্ষেত্রে তেঁতুল খাওয়ার সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ ডায়াবেটিকস রোগীরা চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে ঔষধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করে থাকে।
এর মধ্যে তেঁতুল খেলে রক্তের চিনির মাত্রা আরও কমে যেতে পারে।যা একজন ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে বিপদজনক হতে পারে। ডায়াবেটিকস রোগীদের ক্ষেত্রে তেঁতুল খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে। এর অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে শরীরের গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
তেঁতুল দাঁতের এনামেল নষ্ট করতে পারে
দাঁতের বাইরের শক্ত আবরণকে দাঁতের এনামেল বলা হয়। এই এনামেল আমাদের দাঁতকে ক্ষয় এবং ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। তেঁতুলে থাকা প্রচুর পরিমাণে টারটারিক অ্যাসিড যা আমাদের দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করতে পারে।
তাই তেঁতুল খাওয়ার পরে অবশ্যই দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।নয়তো টারটারিক অ্যাসিড দাঁতের এনামেলকে আক্রমণ করে নষ্ট করে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছাড়াও দাঁতের ক্ষয়, হলুদ দাঁত এবং অন্যান্য দাঁতের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গর্ভাবস্থায় তেঁতুলের ক্ষতিকর দিক
তেঁতুল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে গর্ভবতী মা ও স্তন্য-দানকারী মায়েদের। কারণ তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে টারটারিক অ্যাসিড যা জরায়ু সংকোচন ঘটাতে পারে। প্রসব পূর্ব জটিলতা বা গর্ভপাত ঘটানোর মতো কারন হতে পারে তেঁতুল।
অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন কমে
তেঁতুলের এসিড ক্ষুধা কমাতে সহায়তা করে থাকে। যার ফলে শরীরের ওজন হ্রাস করে। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে তেঁতুল খান তাহলে শরীরের ওজন দ্রুত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি
যারা অতিরিক্ত পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের এলার্জিজনিত সমস্যায় ভোগেন তারা তেঁতুল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ তেঁতুল এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
লো প্রেশার
তেঁতুলে থাকা অ্যাসিড শরীরের রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। যার ফলে হাইপার টেনশনের মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
উপরে উল্লেখিত তেঁতুলের ক্ষতিকর দিক ছাড়াও আরো ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
তেঁতুলের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
তেঁতুলের বীজ ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করতে বেশ কার্যকর। এছাড়াও রক্তের চিনির মাত্রাও ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তেঁতুলের বীজে উপস্থিত এক ধরনের এনজাইম যার নাম alpha-amylase রক্তের চিনির মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।বেশিরভাগ সময় দেখা যায় পেপটিক আলসার আমাদের পেটে এবং ক্ষুদ্রান্তে হয়ে থাকে। যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক।
বিভিন্ন রিসার্চে দেখা গেছে, তেঁতুলের বীজের গুঁড়ো নিয়মিত যদি খান তাহলে পেট্রি আলসার সেরে যাওয়া সম্ভাবনা অনেক বেশি। আসল কথা হল তেঁতুলে থাকা পলিফেনলিক কম্পাউন্ড আলসার সারাতে সহায়তা করে। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই তেঁতুলের বিচির বেশ কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
তেঁতুলের বিচি উপকারিতা সমূহঃ
- উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- তেঁতুলের বিচি দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
- বিভিন্ন কারণে শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে অধিক কার্যকরী।
- গর্ভাবস্থায় যদি অতিরিক্ত বমির সমস্যা থেকে থাকে। তাহলে এই সমস্যা দূর করতে তেঁতুলের বিচি খেতে পারেন।
- পুরুষদের যাদের ঘনঘন স্বপ্নদোষ হয় তেঁতুলের বিচি এই সমস্যা সমাধান করতে পারে।
- মশার কয়েল তৈরি করতে ও তেঁতুলের বিচি ব্যবহার করা হয়।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করতে তেঁতুলের বীজ ব্যবহার করা হয়।
তেঁতুলের বিচি বিভিন্ন চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উপরে উল্লেখিত উপকারিতা ছাড়াও তেঁতুলের বিথি আরো বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে।
তেঁতুলের বিচির অপকারিতা সমূহঃ
- যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে তারা তেতুলের বিচি এড়িয়ে চলবেন।
- তেঁতুলের বিচি বেশি সেবন করলে শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে।
- এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে তেঁতুলের বিচি খেলে জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আপনারা যারা তেঁতুলের বিচি সেবন করবেন অবশ্যই এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে তারপর সেবন করবেন। কারণ অনেক সময় দেখা যায় উপকারিতার জন্য সেবন করে পরবর্তীতে এর অপকারিতা গুলো আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই অবশ্যই তেঁতুলের বিচি সেবন করার সময় অপকারিতা গুলো বিবেচনা করে সেবন করবেন।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটি পড়ে আপনি হয়তো জানতে পেরেছেন তেঁতুল আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। আমি আপনাদের সুবিধার জন্য জানানোর চেষ্টা করেছি তেঁতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা, ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম ও তেঁতুলের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার মন্তব্য কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ভালো লাগলে ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখবেন এবং কোন কিছু জানতে বা বুঝতে না পারলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
এছাড়াও আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url