থাইরয়েড রোগীর খাবার তালিকা - থাইরয়েড রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
অটিজম শিশু সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো থাইরয়েড রোগীর খাবার তালিকা-থাইরয়েড রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে অনেক খোঁজাখুঁজি করছেন। কিন্তু সঠিক কোন তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। আজ আমি আপনাকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে থাইরয়েড রোগে সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আর্টিকেলটিতে হাইপো থাইরয়েডিজম ও হাইপার থাইরয়েডিজম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এছাড়াও থাইরয়েড সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
ভূমিকা
থাইরয়েড এখন একটি কমন টপিক ।আপনারা সবাই জানেন থাইরয়েডের সমস্যাটা বর্তমানে প্রায় সকল ঘরে ঘরেই রয়েছে। বর্তমান সময়ে প্রত্যেকের বাড়িতেই থাইরয়েডের রোগী রয়েছে। থাইরয়েডের ওষুধ খায় না এমন বাড়ি খুব কম দেখা যায়। থাইরয়েড হল একটি গ্ল্যান্ড, যা আমাদের গলায় থাকে থাইরয়েড গ্রন্থি।
এই গ্ল্যান্ড থেকে যে হরমোন বেরোয় সেটাকে বলে চলতি ভাষায় থাইরক্সিন। থাইরক্সিন হরমোনের শরীরে নানা ধরনের কাজ আছে, কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজমে, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, এছাড়া গ্রোথ ডেভেলপমেন্ট, নার্ভ ডেভেলপমেন্ট , হার্টের সংকোচন প্রসারণ এর ক্ষেত্রে কাজ করে ইত্যাদি। থাইরয়েড বডিতে নানাবিধ মেটাবলিক এবং অন্যান্য কাজ আছে।
থাইরয়েড রোগ কি
থাইরয়েড রোগটি হলো একটি হরমোন জনিত রোগ। আমাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন গ্রন্থি রয়েছে সেসব গ্রন্থি থেকে গ্রন্থি রস বা হরমোন নিষ্কৃত হয়, ঠিক তেমনি একটি গ্রন্থি হল থাইরয়েড গ্ল্যান্ড। সেটি গলার সামনের দিকে থাকে প্রজাপতির মতো একটি গ্ল্যান্ড এবং এই গ্ল্যান্ড থেকে এক ধরনের হরমোন বা গ্রন্থি রস বের হয়।
আরো পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়
যেটা রক্তের মাধ্যমে যে শরীরের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করে। থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা বলতে আমরা যেটা বুঝি তা হল থাইরয়েড কমে গেল, নাকি বেড়ে গেল। এই থাইরয়েড হরমোনটা যদি সঠিক মাত্রায় না থাকে সেটা যদি কমে যায় বা বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে থাইরয়েডের রোগ দেখা দেয়।
থাইরয়েড রোগের লক্ষণ
গলার দুই পাশে থাকা একটি বিশেষ গ্রন্থির নাম হলো থাইরয়েড। এই গ্রন্থির কাজ হল অত্যাবশ্য কিভাবে হরমোন উৎপাদন করা। মানুষের শরীরের জন্য থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্র আছে। নির্দিষ্ট পরিমাণের তুলনায় কম বা বেশি হরমোন উৎপাদন হলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
থাইরয়েড হরমোন উৎপন্ন কম হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিসম। এবং থাইরয়েড হরমোন উৎপন্ন বেশি হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিসম ।
হাইপোথাইরয়েডিসম বা থাইরয়েড কম হলে কি হয়
হাইপো থাইরয়েটিসম বা থাইরয়েড কমে গেলে যে সমস্যাগুলো লক্ষ্য করা যায় তা হল অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া, শরীর ক্লান্ত লাগা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা, শীত বেশি লাগা এবং অনিয়মিত মাসিক, বন্ধ্যাত্ব এই ধরনের সমস্যাগুলো হাইপোথাইরয়েডিসম রোগীদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
এইসব লক্ষণগুলো যদি আপনি আপনার মধ্যে খেয়াল করেন তাহলে অবশ্যই একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নিবেন।
হাইপারথাইরয়েডিসম বা থাইরয়েড বেশি হলে কি হয়
হাইপারথাইরয়েডিসম বা থাইরয়েড বেশি হলে যে সমস্যাগুলো লক্ষ্য করা যায় তাহলে অস্থির লাগা বা বুক ধরফর করা, হাতের তালু সহ অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, ঘনঘন পায়খানা হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, মাসিক অনিয়ত হয়ে যাওয়া এবং চোখ বাইরের দিকে বের হয়ে আসার উপক্রম এ ধরনের সমস্যাগুলো হাইপার থাইরয়েডিসম রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার
আপনার শরীরে এসব লক্ষণগুলো থাকলে অবশ্যই একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করবেন।
থাইরয়েড হলে কি খাবেন আর কি খাবেন না
থাইরয়েডের সমস্যায় যে সকল খাবার খাওয়া যাবে না তাহলো
সয়াবিন কারণ সয়াবিনে থাকা আইসোফ্লোবিন থাইরয়েডের সমস্যার কারণ হতে পারে।
ব্রকলি এবং ফুলকপি যাদের থাইরয়েডের সমস্যা আছে তারা ব্রকলি এবং ফুলকপি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ ব্রকলি ও ফুলকপিতে থাকা ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আপনার থাইরয়েডের সমস্যা কে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
পাউরুটি ও পাস্তা জাতীয় খাবার। থাইরয়েডের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা পাউরুটি ও পাস্তা জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকবেন। কারণ পাউরুটি পাস্তা জাতীয় খাবারের রয়েছে গ্লটেন নামক প্রোটিন যা ক্ষুদ্রান্তের সমস্যার কারণ হতে পারে এছাড়া থাইরয়েড হরমোনের রিপ্লেসমেন্ট মেডিসিনের শোষণে বাধা দেয়।
মিষ্টি জাতীয় খাবার, আপনার যদি থাইরয়েডের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে মিষ্টি জাতীয় খাবার একদম খাওয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ থাইরয়েডের সমস্যা আপনার শরীরে মেটাবলিজমের হার কমিয়ে দেয়। ফলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
প্যাকেট জাতীয় খাবার প্যাকেট জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ প্রিজারভেটিভ রয়েছে আর প্রিজারভেটিভ মানেই হল সোডিয়াম। থাইরয়েডের সমস্যার ক্ষেত্রে সোডিয়াম খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। বেশি পরিমাণে সোডিয়াম খাওয়ার ফলে হাই ব্লাড প্রেসার এর সমস্যাটা বারতে পারে। যা আপনার থাইরয়েডের সমস্যা কে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে এ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
সফট ড্রিমস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন থাইরয়েডের সমস্যা।
থাইরয়েড সমস্যা যেসকল খাবার খাওয়া ভালো
টক দই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তা আমাদের সকলেরই জানা।দইয়ে থাকা ভিটামিন ডি যা আমাদের হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডির অভাব হলে শরীরে অন্য সমস্যার পাশাপাশি থাইরয়েডের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে দিনে ৫০ গ্রাম টক দই খেতে পারেন।
ডিম থাইরয়েড সমস্যা মোকাবেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তারা অনায়াসে ডিম খেতে পারে। তবে সিদ্ধ ডিম খাওয়া উচিত ভাজা ডিম নয়।
মাছ যেকোনো ধরনের ছোট মাছ খাওয়া উচিত থাইরয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের। বিশেষ করে সেলমন মাছ বেশি উপকারী হয়ে থাকে থাইরয়েডের সমস্যার জন্য। আমাদের দেশে সালমান মাছ খুব বেশি একটা পাওয়া যায় না সে ক্ষেত্রে আপনি যেকোনো ধরনের ছোট মাছ খেতে পারে।
নারকেল নারকেল বা নারকেলের দুধ অনেকদিন আগে থেকেই থাইরয়েডের কার্যকরী উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি থাইরয়েড গ্রন্থিকে কার্য করে রাখে এবং সঠিক মাত্রায় হরমোন খরণ করতে সাহায্য করে থাকে।
লালচান লাল চালে থাকে কার্বোহাইড্রেট যা থাইরয়েডের সমস্যা মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে অনেক সময় ঠিকমতো খাবার হজম হয় না। লাল চাল খুব সহজে হজম হয় পাশাপাশি হজমের সমস্যা কমায়।
প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা
প্রেগন্যান্ট মহিলাদের ক্ষেত্রে থাইরয়েড মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। গর্ভধারণের শুরুতেই থাইরয়েড পরীক্ষা করে নেওয়াট উচিত। উন্নত দেশগুলোতে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের ক্ষেত্রে থাইরয়েড পরীক্ষা করাটা বাধ্যতামূলক। একটা সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে হলে অবশ্যই থাইরয়েডের উপযুক্ত চিকিৎসা করা উচিত।
দেরিতে গর্ভধারণ হলে বা গর্ভের বাচ্চা বারবার নষ্ট হয়ে গেলে অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা করাটা জরুরী। কেননা গর্ভকালে থাইরয়েডের সামান্য ঘাটতি বাঁচার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ সহ নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা অতিরিক্ত থাকলে পরবর্তীতে শিশু শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে পারে।
যা একজন মায়ের সারা জীবনের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রেগনেন্সির শুরু থেকে থাইরয়েড হরমোন ঠিক আছে কিনা সে বিষয়ে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা জরুরী। এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী থাইরয়েড হরমোনের রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ওষুধ সেবন করা জরুরী বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে।
থাইরয়েড রোগের প্রতিকার
থাইরয়েড রোগ থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারে। বিশেষ করে খাবার, আয়োডিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার থাইরয়েডের রোগীর জন্য খাওয়া অনেক বেশি উপকারী। দুধ, দই, পনির এ ধরনের দূর্যয় জাতীয় খাবারে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ বিদ্যমান থাকে যা থাইরয়েড সমস্যা জন্য উপকারী।
এবং ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী আয়োডিনের বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় যেগুলো থাইরয়েড এর রোগের জন্য উপকারী। আয়োডিনের অভাবে আমাদের শরীরে বিশেষ করে থাইরয়েডের সমস্যাটা দেখা দেয়। যে ধরনের খাবারে আয়োডিন থাকে সে ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। এবং ভিটামিন ডি থাইরয়েড রোগের জন্য অনেক বেশি জরুরী।
দিনে অন্তত ১৫ মিনিট রোদে দাঁড়াতে পারেন। কারণ রোদ থেকে আমরা ভিটামিন ডি পাই এছাড়াও ভিটামিন ডি থাকে এমন খাবার খেতে পারেন যেমন সালমান ফিস, ডিম, দুধ জাতীয় খাবার, ডিমের কুসুম, কমলা ইত্যাদি। নিয়মিত আদা চা খেলেও থাইরয়েডের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ আদায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে।
থাইরয়েড সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপার থাইরয়েডিজম। আপনার কোন সমস্যাটি হয়েছে সেটা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জেনে নিবেন। এবং সে অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট করবে। সাপ্লিমেন্টের পাশাপাশি খাবারের প্রতিও নজর দিবেন তাহলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
শেষ কথা
অনেকদিন আগে থেকেই বাংলাদেশ থাইরয়েডের রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক হসপিটাল রয়েছে যেখানে থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। থাইরয়েড রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি ঔষধ সেবন করতে হয়। তাই ভালো একজন থাইরয়েড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করবে।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url