স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার প্রাকৃতিক উপায়
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক। বিস্তারিত তথ্য জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার পাশাপাশি বেশ কিছু ইম্পোর্টেন্ট পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
ভূমিকা
ফর্সা ত্বক কে না চায়। অনেকে তো ত্বক কে ফর্সা করার জন্য বাজার থেকে বিভিন্ন কেমিক্যাল জাতীয় প্রোডাক্ট কিনে ব্যবহার করে। এতে ক্ষনিকের জন্য ত্বক ফর্সা হলেও দীর্ঘমেয়াদী ত্বকের ক্ষতি করে বসে। এক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা অনেক শ্রেয়।
প্রাকৃতিকভাবে যদি আপনি আপনার ত্বকের ধরন বুঝে ত্বকের যত্ন নেন তাহলে স্থায়ীভাবে আপনার ত্বককে প্রাকৃতিক উপায়ে ফরসা করে নিতে পারবেন। যদিও প্রাকৃতিক উপায় ফর্সা হতে গেলে অনেকটা সময়ের ব্যাপার তবে ধৈর্য হারা না হয়ে এই পথটাই বেছে নেওয়া উচিত।
শ্যামলা ত্বক ফর্সা করার উপায়
যাদের গায়ের রং শ্যামলা বর্ণের তারা চায় ফর্সা হতে। আপনারা যারা শ্যামলা বর্ণ থেকে ফর্সা হতে চান তাদের জন্য বলছি কিছু নিয়ম ফলো করলে অবশ্যই আপনারা শ্যামলা গায়ের রং থেকে ফর্সা গায়ের রঙে রূপান্তরিত করতে পারবেন। বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে যা আপনাকে শ্যামলা ত্বক থেকে ফর্সা ত্বকের অধিকারী করতে পারে।
- খুবই অল্প সময়ে আপনার ত্বকে ফর্সা করতে যে উপাদান গুলো ব্যবহার করতে পারেন চলুন জেনে নেই। পরিমাণ মতো বা এক চামচ বেসন , এক টেবিল চামচ লেবুর রস, সামান্য পরিমাণ হলুদ ও পরিমাণ মতো গোলাপজল মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর আপনার পরিষ্কার মুখ, গলা ও হাতে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এরপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে যদি আপনি সাত দিন ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনি নিজেই লক্ষ্য করবেন আপনার ত্বক আগের থেকে অনেকটা উজ্জ্বল ও ফর্সা দেখাবে।
- মধু অনেক উপকারী একটি উপাদান। শুধুমাত্র মধু আপনার ত্বকে এপ্লাই করে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর নরমাল পানি দিয়ে আপনার ত্বক দিয়ে ফেলেন। এই প্রক্রিয়াটা মাসে এক থেকে দুইবার করতে পারেন। এর ফলে আপনার টক অনেকটা উজ্জ্বল হবে।
- পেঁপে যখন আমরা খাই সেটা আমাদের বডি সিস্টেমের জন্য খুবই উপকারী। পেঁপে খাওয়ার পাশাপাশি আমাদের ত্বকেও লাগাতে পারি। এক টুকরো পেঁপে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এতেও আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী।
ভেতর থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়
আমরা সবাই চাই অন্যদের মাঝে নিজেকে সুন্দর দেখাতে। তবে অনেকের ত্বক কালো বা শ্যামলা হওয়ার কারণে আক্ষেপ থেকে যায়। যার জন্য বাজার থেকে ত্বক ফর্সাকারী বিভিন্ন ক্রিম কিনে ব্যবহার করে। কিন্তু আসলে সত্যি কি স্থায়ীভাবে এসব ক্রিমে ত্বক ফর্সা হয়?
প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে আয়ুর্বেদে রয়েছে এমন অনেক পদ্ধতি যেগুলো গায়ের রং ফর্সা করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। ঘরোয়া ভাবে ভেতর থেকে ত্বক ফর্সা করার উপায় চলুন জেনে নেই।
উপকরণঃ তিন টেবিল চামচ দুধ, এক চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, এক টেবিল চামচ লেবুর রস।
প্রস্তুত প্রণালীঃ দুধ, লেবুর রস ও হলুদ বাটা ভালোভাবে মিশিয়ে মিশন বা প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি আপনার সমস্ত মুখে লাগিয়ে নিন। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সতর্কতা হল গরম পানিতে মুখ ধুবেন না, অন্তত ১২ ঘণ্টা রোদে যাবেন না। তাই এই প্যাকটি আপনি রাত্রে ব্যবহার করুন।
যুগ যুগ ধরে রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস উষ্ণ গরম দুধে আধা চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে নিয়মিত পান করুন। এভাবে যদি পান করতে না পারেন তাহলে একটু মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। নিয়মিত হলুদ মেশানো দুধ পান করলে প্রাকৃতিক ভাবে আপনার গায়ের রং হয়ে উঠবে ভেতর থেকে উজ্জ্বল ও ফর্সা।
ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া উপায়
ত্বক ফর্সা করার বেশ কয়েকটি ঘরোয়া উপায় রয়েছে। তবে আজ আমি ত্বক ফর্সা করার পাঁচটি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি ঘরোয়া উপায়ে ত্বক ফর্সা করতে পারেন।
আলুর খোসাঃত্বক ফর্সা করতে আলুর খোসার ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের রান্নার কাজে প্রতিনিয়ত আলু ব্যবহার হয়। আলো কাটার সময় যদি আপনি খোসাটা আলাদা করে সরিয়ে রাখেন এবং প্রতিদিন সেই খোসা পেস্ট করে আপনার ত্বকে লাগাতে পারেন তাহলে আপনার ত্বক দেখাবে উজ্জ্বল আর ফ্রেশ।
লেবুর রসের মতো আলুর খোসায় ও রয়েছে ব্লিচিং উপাদান। সব ধরনের ত্বকেই আলুর খোসার প্যাক ব্যবহার করতে পারবেন।
বেসন ফেস প্যাকঃ বেসন আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। একটা চামচ বেসনের সাথে কিছুটা বাটার মিল্ক মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন। প্যাকটি শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তবে যাদের তৈলাক্ত ত্বক তারা এই ব্যক্তি ব্যবহার করবেন না।
কলার ফেসপ্যাকঃ কলা সাধারণত আমাদের সকলের ঘরে কমবেশি থাকে। কলা যে আমাদের ত্বকের জন্য কতটা উপকারী সেটা হয়তো অনেকেরই অজানা। অর্ধেকটা পাকা কলা চটকে তার সাথে হাফ চা চামচ মধু, এক চা চামচ টক দই একসাথে মিশিয়ে একটা প্যাক তৈরি করে নিন। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
শুখিয়ে এলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি আপনার ত্বকের রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করবে এবং আপনার ত্বককে করবে উজ্জ্বল। সব ধরনের ত্বকেই এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারবেন।
গুড়া দুধ ও লেবুর রসের ফেসপ্যাকঃ এক চা চামচ গুড়া দুধের সাথে 2 টেবিল চামচ লেবুর রস ও হাফ চা চামচ মধু মিশিয়ে একটু প্যাক তৈরি করে নিন। আপনার ত্বকে প্যাকটি 15 মিনিট লাগিয়ে রেখে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সব ধরনের ত্বকের জন্যই ব্যবহারযোগ্য।
এই প্যাকটি যদি আপনি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার ত্বক পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
টমেটো ও হলুদের ফেসপ্যাকঃ টমেটো ও হলুদ এই দুইটি উপাদানই আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এই দুইটি উপাদানই আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। পরিমাণ মতো টমেটো পেস্ট সাথে সামান্য একটু হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে আপনার তকে এপ্লাই করতে পারেন।
কিছুক্ষণ রাখার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টমেটো ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বকের দাগ দূর হবে এবং হলুদ আপনার ত্বককে ফর্সা করতে সাহায্য করবে। নিয়মিত এই প্যাকটি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার প্রাকৃতিক উপায়
যাদের ত্বক একটু কালো বা শ্যামল বর্ণের তারা ত্বককে উজ্জ্বল বা ফর্সা করতে বিভিন্ন ধরনের ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করে থাকে। তবে এই ধরনের ক্রিম সাময়িকভাবে ত্বক ফর্সা করলেও দীর্ঘমেয়াদী ত্বকের ক্ষতিসাধন করে থাকে। এর ফলে মারাত্মক রোগের ঝুঁকি গুলো বেড়ে যায়।
তবে কিছু কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করলে আপনার ত্বক স্থায়ীভাবে ফর্সা করে তুলতে পারবেন। আমাদের প্রকৃতি থেকে যে সকল উপাদান গুলো আমরা সংগ্রহ করি এর মধ্যে স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সাকারী ফেসপ্যাক এর জন্য যে সকল উপাদান গুলো লাগবে তা হল দুধ, লেবুর রস ও মধু।
ফেস প্যাকঃ এক টেবিল চামচ দুধ, এক চা চামচ লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। প্যাকটি আপনার পরিষ্কার ত্বকে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মতো লাগিয়ে রাখুন।প্যাকটি শুকিয়ে এলে কুসুম গরম পানি দিয়ে আপনার ত্বকটি ধুয়ে নিন। এরপর একটি ভাল ব্র্যান্ডের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
ফেসপ্যাক টি ব্যবহারের উপকারিতাঃ এই প্যাকটি ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বক স্থায়ীভাবে ফর্সা করতে সাহায্য করবে। লেবুর রসে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের কালো দাগছোপ দূর করতে সহায়তা করে। মধু তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিসেপটিক ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হওয়া মুখের ব্রণ দূর করতে সহায়তা করে। ত্বকের লোমকূপ উন্মুক্ত করে।
বিরক্তিকর ব্ল্যাকহেড এবং হোয়াইটহেড দূর করে। দুধে থাকা ভিটামিন ডি ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। দুধ ত্বকের প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজারের কাজ করে। দুধের সর ত্বকে মালিশ করলে ত্বকের ভিতর প্রবেশ করে ক্ষতিগ্রস্ত কোষের ক্ষয় পূরণ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
কোন ফল খেলে ত্বক ফর্সা হয়
সব ধরনের ফলে আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যের সাথে সাথে আমাদের ত্বককেও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক যে সকল ফল আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। লেবু, মোসাম্বি, জাম্বুরা, কমলা, মাল্টা এ ধরনের ভিটামিন সি যুক্ত ফল আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির করতে দারুন কার্যকর।
এ ধরনের ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনস এগুলো ত্বকের প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে হাইড্রেট রাখে। মেস্তা জাতীয় সমস্যা দূর করে উজ্জ্বল করে তুলতে এ জাতীয় ফল বেশ ভালো কাজ করে।
কোন খাবার খেলে ত্বক ফর্সা হয়
উজ্জ্বল ও চকচকে ত্বক পেতে হলে ত্বকের যত্নের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে অবশ্যই খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। আজেবাজে আনহাইজেনিক খাবার না খেয়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন হল পানি। ত্বক ভালো রাখতে বেশি করে পানি পান করা প্রয়োজন।
টমেটো ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন সি, ই এবং বিটা ক্যারোটিন। যা আপনার ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে এবং সহজে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। এছাড়াও বেশ কিছু পুষ্টিকর খাবার রয়েছে যেগুলো আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে এবং ত্বককে ফর্সা করতে সহায়তা করে ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত খাবার সম্পর্কে শসা, বিভিন্ন ধরনের মাছ, বিভিন্ন ধরনের ফল, গ্রিন টি, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ডার্ক চকলেট ইত্যাদি। এ ধরনের খাবার খেলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনার ত্বক ও স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকবে।
শেষ কথা
বাজারের কেমিক্যাল যুক্ত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার না করে ।বাড়িতে থাকা বিভিন্ন উপাদান দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে আপনার ফেইসে এপ্লাই করতে পারেন। এতে আপনার ত্বকের কোন ক্ষতি হবে না এবং ধীরে ধীরে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url