তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন - তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
চিকিৎসা সেবা ক্যাটাগরির পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন - তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব তুলসী পাতার কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃআর্টিকেলটিতে তুলসী পাতা বেশ কিছু উপকারী দিক বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়লে আপনি উপকৃত হবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই তুলসী পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন - ভূমিকা
বিশেষজ্ঞদের মতে তুলসী পাতার গুনাগুন বলে শেষ করার মত নয়। সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন একটি করে তুলসী পাতা খান। বাসার বেলকনিতে অথবা আলো বাতাস জড়িত যে কোন জায়গায় তুলসী গাছ লাগিয়ে রাখতে পারেন। শিশু থেকে শুরু করে যে কোন বয়সের মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে তুলসী পাতার জুড়ি মেলা ভার।
সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৮ প্রজাতির তুলসী পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতে প্রধানত তিন ধরনের তুলসী পাওয়া যায়। তুলসী পাতার বৈজ্ঞানিক নাম হল Ocimum Sanctum. তুলসী পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও আন্টি ইনফ্লামেটরি প্রপার্টি।
এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টি বলতে তুলসীর মধ্যে রয়েছে কারভোক্রল এবং টারপেন। এছাড়াও তুলসী পাতাতে রয়েছে রোজ ম্যারিনিক এসিডের মতো এন্টি ইনফ্লামেটরি প্রপার্টি।
তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
তুলসী পাতা চিবিয়ে খাবেন নাকি রস করে খাবেন এই নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মত বিরোধ। চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত তুলসী গাছ। তুলসী পাতা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ক হিসেবে কাজ করে।
বিভিন্ন আয়ুর্বেদ ও ঐতিহ্যগত ওষুধ তত্ত্ব অনুসারে তুলসী পাতা তিতা ও কষাটে স্বাদ প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমাদের শ্বাসতন্ত্র সতেজ রাখতে তুলসী পাতার তেল বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও তুলসী পাতা দিয়ে তৈরি চা কফ, বুকের ব্যথা, জ্বর সারাতে কাজ করে।
পাকস্থলী সজীব রাখতে সকালে ঘুম থেকে উঠে দুই থেকে তিনটা তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। তুলসী পাতা মানবদেহের রক্তের সংশোধক হিসেবে কাজ করে। দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যপ্রক্রিয়া সক্রিয় রাখার পাশাপাশি দেহের বিভিন্ন বিষক্রিয়া থেকে দূরে রাখে। কোন নিয়মে তুলসী পাতা খেতে হবে, বহু গুনের এই তুলসী পাতার ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।
তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে হবে নাকি রস খেতে হবে এই নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিতর্ক রয়েছে। তুলসী পাতায় উচ্চমাত্রায় পারদ ও আয়রন রয়েছে যা তুলসী পাতার পাতা চিবানোর মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। তুলসী পাতাতে থাকা খনিজ পদার্থ দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে তুলসীতে রয়েছে হালকা এসিড এজন্য তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে মুখকে ক্ষারীয় করে তোলে।
এজন্য অনেকে তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়াকে সমর্থন করেন না। তবে নিয়মিতভাবে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে দাঁতের ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তবে আপনি চাইলে তুলসী পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী এবং খেতে সুস্বাদু হয়ে থাকে।
শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
শীতের শুরু থেকেই নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। এই সময় সর্দি, কাশি ও জ্বর থেকে শুরু করে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুরা এই ধরনের জটিলতায় বেশি ভুগে থাকেন। তাই এই সময় ছোট শিশুদের আলাদা যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে বাচ্চাদের ঘরোয়া টোটকা হিসেবে তুলসী পাতা খাওয়াতে পারেন। ছোট শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী। এ ধরনের শারীরিক জটিলতায় শিশু এবং বড় উভয়ের ক্ষেত্রে তুলসী পাতা ম্যাজিক এর মত কাজ করে। চলুন জেনে নেই শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে।
১. ১০ থেকে ১২ টি তুলসী পাতা নেবেন। পাতাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে রস বের করে নেবেন। তুলসী পাতার রসের সাথে হাফ চা চামচ মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি আপনার শিশুকে দুই বেলা খাওয়াতে পারেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন আপনার সন্তানের ঠান্ডা জনিত সমস্যা অনেকটা ভালো হয়ে গেছে।
২. আপনার শিশু যদি কাঁচা তুলসী পাতার রস না খেতে পারে।তাহলে পরিমাণ মতো তুলসী পাতা নিয়ে হাফ কাপ পানি দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর তুলসী পাতা সহ ফুটানো পানি অর্ধেক হয়ে আসলে ঠান্ডা করে হাত দিয়ে ভালোভাবে চটকে ছাকনা দিয়ে ছেঁকে নিবেন।
এরপর তুলসী পাতার পানিতে মধু মিশিয়ে আপনার সন্তানকে খাওয়াতে পারেন। এই মিশ্রণটি নিয়মিত খাওয়ালে আপনার শিশুর সর্দি কাশি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
৩. ফুটানো তুলসী পাতার রসের সাথে হাফ চা চামচ লেবুর রস ও হাফ চা চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ালেও আপনার শিশু দ্রুত সুস্থ হবে।
৪. খুসখুসে কাশি দূর করার জন্য তুলসী পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়াতে পারেন। এক্ষেত্রে হাফ চা চামচ চা ও কিছু পরিমাণ তুলসী পাতা সাথে সামান্য একটু আদা ভালো করে ফুটিয়ে কুসুম গরম থাকা অবস্থায় আপনার সন্তানকে খাওয়ান। এর ফলে আপনার সন্তানের খুসখুসে কাশি দূর হয়ে যাবে।
মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা
মধু ও তুলসী পাতার রয়েছে আলাদা আলাদা স্বাস্থ্য গুণ। এই দুইটি উপাদানকেই পৃথকভাবে বিভিন্ন রোগের নিরাময়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মধু ও তুলসী পাতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশ ভালো কাজ করে।
আমরা সাধারণত সর্দি, কাশি ও জ্বরের ক্ষেত্রে তুলসী পাতা ও মধু খুব বেশি ব্যবহার করে থাকি। চলুন জেনে নেই মধু ও তুলসী পাতা আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকারিতা রয়েছে সেই সম্পর্কে।
মধু ও তুলসী পাতাঃপ্রতিদিন সকালে যদি আপনি তুলসী পাতার সাথে মধু মিশিয়ে খান তাহলে আপনার ইমিউনিটি শক্তিকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও যে কোন রোগের আক্রমণে আপনার শরীর সহজেই আক্রান্ত হবে না।
আপনারা যারা প্রতিনিয়ত জ্বর, সর্দি কাশির মত সমস্যায় ভোগেন তারা যদি এভাবে প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতা ও মধু একসাথে খেতে পারেন তাহলে ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সহজেই জ্বর, সর্দি, কাশির মতো রোগ আপনাকে আক্রমণ করতে পারবে না। এছাড়াও নানা ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ থেকে আপনি সুস্থ থাকবেন।
মধু ও তুলসী পাতাঃআপনি যদি প্রতিনিয়ত সর্দি-জনিত সমস্যায় ভোগেন তাহলে এক গ্লাস পানিতে এক মুঠো তুলসীপাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানির সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন দুই বেলা করে খেতে পারেন। এই মিশ্রণটি প্রতিনিয়ত খাওয়ার ফলে আপনি সর্দি জনিত সমস্যা থেকে খুব দ্রুত সুস্থতা লাভ করবেন।
মধু ও তুলসী পাতাঃকাশির জন্য তুলসী ও মধু বেশ ভালো কাজ করে। এক্ষেত্রে আপনি এক চামচ মধুতে তিন থেকে চার ফোঁটা তুলসী পাতার রস দিয়ে তিন বেলা করে খাবেন। কিছুদিনের মধ্যেই আপনি এর ফলাফল দেখতে পাবেন।
মধু ও তুলসী পাতাঃযাদের প্রতিনিয়ত শরীরের জ্বর থাকে তাদের জন্য তুলসী ও মধুর বেশ ভালো কাজ করে। জ্বরের প্রকোপ কমাতে তুলসী পাতার রস ও মধুর সাথে কালো গোলমরিচের গুড়া ও সামান্য আদা একসাথে মিশিয়ে যদি খেতে পারেন তাহলে আপনার যে প্রতিনিয়ত জ্বর হতো সে সমস্যা থেকে অনেকটা উপশম পাবেন।
মধু ও তুলসী পাতাঃতুলসী পাতার মধ্যে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান থাকার ফলে বিভিন্ন এলার্জিজনিত জনিত রোগ দূর করতে সহায়তা করে। যদি আপনার এলার্জিজনিত সমস্যা থেকে থাকে যেমন হাতে পায়ে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট জড়িত সমস্যা ইত্যাদি এ ধরনের সমস্যা দূর করতে তুলসী ও মধু বেশ কার্যকরী।
এলার্জি সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন সকালে এক কাপ পানিতে কয়েকটি তুলসী পাতা ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে যদি পাতা সহ চিবিয়ে খেতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার এলার্জি সমস্যা দূর হয়ে গেছে।
মধু ও তুলসী পাতাঃকোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে তুলসী ও মধু বেশ ভালো কাজ করে। মধু ও তুলসী যদি আপনি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের যেমন LDL এর মাত্রা কমেছে এবং SDL এর মাত্রা বেড়ে গেছে।
তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন
ভেষজ গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম ঔষধি গাছ হল তুলসী গাছ। তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে আমরা খুবই সীমিত পরিমানে জানি। অনেক বছর আগে থেকে তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন নিয়ে গবেষণা হয়ে আসছে।
এখন পর্যন্ত তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন নিয়ে গবেষণা চলছে। তুলসীপাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি , জিঙ্ক এবং আয়রন। চলুন জেনে নেই কোন ধরনের রোগের ক্ষেত্রে তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন খুব ভালো কাজে দেয়।
- রক্তের সুগারের পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে
- কোলেস্টেরল কম করতে সহায়তা করে
- জয়েন্টের ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে
- পেটের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী
- ভাইরাস জনিত সর্দি, কাশি ও জ্বর দূর করতে সহায়তা করে।
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
যুগের পর যুগ আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে এমন একটি পাতার নাম হলো তুলসী পাতা। আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পাশাপাশি ঘরোয়া চিকিৎসা ও তুলসীপাতা বেশ জনপ্রিয়। তুলসী পাতা শুধু ঠান্ডা কাশি জনিত সমস্যা সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। তুলসী পাতার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন রোগের মহাসত হিসেবে কাজ করে।
তুলসী পাতা যেমন প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে আবার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানার চেষ্টা করব তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
তুলসী পাতার উপকারিতা
তুলসী পাতা চিবিয়ে খানঃআপনার যদি সাধারণ জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়ে থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে ৮ থেকে ১০ টি তুলসীপাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। কয়েকদিনের মধ্যেই দেখতে পাবেন আপনার এ ধরনের জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এছাড়াও আপনার রেসপিরেটরি সিস্টেম এর মধ্যে যে সমস্ত কফ জমে থাকে সেগুলো কেউ বের করে দিতে সাহায্য করে তুলসী পাতা।
তুলসী পাতার পানিতে গারগেলঃআবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বা শীতকাল পড়ার সাথে সাথে ঠান্ডা জনিত কারণে গলা ব্যথার মত সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিতে পরিমাণ মতো তুলসী পাতা দিয়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিট ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এরপর এই পানি দিয়ে সারা দিনে দুই থেকে তিনবার গারগেল করলে আপনি গলা ব্যথা সমস্যাটি থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি পাবেন।
তুলসী পাতার চাঃআপনি যদি প্রতিনিয়ত সর্দি, কাশি, জ্বর ও গলা ব্যথা এই সমস্ত সমস্যার ভুগে থাকেন তাহলে আপনি তুলসী পাতার চা বানিয়ে খেতে পারেন। তুলসী পাতার চা ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়াতে বেশ কার্যকরী। তুলসী পাতার চা তৈরি করতে ১০ থেকে ১৫ টি তুলসী পাতা নিয়ে দুই কাপ পানির সাথে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন।
যতক্ষণ না পর্যন্ত দুই কাপ পানি এক কাপ হয়ে আসছে। এরপর পানিটা ছেঁকে নিয়ে কুসুম গরম থাকা অবস্থায় চায়ের মত খান। এভাবে যদি আপনি কিছুদিন খেতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার ইমিউনিটি পাওয়ার অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে।
কিডনির পাথর দূর করতে তুলসী পাতাঃতুলসী পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এসিটিক অ্যাসিড। তাই আপনার যদি কিডনিতে পাথর থেকে থাকে তাহলে তুলসী পাতা সেবন করার ফলে তুলসী পাতাতে থাকা অ্যাসিটিক এসিড আপনার কিডনির পাথর অপসারণ করতে সহায়তা করবে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে আপনি যদি টানা পাঁচ থেকে ছয় মাস তুলসী পাতা খেতে পারেন তাহলে আপনার কিডনির পাথর গলতে শুরু করবে এবং ইউরিন এর সাথে বের হয়ে যাবে। তাই আপনি যদি কিডনিতে পাথরের মত সমস্যায় ভোগেন তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাসটি গড়ে তুলুন।
মাথা ব্যথায় তুলসি পাতাঃআপনার যদি প্রতিনিয়ত মাথা ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে তুলশীর চা খেতে পারে। তুলসীরটা মাথা ব্যথার জন্য বেশ উপকারী।
মানসিক চাপ দূর করতে তুলসী পাতাঃবিভিন্ন দেশে মানসিক চাপ দূর করতে তুলসী পাতাকে অসাধারণ ঔষধি হিসেবে ধরা হয়। তুলসীতে থাকা ভিটামিন সি অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে থাকে। এই সকল উপাদান গুলো নার্ভকে শান্ত রাখার পাশাপাশি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
ক্যান্সার দূর করতে তুলসী পাতাঃবিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে তুলসী পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। ক্যান্সার প্রতিরোধে তুলসী পাতা ফ্রেশ উপকারী। তুলসী পাতাতে রয়েছে রেডিও প্রটেকটিভ উপাদান যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলতে সহায়তা করে।
তুলসী পাতায় থাকা ফাইটো কেমিক্যাল যেমন রোজ ম্যারিনিক এসিড ও এপিজেনিন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকরী। অগ্নাশয় টিউমার কোষ দূর করতে তুলসী পাতা খুবই উপকারী। ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী।
চোখের সমস্যা দূর করতে তুলসী পাতাঃপুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ তুলসী পাতা চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। তুলশিতে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি চোখের চুলকানি, অঞ্জনি জাতীয় যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। ছাড়াও তুলসী পাতা দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি চোখের ছানি ও গ্লুকোমার মত চোখের রক্তে দূর করতে সহায়তা করে।
রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে তুলসী পাতাঃআপনার রক্তে যদি সুগারের মাত্রা বেশি থাকে তাহলে প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাসটি গড়ে তুলুন। নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে শুরু করে। এর সাথে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি হয় ফলে শরীরের সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোন আশঙ্কা থাকে না।
তার সাথে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের ভিতর থেকে নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে।
হার্টের রোগ দূর করতে তুলসী পাতাঃহার্টের রোগীদের জন্য তুলসী পাতা বেশ উপকার। কেননা হার্টের রোগ জন্ম দেয় হাইপারটেনশন, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল। তুলসী পাতার দ্বারা রক্ত জমাট বাধার সমস্যা দূর করা যায়। হার্টের অন্যান্য সমস্যা দূর করতে তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী।
পেটের সমস্যা দূর করতে তুলসী পাতাঃপেটের সমস্যায় তুলসী পাতা মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে। পেট ব্যথা, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী। পেটে আলসারের বিরুদ্ধেও তুলসী পাতা বেশ ভালো কাজ করে। পেটে ব্যথা দূর করতে ২০ মিলি লিটার পানিতে তুলসী পাতা দিয়ে ফুটিয়ে ১০ মিলি লিটার করে নিন। এরপর পান করুন এতে পেটের সমস্যা সমাধান হবে।
তুলসী পাতার অপকারিতা
তুলসী পাতা শরীরের জন্য বেশ উপকারী হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তুলসী পাতা শরীরের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চলুন জেনে নেয়া যাক তুলসী পাতা কিছু অপকারিতা সম্পর্কে।
- গর্ভাবস্থায় ও স্তন পান করানোর ক্ষেত্রে তুলসী পাতা বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। তবে অল্প পরিমাণে খেতে পারেন। অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসী পাতা খেলে এ সময় নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় গুলোতে তুলসী পাতা এড়িয়ে চলা উত্তম।
- নারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে হতে পারে বন্ধ্যাত্বের কারণ। তাই তুলসী পাতা পরিমিত গ্রহণ করার চেষ্টা করবেন।
- শরীরের রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে তুলসী পাতা কাজ করে। যার কারণে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা। যে কোন সার্জারির দুই সপ্তাহ আগে থেকে তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
- তুলসী পাতায় থাকা অতিরিক্ত পটাশিয়ামের কারণে কমে যেতে পারে শরীরের রক্তচাপ। তাই কারো নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো।
- এই অপকারিতার দিকগুলো খেয়াল রেখে অন্যান্য উপকারিতা পেতে তুলসী পাতা খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ঠিক না।
রূপচর্চায় তুলসী পাতার উপকারিতা
তুলসী পাতায় থাকা ভিটামিন সি, ফাইটো নিউট্রিয়ান ও এসেন্সিয়াল অয়েল খুবই ভালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে। যা আপনার বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করবে। অনেকে আবার তুলসী পাতা কে যৌবন ধরে রাখার টনিক মনে করে।
তুলসী পাতা বেটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হতে সাহায্য করে। এছাড়াও কোন অংশে যদি পুড়ে যায় তাহলে সেখানে তুলসীর রস ও নারকেল তেল গরম করে লাগালে জ্বালা কমবে এবং কোন দাগ থাকবে না।
- ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে ১০ থেকে ১৫টি তুলসী পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। তুলসী পাতার পেস্টের সাথে এলোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট রাখার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে সহায়তা করবে।
- তোর সাথে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ দূর করতে সহায়তা করে। ত্বক থেকে ব্রণ দূর করতে তুলসী পাতার রসের সাথে হলুদ মিশিয়ে মুখে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি লাগানোর ফলে দ্রুত ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
- দাগ মুক্ত ত্বক পেতে তুলসী পাতার পেস্ট তৈরি করে এক চা চামচ মধু ও একটা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে নিন। ফেসপ্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘন্টা পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বকের কালচে ভাব দূর হয়ে যাবে।
- ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে তুলসী পাতার রসের সাথে গ্লিসারিন মিশিয়ে আপনার ত্বকের মাসাজ করুন। প্রতিদিন যদি এভাবে আপনার ত্বকে মেসেজ করতে পারেন তাহলে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
- তুলসী পাতার পেস্টের সাথে মুলতানি মাটি ও নারকেল তেল মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাকটি ত্বক টানটান করার পাশাপাশি ত্বকের বলি রেখা দূর করবে।
- ত্বকের এলার্জিজনিত সমস্যা দূর করতে তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী। তুলসী পাতাতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। তুলসী পাতার পেস্ট এর সাথে টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগান ।শুকিয়ে গেলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বকের এলার্জিজনিত চুলকানি সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
চুলের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার
তুলসী পাতার আশ্চর্যজনক অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে চুলের যত্নেও তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে চুলের যত্নে তুলসী পাতা ব্যবহার করতে হয়।
- যাদের খুশকির সমস্যা ও চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে তুলসীপাতার তেল অথবা তুলসী পাতার হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে ও ভিটামিন ই পাওয়া যায় তুলসী থেকে। এছাড়াও তুলসীতে থাকা আইরন ও প্রোটিন ও চুলের যত্নে বেশ ভালো কাজ করে।
- পরিমাণ মতো নারকেল তেলে কিছু পরিমাণ তুলসী পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা হয়ে এলে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগান। এক ঘন্টা অপেক্ষা করে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বর্তমানে বিভিন্ন সুপারশপে তুলসীর তেল পাওয়া যায় ।চাইলে তুলসী তেলের সাথে নারকেল তেল মিশিয়েও লাগাতে পারেন।
- তুলসী পাতার পেস্ট তৈরি করে চুলের গোড়াতে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে শ্যাম্পু করে ফেললেও ভালো উপকার পাবেন।
- তুলসী পাতা, নিমপাত ও জবা ফুল একসাথে বেটে চুলের গোড়ায় লাগান। চুলের গোড়া মজবুত হবে ও চুল পড়া বন্ধ করতে সহায়তা করবে।
- চুলের গোড়ায় তুলসির তেল ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এবং চুল পড়া কমতে সহায়তা করে।
লেখকের মন্তব্য
আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন ও তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন এবং আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন।।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ওয়েবসাইট টি ফলো করে রাখুন এবং কোন কিছু জানতে বা বুঝতে না পারলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url