বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন
টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি জানতে ক্লিক করুনআদা মসলা জাতীয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফসল। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে যে পরিমাণ আদা চাষ হচ্ছে তা দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য খুবই নগণ্য। বর্তমান সময়ে আদার এই ঘাটতি পূরণের জন্য বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীগণ আদার কিছু উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এই জাতগুলো বস্তায় চাষ করার জন্য খুবই উপযোগী। তাই বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন।
প্রতিবছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নতুন নতুন কলকারখানা তৈরি হচ্ছে ও আবাদি জমিগুলাতে বসতবাড়ি তৈরি হওয়ার ফলে কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। এর জন্য চাষ অযোগ্য পতিত জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করা যায়। কারণ আদা ছায়াযুক্ত স্থানেও ভালো ফলন হয়। তাই আপনারা বাড়ির আশেপাশে চাষ অযোগ্য জমি না ফেলে রেখে বস্তাতে আদা চাষ করতে পারেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃবস্তাতে আদা চাষ করার পুরো প্রক্রিয়াটি এই আর্টিকেল এর নিচের অংশে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক বস্তায় আদা চাষ করার পুরো প্রক্রিয়াটি।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি-ভূমিকা
আদা অর্থকরী ফসলের মধ্যে একটি অন্যতম ফসল। রান্নার স্বাদ বাড়াতে প্রতিনিয়তই আদার ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রতিনিয়ত আদার দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে। আপনিও শুরু করতে পারেন আদা চাষ। আপনার পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য বস্তায় কোন বাড়তি খরচ ছাড়াই আদা চাষ করতে পারেন।
কিভাবে বস্তায় সঠিক নিয়মে আদা চাষ করবেন আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তা জানতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা কোন কোন বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন।বস্তায় আদা চাষ কেন করবেন,আদা বীজ কোথায় পাবো, বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি,বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে।
আর্টিকেলটি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনারা সহজেই জানতে পারবেন কিভাবে বস্তায় খুব সহজে আদা চাষ করতে পারবেন।
বস্তায় আদা চাষ কেন করবেন
গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল হলো আদা।রান্নাঘরের খুবই প্রয়োজনীয় একটি মসলার তালিকায় রয়েছে আদা। বর্তমান সময়ে দিন দিন আদার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আপনি চাইলে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন। বস্তা তে আদা চাষ করতে তেমন একটা জায়গার প্রয়োজন পড়ে না।
আপনার বাড়ির আশেপাশে ফাঁকা জায়গাতে অথবা বারান্দায় কিংবা বাড়ির ছাদে যেকোনো ছায়াযুক্ত স্থানে আপনি আদা চাষ করতে পারেন। বস্তা তে আদা চাষ করার জন্য আলাদা করে কোন জমির প্রয়োজন হয় না। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে অনেক কৃষকরা এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করছে। আবার অনেকে দেখা যাচ্ছে এই বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানেই না।
আপনি যদি বস্তায় আদা চাষ করেন তাহলে অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে যাওয়ার কোন চিন্তা থাকবে না। এ ধরনের কোন সমস্যায় পড়লে আপনি বস্তা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে পারবেন। এছাড়াও একটি ফসল উঠানোর পর ওই বস্তায় আলাদা কোন সার প্রয়োগ না করেই অন্য ফসল ফলাতে পারবেন। তাই বস্তায় আদা চাষ করার কোন খরচ নেই বললেই চলে।
কথাগুলো অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্য! আপনার হাতের কাছে থাকা সবকিছু দিয়ে খুব সহজে আপনি আদা চাষ করতে পারবেন। যেকোনো বস্তাতেই আপনি খুব সহজে আদা এবং যেকোনো সবজি চাষ করতে পারবেন। আপনি যদি বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করেন তাহলে মাটি বাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়।
বিশেষ করে বস্তা পদ্ধতিতে আপনি যে কোন ছায়া যুক্ত স্থানে আদা চাষ করতে পারবেন। সাধারণত দেখা যায় কোন গাছের তলায় বা বাঁশঝাড়ের নিচে কোন ফসল জন্মায় না। সেক্ষেত্রে আপনি যদি বস্তায় আদা রোপন করে ছায়া যুক্ত স্থানে রেখে দেন সেখানেও ভালো ফলন দিবে আদা। চলুন তাহলে এবার জেনে নেই বস্তায় আদা চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে।
আদা বীজ কোথায় পাবো
আপনি চাইলে বাড়িতে খুব সহজে আদার বীজ তৈরি করতে পারেন। আদার কন্দ লাগানোর আগে অবশ্যই চেষ্টা করবেন কন্দ গুলোকে শোধন করে নেওয়ার। আদার কন্দ গুলোকে শোধন করে নেওয়ার জন্য ছত্রাকনাশক অটোস্টিন দুই গ্রাম এক লিটার পানিতে দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। এছাড়াও আপনি অন্য যে কোন ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারেন।
শোধন করার পর অবশ্যই আদার কন্দ গুলোকে আধা ঘন্টার মত ছায়া যুক্ত স্থানে রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। আদার বীজ তৈরি করতে হলে একটি বালি ভর্তি টব লাগবে। এরপর একটি বাড়ি ভর্তি তবে তিন টুকরো অঙ্কুরিত আদা পুঁতে দিতে হবে। এভাবে আপনি আদার বিষ তৈরি করতে পারেন।
এছাড়াও আদার বীজ বিভিন্ন নার্সারিতে এখন পাওয়া যাচ্ছে। আপনি চাইলে নার্সারি থেকেও আদার বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া বর্তমান সময়ে বিভিন্ন হাটবাজারে আদার বীজ বিক্রি করে। আপনি চাইলে সেখান থেকেও আদার বীজ সংগ্রহ করতে পারেন।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি
আদা চাষের জন্য ঝুরঝুরা মাটির প্রয়োজন। তাই প্রথমে ঢেলাযুক্ত মাটি ভেঙ্গে ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। একটি বস্তাতে তিন ঝুড়ি মাটি, এক ঝুড়ি বালি এরপর মাটি যেন ফাঁপা হয়ে থাকে সেজন্য মাটির সাথে মেশাতে হবে ভার্মি কম্পোস্ট ও ছাই। এরপর পরিমাণমতো মেশাতে হবে গোবর সার ও ২৫ গ্রাম ফিউরাডন।
বালি পানি নিষ্কাশনের সাহায্য করবে এবং ফিউরাডন উইপোকার উপদ্রব থেকে রক্ষা করবে। সবকিছু একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে বস্তাতে মাটি ভরে ঝাঁকি দিয়ে মাটিগুলোকে বসিয়ে দিতে হবে।এরপর সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। এরপর চেষ্টা করবেন বস্তা উপর থেকে ঢেকে দিতে।এতে দেখা যায় মাটিতে আদ্রতা বেশি দিন ধরে রাখতে পারে।
আদা টুকরোগুলো লাগানোর আগে ব্যাভিস্টিন দিয়ে শোধন করে নিলে ভালো হয়। এতে ছত্রাকের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। আপনারা চাইলে অন্য যেকোনো ছত্রাক নাশক ব্যবহার করতে পারেন। শোধন করার পর আদা গুলি শুকনো জায়গায় আধা ঘন্টার মত শুকিয়ে নিতে হবে।
চারা তৈরি ও রোপনঃ চারা তৈরি করার জন্য তিন টুকরো আদা নিতে হবে। এরপর একটি বালি ভর্তির টবে অঙ্কুরিত আদা গুলোকে পুতে রাখতে হবে। আদার কন্দ লাগানোর আগে ছত্রাক নাশক দিয়ে শোধন করে নিলে ভালো হয়। এরপর ২০ থেকে ২৫ দিন পর বপনকৃত আদা থেকে গাছ বের হয়ে আসবে।
তখন আপনাকে আদার চারাগুলো সাবধানে তুলে বস্তার মুখে সমান দূরত্বে তিন জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে। চেষ্টা করবেন দিনের বেলায় বেশিরভাগ সময় রোদ পায় এমন স্থানে রাখার। দেখতে পাবেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আদার গাছগুলি বড় হয়ে যাচ্ছে।
সার প্রয়োগঃ বস্তাতে চারা রোপনের দুই মাস পরে চার চা চামচ সরিষার খোল ও আধা চামচ ইউরিয়া মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। বস্তার মাটিগুলো মাঝে মাঝে খুড়ে আলগা করে দিতে হবে। যাতে করে খুব সহজে আদার ফলন বৃদ্ধি পায়।
আদা উত্তোলনঃ জুন জুলাই মাসে যদি আদা লাগানো হয় তাহলে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই আধার তোলার উপযুক্ত হয়ে যায়। এক একটি বস্তায় যদি তিনটি করে গাছ লাগানো হয় সে ক্ষেত্রে এক একটি বস্তা থেকে এক থেকে দেড় কেজির মত আদা পাওয়া যায়।
আদা তুলে নেওয়ার পর সেখানে যেকোনো সবজি চাষ করতে পারবেন। সে জন্য আপনাকে নতুন করে কোন মাটি তৈরি করার প্রয়োজন হবে না।
বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময়
বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ করছে। বস্তায় আদা চাষ করা যেমন খরচ কম তেমনি পরিশ্রমও কম। জমিতে আদা চাষ করা থেকে বস্তায় আদা চাষ করলে খুব সহজে এবং কম খরচে আদা ফলানো যায়। বস্তায় আদা চাষ করার উপযুক্ত সময় হল এপ্রিল-মে ( চৈত্র-বৈশাখ ) মাসে আদা লাগাতে হয়।
তবে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ আদা লাগানোর উপযুক্ত সময়। আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি কোন বাড়তি ছায়াযুক্ত স্থান পড়ে থাকে। তাহলে সেখানে খুব সহজে বস্তাতে আদা চাষ করতে পারেন। যা আপনার পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয়ের উৎস হিসাবে গড়ে উঠবে।
ভবিষ্যতে আপনি চাইলে বাণিজ্যিকভাবেও বস্তাতে আদা চাষ করতে পারেন। আদার দাম যেহেতু উর্ধ্বমুখী তাই অল্প সময়ে আদা চাষ করে ভালো লাভবান হওয়া যাবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আশা করছি বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরে আপনি উপকৃত হয়েছেন। প্রতিদিন নিত্যনতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখুন।
এছাড়াও আপনার কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করছি আমরা খুব দ্রুত আপনার কমেন্টের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url