ডুমুর ফল এর উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন
বিভিন্ন বাদাম খাওয়ার উপকারিতাডুমুর এমন একটি ফল যার ভেষজ গুণ ও পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণ করে শেষ করার মত নয়। এই ফলটি বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন অবস্থাতেই খাওয়ার উপযোগী। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা জানব ডুমুর ফল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
যেকোনো শুকনো ফল নিঃসন্দেহে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাদ্য। এর মধ্যে ডুমুর অন্যতম। ডুমুর ফলের প্রচুর উপকারিতা রয়েছে।
পোস্ট সূচীপত্রঃচলুন তাহলে আর দেরি না করে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জেনে নেই ডুমুর ফল সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য।
ডুমুর ফলের উপকারিতা - ভূমিকা
ডুমুর ফলের উপকারিতা কথা কমবেশি সকলেরই জানা। বিশেষ করে ভেষজ গুণ ও পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে ডুমুর ফল পরিচিত। তবে এখনো অনেকে রয়েছেন যারা ডুমুর ফল চেনেন না বা এর উপকারিতা সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা নেই। আজ এই আর্টিকেলটি যদি আপনারা মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে ডুমুর ফলের উপকারিতা ছাড়াও বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক আজ এই আর্টিকেলে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম,ডুমুর ফল ছবি,ডুমুর ফলের দাম কত,ত্বীন ফল কি ডুমুর,ডুমুর ফল রান্নার পদ্ধতি,ডুমুর ফল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। ডুমুর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম
ডুমুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। ডুমুর বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তবে সকালে ভিজিয়ে রেখে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আপনারা অনেকেই আছেন যারা সকালবেলায় বাদাম ও কিসমিস ভিজিয়ে রেখে খান। এই তালিকাতে ডুমুরও রয়েছে। নিয়মিত ডুমুর খাওয়ার ফলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের উপকার করে থাকে।
ডুমুর সকালে খালি পেটে খাওয়ার থেকে কিসমিস ও বাদামের মত সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও ডুমুর ফল কাঁচা অবস্থায় রান্না করে খাওয়া যায়। ডুমুর দ্বারা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য তৈরি করা যায়। ডুমুরের সাথে মধু মিশ্রণ করে খাওয়া যায়। কাঁচা ডুমুর চিবিয়ে খাওয়া যায়। ডুমুর কেটে সালাত করে খাওয়া যায়।
ডুমুরের প্রতিটি অংশই খাদ্য উপযোগী। ডুমুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। যেমন জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রনের মত খনিজ পদার্থের পাওয়ার হাউস। এই ফলটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। আপনি যদি ডুমুর থেকে সব থেকে বেশি উপকার পেতে চান তাহলে এক থেকে দুইটি ডুমুর এক কাপ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিন।
এরপর সকালে খালি পেটে তা খান। আপনি চাইলে এর সাথে বাদাম জাতীয় খাবার যোগ করতে পারেন। এভাবে যদি আপনি নিয়মিত ডুমুর খান তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী হবে।
ডুমুর ফল ছবি
ডুমুর ফল খুবই পরিচিত একটি ফল। অধিকাংশ মানুষই ডুমুর ফল খুব ভালোভাবেই চেনেন। তবে এর মধ্যেও কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যারা ডুমুর ফল চেনেন না। এই পুষ্টিকর ফলটি যারা চেনেন না নিচে তাদের জন্য আমি একটা ছবি দিয়ে দিচ্ছি।
আশা করছি ছবিটি দেখে আপনারা ডুমুর ফল খুব সহজেই চিনে নিতে পারবেন। এছাড়াও আর্টিকেলটি পড়ে ডুমুর ফলে ব্যবহার এবং উপকারিতা অপকারিতা ভালোভাবে জেনে আপনার খাদ্য তালিকায় ডুমুর ফলটি যোগ করতে পারেন। যা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী হবে।
ডুমুর ফল
ডুমুর ফলের দাম কত
ডুমুর ফল খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। ডুমুর বা তিন ফলের দাম হলো দেড় হাজার টাকা কেজি অর্থাৎ ৫০০ গ্রাম শুকনো ডুমুরের দাম ৭৫০ টাকা। এবং এক কেজি শুকনো ডুমুরের দাম ১৫০০ টাকা। এই দাম বিভিন্ন জায়গায় কমবেশি হতে পারে। তাই এই ফলটি ক্রয় করার পূর্বে অবশ্যই আপনি এর দাম যাচাই করে নিবেন।
ত্বীন ফল কি ডুমুর
ইসলাম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। যেখানে প্রত্যেকটা বস্তু নিয়েই বিশেষভাবে উল্লেখ করা রয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত প্রতিটি বস্তু নিয়ে আল কুরআনে বর্ণনা রয়েছে। ঠিক তেমন ভাবে ডুমুর ফলটি নিয়েও আল কুরআনে বর্ণনা রয়েছে। আমরা অনেকেই হয়তো জানি না ইসলামের ডুমুর ফলকে কি বলা হয়? আসলে ইসলামে ডুমুর ফলকে বলা হয় ত্বীন ফল।
আল কুরআনের এই ত্বীন ফল নিয়ে একটি সুরা রয়েছে। সূরাটির নাম হল সূরা ত্বীন। এই সূরা টি আঞ্জির নামেও পরিচিত। মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা তিনের শুরুর আয়াতেই ডুমুরের নামে শপথ করেছেন। ইসলামে বিভিন্ন ধরনের ফলের নাম উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে ডুমুর একটি অন্যতম ফল। আর্টিকেলটি পড়ে আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন ত্বীন ফলই হলো ডুমুর ফল নামে পরিচিত।
ডুমুর ফল রান্নার পদ্ধতি
ডুমুর শুধু ফল হিসাবে খাওয়া যায় না ডুমুর সবজি হিসেবেও পরিচিত একটি নাম। ডুমুর অনেক ভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। তবে সাধারণত বাঙালিরা যেভাবে ডুমুর রান্না করে খায় তা হল-
- ডুমুরের ভাজি রান্না করা হয়ে থাকে
- ডুমুরের ভর্তা করে খাওয়া হয়ে থাকে
- চিংড়ি দিয়ে ডুমুরের ডালনা রান্না করা হয়
- ডুমুরের বরার কালিয়া খাওয়া হয়
- ডুমুরের কোপ্তা তৈরি করা যায়
- ডুমুর দিয়ে আলুর ডালনা তৈরি করা যায়
এছাড়াও আপনারা চাইলে যে কোন ভাবে ডুমুর রান্না করে খেতে পারেন। যদিও এর কোন বাধা ধরার
নিয়ম নাই। আপনারা সবজি হিসেবে ডুমুরকে যে কোন ভাবে রান্না করে খেতে পারেন।
ডুমুর ফল এর উপকারিতা
অত্যন্ত উপকারী ফল গুলোর মধ্যে ডুমুর ফল অন্যতম। আপনার খাদ্য তালিকায় যদি ডুমুর ফল রাখেন তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী হবে। আজ আমরা জানবো ডুমুর ফলের উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেই ডুমুর ফলের উপকারিতা কি কি।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
শরীরে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ডুমুর খুবই উপকারী কারণ ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডুমরে উপস্থিত রয়েছে ক্লোরোজেনিক এসি ড যা রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। বর্তমান সময়ের টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।
তাই যারা টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা যদি এই ফল ভিজিয়ে খায় তাহলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায় খুব সহজে। আপনি চাইলে বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন সালাদ, কমপ্লেক্স বা ওটস এর সঙ্গে টুকরো করা ডুমুর যোগ করে খেতে পারেন। এছাড়াও ডুমুর ভিজিয়ে রেখেও খেতে পারেন।
ওজন কমাতে সহায়তা করে
বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত ওজন নানা ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ওজন শরীরে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করে। তাই আপনি যদি ওজন কমানোর ডায়েট অনুসরণ করে থাকেন তাহলে ডুমুর আপনার ডায়েট চারটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে থাকে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ডুমুর খেলে তা আপনার শরীরে ভালো পরিমাণে ফাইবার সরবরাহ করবে। ডুমুর অবশ্যই পরিমিত পরিমানে খেতে হবে কারণ ডুমুরে রয়েছে বেশি পরিমাণে ক্যালরি। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন কমার পরিবর্তে বেড়ে যেতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে
ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। যার কারণে ডুমুরের উপকারিতা অনেক। শরীরে জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ আয়রনের মত খনিজ পদার্থের ঘাটতি পূরণ করতে ডুমুর খুবই কার্যকরী। ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার তাই বিশেষজ্ঞরা কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাইলসের রোগীদের ডুমুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
এটি মলত্যাগ স্বাভাবিক করতে এবং শিথিল করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ডুমুর খাওয়া উচিত।
হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে
ডুমরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। নিয়মিত ডুমুর খাওয়ার ফলে এটি আপনার হারকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। আমাদের শরীর নিজে থেকে ক্যালসিয়াম তৈরি করে না। তাই বাহ্যিকভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে যেমন দুধ, সবুজ শাক-সবজি,সয়া ও ডুমুরের ওপর নির্ভর করতে হয়।
এই উপাদান গুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেরা হল ডুমুর। তাই যাদের হাড়ের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ডুমুর খেতে পারে।
হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
ডুমুরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেল দূর করতে সাহায্য করে। যার কারণে করোনারি ধমনীতে বাধা রোধ করে হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ডুমুর শরীরের লাল ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে যা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার একটি প্রধান কারণ।
ডুমুরের অপকারিতা
ডুমুর ফল অনেক উপকারী একটি ফল। তবে এর মধ্যে কিছু অপকারিতা ও বিদ্যমান। যদি মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করা হয় তাহলে তা অপকারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ প্রতিটি জিনিসের যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি অসুবিধা রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেই ডুমুর ফলের অপকারিতা কি কি-
- ডুমুরের প্রচুর পরিমাণে আঠা থাকে। এই আঠা শরীরের লাগলে এলার্জি হতে পারে। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ডুমুর ফল খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- ডুমুর ফল অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ডুমুর খাওয়ার ফলে শরীরের রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
আপনারা যারা নিয়মিত ডুমুর ফল খান তারা ডুমুর ফল খাওয়ার পূর্বে এই সাবধানতাগুলো মাথায় রাখবেন। কারণ একটু অসাবধানতায় হতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আশা করছি ডুমুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে পেরে আপনি উপকৃত হয়েছেন। চেষ্টা করব আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো নতুন নতুন আর্টিকেল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার।
প্রতিদিন নিত্যনতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখুন। আপনার কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url