নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম জানুন
নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় সূরা সমূহনবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা জিয়ারত প্রত্যেক মুমিনের স্বপ্ন এবং একান্ত আকাঙ্ক্ষার বস্তু। আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবো নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম সম্পর্কে।
নবীজির রওজা জিয়ারত মনের প্রশান্তি এনে দেওয়ার সাথে সাথে রওজা শরীফ জিয়ারতে রয়েছে বিশেষ ফজিলত।
পোস্ট সূচিপত্রঃচলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেই নবীজির রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম সম্পর্কে।
নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম-ভূমিকা
বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা শরীফ জিয়ারত করা শুধু মুস্তাহাবই নয়, তম নাকি এবং শ্রেষ্ঠ ইবাদাত ও বটে। কেননা রওজা শরীফে গিয়ে নবীজিকে সালাম জানালে নবীজিও সালামের উত্তর গ্রহণ করে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন তা হল-
নবীকে সালাম দেওয়ার নিয়ম,নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারতের দোয়া,মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত,মসজিদে নববীতে প্রবেশের দোয়া,মদিনা শরীফ নবীজির রওজা মোবারক,নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম,মদিনার দোয়া,নবীজির রওজা মোবারক সালাম সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
নবীকে সালাম দেওয়ার নিয়ম
আপনি কি নবীকে সালাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? নবীজিকে সালাম দেওয়ার অনেকগুলো তরিকা আছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম তরিকা হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে দরুদ শরীফ পাঠ করা। দরুদ শরীফ পাঠ করার মাধ্যমে খুব সহজেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বাবস্থায় সালাম প্রদান করা যায়।
নামাজ এবং সালাম এর যেই শব্দটি রয়েছে, আমাদের নবীজি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে আদায় করা। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়ালা আলী মুহাম্মদ,কামা সাল্লাই তায়ালা ইব্রাহিম ওয়ালা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ, ওয়ালা আলী মোহাম্মদ, কামা বারেক তায়ালা ইব্রাহিম, ওয়ালা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
এই দরুদ টি যা আমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য পড়ে থাকি, এটাই হচ্ছে মূলত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর সবচেয়ে উত্তম নামাজ এবং সালাম।
নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারতের দোয়া
নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারতের দোয়া জানতে চাচ্ছেন? আপনি যদি নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যান তাহলে অবশ্যই আপনার মনে নবীজির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জাগ্রত রাখতে হবে। অভিজ্ঞ আলেমদের মতে, রওজা জিয়ারতকারী অবশ্যই পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজার সামনে দাঁড়াবে।
দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম তাকে দরুদে ইব্রাহিম পাঠ করতে হবে। এরপর বলবে, আশহাদু আন্নাকা রাসুলিল্লাহি হাক্কান, ওয়া আন্নাকা কদ বাল্লাগতার রিসালাতা,ওয়া আদ্দায়তাল আমানাতা,ওয়া নাসিহতাল উম্মাতা,ওয়া জাহাদতা ফিল্লাহি হাক্কা জিহাদিহ,ফাজাঝাকাল্লাহু আন উম্মাতিকা আফদালু মা জাঝা নাবিইয়ান আন উম্মাতিহি।
অর্থ হল: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল, আপনি আল্লাহর বাণী যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়েছেন, আল্লাহ প্রদত্ত আমানত আদায় করেছেন, উম্মতের কল্যাণ কামনা করেছেন, আল্লাহ পথে যথার্থ চেষ্টা সংগ্রাম করেছেন, সুতরাং উম্মতের পক্ষ থেকে যে প্রতিদান নবীকে দেওয়া হয় আল্লাহ আপনার উম্মতের পক্ষ থেকে আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দিন।
অতঃপর জিয়ারতকারী ডানদিকে গিয়ে আবু বকর (রা.) কবরের সামনে দাঁড়াবে এবং বলবে, আস-সালামু আলাইকা ইয়া আবা বাকরিন,আস-সালামু আলাইকা ইয়া খালিফাতা রাসুলিল্লাহ (সা.) ফি উম্মাতিহি,রাদিয়াল্লাহু আনকা,জাঝাকাল্লাহু আন উম্মাতি মুহাম্মাদিন খাইরান।
অর্থ হল: হে আবু বকর, আপনার প্রতি সালাম, উম্মতের জন্য আল্লাহর রাসূলের খলিফা আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, তিনি আপনাকে উম্মতে মোহাম্মদীর পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দিন।
এরপর জিয়ারতকারী আরেকটু ডানে এগিয়ে যাবে এবং বলবে, আস-সালামু আলাইকা ইয়া ওমর,আস-সালামু আলাইকা ইয়া আমিরাল মুমিনিন, রাদিয়াল্লাহু আনকা, জাঝাকাল্লাহু আন উম্মাতি মোহাম্মাদিন খাইরান।
অর্থ হল: হে ওমর, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে আমিরুল মোমেনীন আপনার প্রতি সালাম। আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, তিনি আপনাকে উম্মতে মোহাম্মদীর পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দিন।
এক্ষেত্রে আলেমরা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এর আমল দ্বারা দলিল পেশ করেন। তিনি সফর থেকে ফিরে মসজিদ-ই- নববীতে আগমন করতেন এবং রওজায় প্রবেশ করে রাসুলুল্লাহ (সা.), আবু বকর ও ওমর (রা.) এর প্রতি সালাম পেশ করতেন। (ফাতাহুর রব্বানী: ১/৬২; সুনানে বাইহাকি,হাদিস: ৯৬৫৮)
আপনি যখন নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত করতে যাবেন তখন উপরে উল্লেখিত দোয়া গুলো পাঠ করবেন রওজা মোবারকের প্রবেশ করে। এছাড়াও রওজা শরীফে প্রবেশ করার পর এবং বের হওয়ার পরেও দরুদ শরীফ পাঠ করতে থাকবেন।
মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত
আপনি কি মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? চলুন তাহলে জেনে নেই মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত সম্পর্কে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থ: নিশ্চয়ই ঈমান মদিনার দিকে ফিরে আসবে যেমনই ভাবে সাপটার গর্তে ফিরে আসে। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং১৮৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৪৭) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার জন্য বরকতের দোয়া করেছেন।
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থ; হে আল্লাহ আপনি মক্কায় যে বরকত দিয়েছেন মদিনায় তার দ্বিগুণ বরকত দান করুন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৮৫; সহীহ মুসলিম ,হাদিস নং ১৩৬০)মদিনায় মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করবে না।
আরও পড়ুনঃ নফল নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানুন
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থ; মদিনার প্রবেশ দ্বারে ফেরেশতারা প্রহরায় নিযুক্ত আছেন। এতে মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৮০; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৩৭৯) মদিনায় মৃত্যুবরণ করার ব্যাপারে উৎসাহদান।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থ; যার পক্ষে মদিনায় মৃত্যুবরণ করা সম্ভব সে যেন সেখানে মৃত্যুবরণ করে, কেননা মদিনায় যে মারা যাবে আমি তার পক্ষে সুপারিশ করব। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ৩৯১৭)
মসজিদে নববীতে প্রবেশের দোয়া
আপনি কি মসজিদে নববীতে প্রবেশের দোয়া সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? চলুন তাহলে জেনে নেই মসজিদে নববীতে প্রবেশের দোয়া। মসজিদে নববীর অনেকগুলো দরজা রয়েছে আপনি যেকোন দরজা দিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করতে পারেন। প্রবেশের সময় অবশ্যই ডান পা আগে দিয়ে প্রবেশ করবেন। প্রবেশের সময় আল্লাহ তায়ালার নাম স্মরণ করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি দরুদ শরীফ পাঠ করবেন। আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া চাইবেন আল্লাহ যেন তাঁর রহমতের সব কয়টি দরজা আপনার জন্য খুলে দেয় সেজন্য দোয়া করুন।
মসজিদে প্রবেশ করার পর, বসার পূর্বে তাহিয়াতুল মসজিদের দুই রাকাত সালাত আদায় করুন। হাদিসে এসেছে-
তোমাদের মধ্যে যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন দু'রাকাত সালাত আদায়ের পূর্বের না বসে। রাউজাতুল জান্নাতে মসজিদের মেহরাবের কাছে সাদা ও সবুজ কার্পেট বিছানো জায়গায় সালাত আদায় করতে পারলে ভালো।
কেননা রওজা শরীফ পবিত্রতম একটি জায়গা, জান্নাতের বাগান হিসেবে হাদিসে যার পরিচয় এসেছে। না পেলে যে কোন স্থানে তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করুন। এরপর লাইন ধরে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র কবরের দিকে এগিয়ে যান।
মদিনা শরীফ নবীজির রওজা মোবারক
আপনি কি মদিনা শরীফ নবীজির রওজা মোবারক সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মদিনা শরীফ নবীজির রওজা মোবারক সম্পর্কে। পবিত্র নগরী মদিনা সব সময়ই আশেকে রাসুলের পদচারণায় মুখরিত থাকে। হজের সময় এ ভিড় বেড়ে যায় আরো ৩০ থেকে ৪০ গুন বেশি। সারা বিশ্ব থেকে হজ উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ ওমা আসে পবিত্র নগরী মক্কায়।
এক্ষেত্রে যারা প্রথমদিকে হজে যায় তাদের গন্তব্যস্থল হল মদিনা মুনাওয়ারা। এদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা মদিনার মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। অর্থাৎ তারা সেখানে আট দিন অবস্থান করেন। জিয়ারতকারীদের মূল উদ্দেশ্য থাকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা শরীফ জিয়ারত করা।
রওজা শরীফের পাশে দাঁড়িয়ে নবীজির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ এবং নবীজিকে সালাম ও সালাত প্রদান করা। এছাড়া প্রিয় নবীর প্রতি ভালোবাসা উৎসর্গ করা এবং শ্রদ্ধা জানানো জিয়ারতকারীদের মূল লক্ষ্য। রওজা শরীফের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম প্রদান করলে প্রিয় নবী সরাসরি সালাম প্রদানকারীর সালামের উত্তর দেন।
প্রিয় নবীর খাঁটি মুমিন বান্দা ও আশেকে রাসুল তাদের অন্তর দিয়ে সালাম আদান প্রদান বিষয়টি উপলব্ধি করে থাকে। এক অন্যরকম অনুভূতি যা শুধু মাত্র আশিকে রাসুলের বান্দারা অনুভব করতে পারে। প্রিয় নবীর প্রিয় বান্দারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা শরীফের সামনে দাঁড়িয়ে প্রিয় নবীর ফায়েজ, ভালোবাসা ও বরকত গ্রহণ করে।
নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম
প্রিয় পাঠক আপনি কি নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। নবীজির রওজা শরীফ জিয়ারতের বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী নবীজির রওজা শরীফ জিয়ারত করা উত্তম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা জিয়ারত করা প্রত্যেক মুসলমানেরই স্বপ্ন।
এছাড়াও নবীজির রওজা জিয়ারতে রয়েছে অনেক ফজিলত। নবীজি (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা হল ঈমানের অংশ। মুসলমানরা তাদের অন্তরে নবীজির প্রতি ভালোবাসা ধারণ করা ছাড়া কেউ পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) এর রওজা জিয়ারত করা নিঃসন্দেহে পূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ কাজ।
নবীজির রওজা জিয়ারত নিয়ে বেশ কিছু হাদিস রয়েছে তার মধ্যে একটি হল হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যে আমার ওফাতের পর আমার রওজা জিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলো। (দারাকুতনি:২৬৯৪)
এছাড়াও নবীজি (সা.) আরও এরশাদ করেছেন যে, যে আমার রওজা জিয়ারত করলো তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে গেল। এছাড়াও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন যে, কেউ যদি হজ করে কিন্তু নবীজির রওজা জিয়ারত না করে তাহলে সে নবীজির প্রতি জুলুম করল। (তিরমিজি)
এছাড়াও নবীজী আরো বলেন যদি কেউ আমাকে সালাম দেয় তখনই সেই সালাম আল্লাহ তা'আলা আমার কাছে প্রেরণ করেন। অতঃপর আমি সেই সালামের জবাব দেই। (সুনানে আবু দাউদ: ২০৪১)
নবীজির রওজা শরীফ জিয়ারত করার বেশ কিছু নিয়ম বা শিষ্টাচার রয়েছে। সেই নিয়ম বা শিষ্টাচার গুলো মেনে নবীজির রওজা শরীফ জিয়ারত করা হয়ে থাকে। অবশ্যই রওজা শরীফ জিয়ারত প্রত্যাশীদের উচিত এসব নিয়ম গুলোর উপর খেয়াল রাখা। চলুন তাহলে নবীজির রওজা শরীফ জিয়ারতের কিছু নিয়ম আমরা জেনে নেই আজ।
- প্রথম নিয়ম হলো, নবীজির রওজা জিয়ারতকারী পবিত্র শরীরে পবিত্র কাপড় পরিধান করে যাবে।
- যখনই আপনি জিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হবেন ঠিক তখন থেকেই বেশি বেশি করে দরুদ পাঠ করতে হবে। এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করবে যেন জিয়ারতের মাধ্যমে সে উপকৃত হতে পারে এবং জিয়ারত কবুল করেন।
- জিয়ারতে প্রবেশের পূর্বে অবশ্যই মন থেকে সব জাগতিক চিন্তাভাবনা দূর করবে এবং তার ভালোবাসায় অন্তর পুণ্য করে নেবে।
- অবশ্যই নবীজির প্রতি পূর্ণ ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা নিয়ে রওজা মোবারকের প্রবেশ করতে হবে।
- ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে।রওজা শরীফে প্রবেশ করার পর এমন কোন আচরণ প্রকাশ করা যাবে না যা নবী (সা.) এর মর্যাদা পরিপন্থী কাজ।
- অবশ্যই সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে নবী (সা.) কে অনুচ্চ আওয়াজে সালাম প্রদান করতে হবে। কোনভাবেই যেন আওয়াজ উচ্চস্বরে না হয়।
- রোজার দিকে ফিরে তাকাবে কিন্তু সামান্য দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
- অবশ্যই অন্তর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি পূর্ণ ভালবাসা ও চিন্তায় পরিপূর্ণ করে তুলবে।
- যে কক্ষে নবীজি (সা.) শুয়ে আছেন, সেই কক্ষ এবং তার মিম্বর ইত্যাদি স্পর্শ করা, তাতে চুমু খাওয়া ও তাওয়াফ করা থেকে বিরত থাকবে।
- অবশ্যই আমরা আল্লাহর কাছে যেভাবে কোন কিছু চাই নবীর কাছে সেভাবে চাওয়া যাবে না। আপনার যদি কোন চাওয়া পাওয়া থেকে থাকে তাহলে তা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে চাইতে হবে। দোয়া করার সময় কিবলামুখী হয়ে দোয়া করবেন।
- রওজা শরীফে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা থেকে বিরত থাকবেন। সেখানে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা এবং ধাক্কাধাক্কি করা নবী (সা.) এর মর্যাদা পরিপন্থী। যতক্ষণ আপনি সেখানে অবস্থান করবেন অবশ্যই প্রশান্তির সঙ্গে অবস্থান করবেন।
- এছাড়াও রওজা শরীফ থেকে ফেরার সময় ও দরুদ পাঠ করতে করতে ফিরবেন।
- আপনার ক্ষেত্রে যদি সম্ভব তাহলে রিয়াজুল জান্নাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবেন। (আল- ইজাহ ফি মানাসিকিল হাজ্জি ওয়াল ওমরাহ,পৃ.৪৪৬-৪৫০)
মদিনার দোয়া
মদিনার জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে দোয়া করেছেন। মদিনার রহমত, বরকত আর শান্তির বর্ণনায় কোরআন সুন্নাহে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। মদিনা হল প্রত্যেক মুসলমানের অপরিসীম শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও স্বপ্নের নগরী হিসেবে পরিচিত। কারন এই নগরীকে কেন্দ্র করে মহানবী সাঃ ইসলামকে রাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক পরিমাণ বলে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
মদিনা নগরী হল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসার নগরী। এই প্রিয় নগরীর জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ, তুমি মদিনাকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যেমন এভাবে প্রিয় করেছো মক্কাকে, বরং তার চেয়েও বেশি প্রিয় করে দাও। (বুখারী, হাদিস ১৮৮৯)
মহানবী (সা.) আল্লাহর কাছে মদিনা সবকিছু বরকত দেওয়ার জন্য দোয়া করেছেন। তিনি বলেছেন হে আল্লাহ, মক্কায় যতটুকু বরকত রয়েছে, মদিনায় তার দ্বিগুণ বরকত দাও। (মুসলিম, হাদিস ৩৩৯২) এ ছাড়াও মহানবী (সা.) মদিনাকে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন।
মহান আল্লাহ মদিনার প্রবেশদ্বার সমূহে প্রহরী নিযুক্ত করেছেন, যারা এ নগরীতে মহামারী ও দাজ্জালের প্রবেশ কে প্রতিহত করবে। মহানবী সাঃ বলেন, মদিনার পথে প্রান্তরে রয়েছে ফেরেশতারা, এখানে মহামারি ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, হাদিস: ১৮৮০)
নবীজির রওজা মোবারক সালাম
আপনি কি নবীজির রওজা মোবারক সালাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আপনি যখন নবীজির রওজা মোবারকের সালাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে যাবেন তখন অবশ্যই কিছু নিয়ম পালন করতে হবে। নবীজির রওজা মোবারকের প্রবেশের পূর্বে অবশ্যই আপনার শরীরে পবিত্র কাপড় পরিধান করে যেতে হবে।
জিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর থেকেই অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করতে হবে । আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন আল্লাহ যেন জিয়ারত দ্বারা আপনাকে উপকৃত করেন এবং জিয়ারত কবুল করেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজায় প্রবেশের আগেই মন থেকে জাগতিক সব চিন্তাভাবনা দূর করে দেবেন এবং তার ভালোবাসায় অন্তর পুণ্য করে নেবেন।
নবী (সা.) এর প্রতি পূর্ণ ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে রওজায় প্রবেশ করবেন। ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবেন। লক্ষ্য রাখবেন, এমন কোন আচরণ যেন প্রকাশ না পায় যা নবীজি (সা.) এর মর্যাদার পরিপন্থী। নবীজি (সা.) কে অনুচ্চ আওয়াজে সালাম দেবেন। কোন ভাবেই আওয়াজ উঁচু করবেন না। নবীজি (সা.) এর রওজার দিকে ফিরে দাঁড়াবেন তবে সামান্য দূরত্ব বজায় রাখবেন।
অন্তরকে মহানবী (সা.) এর চিন্তা ও ভালোবাসায় বিভর করে তুলবেন। যে কক্ষে নবীজি (সা.) শুয়ে আছেন সেটি এবং তার মেম্বার ইত্যাদি স্পর্শ করা বা তাতে চুমু খাওয়া এবং এগুলো তাওরাফ করা থেকে বিরত থাকবেন। আল্লাহর কাছে যেভাবে কোন কিছু চাওয়া হয় সেভাবে নবীজি (সা.) এর কাছে চাইবে না। কোন চাওয়ার থাকলে মহান আল্লাহর কাছেই চাইবেন।
দোয়া করার সময় কিবলামুখী হয়ে দোয়া করবেন। রওজা শরীফে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা যাবে না। সেখানে ভিড় করে থাকা এবং ধাক্কাধাক্কি করা নবীজি (সা.) এর মর্যাদা পরিপন্থী। যতক্ষণ অবস্থান করবেন প্রশান্তির সঙ্গে অবস্থান করবেন।
ফেরার সময় ও দরুদ পাঠ করতে থাকবেন। সম্ভব হলে রিয়াজুল জান্নাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবেন। এখন নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন নবীজির রওজা মোবারকের সালাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
লেখকের মন্তব্য- নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো নবীজির রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।
এছাড়াও নবীকে সালাম দেওয়ার নিয়ম,নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারতের দোয়া,মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত,মসজিদে নববীতে প্রবেশের দোয়া,মদিনা শরীফ নবীজির রওজা মোবারক,নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম,মদিনার দোয়া,নবীজির রওজা মোবারক সালাম সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।
চেষ্টা করব আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো নতুন নতুন আর্টিকেল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার। প্রতিদিন নিত্যনতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখুন। আপনার কোন পরামর্শ মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষন ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url