সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা - সোনালি মুরগির ঔষধের তালিকা

দেশি মুরগি সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুনবর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয়তার শীর্ষে সোনালী মুরগী রয়েছে।দিন দিন মাংসের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে খামার ব্যবস্থাপনা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোনালি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হওয়ায় এই মুরগি পালনের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা - সোনালি মুরগির ঔষধের তালিকা সম্পর্কে।
সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা - সোনালি মুরগির ঔষধের তালিকা
বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে ব্রয়লার মুরগির থেকে সোনালি মুরগির মাংসের চাহিদা বেশি। মাংসের পাশাপাশি সোনালি মুরগির ডিমের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। 

পোস্ট সূচীপত্রঃআজ আমরা এই আর্টিক্যাল এর মাধ্যমে জানতে পারবো সোনালী মুরগী সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য।

সোনালি মুরগির ঔষধের তালিকা - ভূমিকা

আপনি যদি প্রথম পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে খামার পরিচালনা করতে চান তাহলে আপনি সোনালি মুরগি পালন করতে পারেন। কারণ সোনালি মুরগির বাজার চাহিদা বেশি থাকায় অধিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও সোনালী মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য মুরগির তুলনায় ভালো। 

আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানাবো সোনালী মুরগী সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য সোনালী মুরগী পালন পদ্ধতি ,সোনালি মুরগির ওজন বৃদ্ধির উপায়,সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা,সোনালি মুরগির ঔষধের তালিকা ও সোনালী মুরগী কত দিনে ডিম দেয় সেই সম্পর্কে। সোনালী মুরগী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সোনালী মুরগী পালন পদ্ধতি

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সোনালি মুরগি পালন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর কারণ হলো বর্তমান সময়ে সোনালি মুরগির বাজার চাহিদা এবং সোনালি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আপনারা অনেকেই আছেন যারা নতুন করে খামার শুরু করতে চাচ্ছেন সোনালী মুরগী দিয়ে। 

আবার অনেকেই রয়েছে যারা বেশ কিছু মুরগি পালন করে লসের শিকার হয়ে নতুন করে সোনালি মুরগি পালন করতে চাচ্ছেন। আজকে আমার এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য যারা নতুন করে সোনালি মুরগির খামার তৈরি করতে চাচ্ছেন। এছাড়াও আপনি যদি অভিজ্ঞ খামারি হয়ে থাকেন তাহলে আমার লেখাটি আপনার জন্য উপকৃত হবে আশা করছি। 


বাংলাদেশের আবহাওয়া সোনালি মুরগির জাতের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়াও আপনি সোনালী মুরগি পালন করতে আগ্রহী হতে পারেন কারণ সোনালী মুরগীর অন্যান্য হাইব্রিড জাতের মুরগির থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো। বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবর্তনে সোনালি মুরগির ওপর তেমন কোন প্রভাব পড়ে না। 

সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে নিয়মিত ভ্যাকসিন শিডিউল মেনে চললে ও জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে আপনার খামারে তেমন কোন রোগ বালাই দেখা দিবে না। যার ফলে আপনার মুরগিগুলো সুস্থ থাকবে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে মানুষের ব্রয়লার মুরগির মাংসের চাহিদার উপর তেমন কোন আগ্রহ নেই তবে দিন দিন সোনালী মুরগীর মাংসের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যাচ্ছে। 

এছাড়াও সোনালি মুরগির বাজার দর বেশ ভালো থাকার কারণে বাণিজ্যিক গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বর্তমানে সোনালি মুরগি পালনের দিকে খামারীরা বেশি ঝুকছেন।

সোনালি মুরগির বাচ্চা নির্বাচনঃ সোনালি মুরগি একটি স্বতন্ত্র মুরগির জাত তবে বর্তমান সময় দেখা যাচ্ছে বাজারে বিভিন্ন ভেরিয়েশনে সোনালি মুরগির বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে। যেমন সোনালী, সোনালী ক্লাসিক ও হাইব্রিড সোনালী নামে বিভিন্ন বাচ্চার জাত পাওয়া যাচ্ছে। 

সাধারণ অর্থে সোনালি মুরগি আর-আই- আর ও ফাউমি মুরগির সংকরায়নে সোনালি মুরগির জাত উদ্ভাবিত হত তবে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন কারণে এর মূল জাতের বৈশিষ্ট্য লোপ পেয়েছে। 

যার কারনে হ্যাচারিতে সোনালি মুরগির জাত উন্নত করার জন্য বিভিন্ন ভারী জাতের মুরগির সাথে ক্রসব্রিড করে সোনালি মুরগির জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। যার কারণে বাজারে বিভিন্ন জাতের সোনালি মুরগির ভ্যারিয়েন্ট বিদ্যমান রয়েছে।

চলুন নিচের টেবিল থেকে জেনে নেওয়া যাক সোনালি মুরগির জাত সম্পর্কে।
  • বাচ্চার নাম সাধারণ সোনালী এটি শঙ্করায়ন করানো হয় ইনব্রিড ও সোনালী থেকে সোনালী সাথে।এই মুরগি গুলোর ওজন হয় ৬০ দিনে ৭০০ - ৮০০ গ্রাম। সাধারণ জাতের সোনালি মুরগির ডিমের হার ৬৫ - ৭০% এবং এই মুরগির বাজার দর খুব বেশি, প্রায় দেশি মুরগির কাছাকাছি।
  • বাচ্চার নাম ক্লাসিক সোনালী এটি সংকরায়ন করানো হয় আর আই আর মোরগ এবং ফাওমি মুরগির সাথে। এই মুরগি গুলোর ওজন হয় ৮৫০ - ৯৫০ গ্রাম। ক্লাসিক সোনালী জাতের মুরগির ডিমের হার ৭০-৭৫% এবং এই মুরগির বাজার দর অন্যান্য মুরগির তুলনায় সাধারণ।
  • বাচ্চার নাম সোনালী হাইব্রিড এটি সংকরায়ন করানো হয় সোনালি মুরগি এবং ক্রয়লার মোরগ ১০% এর সাথে। এই মুরগি গুলোর ওজন হয় ৯৫০ - ১১০০ গ্রাম। সোনালী হাইব্রিড জাতের মুরগির ডিমের হাড় ৫৫-৬৫% এবং এই মুরগির বাজার দর অন্যান্য মুরগির তুলনায় অনেক কম।
সোনালি মুরগি পালনে ঘর প্রস্তুতঃ সোনালি মুরগি পালনের পূর্বে ঘর প্রস্তুত করা খুবই প্রয়োজন। সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে আপনাকে ঘর নির্মাণ করতে হবে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা। পোস্ত সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট ছাড়াও আপনার চাহিদা অনুযায়ী ঘর নির্মাণ করে নিতে পারেন। 

সোনালি মুরগির ঘরের মেঝে হবে মাটি থেকে কমপক্ষে এক ফুট উঁচুতে। এবং ঘরের চারপাশ ভালোভাবে নেট দিয়ে ঘেরাও করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বাইরে থেকে কোন কিছু যেন সেডে প্রবেশ করতে না পারে। মাংসের জন্য সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে প্রতিটি সোনালি মুরগির জন্য ০.৮৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন।  

১০০০ সোনালি মুরগি পালনের জন্য ৮৫০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন হবে। এছাড়াও আপনি যদি ডিমের জন্য সোনালী মুরগি পালন করতে চান তাহলে প্রতিটি মুরগির জন্য এক দশমিক পাঁচ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন হয়। মুরগিকে যদি আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা না দেন তাহলে মুরগির বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন মুরগি পালনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা।

লিটার ব্যবস্থাপনাঃ সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে লিটার হিসাবে ব্যবহার করা হয় ধানের তুষ। তবে আপনি চাইলে কাঠের গুড়া ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও লিডার হিসেবে আপনি বালির উপরেও সোনালি মুরগি পালন করতে পারেন। 

তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন লিটার যেন ভিজে উঠে ঠান্ডা না লাগে। লিটার দেয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন লিটার যেন এক থেকে দেড় ইঞ্চি পুরু হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী লিটার দেওয়ার পর লিটার নাড়িয়ে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে লিটারে যেন গ্যাস জমা না হয়।

ব্রডার ঘর ব্যবস্থাপনাঃ বাচ্চা আসার তিন ঘন্টা আগে থেকে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত আপনার করণীয় কাজ হল বাচ্চা আসার আগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন লিটার পেপার, পানি, হোবার, চিকগার্ড, খাবারের পাত্র প্রত্যেকটা জিনিস তিন ঘন্টা আগে বসিয়ে দিতে হবে যথাযথ জায়গায়।

এছাড়াও হোবারের লাইট ২-৩ ঘন্টা আগে জ্বালিয়ে রাখতে হবে এবং এক ঘন্টা পরপর অবশ্যই থার্মোমিটার রিডিং পরীক্ষা করতে হবে।বাচ্চা খাবারে প্রবেশ করার 10 মিনিট আগে খাবার এবং পানির পাত্র যথাযথ জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে এবং দুর্বল কোন বাচ্চা থাকলে তা সরিয়ে নিতে হবে এবং বাচ্চাগুলোকে গ্লুকোজ পানি খাওয়াতে হবে। 

এছাড়াও বাদবাকি বাচ্চাগুলোকে প্রথম দুই ঘন্টা শুধুমাত্র জীবাণুমুক্ত সাদা পানি দিতে হবে। অতিরিক্ত দূর থেকে আসার কারণে যদি বাচ্চাগুলো বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে গ্লুকোজ পানি দেওয়া যেতে পারে।

অবশ্যই বাচ্চা আসার পর তিন ঘন্টা পর পর বাচ্চা চেক করতে হবে। কোন মৃত বাচ্চা থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এবং কোন ধরনের সমস্যা থাকলে তার সমাধান করতে হবে। পানি এবং খাবার শেষ হয়ে গেলে তা পুনরায় দিতে হবে। এবং পেপার ভিজে গেলে তা পাল্টে দিতে হবে। এছাড়া ২৪ ঘন্টা পর পেপার একেবারে সরিয়ে ফেলতে হবে।

সোনালি মুরগির ওজন বৃদ্ধির উপায়

বর্তমানে খামার ব্যবসায়ীদের কাছে সোনালি মুরগি পালন একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। সোনালি মুরগি পালন করার ফলে অনেকেই অল্প সময়ে সফল ব্যবসায়ীতে পরিণত হচ্ছে। আপনিও যদি সোনালি মুরগি পালন করে খামার ব্যবসায় লাভবান হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কোয়ালিটি মেইন্টেন করতে হবে। 

ভালো মানের বাচ্চা, উন্নত মানের ফিড, নিয়ম মেনে ভ্যাকসিন ও মেডিসিন সহ আদর্শ খামার ম্যানেজমেন্ট অবশ্যই আপনাকে বজায় রাখতে হবে।

আপনি যদি আপনার খামারের বাচ্চার ভালো কোয়ালিটি বজায় রাখতে চান তাহলে অবশ্যই বাচ্চার খাবার ভালো কোয়ালিটির দিতে হবে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় ভালো কোয়ালিটির খাবার দেওয়ার পরেও বাচ্চার কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। 

দুটোই ভালো থাকে কিন্তু খাবার ম্যানেজমেন্ট খারাপ হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সোনালী মুরগি পালন করার ফলে লাভবান হওয়া যায় না। খাবার ম্যানেজমেন্ট যদি ঠিকমতো করতে না পারেন তাহলে মুরগির ওজন বৃদ্ধি পাবে না। যার কারণে আপনি শেষমেষ লসের সম্মুখীন হবেন। 


তাই সোনালি মুরগির ভালো খাবার ও খাবার ম্যানেজমেন্ট এর উপর নির্ভর করছে আপনি সোনালি মুরগির খামারে লাভবান হবেন নাকি লসের সম্মুখীন হবেন। চলুন তাহলে আমরা এখন সোনালি মুরগির কিভাবে ওজন বৃদ্ধি করা যায় সেই সম্পর্কে একটি চার্ট দেখে নেই।

নিচে সোনালি মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট:

বয়স  = মোট খাদ্য গ্রহণ = দৈহিক ওজন = খাদ্য হার

৭ দিন =   ৫৫ গ্রাম  =   ১২১ গ্রাম    =    ০.৮৭

১৪ দিন = ১৪৮ গ্রাম =১৭০ গ্রাম      =    ১.২২

২১ দিন  = ৩৩৮ গ্রাম =২০৪ গ্রাম  =     ১.৬৫

২৮ দিন = ৫১৫ গ্রাম = ২৮০ গ্রাম =     ১.৮৩

৩৫ দিন = ৬৮৮ গ্রাম =৩৭৬ গ্রাম=     ১.৯৩

৪২ দিন = ৯৮৮ গ্রাম= ৪৭০ গ্রাম =      ২.১০

৪৯ দিন =১২৮৫ গ্রাম=৫৮০ গ্রাম=      ২.২১

৫৬ দিন=১৬১০ গ্রাম= ৬৮১ গ্রাম=     ২.৩৬

৬৩ দিন =১৮৭৫ গ্রাম=৭৬৫ গ্রাম =  ২.৪৫

সাধারণত এই চার্ট ফলো করে সোনালি মুরগির সুষ্ঠু খাবার তালিকায় ওজন বৃদ্ধি করতে পারবেন। যদি ভালো কোয়ালিটির ফিড এবং খাবার ম্যানেজমেন্ট ভালো থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মুরগির ওজন বৃদ্ধি পাবে। তবে মুরগির রক্ষণাবেক্ষণের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। অবশ্যই মুরগি সুস্থ থাকতে হবে সে লক্ষ্য রাখবেন।

সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা

ব্রয়লার মুরগির মত সোনালি মুরগির তেমন কোন খাতা চাহিদা নেই । ব্রয়লার মুরগির যেমন যত খাবে তত দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এমন কোন ধারণা সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কারণ সোনালীর গ্রোথ রেট কম। যার কারণে সোনালি মুরগির খাদ্যে প্রোটিন এনার্জির মান ব্রয়লার মুরগির তুলনায় কম থাকে। সোনালি মুরগিকে সাধারণত মেলা খাবার দেওয়া হয়। 

সকালে, দুপুরে ও রাতে তবে মুরগির খাবার পাত্র দিতে হবে বুক বরাবর এবং লক্ষ্য রাখতে হবে খাবার যেন মুরগি অপচয় করতে না পারে। সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকার ক্ষেত্রে অবশ্যই চেষ্টা করবেন কয়েকটি বিষয়ে বিবেচনায় রাখতে। মুরগির বয়স অনুযায়ী এবং পালনের উদ্দেশ্য অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে হবে। 


সাধারণত একমাস পর্যন্ত সোনালী মুরগিকে স্ট্যাটার খাবার দিতে হয়। বাড়ন্ত সময়ে এবং ডিম পাড়ার সময় লেয়ার ফিট সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও আপনি যথাযথ পোস্টিমান জেনে আপনি সহজেই সোনালি মুরগির খাদ্য তৈরি করে খাওয়াতে পারেন। বয়স অনুসারে সোনালি মুরগির জন্য সাধারণত তিন থেকে পাঁচ ধরনের খাবার দেওয়া হয় তার একটি চার্ট নিচে দেওয়া হল।

খাবারের নাম = বয়স ( সপ্তাহ )

স্ট্যাটার  =  ০-৬ সপ্তাহ

গ্রোয়ার  =  ৭-১২ সপ্তাহ

প্রিলেয়ার  = ১৩-১৭ সপ্তাহ

লেয়ার ১  =  ১৮-৪৫ সপ্তাহ

লেয়ার ২ =  ৪৬-৯৫ সপ্তাহ

মুরগির বয়স অনুযায়ী খাবারের পুষ্টিগুণের চাহিদা পরিবর্তন হয়। এছাড়াও শীত ও গরম অনুযায়ী খাবারে এনার্জির কমবেশি হয়ে থাকে। 

উল্লেখ্য যে, এই খাদ্য তালিকায় উল্লেখিত ফিড এডিটিভস আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নিজস্ব কোম্পানির নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে অথবা অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান কর্তৃক পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা যেতে পারে।

সোনালি মুরগির ঔষধের তালিকা

বর্তমান সময়ে দিন দিন সোনালি মুরগির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণত সোনালি মুরগির বাজার চাহিদার উপর ভিত্তি করে এবং রোগ বালাই কম হওয়ার কারণে এই মুরগি পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছে খামারীরা। খামার পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই মুরগির রোগ বালাই যেন কম হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নির্দিষ্ট একটি ঔষধের তালিকা অনুযায়ী সোনালি মুরগিকে ঔষধ সেবন করাতে হবে। 

তবে অনেক পরামর্শক তাদের পরামর্শ অনুযায়ী একেক ভাবে সোনালি মুরগি পালনের ঔষধের তালিকা দিতে পারেন। তবে আপনার উচিত হবে যে কোন একটি পরামর্শ মেনে চলার। আমি চেষ্টা করেছি আমাদের পাঠকের সুবিধার্থে বহু প্রচলিত একটি সিডিউল দেওয়ার। আশা করছি শিডিউলটি মেনে চললে আপনারা উপকৃত হবেন।

বয়স দিন       -    ওষুধের নাম 

১ থেকে ৩ দিন টানা     -    এমক্সাসিলিন*

৩ থেকে ৫ দিনের ভেতর - আইবি + এনডি লাইভ ভ্যাকসিন (রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিস)

৭ থেকে ১০ দিনের ভেতর-ঠোঁট ছেকা যদি প্রয়োজন হয়

১০ থেকে ১২ দিনের ভেতর-গামবোরো লাইভ ভ্যাকসিন

১২ থেকে ১৪ দিন  - এম্প্রোলিয়াম + সিপ্রো*

১৮ থেকে ২২ দিনের ভিতর-গামবোরো লাইভ ভ্যাকসিন


২৪ থেকে ২৬ দিনের ভিতর-এম্প্রোলিয়াম + এমক্সাসিলিন

৩৫ তম দিন-ছোট বড় মুরগি আলাদা করা + কৃমিনাশক

৪৪ তম দিন-রানীক্ষেত লাইভ ভ্যাকসিন* (প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলে)

৪৬ থেকে ৪৮ দিন-সিপ্রোফ্লক্সাসিন + নিউমাইসিন*

৫০ থেকে বিক্রি পর্যন্ত  -  প্রোবায়োটিক

অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে কোন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের আগে পশু ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার।
উপরে উল্লেখিত তালিকাটি বহুল প্রচলিত সোনালি মুরগি পালনের ঔষধের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এই তালিকার বাইরেও অনেক শিডিউল রয়েছে। যেকোনো সিডিউল মানার পূর্বে অবশ্যই একজন ভালো পশু ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করবেন। 

স্থান কাল ভেদে সিডিউল পরিবর্তন বা পরিমার্জন হতে পারে।

সোনালী মুরগী কত দিনে ডিম দেয়

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে মুরগি ও ডিমের চাহিদা ব্যাপক। এই মুরগি ও ডিমের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বর্তমান সময়ে বহু খামার ব্যবসা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সোনালি মুরগির খামার। এই মুরগি অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলে পালন করা হতো তবে বর্তমান সময়ে সোনালি মুরগি খামার আকারে পালন করা হচ্ছে। 

সোনালি মুরগি অনেকে কেবল মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য পালন করে আবার অনেকে আছে যারা ডিমের চাহিদা পূরণেও এই সোনালী মুরগীর খামার করে থাকেন। চলুন তাহলে এবার জেনে নেই সোনালি মুরগি কত দিনের ডিম দেয় সেই সম্পর্কে। সাধারণত সোনালি মুরগি ১৯ সপ্তাহ বা সাড়ে চার মাস বয়স থেকে ডিম পারা শুরু করে। 

তবে প্রথম পর্যায়ে সোনালি মুরগি খুব কম ডিম দিয়ে থাকে। সোনালি মুরগির ডিম পাড়া সঠিক সময় হল ছয় মাস বয়স থেকে। সোনালি মুরগি পালনের জন্য অবশ্যই কৃত্রিম আলোক ব্যবস্থাপনা বা লাইটিং জরুরী। শীতকালে সাধারণত সোনালি মুরগির একটু দেরিতে ডিম আসে। সোনালি মুরগির ডিম পাড়ার সময়কাল হল ২-২.৫ বছর পর্যন্ত। 

তবে আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক বিবেচনায় ডিম পারার ১৬ - ১৮ মাসে মুরগি কার্ল করা হয়। সোনালি মুরগি বছরে প্রায় ১৮০ - ২০০ টি ডিম দিয়ে থাকে। এছাড়াও অরিজিনাল ক্লাসিক সোনালি মুরগি বছরে প্রায় ৮০% ডিম দিতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আশা করছি সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে কি কি পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে আপনি জেনে উপকৃত হয়েছেন। আপনার যদি কোন খামার পরিচালনা করার ইচ্ছা থাকে বা আপনি একজন খামারি তাহলে নিশ্চয়ই আর্টিকেলটি পরে আপনি উপকৃত হয়েছেন। 

প্রতিদিন নিত্যনতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখুন। এছাড়াও আপনার কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url