জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া - জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম

নফল নামাজের নিয়ম জানুনজমজমের পানি হল মহান আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত বিশেষ এক নেয়ামত। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া - জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া - জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম
জমজমের পানি খাওয়া নিয়ে অনেকের মনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে। সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনারা পাবেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃতাই জমজমের পানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।

জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া - ভূমিকা

জমজমের পানি হল মহান আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত বিশেষ এক নেয়ামত। ইব্রাহিম আলাইহি সালাতু অসসালাম এর সন্তান ইসমাইল আলাইহিস সালাতু অসসালাম এর মাধ্যমে এই নেয়ামতটি মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দান করেছেন। এই জমজমের পানি যে ফজিলত এবং মহত্ত্ব রয়েছে এর মধ্যে প্রথম কথা হল জমজমের পানি পান করা, এটা ঈমানদারের আলামত। 

এটা মুনাফিকি থেকে মুক্তির অন্যতম একটি আলামত। জমজম কূপের পানিকে মহান আল্লাহ তায়ালা বরকতময় করেছেন। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জমজমের পানি সম্পর্কে যে বিষয়গুলি জানতে পারবেন তা হল-

জমজমের পানির সাথে পানি মিশিয়ে,জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে খেতে হয়,জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা,জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম,জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

জমজমের পানির সাথে পানি মিশিয়ে

জমজমের পানির সাথে পানি মিশিয়ে খাওয়া যায় কিনা সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আর্টিকেলের এই পর্বে জমজমের পানির সাথে অন্য কোন বানি মেশানো যাবে কিনা সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। 

আশা করছি আপনারা যদি আর্টিকেলের এই পর্বটি ভালো করে পড়েন তাহলে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন আমরা জেনে নেই জমজমের পানির সাথে অন্য কোন পানি মিশিয়ে খাওয়া যাবে কিনা সেই সম্পর্কে।

জমজমের পানির সাথে অন্য সাধারণ পানি যদি মেশানো হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে যেটুকু জমজমের পানি আছে সেটুকু উপকারিতা পাওয়া যাবে। মেশানো পুরো পানিটাতেই জমজমের উপকারিতা চলে আসবে না। বা জমজম যেটুকু আছে সেটুকু সাধারণ পানির সাথে মেশার ফলে সাধারণ পানি হয়ে যাবে না। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি একজগ পানিতে এক গ্লাস জমজমের পানি মেশালেন। 
তখন সেই পানি পান করার ফলে জমজম যতোটুকু আছে শুধুমাত্র ততটুকুরই উপকার পাবেন। বাদবাকি পানি জমজমের পানির উপকারিতা দিবে না বা পাবেন না। কেউ যদি শপথ করে যে আমি জমজমের পানি পান করবো, এরপর সে এমন পানি পান করলো যেখানে জমজমের পানির পরিমাণ খুবই কম। 

অন্য পানির পরিমাণ অনেক বেশি তাহলে সে শপথ ভঙ্গকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ সে মূলত যেটা পান করেছে সেখানে জমজমের চেয়ে যেটা জমজম নয় তার আধিক্য এবং প্রাবল্য রয়েছে। এটা হল শপথের বিষয়। 

তবে সাধারণ অর্থে জমজমের সাথে অন্য কোন পানি যদি মেশানো হয় সে ক্ষেত্রে লাভের কিছুই হবে না যেটুক জমজমের পানি মেশানো হবে শুধুমাত্র সেই টুকুর উপকারিতা পাবেন। এজন্য আমরা বলতে পারি জমজমের পানির সাথে জমজমের পানি নয় এরকম কোন পানি মেশানোর কোন উপকারিতা নেই। 

তবুও আমাদের সমাজের মানুষ এটা করে থাকে। জমজমের পানিতে সাধারণ পানি মেশানোর ক্ষেত্রে একটা আপত্তিকর বিষয় রয়েছে সেটা হল। আপনি কাউকে জমজমের পানি হাদিয়া হিসেবে দিলেন বললেন যে এটা জমজমের পানি। অথচ সেখানে জমজমের চাইতে জমজম নয় এমন পানির পরিমাণ বেশি। সে ক্ষেত্রে এটা একটা প্রতারণা হবে। 

কারণ আপনি যাকে পানি হারিয়ে দিলেন সে সম্পূর্ণ পানিটাকে জমজমের পানি মনে করে খাবে। যে কারণে জমজমের পানির সাথে জমজম নয় এমন পানি মেশানোর বিশেষ কোনো কারণ নেই। আশা করছি আপনারা এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে খেতে হয়

জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে খেতে হয় সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আজ আর্টিকেলের এই পর্বে জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে খেতে হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনারা যদি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে অবশ্যই জানতে পারবেন জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে খেতে হয় সেই সম্পর্কে। 

তাই আর দেরি না করে চলুন আমরা জেনে নেই এই বিষয়টি সম্পর্কে।অনেকেই আপনারা জানতে চান জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করবেন নাকি বসে পান করবেন। এই ব্যাপারে সহিঃ মুসলিম ও বুখারী হাদিসে এসেছে মহানবী (সা.) থেকে, আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, সাধারণ বিধান হল দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নবী করিম (সা.) নিষেধ করেছেন। 

আমাদের নবীজি সাধারণত দাঁড়িয়ে পানি পান করতেন না। তবে কখনো কখনো তিনি দাঁড়িয়ে পানি পান করেছেন এটা বোঝানোর জন্য যে কেউ নিরুপায় হলে বা অসুবিধা হলে দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা হারাম হবে না। তবে সাধারণ অবস্থায় পানি বসে পান করতে হবে। তবে অসুবিধা থাকলে দাড়ি ও পানি পান করা যাবে সেটা জায়েজ আছে। 

এটা বোঝানোর জন্য মহানবী (সা.) মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে পানি পান করতেন। এরই অংশ হিসেবে এটা প্রমাণিত যে তিনি জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন। জমজমের পানি মহানবী (সা.) দাঁড়িয়ে পান করেছে বলে এই নয় যে জমজমের পানি দাঁড়িয়েই পান করতে হবে। তাই সাধারণ অবস্থায় জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করতে হবে এমনটি নয়। 

অনেকেই আছে যারা জমজমের পানি নিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। এরকম কোন হাদিস নেই যে নবী কারীম (সা.) জমজমের পানি নিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেছেন। এজন্য জমজমের পানি সাধারণ অন্য পানির মতো বসেই পান করবেন। তবে আপনার যদি কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পান করতে হয় সেক্ষেত্রেও জায়েজ আছে। 

তাই সাধারণ পানির মতো জমজমের পানি বসে পান করা অধিকতরো যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। আশা করছি আপনারা জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে খেতে হয় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা

অনেকেই আছেন যারা জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। আর্টিকেলের এই পর্বে জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। 

আশা করছি আপনারা যদি মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলের এই পর্বটি পড়েন তাহলে জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন আমরা জেনে নেই জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
জমজম কূপের পানিতে মহান আল্লাহ তায়ালা বরকতময় করেছেন। এই সম্পর্কে নবী আলী সালাতু অসসালাম বলেছেন, নিশ্চয়ই জমজমের পানি এটা বরকতময়, এখানে বরকত দেওয়া হয়েছে, কল্যাণ দেওয়া হয়েছে, বহুমুখী কল্যাণ জমজমের পানির ভেতরে মহান আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন।

জমজমের পানি পান করলে এটা শুধু তৃষ্ণা মে টানা এই পানি খাদ্যের কাজ করে বা ক্ষুধা নিবারণ করে। এছাড়াও জমজমের পানি বিভিন্ন কঠিন রোগ বালাই থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।

হাসান সূত্রে বর্ণিত এক হাদীস থেকে এসেছে, জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয় মহান আল্লাহ তায়ালা সে উদ্দেশ্য পূরণ করেন। এখানে দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য হতে পারে আবার আখিরাতের উদ্দেশ্যও হতে পারে। জমজমের পানি পান করার সময় মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে যদি কোন বিশেষ চাওয়া থাকে তাহলে সে চাওয়াটা মহান আল্লাহ তায়ালা পূরণ করেন।

জমজমের পানি পান করা প্রসঙ্গে এরকম আরো ফজিলতের কথা আসছে। তবে উপরে উল্লেখিত ফজিলত গুলোই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আশা করছি আপনারা জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম

আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা জানব জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আশা করছি আপনারা আর্টিকেলের এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা জেনে নেই জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম কি সেই সম্পর্কে।
  • অন্য যে কোন খাবার বা পানীয় পান করার আগে যেমন বিসমিল্লাহ বলতে হয় তেমনি জমজমের পানি পান করার আগে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলে পান করতে হবে।
  • জমজমের পানি অন্য যে কোন পানির মতো তিন ঢোকে পান করতে হবে। কারণ এটা সুন্নাত। অর্থাৎ এক ঢোকে পুরা পানি পান না করে তিন ঢোকে পান করতে হবে।
  • জমজমের পানি পান অন্য যে কোন খাবারের মতো বা অন্য যে কোন পানি ওর মত ডান হাতে পান করা সুন্নাত।
  • সেই সাথে জমজমের পানি পান করার পরে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা উচিত। মহান আল্লাহ তায়ালা জমজমের পানি পান করার তৌফিক দিয়েছেন সেজন্য বলতে হবে আলহামদুলিল্লাহ।
ছাড়াও জমজমের পানি দিয়ে যদি কেউ গোসল করতে চায় বা শরীরের কোন অঙ্গ ধুইতে চায় ধুতে পারে। তবে ইস্তিনজার কাজে জমজমের পানি ব্যবহার করতে অনেক ওলামায়ে একরামরা অনেকেই নিষেধ করেছেন আবার অনেকেই ব্যবহার করতে বলেছেন। 

তবে বিনা প্রয়োজনে ইত্যাদি কাজে এই পানি ব্যবহার করা এই পানির আদবের খেলাপ হবে। একান্ত প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা। আশা করছি আপনারা জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন আর্টিকেলের এই পর্বে।

জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া

অনেকেই আছেন যারা জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া সম্পর্কে জানতে চান। তাদের জন্যই আর্টিকেলের এই পর্বটি সাজানো হয়েছে। আশা করছি আপনারা যদি আর্টিকেলের এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা জমজমের পানি খাওয়ার দোয়াটি জেনে নেই।

জমজমের পানি পান করার জন্য বিশেষ কোন দোয়া আছে কিনা এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) এর পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো দোয়া বর্ণিত হয়নি। তবে এক বর্ণনায় এসেছে আব্দুল ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে, যে তিনি জমজমের পানি পান করার সময় বলতেন

(اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا وَاسِعًا وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ)

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান না-ফিআ,ওয়া রিযকান ওয়া সি আ,ওয়া শিফাআন মিন কুল্লী দা-অ”
অর্থ: হে আল্লাহ আপনার কাছে আমি উপকারী এলেম চাই, যে এলেম আমার উপকারে আসবে দুনিয়াতে এবং আখিরাতে সেরকম জ্ঞান চাই যে জ্ঞান আমার কাজে আসবে। প্রশস্ত রিজিক দান করেন যে রিজিকের মধ্যে কোন সংকীর্ণতা নাই। এবং সব রোগ বালাই থেকে আপনি সুস্থতা এবং আরোগ্য আমাকে নসিব করেন।

এই দোয়াগুলো বলতেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) অতএব এগুলো বলা যেতে পারে। তবে রাসূল (সা.) বিশেষ করে কোন দোয়া বেঁধে দেননি যে জমজমের পানি খাওয়ার সময় এই দোয়াটি পাঠ করতে হবে। অনেকের আবার প্রশ্ন থাকে জমজমের পানি ওযু ছাড়া পান করা যাবে কিনা। 

এর উত্তর হল হ্যাঁ জমজমের পানি ওযু ছাড়া পান করা যাবে। তবে হ্যাঁ একজন মুমিনের উচিত সবসময় ওযু অবস্থায় থাকা। আশা করছি আপনারা জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

লেখকের মন্তব্য - জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি জমজমের পানির সাথে পানি মিশিয়ে,জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে খেতে হয়,জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা,জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম,জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।

চেষ্টা করব আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো নতুন নতুন আর্টিকেল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার। প্রতিদিন নিত্য নতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো দিয়ে রাখুনা। আপনার কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url