শবে বরাতের ফজিলত নামাজ ও আমল সম্পর্কে জানুন

মক্কা মদিনার দর্শনীয় স্থানইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফজিলতপূর্ণ একটি রাত হল শবে বরাত। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শবে বরাত সম্পর্কে আমরা যা জানব তা হল শবে বরাতের ফজিলত নামাজ ও আমল সম্পর্কে জানুন।
শবে বরাতের ফজিলত নামাজ ও আমল সম্পর্কে জানুন
সাধারণত সাবান মাসে ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে ইবাদতের মাধ্যমে এই রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পালন করে থাকে।

পোস্ট সূচিপত্রঃআজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শবেবরাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব।

শবে বরাতের ফজিলত নামাজ ও আমল - ভূমিকা

ফজিলত পূর্ণ রাতগুলোর একটি হল শবে বরাত। এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলিমকে ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই রাতের ফজিলত নামাজ ও আমল সম্পর্কে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে যে বিষয়গুলো জানতে পারবো তা হলো-

শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে,শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত,শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া,মহিলাদের শবে বরাতের নামাজের নিয়ম,শবে বরাতের ফজিলত ও আমল,শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে

পবিত্র শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে অনেকেই জানতে চান। কারণ শবে বরাত উপলক্ষে ধর্মীয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন। এই রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলমানকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন শুধুমাত্র মুশরিক ও হিংসুক এই দুই ধরনের ব্যক্তি ছাড়া। 

এখন আমরা জানবো ২০২৪ সালের কত তারিখে শবে বরাত সেই সম্পর্কে। শবে বরাত এবং রমজান সবই নির্ভর করে চাঁদের উপর। বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেছে ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪। তাই গত ১২ ই ফেব্রুয়ারি রোজ সোমবার থেকে পবিত্র সাবান মাস গণনা শুরু হয়েছে। 
১২ ই ফেব্রুয়ারি রোজ রবিবার সন্ধ্যায় ইসলামী ফাউন্ডেশন এর জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় জানানো হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি রোজ রবিবার দিবাগত রাতে পালিত হবে লাইলাতুল নিসফ মিন সাবান বা মধ্য সাবানের রাত অর্থাৎ শবে বরাত। ২৬ ফেব্রুয়ারি রোজ সোমবার সরকারি ছুটি থাকবে। শবে বরাতের পর রমাদান মাস শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে ১২ ই মার্চ ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার। 

তবে মনে রাখবেন, ইসলামিক ক্যালেন্ডার চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। তাই যে কোন তারিখ চূড়ান্ত নির্ধারণ করা হয়ে থাকে চাঁদ দেখার উপর। যেহেতু ১১ তারিখে শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেছে তাই ২০২৪ সালের শবে বরাত ২৫ ফেব্রুয়ারি রোজ রবিবার রাতে পালিত হবে। পরের দিন ২৬ শে ফেব্রুয়ারি শবে বরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকবে।

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত

অনেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা জানতে চান শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত সম্পর্কে। আর্টিকেলের এই পর্বে আমি আপনাদের জানাবো শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত সেই সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে চলুন তাহলে শবে বরাতের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। শবে বরাত উপলক্ষে সকল মুসলমান নফল ইবাদত করে থাকে। 

তবে শবেবরাতের নামাজ নফল নাকি সুন্নত সেই নিয়ে অনেকের মনে দ্বিধা থাকে। তবে জেনে রাখা ভালো যে শবে বরাতের নামাজ নফল ইবাদত। এখন আমরা জানবো শবেবরাতের নামাজ কত রাকাত সেই সম্পর্কে। সাধারণত শবে বরাতের নামাজ ২, ৪, ৬, ৮, ১০ ও ১২ রাকাত করে পড়তে হয়। অর্থাৎ আপনার ইচ্ছামত দুই রাকাত অথবা চার রাকাত বা এর বেশিও পড়তে পারেন। 

তবে শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম হলো অবশ্যই দুই রাকাত করে নিয়ত করে পড়তে হবে। প্রথমে এশার নামাজ পড়ে বিতর নামাজ বাদ রেখে শবে বরাতের নামাজ পড়তে হবে। দুই রাকাত দুই রাকাত করে আপনার ইচ্ছামত আপনি নফল ইবাদত করতে পারেন। 

এই নামাজ ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়া যাবে। লাইলাতুল বরাতের নফল নামাজ শেষ করে বিতের নামাজ দিয়ে শেষ করতে হবে। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। কারণ শবে বরাতের নামাজ যেহেতু এক বছর পর পর পর পড়তে হয় তাই অনেকেই এই নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া মনে রাখতে পারেন না। তাদের জন্য সাজানো হয়েছে আর্টিকেলের এই পর্বটি। আপনাদের সুবিধার্থে শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া নিচে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। 

আশা করছি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন তাহলে এবার মজা শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া। শবে বরাতের নামাজ পড়তে হলে অবশ্যই আপনাকে দোয়া জানতে হবে। 
সাধারণত এশার নামাজের পর শবে বরাতের নামাজ পড়া হয়। শবে বরাতের নামাজ পড়তে হলে সূরা ফাতিহার সাথে যে কোন একটি সূরা যেমন সূরা কাউসার অথবা অন্য যে কোন সূরা দিয়ে আপনি শবে বরাতের নামাজ পড়তে পারেন।

শবে বরাতের সন্ধ্যায় নামাজের নিয়ম: শবেবরাতের দিন সন্ধ্যায় অর্থাৎ মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, ঈমানের হেফাজত ও অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য দুই রাকাত করে মোট ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়া উত্তম। তাই চেষ্টা করবেন শবে বরাতের দিন মাগরিবের নামাজ পড়ে এই ছয় রাকাত নামাজ আদায় করার।

শবেবরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম: প্রতিরাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর একবার আয়াতুল কুরসি ও ১৫ বার করে সূরা ইখলাস শরীফ পড়ার চেষ্টা করবেন। এরপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দরুদ শরীফ পাঠ করবেন।

ফজিলত বর্ণনা: এই নামাজের ফজিলত হিসাবে রুজিতে বরকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করা, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বকশিশ পাওয়া যাবে।

শবে বরাতের চার রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম: এক সালামে পড়তে হবে। প্রতিরাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৫০ বার সূরা ইখলাস শরীফ পড়তে হবে।

ফজিলত বর্ণনা: গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে ছদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।

শবে বরাতের ৮ রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম: দুই রাকাত করে শবে বরাতের নামাজ পড়তে হয়। প্রতিরআকাত নামাজে সুরা ফাতিহার সাথে পাঁচবার অর্থাৎ বেজোড়ভাবে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। একই নিয়মে বাকি সব রাকাত শেষ করতে হবে।

ফজিলত বর্ণনা: গুনাহ থেকে পাক হবে, দোয়া কবুল হবেও বেশি বেশি নেকি পাওয়া যাবে।

শবে বরাতের ১২ রাকাত নফল নামাজের নিয়ম: দুই রাকাত করে পড়তে হবে। প্রতিরাকাতে সূরা ফাতিহার পর দশবার সূরা ইখলাস পড়তে হবে। এই নিয়মে বাকি নামাজ শেষ করে দশবার কালেমা তাওহীদ, দশবার কালেমা তানজিদ ও দশবার দরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে।

শবে বরাতের ১৪ রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম: দুই রাকাত করে পড়তে হবে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে।

ফজিলত বর্ণনা: যেকোনো দোয়া চাইলে তা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।

মহিলাদের শবে বরাতের নামাজের নিয়ম

মহিলাদের শবে বরাতের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে অনেক মা-বোনেরাই জানতে চান। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব কিভাবে মহিলাদের শবে বরাতের নামাজ আদায় করতে হয়। তাই আর দেরি না করে চলুন তাহলে জেনে নেই মহিলাদের শবে বরাতের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। 

শবে বরাত উপলক্ষে সকল মুসলমান মা-বোনেরা শবে বরাতের নামাজ আদায় করতে চান। কিন্তু তারা অনেকেই জানেন না কিভাবে শবে বরাতের নামাজ পড়তে হয়। অথবা জানলেও অনেক সময় ভুলে যান। তাদের জন্য শবে বরাতের নামাজ পড়ার বিস্তারিত নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো।
  • সর্বপ্রথম শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ত করতে হবে।
  • এরপর আল্লাহু আকবার বলে বুকে হাত বাধতে হবে।
  • পরবর্তীতে থানা পাঠ করতে হবে এবং ছানা পাঠ করা হয়ে গেলে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
  • সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর পবিত্র কুরআন থেকে যেকোনো একটি সূরা পাঠ করতে হবে।
  • সূরা পাঠ করা হয়ে গেলে অন্যান্য রাকাতের ন্যায় রুকু ও সেজদা করুন।
  • প্রথম রাকাতের মত করে দ্বিতীয় রাকাতও শেষ করতে হবে।
  • এরপর বসে তাশাহুদ দরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করে সালাম ফেরাতে হবে।
  • একইভাবে দুই রাকাত করে যত খুশি ততবার শবে বরাতের নামাজ পড়তে পারবেন।
  • দুই রাকাত পর পর মাঝে মাঝে জিকির ও আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করতে হবে।

শবে বরাতের ফজিলত ও আমল

শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আর্টিকেলের এই পর্বে শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনারা লেখাটি বিস্তারিত পড়লে শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন তাহলে আমরা জেনে নেই শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে।

শবে বরাতের ফজিলত
শবে বরাত হলো মুসলমানদের জন্য রহমত ও মুক্তির এক মহিমান্বিত রাত।এই রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা তার রহমতের দুয়ার খুলে দেন। সকল মুসলমান ও পাপীদের উদার চিত্তে ক্ষমা করেন। শুধুমাত্র দুই ধরনের মানুষ অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে অংশীদারিত্ব স্থাপনকারী ও অন্তরে বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সকলকেই মহান আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন। 
আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন অর্ধ সাবানের রাত তোমাদের সামনে আসে, তখন তোমরা নামাজ আদায় করো এবং পরের দিনে রোজা রাখো। মহান আল্লাহ তায়ালা শবে বরাতের রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। এরপর তিনি এই বলে ডাকতে থাকেন যে, তোমাদের মধ্যে আছে কি কোন প্রার্থনাকারী? 

আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। তোমাদের মধ্যে আছে কি কোন রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব। তোমাদের মধ্যে আছে কি কোন বিপদগ্রস্ত কারি? আমি তার বিপদ দূর করে দেব। ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে।(সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮)

এছাড়াও শবে বরাতের আরেকটি তাৎপর্য হলো, এই রাতে সৃষ্টি জগতের ভাগ্য বন্টন করা হয়। অর্থাৎ মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত, যা পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগেই নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। তবে শবে বরাতের রাতে এক বছরের একটি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি কি জানো, অর্থ সাবানের রাতের কার্যক্রম কি? 

আয়েশা (রা.) বলেন, না, হে আল্লাহর রাসূল। নবী (সা.) বলেন, এ বছর যত জন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং মারা যাবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। এরাতেই মানুষের আমল পৌঁছানো হয় এবং এরাতেই তাদের রিজিক আবর্তিত হয়।(মিশকাত: ১৩০৫)

অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, আতা ইবনে ইয়াশার (রহ.) থেকে বর্ণিত, সাবানের ১৫ তম রাতে মৃতদের তালিকা দেওয়া হয়। এমনকি কোন লোক সফরে বের হয়, অথচ তাকে জীবিতদের তালিকা থেকে মৃতদের তালিকায় হস্তান্তর করা হয়েছে। কেউ বিয়ে করে অথচ তাকে জীবিতদের তালিকা থেকে মৃতদের তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে।(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৭৯২৫)

শবে বরাতের আমল
নফল ইবাদাত: শবে বরাতের রাতে নামাজ আদায়, কুরআন তিলাওয়াত, ইস্তেগফার, তওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে রাত কাটানো হয়। শবে বরাতের সব আমলই নফল ইবাদত। আর নফল আমল নিজ নিজ ঘরে একাগ্রতিতে আদায় করাই উত্তম।

রোজা আদায় করা: আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন অর্ধ সাবানের রাত তোমাদের সম্মুখে আসে, তখন তোমরা তাতে কিয়াম তথা নামাজ আদায় করো এবং পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখো।(ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮)

মৃতদের জন্য মাগফিরাত করা: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে কাছে না পেয়ে খোঁজ করতে বের হলাম। হঠাৎ দেখলাম, তিনি জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে আছে। তিনি বললেন,(হে আয়েশা) তোমার কি এ আশঙ্কা হয় যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করতে পারে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমার ধারণা হলো, আপনি অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। 

তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা অর্থ সাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে আসেন এবং কালব গোত্রের ছাগল-ভেড়ার পশম এর চেয়ে অধিক সংখ্যক লোককে ক্ষমা করে দেন।(তিরমিজি: ৭৩৯; ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)

শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস অনেকেই জানতে চান। অনেক হাদিস রয়েছে শবে বরাতকে উদ্দেশ্য করে। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হাদিস রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে মানুষ জানে এবং আমল করে। আজ আমরা তেমনি কিছু হাদিস সম্পর্কে জানব। চলুন তাহলে আর দেরি না করে শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস জেনে নেই।

১. হযরত ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, এমন পাঁচ রাত রয়েছে, যেগুলোতে আল্লাহ তা'আলা বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না। রাতগুলো হল, জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, সাবানের ১৫ তারিখের রাত, ২ ঈদের রাত।(সুনানে বায়হাকী, হাদিস: ৬০৮৭)

২. মুআজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা অর্থশাবানের রাতে, অর্থাৎ সাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।(ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৫৬৬৫)

৩. আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন অর্ধ সাবানের রাত তোমাদের সামনে আসে, তখন তোমরা নামাজ আদায় করো এবং পরের দিনে রোজা রাখো। মহান আল্লাহ তায়ালা শবে বরাতের রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। এরপর তিনি এই বলে ডাকতে থাকেন যে, তোমাদের মধ্যে আছে কি কোন প্রার্থনাকারী? 

আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। তোমাদের মধ্যে আছে কি কোন রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব। তোমাদের মধ্যে আছে কি কোন বিপদগ্রস্ত কারি? আমি তার বিপদ দূর করে দেব। ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে।(সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮)

৪. আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি কি জানো, অর্থ সাবানের রাতের কার্যক্রম কি? আয়েশা (রা.) বলেন, না, হে আল্লাহর রাসূল। নবী (সা.) বলেন, এ বছর যত জন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং মারা যাবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। এরাতেই মানুষের আমল পৌঁছানো হয় এবং এরাতেই তাদের রিজিক আবর্তিত হয়।(মিশকাত: ১৩০৫)

৫.আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে কাছে না পেয়ে খোঁজ করতে বের হলাম। হঠাৎ দেখলাম, তিনি জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে আছে। তিনি বললেন,(হে আয়েশা) তোমার কি এ আশঙ্কা হয় যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করতে পারে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমার ধারণা হলো, আপনি অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। 

তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা অর্থ সাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে আসেন এবং কালব গোত্রের ছাগল-ভেড়ার পশম এর চেয়ে অধিক সংখ্যক লোককে ক্ষমা করে দেন।(তিরমিজি: ৭৩৯; ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)

৬. আতা ইবনে ইয়াশার (রহ.) থেকে বর্ণিত, সাবানের ১৫ তম রাতে মৃতদের তালিকা দেওয়া হয়। এমনকি কোন লোক সফরে বের হয়, অথচ তাকে জীবিতদের তালিকা থেকে মৃতদের তালিকায় হস্তান্তর করা হয়েছে। কেউ বিয়ে করে অথচ তাকে জীবিতদের তালিকা থেকে মৃতদের তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে।(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৭৯২৫)

উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন হাদিস থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, এরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত জেগে ইবাদত করেছেন এবং দীর্ঘ আমলে মশগুল ছিলেন। তবে এই রাতে বিশেষ পদ্ধতিতে কোন ইবাদাত তিনি আদায় করেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরও তা করার নির্দেশ দেননি। 

তাই আমাদের সমাজে প্রচলিত শবেবরাতের বিশেষ পদ্ধতি যে নামাজের কথা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এগুলো বিশ্বাস করা এবং এগুলোর ওপরে আমল করা কোনভাবেই জায়েজ নেই। 

বরং ফজিলতপূর্ণ এ রাতে আমলের ব্যাপারে হাদিসের যেসব নির্দেশনা ইঙ্গিত পাওয়া যায় তা সবই ব্যক্তিগত নফল ইবাদাত। তাই সকলের উচিত বেশি বেশি নফল ইবাদাত শবে বরাতের রাতে করা এবং কোরআন তেলাওয়াত তওবা ও ইস্তেগফার ও জিকির আজগারে মশগুল থাকা।

লেখকের মন্তব্য - শবে বরাতের ফজিলত নামাজ ও আমল

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে,শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত,শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া,মহিলাদের শবে বরাতের নামাজের নিয়ম,শবে বরাতের ফজিলত ও আমল,শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন। 

চেষ্টা করব আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো নতুন নতুন আর্টিকেল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার। প্রতিদিন নিত্যনতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখুন। আপনার কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url