শ্রমের মর্যাদা রচনা-শ্রমের মর্যাদা রচনা ২৫ পয়েন্ট

২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন কারণপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য সহজ ও সাবলীল ভাষায় শ্রমের মর্যাদা রচনা-শ্রমের মর্যাদা রচনা ২৫ পয়েন্ট আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি রচনাটি ভালোভাবে পড়লে তোমরা পরীক্ষা ভালো নাম্বার পাবে।
শ্রমের মর্যাদা রচনা-শ্রমের মর্যাদা রচনা ২৫ পয়েন্ট
বেশিরভাগ বোর্ড পরীক্ষায় যেহেতু শ্রমের মর্যাদা রচনাটি আসে। তাই তোমরা এই রচনাটি মুখস্থ রাখলে খুব সহজেই ভালো নাম্বার পাবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃশ্রমের মর্যাদা রচনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।

শ্রমের মর্যাদা রচনা-ভূমিকা

শ্রমের মর্যাদা রচনাটি যেকোনো বোর্ড পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। প্রায় প্রতিবছরই দেখা যায় এই রচনাটি বোর্ড পরীক্ষায় আসে। তোমরা চাইলে শ্রমের মর্যাদা রচনাটি এই আর্টিকেল থেকে খুব সহজে মুখস্ত করে নিতে পারো। যার ফলে তোমার পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।

এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে তোমরা যে যে বিষয়গুলো জানতে পারবে তা হল শ্রমের মর্যাদা রচনা ২৫ পয়েন্ট,শ্রমের মর্যাদা রচনা,শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ প্যারা,শ্রমের মর্যাদা রচনা ক্লাস 10, শ্রমের মর্যাদা রচনা ssc সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ো।

শ্রমের মর্যাদা রচনা ২৫ পয়েন্ট

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমরা কি শ্রমের মর্যাদা রচনার ২৫ টি পয়েন্ট সম্পর্কে জানতে চাচ্ছো? তোমাদের সুবিধার্থে আমি আজ শ্রমের মর্যাদা রচনার ২৫ টি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি পয়েন্টগুলো পড়ে তোমরা উপকৃত হবে।

ভূমিকা

আধুনিক সভ্যতার চরম উৎকর্ষতার দিকে তাকালে আমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। কর্মই জীবন। যে কোন কাজই হলো পরিশ্রম। যখন আমরা জমি চাষ করি, কিংবা বোঝা বহন করি, তখন আমরা হাত দিয়ে কাজ করি একে বলে কায়িক শ্রম। আমরা যখন বই পড়ি বা বই লিখি একে আমরা মেধাশ্রম বলি।


পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের ভাগ্য বদলেছে। মানুষ ও সভ্যতার যাবতীয় অগ্রগতির মূলে রয়েছে পরিশ্রমের অবদান। কায়িক শ্রমের মর্যাদাকে মূলত শ্রমের মর্যাদা বলা হয়। পবিত্র কুরআনে আছে,“লাইসা লিল ইনসানে ইল্লা মা সাত্তা”।

শ্রম কি

শ্রমের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে মেহনত, দৈহিক খাটুনি। সাধারণত যে কোন কাজই হল শ্রম। পরিশ্রম হচ্ছে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সংগ্রামের নাম হাতিয়ার। পরিশ্রমের দ্বারাই গড়ে উঠেছে বিশ্ব ও মানব সভ্যতার বিজয়স্তম্ভ।

শ্রমের গুরুত্ব

মানুষের সকল উন্নতির মূল হচ্ছে শ্রম। যে যত পরিশ্রমী, ভাগ্য তার প্রতি তত প্রসন্ন হয়। পরিশ্রম করাই মানবতার লক্ষণ। শ্রম ছাড়া কোন জাতি উন্নত হতে পারে না। রাজার ছেলে ও যদি শ্রম বিমুখ হয় তবে তাকে শেষ পর্যন্ত ভিক্ষুক সাজতে হয়। এজন্যই প্রবাদ আছে,“বসে খেলে রাজার ভান্ডারেও কুলায় না”। জীবনে পরিশ্রমের কোন অন্ত নেই। 

শ্রমের দ্বারাই মানুষ নিজের জীবন সাজাতে পারে। অর্থাৎ মানুষ নিজেই তার ভাগ্যের নির্মাতা। বর্তমান পৃথিবী প্রযুক্তি নির্ভর। তাই পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন। তাই কায়িক গুরুত্ব অপরিসীম।

শ্রমের শ্রেণীবিভাগ

শ্রম দুই প্রকার। মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। শিক্ষক, ডাক্তার, বৈজ্ঞানিক শ্রেণীর মানুষ যে ধরনের শ্রম দিয়ে থাকেন তাকে মানসিক শ্রম বলে। অন্যদিকে কৃষক, শ্রমিক, মজুর শ্রেণীর মানুষের ফ্রম হচ্ছে কায়িক শ্রম বা শারীরিক শ্রম। মানসিক বা কায়িক শ্রম এর মিলিত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা।

শ্রমের প্রয়োজনীয়তা

মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যবিধাতা। আর তাই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। তাই মানব জীবনে পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কর্ম বিমুখ অলস মানুষ কোনদিন উন্নতি লাভ করতে পারে না। পরিশ্রম ছাড়া জীবনের উন্নতি কল্পনা মাত্র। 

প্রতিষ্ঠা করতে হলে নিরলস পরিশ্রম দরকার। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমই, সে জাতি তত বেশি উন্নত। একমাত্র পরিশ্রমই মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে।

শ্রম বিমুখতা

আমাদের দেশের লোক অলস এবং শ্রম বিমুখ। এছাড়াও এদেশের শিক্ষিত লোকেরা কাইক শ্রমকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখে। আসলে কোন কাজে ঘৃণ্য নয়। সমাজের সব ধরনের কাজের গুরুত্ব আছে। সব ধরনের কাজী মহৎ এবং প্রয়োজনীয়। 

কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, যে শ্রমিকের শ্রম না হলে আমাদের একদিনও চলে না, সেই শ্রমিককে আমরা নিচু শ্রেণীর লোক বলে হেয় করি। এ জন্যই আমাদের দেশ উন্নত বিশ্ব থেকে বহু পিছিয়ে আছে।

শ্রমের মর্যাদা

মানুষের জন্ম স্রষ্টার অধীন, কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। জাপান তার ১২ কোটি মানুষের ২৪ কোটি হাত দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমেরিকা, কানাডা, জার্মান, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের উন্নতি হচ্ছে তাদের কায়িক শ্রমে। 

তাদের স্লোগান হচ্ছে,“পরিশ্রমের দ্বারা উন্নতি করো বা নিপাত যাও”। বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হয় না। তার ফলে আজও সুজলা- সুফলা- শস্য- শ্যামলা দেশের অধিবাসী হয়েও আমরা চরম দারিদ্রদের মধ্যে বসবাস করি।

ছাত্রজীবনের শ্রম

ছাত্র জীবনে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। ইংরেজি একটি প্রবাদ আছে“Industry is the mother of good luck.” যে ছাত্র যত বেশি পরিশ্রমী হবে, সে তত বেশি উন্নত হবে। ছাত্র জীবনের মূল কাজ পড়ালেখা করা। তাই লেখাপড়ার প্রতি অধিক সময় ব্যয় করতে হবে। তাহলেই সম্ভব কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে উত্তীর্ণ হওয়া।

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

সৌভাগ্য আকাশ থেকে পড়ে না। জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনার প্রয়োজন হয়। সব মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে। পরিশ্রমের দ্বারা সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। যে মানুষ কর্মকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে জীবন সংগ্রামে তারই হয়েছে জয়। কর্মহীন ব্যক্তির সমাজের বোঝা স্বরূপ। শ্রমশীলতাই মানব জীবনের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।

শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ

মহাপুরুষেরা শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই পরিশ্রমী ছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম, এ কে ফজলুল হক, ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন এর জ্বলন্ত উদাহরণ। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ(সা.) কঠোর পরিশ্রম করে পৃথিবীর বুকে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজ হাতে সকল কাজ সমাধান করতেন। আবার যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করতেন। 

মাটি কাটার কাজও সাধারণ শ্রমিকের মতো কাজ করতেন। তাতে তিনি কোন লজ্জাবোধ করেননি। আরও তিনি বলতেন নিজ হাতে কাজ করার মত পবিত্র আর কিছুই নেই। তাই তো কবি বলেছেন,“খোদা হাত দিয়েছেন ভিক্ষা করার জন্য নয় বরং অর্জন করার জন্য”।

ভাগ্য রচনা ও প্রতিভা বিকাশের শ্রম

মানুষ একদিকে যেমন সভ্যতার স্রষ্টা, অন্যদিকে তেমনি নিজের ভাগ্যের নির্মাতা। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আছে সুপ্ত প্রতিভা। পৃথিবীতে যেসব ব্যক্তি প্রতিভাবান বলে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন, তারা আজীবন করেছেন কঠোর পরিশ্রম এবং তার ফলে তাদের প্রতিভা ফুলের মত বিকশিত হয়ে পৃথিবীতে বিতরণ করেছে অনাবিল সৌরভ।

শ্রম ও জাতি ভেদে

সমাজের উন্নতি-বিধানের জন্য সব মানুষেরই নিজ নিজ শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী পরিশ্রম করা উচিত। কিন্তু সব মানুষের পক্ষে সমাজের সব কাজ করে ওঠা সম্ভব হয় না। সামাজিক বিশৃঙ্খলা পরিহার করার জন্য মানুষ করেছে কর্মের নানা শ্রেণীবিভাগ। 

এই শ্রেণীবিভাগের পরিণামের সমাজে এসেছে ঘৃণিত জাতিভেদ প্রথা। পৃথিবীর সব দেশেই এই কর্ম ভিত্তিক, শ্রম ভিত্তিক জাতিভেদ প্রথা ছিল। তাতে মানুষকে করা হয়েছে ঘৃণা, মানবতার ঘটেছে চরম অবমাননা।

শ্রমিক লাঞ্ছনা

সমাজের উচ্চ স্তরের লোকেরা গ্রহণ করেছে গৌরবের কাজ। সমাজের সমস্ত সুখ সুবিধা নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে তারা তথাকথিত নিম্ন শ্রেণীর মানুষের নিক্ষেপ করেছে ঘৃণা অবঞ্চনা। অথচ সেই শ্রমিকেরা চিরকাল মাঠে মাঠে বীজ বুনেছে, ফলিয়েছে সোনার ফসল, তাতি বসে তাঁত বনেছে, জেলে ধরেছে মাছ। অথচ স্বার্থপর সমাজের কাছ থেকে তারাই পায়নি মানুষের মর্যাদা।

বাংলাদেশের শ্রমের স্থান

বাংলাদেশের শ্রম বিভাগ ছিল প্রধানত বর্ণগত। যারা উচ্চবর্ণের তারা কোন কাজ করতো না। নিচু বর্ণের লোকেরা দৈফিক বা কায়িক শ্রমের কাজ করতো। তাতে সমাজের একটা ধারণা জন্মেছিল যে, যারা শারীরিক পরিশ্রম করে তারা সমাজের সম্মানের পাত্র নয়। এটা আমাদের অবনতির মূল কারণ।

শ্রমের জয়

শ্রমিক সমাজ আজ বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানবিক শ্রমের মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দেশে দেশে আজ শ্রমিক সংঘ এবং শ্রমিক কল্যাণ স্বীকৃতি লাভ করেছে। উপেক্ষিত এই শ্রমকে তারা যোগ্য সম্মান না দিলে যে সমাজে উত্থান নেই, অগ্রগতি নেই একথা আজ সারা বিশ্বের স্বীকৃতি লাভ করেছে।

শ্রমের সুফল

পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। পৃথিবীর মানুষ হিসেবে সব কাজই মানুষের করণীয়। তাতে যেমন কাজের কোন জাতিভেদ নেই, যারা সেই কাজ করে তাদেরও কোন জাতিভ নেই। সুতরাং পরিশ্রম করা মোটেই সম্মানহানিকর নয়। এতে ব্যক্তির আত্ম উন্নয়ন যেমন হয়, তেমন হয় দেশের কল্যাণ। শ্রম বিমুখ জাতির পতন অনিবার্য। 

জগতের মহামনিশিরা সকলেই পরিশ্রম করেছে এবং শ্রমের মর্যাদা দিয়ে গেছে। জগতের এত যে কীর্তি স্থাপিত হয়েছে তার মূলে রয়েছে মানুষের চিন্তা, পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়। শ্রমকে ঘৃণার চোখে বিচার করলে দেশে উৎপাদনের জোয়ার আনা যায় না, জাতীয় সমৃদ্ধির স্বপ্ন রচনা করা যায় না।

পরিশ্রমের উন্নতি ও আনন্দ

জীবনকে সাফল্য করার জন্য মানুষকে স্বাবলম্বী হতে হয়। আর এজন্য প্রয়োজন পরিশ্রম। শ্রম লব্ধ সাফল্যের আনন্দ পরিশ্রমী উপভোগ করে থাকে। স্বাবলম্বী লোক আত্মশক্তিতে বিশ্বাসী এবং শ্রমের মর্যাদা সম্বন্ধে সচেতন। 

তাই তিনি আত্মনির্ভর উন্নত চরিত্রের অধিকারী হয়ে অকৃত্রিম আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। মোট কথা, পরিশ্রম লব্ধ কাজে সফলতা যে আনন্দ তা সত্যি নির্মূল এবং উপভোগ্য।

উপসংহার

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে,"God helps those who help themselves" অর্থাৎ যে নিজেকে সাহায্য করে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। এ জন্য সকলকে শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। বৃথা আভিজাত্যের ভাব ত্যাগ করে সকল পরিশ্রমকে মর্যাদার বস্তু বলে গণ্য করতে হবে। তাই শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা সকলের কাম্য।

শ্রমের মর্যাদা রচনা

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা শ্রমের মর্যাদা রচনাটি তোমাদের মাঝে সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করছি রচনাটি তোমাদের পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেতে সাহায্য করবে।

ভূমিকা

“পৃথিবীর পরে চিরসত্য অতি
পরিশ্রমী সৌভাগ্যের প্রসূতি”

অনু থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত বিশ্ব সভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে শ্রম। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত এ পৃথিবীর সব কাজে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা সহ যা কিছু দৃশ্যমান তার সবই অর্জিত হয়েছে শ্রমের দ্বারা। ইংরেজিতে একটি কথা আছে “Industry is the key to success” অর্থাৎ পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি। 

পরিশ্রম দ্বারা মানুষ সৌভাগ্যের স্বর্ণ শিখরে আহরণ করতে পারে। পরিশ্রম লব্ধ কার্যের কৃতকার্যতায় যে আনন্দ পাওয়া যায়, তার মত আনন্দ আর কিছুতেই পাওয়া যায় না।

শ্রমের গুরুত্ব

মানব জীবনে যে উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে এবং মানব সভ্যতার যে বিকাশ ঘটেছে তাতে শ্রমদানের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ শ্রম দেয় বলেই সভ্যতার চাকা ঘোরে। Virgil বলেন, The dignity of labour makes a man self-confident and high ambitious. So, the evaluation of labour is essential. সুতরাং জীবনের উন্নতির চাবিকাঠি পরিশ্রমের মধ্যে বিদ্যমান। দিতে পারে ঐশ্বর্য। 



এজন্য ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে Industry is the mother of good luck. মানব সভ্যতার প্রতিটি স্তরে আছে শ্রমের অবদান। সেই আদি পর্বে শৈশবে মানুষ কায়িক আর মানসিক শ্রমের সহায়তায় তির ও নৌকা চালান শিখেছে। তারপর সভ্যতার কৈশোরে চাষাবাদ শুরু করেছে মানুষ, পরিশ্রমে গড়ে তুলেছে শস্য আর যৌবনে শিখেছে প্রাসাদ নির্মাণ নগর পত্তন। তাইতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন,

“চাষী খেতে চালাইছে হাল
পাতি বসে তাঁত বোনে জেলে ফেলে জাল
বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার তারি পরে
ভর দিয়ে চলিতেছে বিশ্ব সংসার”

শ্রমের ক্ষেত্র

মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য নির্মাতা। এ ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয় শ্রম দ্বারা। সৌভাগ্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহণের একমাত্র উপায় শ্রম। কর্মমুখর মানব জীবনে নিরন্তর কোন না কোন প্রতিকূলতায় টিকে থেকেই অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়। তাই বলা যায় জগৎ কর্মশালা আর জীবন মাত্রই পরিশ্রমের ক্ষেত্র।

আমাদের দেশের শ্রম সম্পর্কে ধারণা

আমাদের দেশে অনেকের ধারণা নিজে কাজ করলে আত্মসম্মানের হানি ঘটে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, কায়িক শ্রমের মাধ্যমে তারা উন্নতির স্বর্ণ শিখরে আরোহন করছে। তাই আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে শ্রম বিমুখতা আত্মহত্যারই নামান্তর। 

এর ভ্রান্ত ধারণা আমাদের সমাজের জন্য যে কি ক্ষতিকর্তা বলে শেষ করা যায় না। মোটেই আত্মসম্মানের পরিপন্থী নয়। বরং তা সমাজের প্রতিষ্ঠা লাভের প্রধান উপায়। আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকেরা চাকরি প্রত্যাশী। 

কায়িক শ্রমিকে হিরো ভেবে অনেকেই তা করতে আগ্রহী নয়। তাদের মতে খেতের চাষী, কলকারখানার শ্রমিক, কুলি মজুর সকলেই ছোট লোক। অথচ দেশ ও জাতিকে রক্ষার মহান দায়িত্ব এরাই বহন করে।

উন্নত দেশ সমূহের শ্রমের মর্যাদা

পৃথিবীর উন্নত দেশ সমূহের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, শ্রমের প্রতি তারা বেশ মর্যাদাশীল। কোন শ্রমকেই তারা মর্যাদা হানিকর মনে করে না। ছোট বড় বলে সেখানে কোন পার্থক্য নেই। শ্রমের প্রতি তারা বেশ আগ্রহ দেখিয়ে থাকে। শ্রমের বলেই তারা উন্নতির চরম শিখরে আহরণ করেছে। 

একমাত্র শ্রমের বলেই আজ জাপান, জার্মান প্রভৃতিদের সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহন করেছে। পৃথিবীর যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। উন্নত জাতি কাজকে কাজ বলেই জানে। অথচ আমাদের দেশে তার উল্টো ঘটে।

শ্রমের আবশ্যকতা

পবিত্র কুরআনে শ্রমের অবশ্য কথা সম্পর্কে বলা হয়েছে-“লাইসা লিল ইনসানে ইল্লা মাসাআ” অর্থাৎ মানুষের জন্য শ্রম ব্যতীত কিছুই নেই। তাই মানুষের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। অলস এবং শ্রমবিমুখ ব্যক্তিরা কোনদিন শান্তি ও আনন্দ লাভ করতে পারে না। কর্মহীন জীবন বোঝা স্বরূপ। মানুষ শ্রম ব্যতীত কোন কিছুই লাভ করতে পারে না। 

পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকার জন্য যেমন শ্রমের প্রয়োজন তেমনি পরলোকের পথেও শ্রম সাপেক্ষ। ছাত্রদের ক্ষেত্রেও শ্রমের আবশ্যকতা অত্যন্ত বেশি। অলস এবং শ্রমবিমুখ ছাত্র যতই মেধাবী হোক না কেন সে জীবনে উন্নতি করতে পারে না। 

এ পৃথিবীতে যত বড় বড় কাজ সমাধান হয়েছে তার মূলে রয়েছে শ্রম। এ পৃথিবীর যে জাতি যত বেশি শ্রমশীল সে জাতি তত বেশি উন্নতি লাভ করেছে। কাইক পরিশ্রম দ্বারা মানুষ জীবজগতে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে এবং প্রাকৃতিক শক্তি গুলোর ওপর নিজের প্রভাব কায়েম করতে সক্ষম হয়েছে।

ব্যক্তি জীবনের শ্রমের গুরুত্ব

শ্রম বিমুখ ব্যক্তি কখনোই জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে না। সামাজিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে হলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই শারীরিক ও মানসিক শ্রমকে সমান মূল্য দেওয়া উচিত। অন্যথায় জীবনে নেমে আসে অভিশাপ। বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবনপর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, নিরলস শ্রম সাধনায় তাদের সাফল্যের একমাত্র কারণ। 

সমষ্টিগত জীবনকে সুন্দর ও মহিমাময় করতে শ্রমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে শ্রমের গুরুত্ব আরো গভীর ও ব্যাপক। কেননা শ্রম বিমুখ ব্যক্তি সাফল্যের ছোঁয়া থেকে চিরকালই বঞ্চিত থাকে।

শ্রমের প্রকারভেদ

জৈনক মনীষী বলেছেন, “অস্থায়ী জীবনটাকে যত বেশি পারো কাজে লাগাইয়া লও” শ্রমের মাধ্যমেই মানুষ তার জীবনকে সার্থক করতে পারে। শ্রম সাধারণত দুই প্রকার-
  • মানসিক শ্রম
  • কায়িক শ্রম
মানসিক উন্নতিতে শ্রম

মানসিক উন্নতি ও শ্রম ছাড়া হয় না। কথায় আছে,“অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা” যে লোক শ্রম বিমুখ থাকে তার মনে কখনো সুচিন্তা ও সৎ ভাব উদয় হয় না। বরং চিন্তার আশ্রয়স্থল হয়ে পড়ে। পরিশ্রমী ব্যক্তির মন ও মস্তিষ্ক কুক্রিয়া চুক্তি থেকে সর্বদা দূরে থাকে। গণিত, সাহিত্য, দর্শন প্রভৃতি গ্রন্থ পরিশ্রম করে পাঠ করলেও আলোচনা করলে মানসিক উন্নতি হয়।

কায়িক শ্রম

জগতের সকল জীবকেই বেঁচে থাকার তাগিদে কমবেশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিতে হয়। মানসিক শ্রম একটা কাজের উদয় করে আর শারীরিক শ্রম তার সমাধান করে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের শারীরিক শ্রমের নিমিত্তে হাত, পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। 

শারীরিক শ্রম আত্মসম্মানের পরিপন্থী নয়, বরং সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের প্রধান উপায়। চাষী, শ্রমিক, কুলি, মজুর এরা দেশ ও জাতিকে রক্ষার মহান দায়িত্ব নিয়েই শারীরিক শ্রমে আবতীর্ণ হয়।

শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ

পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তি ও মনীষীগণের জীবনী আলোচনা করলে দেখা যায় তারা সকলেই পরিশ্রমী ছিলেন। ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সা,) কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। তিনি নিজ হাতে সকল কাজ সমাধান করতেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন সৈনিক। আবার মাটি কাটার কাজে সাধারণ শ্রমিকের মতো কাজ করে গেছেন। তাতে তিনি লজ্জাবোধ করেননি। তিনি বলেছেন নিজের কাজ করার মত পবিত্র জিনিস আর নেই।

সভ্যতা বিকাশের শ্রম

মানব সভ্যতার বুনিয়াদ তৈরি করেছে শ্রম। একদিন গুহা বাসি মানুষ জীবন সংগ্রামের তাগিদে পাথরের নুড়ি দিয়ে শ্রমের সাহায্যে হাতিয়ার তৈরি করতে শিখেছিল। তারপর লক্ষ কোটি মানুষের তিল তিল শ্রমে গড়ে উঠেছে আজকের সভ্যতার বিজয়স্তম্ভ। মানুষ যদি নিষ্কর্মা হয়ে ভাগ্যের হাতে আত্মসমর্পণ করে বসে থাকতো, তাহলে আমাদের সামনে এর সমুন্নত সভ্যতার বিকাশ হতো না। 

বিশ্ব পানের দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। রাশিয়া, চীন, আমেরিকা, জার্মানি, জাপান প্রভৃতি দেশ শ্রমের পরিক্রমাতেই এত বেশি উন্নত। যুগ যুগ ধরে মানুষের কঠোর পরিশ্রম পৃথিবীতে বাসযোগ্য করেছে। সভ্য তাকে করেছে সমৃদ্ধ।

উপসংহার

একমাত্র শ্রমশক্তি পাড়ে মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহন করাতে। এ শক্তিকে জাগরিত করার মাঝেই আমাদের মঙ্গল নিহিত। আমাদেরকে শ্রম সম্পর্কিত সকল ভ্রান্ত ধারণা পরিহার করে ও যেকোনো শ্রমকে মর্যাদা হানিকর মনে না করে পরিশ্রমী হতে হবে। তাহলে আমাদের জীবনে ও আমাদের দেশের উন্নতি সম্ভব হবে।

শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ প্যারা

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমরা কি শ্রমের মর্যাদা রচনার ২০ টি প্যারা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছো? তাহলে আর দেরি না করে চলো জেনে নেই শ্রমের মর্যাদা রচনা-

ভূমিকা

পৃথিবী এক বিশাল কর্মক্ষেত্র। কালের পরিক্রমায় বিবর্তনের নানা স্তর বেরিয়ে আধুনিক বিশ্ব সভ্যতা যে ঐশ্বর্যময় রূপ পরিগ্রহ করেছে তা পরিশ্রমেরই সম্মিলিত যোগফল। মানব জীবনের উন্নতি অগ্রগতি, সভ্যতা সংস্কৃতি, এমনকি অস্তিত্ব শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীতে অবস্থানরত ক্ষুদ্র পিঁপড়া থেকে শুরু করে বৃহৎ হাতি পর্যন্ত সকলকেই পরিশ্রম করতে হয়।

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

অলস ব্যক্তি কখনো ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না। কারণ সৌভাগ্য কখনো কারো কাছ থেকে ধার পাওয়া যায় না। সৌভাগ্য অর্জন করতে হলে অবশ্যই আপনাকে কঠোর শ্রম সাধন করতে হবে। পৃথিবীতে যত মনীষীরা আছে তাদের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নিরন্তর প্রচেষ্টা ও কঠোর শ্রমের দাঁড়ায় তারা নিজের ভাগ্য নির্মাণ করেছেন।

শ্রম সম্পর্কে ধারণা

শ্রম সাধারণত দুই প্রকার। শারীরিক শ্রম ও মানসিক শ্রম। আমরা অনেকেই আছি যারা শারীরিক শ্রমকে অমর্যাদা কর ও অসম্মানজনক মনে করে থাকি। অনেকেরই ধারণা শ্রমজীবী মানুষ যেমন কুলি, মজুর, চাষী, শ্রমিক এরা ছোট জাতের মানুষ। কিন্তু এটা মোটেও ঠিক নয়। জাতি গঠনের ক্ষেত্রে এবং জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে এদের অবদানই সবচেয়ে বেশি।

শ্রমের আবশ্যকতা

মানুষ হিসেবে মর্যাদা পেতে হলে এবং সফলতা অর্জন করতে হলে প্রয়োজন হল কঠোর শ্রম সাধন। মানুষ কখনো কারো অন্নের সংস্থান করে দেবে না। নিজের অন্য নিজেকেই জোটাতে হবে। যার কারণে বেঁচে থাকতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে যা আপনার ভাগ্য পরিবর্তন করতে সহায়তা করবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমের গুরুত্ব

পবিত্র কুরআনে ও হাদিসে শ্রমের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“যে মানুষ যত বেশি কর্তব্য নিষ্ঠুর তার সফলতা তত বেশি হয়”। আমাদের প্রিয় নবী শৈশবকাল থেকে শ্রম প্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি শৈশবে চাচার ব্যবসা পরিচালনার জন্য সিরিয়া যেতেন।

ভাগ্য নির্মাণ ও প্রতিভা বিকাশে পরিশ্রম

মানুষ হলো আপন ভাগ্যের কারিগর। যদি মানুষ যদি কঠোর পরিশ্রম করে তাহলে নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করতে পারে। কারণ ভাগ্য নির্মাণের হাতিয়ারই হল পরিশ্রম। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ রয়েছে- God helps those who help themselves অর্থাৎ যে ব্যক্তি পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করবে না আল্লাহ তাকে সাহায্য করবে না। 


এছাড়াও প্রত্যেক মানুষের মধ্যে তাদের নিজস্ব কিছু প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। শুধুমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ তাদের সুপ্ত প্রতিভা গুলোর বিকাশ ঘটাতে পারে।

ব্যক্তিগত শ্রম ও জাতীয় উন্নয়ন

ব্যক্তির উন্নয়নের ওপর জাতীয় উন্নয়ন নির্ভরশীল। এবং ব্যক্তির উন্নয়ন হলো পরিশ্রমের উপর নির্ভরশীল। শ্রম বিমুখ ব্যক্তিরা হল জাতির বোঝা। কারণ অলস ব্যক্তি নিজে যেমন সমস্যায় জর্জরিত থাকেন তেমনি জাতীয় উন্নয়নেও বাধাগ্রস্থ করে। তাই ব্যক্তি, জাতি ও শ্রম এক সূত্রে গাথা।

শ্রম ও সভ্যতা

পরিশ্রম হল সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রক এবং সভ্যতা বিকাশের সহায়ক। মানব সভ্যতার উন্নতিতে শ্রমের অবদান সবচেয়ে বেশি। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। সভ্যতার উন্নতির জন্য প্রয়োজন শারীরিক ও মানসিক শ্রমের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস।

শ্রমের গুণ

শ্রম এমন একটি জিনিস যা পাহাড় ভেঙে রাস্তা তৈরি করে, বন কেটে তৈরি করে বসতি। শ্রম গরিবকে ধনী, অসভ্য বর্বর জাতিকে রূপান্তরিত করে সভ্য জাতিতে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য সব দামি হাতিয়ার হল পরিশ্রম। যে যত বেশি পরিশ্রমই হবে সে তার ভাগ্য তত ভালোভাবে পরিবর্তন করতে পারবে।

শ্রম ও মর্যাদা

কথা আছে, বসে বসে খেলে রাজার রাজত্বেও কুলায় না। তখন রিক্ত হস্ত হয়ে মর্যাদাহীন হয়ে পড়তে হবে। তাই শ্রমের মর্যাদা দিতে শিখবে সে সম্মানিত হবে। বিশিষ্ট ইংরেজি সাহিত্যিক কার্লাইল শারীরিক পরিশ্রমকে পবিত্র বলে অভিহিত করেছে।

শ্রম ও স্বাস্থ্য

নিয়মিত পরিশ্রম না করলে শরীর ভালো রাখতে কৃত্রিমভাবে ব্যায়াম করতে হয়। নিয়মিত পরিশ্রম করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নানা রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিশ্রম করলে ব্যায়ামের প্রয়োজন পড়ে না।

মানসিক উন্নতিতে শ্রম

পরিশ্রমের ফলে শরীর ভালো থাকে। আর শরীর ভালো থাকলে মন ভালো থাকে। কথায় বলে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। পরিশ্রমী মানুষ সর্বদা নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে। যার কারণে তার মাথায় কোন আজেবাজে চিন্তা ঢুকতে পারে না।

বাংলাদেশের শ্রমের মর্যাদা

বাংলাদেশের দারিদ্রতার অন্যতম কারণ হলো শ্রমের অমর্যাদা। কারণ এদেশের কায়িক শ্রমকে ঘৃণা করা হয়। কায়িক শ্রমজীবীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। শ্রমিককে তার প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হয় রবি ঠাকুর বলেন-

বাঙালি মোরা ভদ্র অতীত পোষ মানা প্রাণ
বোতাম আটা জামার নিচে শান্তিতে সয়ান

উন্নত দেশের শ্রমের মর্যাদা

পৃথিবীর অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলো শ্রমিকদের মূল্যায়নের ফলে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে। উন্নত দেশগুলো কোন কাজকেই ছোট বা ঘৃন্ন করে দেখেনা। বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, জাপান, চীন, জার্মান, ব্রিটেন প্রভৃতি দেস এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

শ্রমিক লাঞ্ছনা

সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষেরা গ্রহণ করেছে সম্মানজনক ও গৌরবের কাজগুলো। সমাজে সমস্ত সুখ সুবিধা নিজেদের কুক্ষিগত করে তারা তথাকথিত নিম্ন শ্রেণীর মানুষের নিক্ষেপ করেছে ঘৃণ্য ও বঞ্চনার অন্ধকারে। অথচ সেই শ্রমিক রায় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অথচ স্বার্থপর সমাজের কাছ থেকে তারা পায়নি মানুষের মর্যাদা।

শ্রমের জয়

শ্রমিক দুনিয়ায় প্রতি সকলের দৃষ্টি আজ আকৃষ্ট হয়েছে। দেশে দেশে আশ্রমিক সংঘ এবং শ্রমিক কল্যাণ স্বীকৃতি লাভ করেছেন। শ্রমকে যদি যোগ্য সম্মান না দেওয়া হয় তাহলে সমাজে কোন উন্নতি হবে না, অগ্রগতি হবে না কি কথা আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

প্রাণীকুলে শ্রমের দৃষ্টান্ত

মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষ থেকে অতি তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র প্রাণী ও নিরলস পরিশ্রম করে তাদের জীবন কাটায়। ক্ষুদ্র পিপড়া শীতের সঞ্জয়ের জন্য গ্রীষ্মকালে নিরলস ভাবে খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। অতি ক্ষুদ্র উইপোকাও কঠোর পরিশ্রমে গড়ে তোলে তার বিশাল আকৃতির ঢিবি। 

এছাড়াও বর্ণ পশু পাখি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাদ্যের জন্য মনে হয় ঘুরে বেরায়। প্রত্যেক প্রাণী তার জায়গা থেকে নিরলস ভাবে শ্রম দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।

শ্রমবিমুখতার পরিনাম

শ্রম দেখে যারা দূরে থাকে এবং শ্রমের প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয় না তাদের জীবনের প্রতি পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়। সারাক্ষণ তাদের অভাব অনটন জরা ব্যাধি নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। সাফল্য কিংবা সম্পদ এমনিতে কারো হাতে ধরা দেয় না এর জন্য প্রয়োজন কঠিন পরিশ্রম। 

পৃথিবীতে যে জাতি অলস সে জাতির কোন উন্নতি নেই। সফলতার সোনার হরিণ তাদের কাছে কোশ্চেনকালেও ধরা দেয় না। বর্তমান সভ্য দুনিয়ায় যে দেশ ও জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে দেশ ও জাতি তত বেশি উন্নত।

উপসংহার

যে নিজেকে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করে। তাই সকলকেই শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। ছোট-বড় সকল পরিশ্রমকে সম্মানের সঙ্গে দেখা উচিত। নয় এই শিক্ষা সকলকে গ্রহণ করে পরিশ্রমী হতে হবে। তবেই এই জাতি উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাবে।

শ্রমের মর্যাদা রচনা ক্লাস 10

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা শ্রমের মর্যাদার এই রচনাটি ক্লাস 10 এর শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই কার্যকর হবে। শুধুমাত্র ক্লাস 10 নয় তোমরা চাইলে এই রচনাটি ক্লাস 6-10 পর্যন্ত অনায়াসে ব্যবহার করতে পারো। রচনাটি সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় তোমাদের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এই রচনাটি তোমাদের পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেতে সাহায্য করবে।

ভূমিকা

পৃথিবীর সব জিনিস মানুষের শ্রম লব্ধ। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে কঠোর পরিশ্রম করেই বেঁচে থাকতে হয়। আমাদের জীবনে উন্নতি করতে হলে, জীবন যাত্রার মান বাড়াতে হলে, জীবনকে সুখী করতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। 

জীবনে অর্থ, বিদ্যা, যশ, প্রতিপত্তি অর্জন করতে হলে তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। কর্ম সাধনার মাধ্যমে জীবনে সফলতার স্বর্ণ দুয়ারে পৌঁছানো সম্ভব। তাই শ্রমেই সফলতা,শ্রমেই সুখ,শ্রমেই জীবন।

শ্রম কি ও শ্রমের ধরন

মানুষ কোন কাজ সম্পন্ন করতে যে শারীরিক বা মানসিক শক্তি দিয়ে থাকে তাকে শ্রম বলে। শ্রম সাধারণত দুই ধরনের। যথা মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। পৃথিবীতে জীবন যাপন করতে হলে সব মানুষকে কম বেশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম করতে হয়। প্রত্যেক মানুষই তাদের নিজ নিজ কর্ম ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিয়ে থাকে।

মানসিক শ্রম

কোন কাজে মন ও মেধা শক্তির ব্যবহারই মানসিক শ্রম। কোন কাজ শুধু করলেই হয় না, তা সঠিক উপায়ে করা ও সুষ্ঠু উপায় সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন মানসিক শ্রম। কথায় আছে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” অলস ব্যক্তির মাথায় কুচিন্তা ছাড়া আর কিছুই আসে না। অন্যদিকে যে ব্যক্তি কর্মের সাথে সর্বদা জড়িত থাকে তার মাথায় কোন কুচিন্তা চিন্তা আসে না। 

সে তার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে এবং তার মাথায় কাজ নিয়েই নিত্যনতুন ভাবনা আসতে থাকে। দেশ-বিদেশের সকল বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, লেখক সাহিত্যিক, দার্শনিকেরা মূলত মানসিক শ্রমের মাধ্যমে কর্ম সম্পাদন করেন।

শারীরিক শ্রম

মানুষ তার শারীরিক শক্তি দিয়ে কোন কাজে যে শ্রম দেয় তাই শারীরিক শ্রম। মানসিক শ্রম একটি কাজের উদ্ভব করে, আর্কাইক্রম সেই কাজকে বাস্তবায়ন করে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে হাত-পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছে কায়িক শ্রমের জন্য। 

কোন কাজকেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। এদেশের কায়িক শ্রমিক কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, মজুরেরা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সাম্যের কবি নজরুল বলেছেন-

তোমারে সেবিতে হইলো যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধুলি,
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরই ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসেনা বউ উত্থান।

শ্রমের ক্ষেত্র

"Man is the architect of this fortune" অর্থাৎ মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। এ কর্মমুখর জীবনে মানুষকে নিরন্তর কোন না কোন প্রতিকূল পরিবেশে বসবাস করতে হয়।"Life is not a bed of rose" জীবন পুষ্প সজ্জা নয়। 

মানুষকে এ প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হলে একমাত্র শ্রমের সাহায্যে টিকে থাকতে হবে। তাই বলা যেতে পারে মানব জীবন মাত্রই শ্রমের কর্মশালা আর পৃথিবী হলো কর্মক্ষেত্র।

শ্রম ও সভ্যতা

বর্তমান শতাব্দীর উন্নতির মূলেও রয়েছে নিরলস শ্রমের অবদান। শ্রমজীবী মানুষই নতুন নতুন সভ্যতার সৃষ্টি করেছে। সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ কায়িক শ্রম আর মানসিক শ্রমের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় তির ওর নৌকা চালানো শিখেছে, স্বীকার করে মাংস খেতে শিখেছে। 

তারপর সভ্যতার কৈশোরে চাষাবাদ করে আঙিনায় সোনার ফসল উঠিয়েছে। আর সভ্যতার যৌবনে প্রাসাদ নির্মাণ, নগর পত্তন, দুর্গ, সেতু, পরিখা, পথঘাট প্রভৃতি তৈরি করতে শিখেছে। গ্রিক ও রোম সভ্যতা গড়ে উঠেছে বুদ্ধিজীবীদের মানসিক শ্রম আর ক্রীতদাসদের কায়িক শ্রমে।

শ্রমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

পৃথিবী নামক এই সংসার সংরাঙ্গনে শ্রমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ও অনস্বীকার্য। সুখ, সমৃদ্ধি, ধন ও ঐশ্বর্য এর মূলে রয়েছে শ্রম। বাংলা একটি প্রবাদ আছে,“পরিশ্রমে আনে ধন পুণ্যে আনে সুখ, অলস্যে দারিদ্র আনে পাপে আনে দুধ”। 

শ্রমের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন,“মানুষের জন্য শ্রম ব্যতীত আর কিছুই নেই”। আসলে শিশুর পরিবর্ধনের ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধের মতোই ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে শ্রমের কোন বিকল্প নেই কবিগুরু বলেন।

উন্নত বিশ্বে শ্রমের মর্যাদা

বিশ্বের যে সকল দেশ আজ সবার মাথা উঁচু করে উন্নতির আসনে সমাসীন, তাদের মূলে রয়েছে শ্রমের মর্যাদা। সেসব দেশে মানুষ শ্রমের মর্যাদা দিতে জানে এবং কোন কাজকে তারা ছোট করে দেখেনা। আমাদের দেশের শ্রমিকের যথাযথ মর্যাদা নেই বলে তারা কাজের প্রতি উদাসীন হয়ে চলে যায় বিদেশে।

চীন, জাপান, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি দেশের শ্রমকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়। এসব দেশের উন্নয়নের পিছনে রয়েছে ব্যাপক শ্রম তৎপরতা এবং শ্রমের প্রতি অসামান্য শ্রদ্ধা প্রদর্শন। আমাদের দেশেও এইরুপ শ্রমের মর্যাদা দেয়া হলে দেশ উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছতে পারবে।

ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মের শ্রমের মর্যাদা

সব ধর্মেই শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মেও শ্রমের মর্যাদার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজের সকল কাজ নিজের হাতে করতেন। তিনি কোন কাজকে ছোট মনে করতেন না। তিনি তার সাহাবীদের কেউ নিজ হাতে কাজ করার জন্য উৎসাহ দিতেন। 

শ্রমের মর্যাদা দিতে গিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার পাওনা পরিশোধ করে দাও। আবার উপনিষদের বলা হয়েছে, শ্রম বিনা শ্রী হয়না, ।এতে শ্রমের মর্যাদার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

পরিশ্রমী ব্যক্তিত্ব

বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেন-“আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও পরিশ্রমের ফলে বিরুহ তথ্যগুলোর রহস্য আমি ধরতে পেরেছি”। বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন এক হাজার বারের চেষ্টায় বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করতে পেরেছেন। দার্শনিক ডালটন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন-“লোক আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানিনা”।

কর্ম বিমুখ ব্যক্তির অবস্থা

শ্রম ব্যতীত ব্যক্তি জীবনে সফলতা আসে না। শ্রম বিমুখ ব্যক্তি তার জীবনের কোন অর্থ খুঁজে পায় না। সে তার জীবনে চলার পথে স্বজনীয় ভাবে পরাজয় বরণ করে। হতাশার জালটাকে ঘিরে ফেলে। ফলে তার জীবন সমাজের অন্ধকার অতল গহব্বরের দিকে ধাবিত হয়।

ছাত্র জীবনের শ্রমের গুরুত্ব

ছাত্র জীবনের শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। অলস, কর্ম বিমুখ ও হতাশ ছাত্রছাত্রী কখনো বিদ্যালয়ে সফলতা লাভ করতে পারে না। একজন পরিশ্রমী ছাত্র বা ছাত্রী স্বল্প মেধা সম্পন্ন হলেও তার পক্ষে সফলতা অর্জন করা কঠিন নয়। সমাজ বিজ্ঞানী পার্সো বলেন,“প্রতিভা বলে কিছুই নেই, সাধনা কর, সিন্ধি লাভ হবেই”।

জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব

শ্রমহীন কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। তাই ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জাতির জীবন পর্যন্ত শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা সমবেত পরিশ্রমের মাধ্যমে জাতিয় উন্নয়নের অবদান রাখতে পারি।

শ্রমের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারি। জাতীয় সম্পদে উন্নতির জন্য চাই সাধনা ও ধর্য্য। মূলত শ্রমের উপরই নির্ভর করে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

শ্রমের জয়

এক সময় মানুষ অনেক ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করলেও তার যথাযথ প্রাপ্য মূল্যায়ন পেত না। তাদেরকে নানাভাবে শাসন ও শোষণ করা হতো। তাই মানুষ শ্রমের মর্যাদা লাভের জন্য আন্দোলনে লিপ্ত হয়। ১৮৮৫ সালের মে মাসে আমেরিকা-যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকের তাদের ন্যায্য দাবি পাওয়ার জন্য আন্দোলন করে। এতে পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায়। 

এতে অনেক শ্রমিক হতাহত হয়। ঐদিন থেকে প্রতি বছর ১ মে বিশ্ব মে দিবস পালন করা হয়। এবং শ্রমিকেরা ক্রমক্ষেত্রে তাদের ন্যায্য অধিকার লাভ করে। বিশ্ব মে দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হলো শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য তাদেরকে সচেতন করা।

উপসংহার

পৃথিবীতে স্মরণীয় বরণীয় হতে হলে, সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে হলে, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে শ্রমের বিকল্প নেই। ব্যক্তিগত শ্রমের সমষ্টিতে আসে জাতীয় জীবনে সফলতা। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ মহৎ কার্যবলি সম্পাদন করে। 

এ সম্পর্কে মার্কোস বলেন,“জীবন যার মহৎ কাজে পরিপূর্ণ, মৃত্যুর পর্দার কবরে মার্বেল পাথরের কারো কাজ না থাকলেও কিছু আসে যায় না”। তুমি মানুষের জীবনকে মহৎ করে তোলে। তাই আমাদের সবাইকে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।

শ্রমের মর্যাদা রচনা SSC

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমরা কি SSC পরীক্ষার জন্য শ্রমের মর্যাদা রচনাটি খুজছো? আমি তোমাদের জন্য এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সহজ ও সাবলীল ভাষায় SSC পরীক্ষার জন্য শ্রমের মর্যাদা রচনাটি উপস্থাপন করেছি। আশা করছি রচনাটি তোমরা ভালোভাবে পড়লে পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাবে।

ভূমিকা

কর্মই জীবন। সৃষ্টির সমস্ত প্রাণীকেই নিজ নিজ কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে হয়। ছোট্ট পিঁপড়া থেকে বিশাল হাতি পর্যন্ত সবাইকেই পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম দ্বারাই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে নিজেকে আলাদা করেছে। পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ নিজের ভাগ্য বদলেছে এবং বহু বছরের শ্রম ও সাধনা দ্বারা পৃথিবীকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

শ্রম কি

শ্রমের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে মেহনত, দৈহিক খাটুনি। সাধারণত যে কোন কাজই হল শ্রম। পরিশ্রম হচ্ছে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সংগ্রামের প্রধান হাতিয়ার। পরিশ্রমের দ্বারাই গড়ে উঠেছে বিশ্ব ও মানব সভ্যতার বিজয়স্তম্ভ।

শ্রমের শ্রেণীবিভাগ

শ্রম দুই প্রকার। মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। শিক্ষক, ডাক্তার, বৈজ্ঞানিক, সাংবাদিক, অফিসের কর্মচারী শ্রেণীর মানুষ যে ধরনের শ্রম দিয়ে থাকে সেটিকে বলে মানসিক শ্রম। আবার কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, জেলে, মজুর শ্রেণীর মানুষের শ্রম হচ্ছে শারীরিক শ্রম। 

কাজের ধরন অনুসারে এক এক শ্রেণীর মানুষের পরিশ্রম এক এক ধরনের হয়। তবে শ্রম শারীরিকভাবে মানসিক যাই হোক না কেন উভয়ের মিলিত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা।

শ্রমের প্রয়োজনীয়তা

মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যবিধাতা। তার এই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। তাই মানব জীবনে পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কর্মবিমুখ অলস মানুষ কোনদিন উন্নতি লাভ করতে পারে না। পরিশ্রম ছাড়া জীবনের উন্নতি কল্পনা মাত্র। 

জীবনে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করতে হলে নিরলস পরিশ্রম দরকার। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। একমাত্র পরিশ্রমী মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে।

শ্রমের মর্যাদা

মানুষের জন্ম স্রষ্টার অধীন, কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। জীবন ধারণের তাগিদে মানুষ না না কর্মে নিয়োজিত হয়। কৃষক ফসল ফলায়, কাপে কাপড় বনে, জেলে মাছ ধরে, শিক্ষক ছাত্র পড়ান, ডাক্তার চিকিৎসা করেন, বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন। এরা প্রত্যেকেই মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।

পৃথিবীতে কোন কাজে ছোট নয়। অর্থ সামাজিক পদমর্যাদায় হয়তো সবাই সমান নয়। কিন্তু এদের প্রত্যেকেরই মেধা, মনন, ঘাম ও শ্রমের সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তাই সকলের শ্রমের প্রতি আমাদের সমান মর্যাদা ও শ্রদ্ধা থাকা উচিত। 

উন্নত বিশ্বে কোন কাজকেই তুচ্ছ করা হয় না। সমাজের প্রতিটি লোক নিজের কাজকে গুরুত্ব দিয়ে করার চেষ্টা করে। তাই চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা প্রভৃতি দেশ উন্নতির চরম শিখরে উঠেছে।

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

সৌভাগ্য আকাশ থেকে পড়ে না। জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনার দরকার হয়। সব মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে। পরিশ্রমের দ্বারা সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। যে মানুষ কর্মকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে, জীবন সংগ্রামে তারই হয়েছে জয়। 

কর্মের প্রতি নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি জীবনে সফল সৈনিক হতে পারে। কর্মহীন ব্যক্তি সমাজের বোঝা শুরু। অন্যদিকে শ্রমশীলতাই মানব জীবনের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। আমাদের জীবনে উন্নতি করতে হলে জীবনে সুখী হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

উপসংহার

পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রক নয়, সভ্যতা বিকাশের ও সহায়ক। মানব সভ্যতার উন্নতি অগ্রগতিতে শ্রমের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা স্বাধীন সর্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ও সাধনা আমাদের। তাই কোন প্রকার শ্রম থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে থাকলে চলবে না। শ্রমের বিজয় রথে চড়ে আমাদের উন্নত সভ্যতার সিংহদ্বারে পৌঁছাতে হবে।

লেখকের মন্তব্য-শ্রমের মর্যাদা রচনা

প্রিয় পাঠক আশা করছি শ্রমের মর্যাদা রচনা ২৫ পয়েন্ট,শ্রমের মর্যাদা রচনা,শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ প্যারা,শ্রমের মর্যাদা রচনা ক্লাস 10, শ্রমের মর্যাদা রচনা ssc সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।

চেষ্টা করব আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো নতুন নতুন আর্টিকেল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার। প্রতিদিন নিত্য নতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখুন। আপনার কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url