ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন

স্বাধীনতা দিবস রচনা জানুনভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন সম্পর্কে অনেক শিক্ষার্থী বন্ধুরা জানতে চাই। আজ সেই সব শিক্ষার্থী বন্ধুদের জন্য ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন রচনাটি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলা ভাষাকে কিভাবে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করা হয়েছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পোস্ট সূচিপত্রঃভাষা আন্দোলন ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি পড়ুন।

ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন - ভূমিকা

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। কিন্তু এই ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে অনেক ছাত্র জনতাকে। পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের মাতৃভাষাকে চিরতরে মুছে দিতে অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু বাংলা ছাত্র সমাজ সেই পরিকল্পনা বেস্তে দিয়েছে। 

আজ আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত একটি রচনা জানবো। রচনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন

অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের জন্য ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন সম্পর্কে জানতে চায়। আজ আমি আপনাদের মাঝে ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন রচনাটি খুব সহজ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। আশা করছি রচনাটি আপনাদের ভালো লাগবে। তাই আর দেরি না করে চলুন রচনাটি জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা
ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ জনপদের আদি ভাষায় ছিল বাংলা। যেটি রক্ষা করতেই পরবর্তীতে তদানীন্ত পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত আলাদা হলে জন্ম নেয় পাকিস্তানের। আর পাকিস্তান ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। 
পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান। যদিও সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক এবং ভাষাগত দিক থেকে এই দুই পাকিস্তান ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। দুই পাকিস্তানের ভাষার বিচারে বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি। পূর্ব পাকিস্তানিরা বাংলাকেই তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহার করত। 

কারণ বাংলায় ছিল এই বঙ্গ জনপদের প্রধান এবং মাতৃভাষা। ভাষা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ সচেতন ছিল অনেক আগে থেকে। তখন ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করছিল ব্রিটিশরা।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস
১৯৪৭ ও ১৯৪৮ সালের ব্রিটিশদের শাসন করা অঞ্চলগুলো স্বাধীনতা লাভ করে চারটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে রূপ পায়। সেগুলো হল ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও পাকিস্তান। বাংলা ছিল পাকিস্তানের পূর্ব অংশ। যে কারণে বাংলাভাষী ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের নবগঠিত পাকিস্তানের নাগরিক এ পরিণত হয়। 

তবে সে সময় সরকারের প্রশাসন ও সামরিক বাহিনী সব জায়গায় পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশি। পাকিস্তান সরকার যখন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিল তখন পূর্ব বাংলা থেকে এর বিরোধিতা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রবল দাবি ওঠে। 

এরপর পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিউনিকেশন বাংলাতে তাদের বিষয় তালিকা থেকে বাদ দেয়। মুদ্রা ও ডাকটিকেট থেকেও বাংলা অক্ষর মুছে দেয়।তখন পূর্ব পাকিস্তানের সব শ্রেণীর মানুষের মাঝে ক্ষোব বাড়তে থাকে। বাংলার পন্ডিত এবং শিক্ষিত সমাজ মত দেন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার। তারা বলেন উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ নিরক্ষর হয়ে যাবে। 

সকল সরকারি পদের ক্ষেত্রেই অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। এমন অবস্থায় ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলা কে রাষ্ট্রভাষা করার সমর্থনে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। বাংলা কে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো কার্যক্রমও নেওয়া হয়। একুশ মার্চ জেনারেল জিন্না রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা দেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তাৎক্ষণিক সমাবেশের একাংশ প্রতিবাদ করে। 

১৯৫২ সালের ২৭ এ জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন আবারও উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। এর ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২৯ শে জানুয়ারি সিদ্ধান্ত হয় ঢাকা শহরে প্রতিবাদী মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। 

রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে সমগ্র পূর্ব বাংলার প্রতিবাদ কর্মসূচি ও ধর্মঘটের আহবান করেন। আন্দোলন দমন করতে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। ফলে দিনটিতে ঢাকা শহরে সকল প্রকার মিছিল সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।

কিন্তু এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

একুশে ফেব্রুয়ারি
১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারী পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল 9 টা থেকে সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে ঢাকা শহরের স্কুল কলেজের হাজার হাজার ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমবেত হয়। তারা ১৪৪ ধারা গাড়ির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের বাংলা ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতামতকে বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকে। 

বেলা ২ টার দিকে আব্দুল মতিন এবং গাজিউল হক সহ অন্যান্য নেতারা দাবি আদায়ের অনর থাকে। ছাত্ররা ছোট ছোট দলে মিছিল নিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এমনকি ছাত্রীরা আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। ছাত্রছাত্রীরা পুলিশের দিকে ইট পাটকেল ছড়া শুরু করলে পুলিশ কাদানে গ্যাস ব্যবহার করে। 
সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসরন মাত্র মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে আব্দুল জব্বার, রফিক, বরকত সহ আরো অনেকে নিহত হয়। বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। 

উপায়ান্তর না দেখে ২২ ফেব্রুয়ারি নুরুল আমিন সরকার তড়িঘড়ি করে আইন পরিষদ বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আনেন এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মত ভাবে পাস হয়।

বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জীবনের শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতিক। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বভাসি বুদ্ধিজীবীরা বলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে দাবি ওঠে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। 

যার কারনে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবিতে সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকসহ ছাত্র জনতার বুকের তাজা রক্তে ঢাকা রাজপথ রঞ্জিত হয়। এই আন্দোলনের সাথে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আজন্ম মাতৃভাষা প্রেমী মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পূর্ব এবং পরবর্তীতে আইনসভার সদস্য ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে গেছে। এছাড়াও বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষীদের দাবির কথা বলে গেছেন। 

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুবসমাজ এতটা সাহসিকতার সঙ্গে ভাষার জন্য লড়াই করেছেন। সেই রক্ত রঞ্জিত বাংলা ভাষা এখন সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিক মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান। 

তিনি ৯ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব পপি আনানকে একটি চিঠি দেন। ২৩ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে চিঠির উত্তরে তাকে জাতিসংঘ থেকে জানানো হয় যে নিয়ম অনুযায়ী এ সংস্থা কোন ব্যক্তির আবেদন বিবেচনায় নিতে পারে না। আবেদন আসতে হবে যে কোন সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে। 

এমন পরিস্থিতিতে রফিকুল ইসলাম আরেক কানাডিয়ান প্রবাসী নাগরিক আব্দুস সালাম সহ সাতটি ভিন্ন ভাষার দশ জন সদস্যকে নিয়ে গড়ে তোলেন“দা মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দা ওয়ার্ল্ড” নামের একটি সংগঠন। ২৯ মার্চ ১৯৯৮ সালে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে দশ সদস্যে স্বাক্ষর সম্বলিত একই প্রস্তাব জাতিসংঘে পাঠানো হয়। 
অবশেষে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর দিবার্ষিক ৩০ তম সাধারণ সভার শেষ দিনে, অর্থাৎ 17 নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয় এবং সেদিনই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।

২০০০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বর্তমান বিশ্বের বাংলাদেশ,-ভারত ও সিয়েরা লিওন এ তিনটি দেশের সরকারি ভাষা বাংলা।

উপসংহার
কিছু ঘটনা চেতনার আলো ছড়ায় সারা বিশ্বে। তেমনি একটি ঘটনা হলো ভাষা আন্দোলন। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে একমাত্র বাঙ্গালীরাই। চেতনার দীপ্ত শপথ জুড়ে আছে আমাদের ভাইয়েরা আমাদের ভাষা শহীদ রা। মাতৃভাষার সুরক্ষা, বিকাশ এবং অনুশীলন ছাড়া কোন জাতি অগ্রসর হতে পারে না। তাই মাতৃভাষা অর্জন এবং সংরক্ষণ প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব।

লেখক এর মন্তব্য - ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি হয়তো ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন। চেষ্টা করব আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো নতুন নতুন আর্টিকেল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার। 

প্রতিদিন নিত্য নতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখুন। আপনার কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url