৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস - আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা
ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা রচনাআন্তর্জাতিক নারী দিবসটি পেছনে রয়েছে বহু নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস - আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা সম্পর্কে।
সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে।
পোস্ট সূচীপত্রঃচলুন আর দেরি না করে আমরা আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস - ভূমিকা
সভ্যতার অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে নারী ও পুরুষের সমান অবদান অনস্বীকার্য। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের একক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নের কথা কল্পনা করা যায় না। কিন্তু যুগ যুগ ধরে নারীরা অবহেলিত ও শোষিত হয়ে আসছে। আজ এই আর্টিক্যাল এর মাধ্যমে নারী দিবস সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জানতে পারবেন তা হল-
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে প্রথম পালিত হয়,৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস,নারী দিবস কেন পালন করা হয়,আন্তর্জাতিক নারী দিবস কত তারিখে পালন করা হয়,নারী দিবস নিয়ে বক্তব্য,আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে প্রথম পালিত হয়
আপনারা অনেকেই জানতে চান আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে প্রথম পালিত হয় সেই সম্পর্কে। তাই আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে প্রথম পালিত হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা যদি আর্টিকেলের এই পর্বটি পড়েন তাহলে উপকৃত হবেন।
তাই আর দেরি না করে চলুন আমরা জেনে নেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে প্রথম পালিত হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কে শুরু হয়েছিল। সেই সময় সেখানে বিপুল সংখ্যক মহিলারা জড়ো হয়েছিল। এবং তাদের কর্ম ক্ষেত্রে সময় কমানোর দাবিতে একটি মিছিল বের করেছিল। পাশাপাশি নারীরা তাদের বেতন বৃদ্ধি এবং ভোটের অধিকারের দাবিও জানিয়ে ছিলেন।
এই ঘটনার এক বছর পর এই দিনটিকে আমেরিকার জাতীয় নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপরে ১৯১০ সালে শ্রমজীবী মহিলাদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপনের পরামর্শ দেন। এই সম্মেলনে ১৭ টি দেশের প্রায় ১০০ জন কর্মজীবী মহিলা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ১৯১১ সালে হাজার ১৯শে মার্চ প্রথমবারের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একযোগে এই দিবসটি পালিত হয়। এভাবেই প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এটি উদযাপনের জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন নির্ধারণ করা হয়নি। এরপর ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার মহিলারা বিরক্ত হয়ে খাদ্য এবং শান্তির জন্য প্রতিবাদ করেছিলেন।
এই প্রতিবাদ এতটাই সংগঠিত হয়েছিল যে, সম্রাট নিকোজ তার পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর থেকে সেখানকার মহিলারা ভোট দেওয়ার অধিকার পান। যেদিন থেকে রুশ নারীরা এই ধর্মঘট শুরু করেছিল সেই দিনটি ছিল ২৮ শে ফেব্রুয়ারি এবং গ্রেকগ্রিয়ান ক্যালেন্ডার ছিল ৮ই মার্চ। তখন থেকেই ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়।
এতকিছুর পরেও দিনটি সরকারি স্বীকৃতি পায় বহু বছর পরে ১৯৭৫ সালে। সময়ের সাথে সাথে এবং সমাজে নারীর অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য পরিবর্তন হয়েছে।
বর্তমান সময়ে নারী দিবস উদযাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। আশা করি আপনারা আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে প্রথম পালিত হয় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। তাদের সুবিধার্থে আর্টিকেলের এই পর্বে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনারা যদি আর্টিকেলের এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন আমরা জেনে নেই ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় সারা বিশ্বজুড়ে মহাসমারোহের সঙ্গে। এই তালিকাতে আমাদের দেশ পিছিয়ে নেই। তবে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে নারীদের জন্য একটি বিশেষ দিন কেন? এর পেছনে রয়েছে অনেক বড় ইতিহাস। চলুন সে ব্যাপারে জেনে নেই। সারা বিশ্বব্যাপী এই দিনটি মহা ধুমধাম এর সাথে পালিত হয়।
নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, নারীদের কাজের প্রশংসা এবং তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মহিলাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সাফল্য অর্জনের উৎসব হিসেবেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। ১৯০৯ সালে প্রথম পালন করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমেরিকায় নারী দিবস পালিত হয়।
১৯১০ সালে কোপেন হেগেনের উদ্যোগের পর ১৯ শে মার্চ অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো এই দিনটি উদযাপন করা হয়। নারীদের কাজের অধিকার, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কাজের বৈষম্যের অবসানের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ এই দিনটিতে প্রতিবাদ করে।
একই সঙ্গে রাশিয়ান মহিলারাও প্রথমবার ২৮ শে ফেব্রুয়ারি খাদ্য এবং শান্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। ইউরোপের নারীরা ৮ই মার্চ শান্তি বিষয়ে কাজকর্মকে সমর্থন করে বিশাল মিছিলে নেমেছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ ৮ই মার্চ ১৯৭৫ সালে এই দিনটিকে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রদের নারী অধিকার এবং বিশ্ব শান্তি রক্ষা করার জন্য ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে ৮ ই মার্চকে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছিল।
নারী দিবস কেন পালন করা হয়
নারী দিবস কেন পালন করা হয় অনেকেই জানেন না। এই বিষয়ে জানতে হলে আর্টিকেলের এই পর্বটি আপনাকে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। আপনি যদি আর্টিকেলের এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে নারী দিবস কেন পালন করা হয় সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন আমরা জেনে নেই নারী দিবস কেন পালন করা হয় সেই সম্পর্কে।
প্রতিবছর মার্চ মাসের ৮ তারিখ নারী দিবস পালন করা হয়। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে নারীর সমাধিকারের জন্য সারা বিশ্ব জুড়েই পালন করা হয় নারী দিবস। এই বছরেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কিন্তু আপনি কি এই দিনটির ইতিহাস ও গুরুত্ব জানেন? চলুন জেনে নেই নারী দিবসের দিন নারী দিবস সংক্রান্ত কিছু তথ্য।
ইউনেস্কোর তরফ থেকে জানা গিয়েছে, ১৯০৯ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। নারী শ্রমিকদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই দিনটি পালন করা হয়। পরে রাশিয়াতেও ১৯১৭ সাল থেকে একই কারণে এই দিনটি পালিত হতে থাকে। তবে রাশিয়াতে দিনটি পালিত হয় ৮ই মার্চ। এরপর থেকে সেটাই হয়ে আসছে।
লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার জন্য এই দিনটি পালিত হয়। শিল্প সাহিত্য সহ সব ধরনের ক্ষেত্রে এবং সমাজের সমস্ত কাজে মহিলাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই এই আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। আশা করছি আপনারা নারী দিবস কেন পালন করা হয় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কত তারিখে পালন করা হয়
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কত তারিখে পালন করা হয় সেই সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। যদিও আপনারা উপরের আলোচনাগুলো পড়লেই জানতে পারবেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস কত তারিখে পালন করা হয় সেই সম্পর্কে। তবুও আপনাদের সুবিধার্থে আমি আবারও জানাচ্ছি আন্তর্জাতিক নারী দিবস কত তারিখে পালন করা হয় ।
প্রতিবছর ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। নারীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯১৪ সাল থেকে বিভিন্ন দেশ দিবসটি পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করছে ১৯৭৫ সাল থেকে। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশ ও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবস টি পালন করে আসছে।
নারী দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দুপুর থেকে শোভা যাত্রার আয়োজন করে থাকে। শোভাযাত্রাটিক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে এসে শেষ হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজনের দিনটিকে উদযাপন করে।
১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেন হেগেনে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারাজেটকিন ৮ মার্চ কে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে এই দিনটি শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের একটি সুচ কারখানায় নারী শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
নারী দিবস নিয়ে বক্তব্য
নারী দিবস নিয়ে বক্তব্য অনেকেই জানতে চান। আজ আর্টিকেলের এই পর্বে আপনাদের সুবিধার্থে নারী দিবস নিয়ে একটি বক্তব্য উপস্থাপন করছি। আশা করছি বক্তব্যটি আপনাদের ভালো লাগবে। বক্তব্যটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলের এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
উপস্থিত সম্মানীয় অতিথি, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শিক্ষিকা, পিতা মাতা ও আমার সহপাঠীবৃন্দের যথাযোগ্য স্থানে সম্মান জানাই এবং ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশ্বের সকল নারীদের এই বিশেষ দিনে আমার আন্তরিক অভিনন্দন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত সমস্ত জায়গায় নারীদের সম্মান জানানো হয়। নারী শক্তির জয়গান গাওয়া হয় এবং বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেন পালন করা হয় এর একটা বিশেষ ইতিহাস আছে।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি বৈষম্য, কর্ম ঘন্টা নির্ধারণ করা কাজের অমানবিক পরিশ্রমের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমে ছিলেন নারীরা। সেই মিছিলে সরকার দমন মুলক অত্যাচার করে। যার ফলে পশ্চিমে দুনিয়ায় আলোড়ন পড়ে যায়। ১৯০৫ সালের নিউইয়র্কের এক নারী সম্মেলন আয়োজিত হয়। এই সমাবেশে ৮ই মার্চ কে বিশ্ব নারী দিবস পালনের প্রস্তাব করা হয়।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রদানে এই বিশেষ দিবস উদযাপনের স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু বর্তমান আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন হয় অফিস আদালত, স্কুল কলেজ সব জায়গায় বিশেষ কিছু উপহার ও নারী শক্তির জয়ধ্বনি দিয়ে। খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেল আজকের দিনে বিভিন্নভাবে নারী শক্তির জয়গানের আয়োজন করা হয়।
নারী দিবস উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে সমমর্যাদা ও সম অধিকার প্রদান। নারী মাত্রই রূপ থেকে বোন স্ত্রী এমনকি জগৎমাতা সকলেই নারীর স্বরুপা। তাই তাদের সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া উচিত। বর্তমান সমাজে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সমাজে বিভিন্নভাবে অত্যাচারীত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত।
এমনকি অনেক জায়গায় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হতে হয়। নারীরা আজ অনেক এগিয়ে। অগভীর সমুদ্রে মুক্ত সংগ্রহ, হিমালয়ের চূড়ায় অভিযান, মহাকাশ পাড়ি, যুদ্ধক্ষেত্রে, শিক্ষা, বিজ্ঞান, আবিষ্কার সব জায়গায় মেয়েরা পারদর্শী।
যাইহোক, ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এই বিশেষ দিনে আমি চাই নারী অত্যাচার, ধর্ষণ, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা চিরকালের মতো বিলুপ্ত হোক। নারীরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রের নিজ মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে বাঁচুক।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা
আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। কারণ এই রচনাটি অনেক সময় পরীক্ষায় আসে। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে রচনাটিকে খুব সহজ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আপনারা যদি রচনাটি ভালো করে পড়েন তাহলে অবশ্যই পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন আমরা রচনাটি জেনে নেই।
ভূমিকা
পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের পূর্ব নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস। সভ্যতার অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে নারী ও পুরুষের সমান অবদান অনস্বীকার্য। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের একক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নের কথা কল্পনা করা যায় না।
কিন্তু যুগ যুগ ধরে নারীরা অবহেলিত ও শোষিত হয়ে আসছে। পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গৌরামি, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে নারীরা তাদের অধিকার বিসর্জন দিয়ে আসছে। তাই নারী মুক্তির আহবান নিয়ে প্রতিবছর ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী নারী দিবস পালন করা হয়।
নারী দিবসের ইতিহাস বা পটভূমি
আজকের নারী দিবস এক দিনে গড়ে ওঠেনি। দিবসটি উদযাপনের পিছনে রয়েছে এক গভীর ইতিহাস। এর ইতিহাস হলো নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। খাল ১৮৫৭, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় সুতা কারখানার নারী শ্রমিকের মিছিল। মিছিলের কারণ ছিল মজুরি বৈষম্য, কর্ম ঘন্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
কিন্তু নিষ্ঠুর সরকার সেই মিছিল লেঠেল বাহিনী দিয়ে নারী শ্রমিকদের উপর দমন পীড়ন চালায়। এরপর ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। যার নেতৃত্বে ছিলেন জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন এবং সংগঠনে ছিল নিউওয়ার্কের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক নারী সংগঠন।
পরবর্তীতে দ্বিতীয়বারের মতো ১৯১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেন হেগেনে। এতে প্রায় ১৭ টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিল। এবং এই সম্মেলনে ক্লারা ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে।
বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা দিবস টি পালনে এগিয়ে আসে। ১৯১৪ সাল থেকে মোটামুটি ভাবে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হলেও বাংলাদেশে স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকে এই দিবসটি পালিত হওয়ার শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং দিবস টি পালনের জন্য জাতিসংঘ বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান করেন।
নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য
প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে নারী দিবস পালন করা হয়। এবং প্রতিবছর একটি বিশেষ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে দিবসটি পালিত হয়। নারী দিবসের জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য নিচে তুলে ধরা হল:
১৯৯৬-অতীত উদযাপন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ১৯৯৭-নারী এবং শান্তি, ১৯৯৮-নারী এবং মানবাধিকার, ১৯৯৯-নারীর প্রতি সহিংসতা মুক্ত পৃথিবী,
২০০০-শান্তিস্থাপনে একতাবদ্ধ নারী, ২০০১-নারী ও শান্তি: সংঘাতের সময় নারীর অবস্থান, ২০০২-আফগানিস্তানের নারীদের বাস্তব অবস্থা ও ভবিষ্যৎ, ২০০৩-লিঙ্গ সমতা সহস্রব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা,২০০৪-নারী এবং এইচআইভি এইট, ২০০৫-লিঙ্গ সমতার মাধ্যমে নিরাপদ ভবিষ্যৎ, ২০০৬-সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী,
২০০৭-নারী ও নারী শিশুর ওপর সহিংসতার দায় মুক্তির সমাপ্তি, ২০০৮-নারী ও কিশোরীদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ, ২০০৯-নারী ও কিশোরীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের নারী পুরুষের একতা, ২০১০-সমান অধিকার, সমান সুযোগ সকলের অগ্রগতি, ২০১১-শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান সমান অংশগ্রহণ ,২০১২-গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন-ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সমাপ্তি ,
২০১৩-নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময় ,২০১৪-নারীর সমান অধিকার সকলের অগ্রগতির নিশ্চয়তা,২০১৫-নারীর ক্ষমতায়ন ও মানবতার উন্নয়ন ,২০১৬- অধিকার মর্যাদায় নারী পুরুষ সমান সমান,২০১৭- নারী পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্বকর্মে নতুন মাত্রা,২০১৮-সময় এখন নারীর উন্নয়নে তবে,
বদলে যাচ্ছে গ্রাম শহরের কর্ম জীবনধারা ,২০১৯-সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো নারী পুরুষ সমতার নতুন বিশ্বগড়ো , ২০২০- প্রজন্ম হোক সমতার সকল নারীর অধিকার,২০২১- করোনা কালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব।
সংবিধানে নারীর অবস্থান
বাংলাদেশের সংবিধানের নারীর যথাযোগ্য অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানে নারীর অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। ১৯ অনুচ্ছেদে বর্ণনা হয়েছে জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবে।
২৭ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে-সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। এছাড়াও ২৮(১),২৮(২),২৮(৩),২৮(৪),২৯(১),২৯(২)-ধারায় নারী পুরুষ, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার বিধান রয়েছে।
৬৫(৩) ধারায় নারীর জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংরক্ষিত আছে এবং এধারার অধীনে নারী স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান সমূহে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।
নারী দিবসের তাৎপর্য
নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারী দিবস গভীর তাৎপর্য বহন করে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীদের ঐক্যবদ্ধতার একটি বড় উদাহরণ। ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কারণে পরে এই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর ফলে নারীরা ভোটাধিকার পায় এবং তাদের প্রতি বিভিন্ন বৈষম্য দূরীভূত হয়।
এভাবে নারী আন্দোলনের জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবস তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী দিবস নারীকে স্মরণ করিয়ে দেয় তাদের অধিকার আদায়ের দাবি, তাদের অবদান এবং সারা বিশ্ব তাদের অবস্থানের কথা।
বিশ্বের প্রেক্ষাপটে নারী
পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি প্রথম সারা জাগায়। আর এ ক্ষমতায়ন সফল করতে এগিয়ে আসে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ নারীর রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে বিশ্ব নারী বর্ষ ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ সালকে নারী দশক হিসেবে ঘোষণা করে।
১৯৭৫ সালে মেক্সিকোতে, ১৯৮০ সালে কোপেন হেগেনে, ১৯৮৫ সালের নাইরোবিতে এবং ১৯৯৫ সালে বেইজিং এ যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উন্নত দেশগুলোতে যেমন আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, জাপান প্রভৃতি দেশের নারী সকল ক্ষেত্রে পারদর্শী।
উপসংহার
কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি
প্রেরণা দিয়েছে সাহস দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী।
জগত সংসারে নারীকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। নিজের সন্তানকে গর্ভে ধারণ এবং জন্ম দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখানোর মাধ্যমে একজন মা নারী হিসেবে জীবনের সার্থকতা লাভ করে। যখন একটি শিশুর জন্ম হয় তখন একজন মায়ের ও জন্ম হয়।
এছাড়া স্ত্রী, বন কন্যা সহ মর্যাদাপূর্ণ সব সম্পর্কের বাঁধনে নারীরা সমাজের সাথে আবদ্ধ। তারা সমাজের অর্ধেক অংশ। তাদের প্রতিভা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা বিকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব-কর্তব্য। আন্তর্জাতিক নারী দিবস যেন শুধু একটি দিনের জন্য না হয় বরং প্রতিটি দিন হোক নারীর জন্য, নারীর অধিকার আর উপযুক্ত সম্মানের জন্য।
লেখক এর মন্তব্য - ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস
সুপ্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি হয়তো আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে প্রথম পালিত হয়,৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস,নারী দিবস কেন পালন করা হয়,আন্তর্জাতিক নারী দিবস কত তারিখে পালন করা হয়,নারী দিবস নিয়ে বক্তব্য,আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।
চেষ্টা করব আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো নতুন নতুন আর্টিকেল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার। প্রতিদিন নিত্য নতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো দিয়ে রাখুনা। আপনার কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url