প্রতিদিন কত লিটার পানি খাওয়া উচিত - পানি খাওয়ার উপকারিতা
ডাবের পানির উপকারিতাবেঁচে থাকার জন্য যেমন পানি প্রয়োজন তেমনি বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে পানির কোন বিকল্প নেই।আজ আমরা এই আর্টিক্যাল এর মাধ্যমে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি তা হল প্রতিদিন কত লিটার পানি খাওয়া উচিত - পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি পানির প্রয়োজনীয়তা খুব জরুরী। তাই অবশ্যই একজন মানুষকে পানির সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করে পানি খেতে হবে।
পোস্ট সূচীপত্রঃতাই আর দেরি না করে চলুন আমরা জেনে নেই প্রতিদিন কত লিটার পানি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য প্রয়োজন।
প্রতিদিন কত লিটার পানি খাওয়া উচিত - ভূমিকা
পানির অপর নাম জীবন যা আমরা সকলেই জানি। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির অভাবে শরীরের নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করা উচিত। আজ এই আরটিকালের মাধ্যমে প্রতিদিন পানি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সহ আরো যে সকল প্রয়োজনীয় পয়েন্ট জানতে পারবো তা হলো-
পানি পান করার সঠিক নিয়ম,অতিরিক্ত পানি খেলে কি হয়,বয়স অনুযায়ী পানি পান,ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম,পানি পান করার ৬ টি সুন্নত,প্রতিদিন কত লিটার পানি খাওয়া উচিত,সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা,সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে । বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পানি পান করার সঠিক নিয়ম
অনেকেই পানি পান করার সঠিক নিয়ম জানতে চান। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আর্টিকেলের এই পর্বে পানি পান করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।তৃষ্ণা মেটাতে পানির কোন বিকল্প নেই। কিন্তু পানির তৃষ্ণা যখন পায় তখন আমরা ঠিক পদ্ধতি মেনে কয়জনই বা পানি পান করি। পানির অপর নাম জীবন। এটা কম বেশি আমাদের সকলেরই জানা।
কিন্তু পানি পান করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানেন কি? আপনি কি ভাবছেন পানি পানের আবার কি নিয়ম হতে পারে। হ্যাঁ পানি পানের ও কিছু নিয়ম আছে। যখন তখন আপনার ইচ্ছা হলেই পানি পান করা যাবে না। পানি শুধু আমাদের তৃষ্ণা মেটার না, এটা শরীরের পানির মাত্রা ঠিক রাখে। খিদে কমায় এবং অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে।
তাই জেনে রাখুন পানি পানের সঠিক নিয়ম। এর ফলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হবে।সকালে ঘুম থেকে উঠেই পানি খেতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক থেকে দুই গ্লাস পানি পান করলে দেহের কর্মক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ঘুম থেকে উঠেই পানি পান করলে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়।
যার কারনে রোগ ভোগের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।গোসলের আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিতে হবে। এর ফলে শরীরে রক্ত চলাচলের গতি ঠিক থাকবে। দিনের অগ্রভাগে বেশি পানি পান ও রাত যত বাড়তে থাকবে পানি পানের হার তত কমতে থাকবে এমনটি বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।খাবার খাওয়ার পরপরই পানি খাওয়া ঠিক নয়।
খাবার খাওয়ার ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর পানি পান করুন। কারণ খাবার খাওয়ার পর প্রায় আধঘন্টা লাগে স্বাভাবিক পাচন প্রক্রিয়ার জন্য। এর মাঝে পানি পান করলে স্বাভাবিক পাচন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। যার ফলে দেখা দেয় নানা ধরনের হজম জনিত সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে গর গর করে নয় চুমুক দিয়ে পানি পান করুন।
চুমুক দিয়ে পানি পান করাই হলো পানি পান করার সবচেয়ে ভালো উপায়। আমাদের মুখে আমরা প্রচুর পরিমাণে লালা উৎপন্ন করি। লালা ক্ষারীয় একটি উপাদান এবং আমাদের পেটে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড আছে। আমাদের মুখের লালা সেই এসিডকে স্থির রাখে। ধক ধক করে পানি পান করলে শুধুমাত্র পানি পান করাই হয়। যা আমাদের পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছায় না।
সম্পূর্ণ পরিবেশ তাই এসিড যুক্ত হয়ে থাকে। সুতরাং অল্প অল্প চুমুক দিয়ে পানি পান করা উচিত। সবসময় বসে পানি পান করুন। ভুলেও দাঁড়িয়ে পান করবেন না, ধর্মীয় মতেও দাঁড়িয়ে পানি পান করা নিষেধ আছে। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল যখন আমরা পানি পান করি তখন পানিটি আমাদের দেহের ভেতরে কয়েকটি স্থানে ছাঁকনির মত ছেকে পাকস্থলীতে যায়।
যদি আমরা দাঁড়িয়ে পানি পান করি তাহলে সেই থাকনের পদ্ধতিগুলো ভালোভাবে কাজ করে না। সুতরাং পানির সাথে যদি কোন ক্ষতিকর পদার্থ থেকে থাকে তা সরাসরি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। সুতরাং সর্বদা বসে পানি পান করা উচিত। একবারে বেশি পানি পান না করে অল্প অল্প করে অনেকবার পানি পান করুন।
অনেকে আছেন যারা পানি পান করার সময় অনেক মাত্রায় পানি পান করে থাকেন। এবং এমনটা করতে গিয়ে পানি প্রায় গিলে গিলে খান। এভাবে পানি পান করলে শরীরের ভিতর হঠাৎ করে অনেক চাপ বেড়ে যায়। যার ফলে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সবসময় অল্প অল্প করে পানি পান করতে হবে।
পানি স্বাভাবিক কিংবা অল্প একটু গরম থাকলে এটি আপনাকে তৃপ্তির অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়। আপনি যদি বরফ ঠান্ডা পানি পান করেন তাহলে মুখে তো বটেই পাকস্থলীতেও ধাক্কা দেয়। খাবারের সঙ্গে ঠান্ডা পানি খাওয়ায় হজম প্রক্রিয়া বিষাক্ত অনুভূতি সৃষ্টি করে। সুতরাং সব সময় হালকা গরম পানি পান করার চেষ্টা করুন।
এটা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। বেশি বেশি পানি খেলে ভাইরাসজনিত রোগের সংখ্যা কমে যায়। শরীরে পানির মাত্রা যত বাড়তে থাকে প্রস্রাবের মাত্রা তত বেড়ে যায়। ফলে শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু বাসা বাধার সুযোগ পায় না। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত দুই থেকে চার লিটার পানি পান করতে ভুলবেন না।
অতিরিক্ত পানি খেলে কি হয়
অতিরিক্ত পানি খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আর্টিকেলের এই পর্বে অতিরিক্ত পানি খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কোন এক ব্যক্তি সঠিক বলেছিলেন যে অত্যাধিক কোন কিছুই ভালো না। এই কথাটি খাবারদাবারের ক্ষেত্রেও একেবারে খাপ খায়। যেমন কি পানি খাওয়া, আমাদের শরীরের জন্য পানির চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর কিছুই নেই।
কিন্তু তাই বলে কি পানি যে কোন মাত্রায় খেতে পারি। বিশেষজ্ঞদের মতে অত্যাধিক মাত্রায় পানি খেলে শরীরের জলীয় বিষ ছড়িয়ে যেতে পারে। আগে জেনে নেই কি এই দলীয় বিষ। মানব শরীরে পানি খুবই দরকার। পানি না থাকলে শরীরের অনেক রাসায়নিক কাজগুলো খারাপ হতে পারে।
পানি খেলে আমাদের শরীরে তাপমাত্রা ঠিক থাকে, পেট পরিষ্কার হয় এবং শরীরের সকল কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে চলে। কিন্তু পরিমাণ থেকে বেশি পানি খেলে আমাদের শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।
শরীরের সাধারণ কাজ করার জন্য যতটুকু সোডিয়াম দরকার সেটা অত্যাধিক পানি মিশে গিয়ে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। অত্যাধিক পানি পান করলে আমাদের শরীরে রক্তের মাত্রা বৃদ্ধি হতে পারে। যার কারনে কিডনির ওপর বেজায় চাপ পড়তে পারে। যদি আপনি পানি বেশি করে পান করেন তাহলে:
- আমাদের হৃদয়ের উপর চাপ পড়ে। আপনার হৃদয়ের কাজ হল সারা শরীরের রক্ত পাম্প করা। কিন্তু যদি পানি বেশি পান করেন তাহলে আপনার শরীরের রক্তের মাত্রা বৃদ্ধি হবে। সুতরাং হৃদয়ের কাজ বাড়বে।
- আপনার কৌশিকাগুলো ফুলে যাবে। অত্যাধিক মাত্রায় পানি খেলে শরীরের রক্ত ঘোলাটে হয়ে যায়। এবং রক্তে থাকা ইলেকট্রোলাইট কৌশিকাগুলোর পরিমাণে কম হয়ে যায়। এবার এই ব্যাবিল কে মেলাতে পানি চলে যায় কৌশিকাগুলোতে আর তাই সেগুলো ফুলে ওঠে।
- শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা কম হয়ে যায়। শরীরের সবচেয়ে বেশি জরুরী খনিজ পটাশিয়াম। কিন্তু শরীরের পানি অত্যাধিক মাত্রায় থাকলে খনিজের মাত্রা কম হয়ে যেতে পারে এবং আপনার শরীরে এক ভচ্কর সৃষ্টি হতে পারে। পরিস্থিতিতে আপনি শরীরে ব্যথা, বুকে ব্যথা, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি অনুভব করতে পারেন।
বয়স অনুযায়ী পানি পান
আপনি হয়তো জানতে চাচ্ছেন বয়স অনুযায়ী পানি পান করার নিয়ম সম্পর্কে। আপনাদের সুবিধার্থে আর্টিকেলের এই পর্বে বয়স অনুযায়ী পানি পান করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মানুষের দেহের প্রায় ৬০ শতাংশই পানি।
এছাড়াও দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, দেহের দূষিত পদার্থ দূর করা, খাদ্য পরিপাক, অস্থিসন্ধি পিচ্ছিল রাখা ও দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল রাখতে পানি ভূমিকা অত্যাবশক। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে পানি সুস্থ জীবনের জন্য একটি আবশ্যক উপাদান।
কিন্তু সুস্থ জীবন যাপনের একজন মানুষের প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা জরুরী সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যে তথ্য দিচ্ছেন তা হল। অনেকেই বলেন, পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি বা ২ লিটার পানি পান করা উচিত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমিস অফ সাইন্সের গবেষকরা বলছেন, এ তথ্যের কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
গ্লাস মেপে পানি পান করার বিষয়টি দেহে পানি সরবরাহের দুটি বড় উৎস কে উপেক্ষা করে। প্রতিটি খাবারের মধ্যে পানি বিদ্যমান। বিশেষ করে কাঁচা ফলমূল ও শাক-সবজিতে অনেক বেশি পরিমাণ পানি থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে তরমুজ, শসা ও স্ট্রবেরির মোট ওজনের ৯০% পানি। মানুষের পানির চাহিদার ২০ শতাংশই পূরণ হয় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে।
পানির আরেকটি বড় উৎসব বিভিন্ন ধরনের পানীয়। চা, কফি, দুধ, জুস, কোল্ড ড্রিংক ইত্যাদি বেশিরভাগই পানি এবং এসবই দেহের পানির ঘাটতি পূরণে কাজ করে। গবেষকরা বলছেন, কফি পানি চাহিদা পূরণের একটি আদর্শ উৎস। তবে অতিমাত্রায় কফি পান করা দেহের জন্য ক্ষতিকর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি নারীর দৈনিক খাবার ও পানিও থেকে গড়ে ২.৭ লিটার পানি গ্রহণ করেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে পরিমাণটা ৩.৭ লিটার। কিন্তু গবেষকরা বলছেন মানুষের বয়স, ওজন, দৈহিক কাজকর্ম, এমনকি জলবায়ুর উপর নির্ভর করছে তার পানি চাহিদার পরিমাণ। ঘামের সঙ্গে যে পরিমাণ পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যাবে, তা পূরণ করতে এর চেয়েও বেশি পানি পানের দরকার।
যে ব্যক্তি গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে দৈহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে আয় করেন, তাকে তুলনামূলক বেশি পানি পান করতে হবে। আর যিনি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে কাজ করেন, তাকে কিছুটা কোম্পানি পান করলেও চলবে। আপনার পানির ঘাটতি রয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য গবেষকরা সহজ একটি পদ্ধতি বলে দিয়েছেন।
দেহে পানির ঘাটতি দেখা দিলে প্রাকৃতিকভাবেই আপনি তৃষ্ণা অনুভব করবেন। তাছাড়া আপনার প্রস্রাবের রং বলে দিবে পানি খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কিনা। যদি প্রস্রাবের রং হলুদ বা কমলা হয়ে আসে তবে পানি পান করুন। আর দেহের ঘাম ধরলে পানি পান করতে ভুলবেন না।
ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম
ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আর্টিকেলের এই পর্বে ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনারা যদি আর্টিকেলের এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ইসলামের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
পানি পানির সময় স্বয়ং বিশ্বনবী (সা:) নির্দিষ্ট কিছু আমল করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা:) বাস্তব জীবনের এ আমল গুলো উঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়। চলুন তাহলে আমরা জেনে নেই ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে পানিপানের নিয়ম সম্পর্কে-
- পানি পানের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা।
- সব সময় ডান হাতে পানি পান করা।
- সব সময় বসে পানি পান করা।
- ৩ নিঃশ্বাসে পানি পান করা।
- গ্লাসের পানিতে নিঃশ্বাস না ছাড়া।
- সব সময় পানিপানের পর আলহামদুলিল্লাহ বলা।
আশা করছি আপনারা এবার জানতে পেরেছেন ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
পানি পান করার ৬ টি সুন্নত
পানি পান করার ৬ টি সুন্নাত সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আর্টিকেলের এই পর্বে পানি পান করার ৬ টি সুন্নত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করছি আপনারা যদি আর্টিকেলের এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ে তাহলে পানি খাওয়ার ৬ টি সুন্নত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন আমরা জেনে নেই পানি পান করার ৬ টি সুন্নত কি কি সেই সম্পর্কে-
- পানি পানের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা।
- সব সময় ডান হাতে পানি পান করা।
- সব সময় বসে পানি পান করা।
- ৩ নিঃশ্বাসে পানি পান করা।
- গ্লাসের পানিতে নিঃশ্বাস না ছাড়া।
- সব সময় পানিপানের পর আলহামদুলিল্লাহ বলা।
প্রতিদিন কত লিটার পানি খাওয়া উচিত
প্রতিদিন কত লিটার পানি খাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। তাই আপনি যদি আর্টিকেলের এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আপনি জানতে পারবেন প্রতিদিন কত লিটার পানি খাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে। সাধারণভাবে বলা হয় সুস্থ থাকতে সঠিক ওজন বজায় রাখতে দিনে তিন লিটার পানি খাওয়া প্রয়োজন। তবে এই হিসেবটা গড় মাত্র।
এই হিসেব কিন্তু মোটেই সকলের জন্য নয়। দেহের ওজন অনুযায়ী কতটা পানি পান করবেন তা নির্ভর করে আপনার শরীরের ওজনের উপর। শরীরের ওজনকে ৩০ দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যা আসবে তা হলো আপনার শরীরের পানীয় জলের প্রয়োজনীয় মাপ। যেমন ধরুন, আপনার ওজন যদি ৪০ কেজি হয় তাহলে আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির মাপ হল ১.৩ লিটার।
এভাবেই ওজনের উপর নির্ভর করে পানির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। যেমন ধরুন আপনার ওজন যদি ৯০ কেজি হয় তাহলে আপনার দৈনিক পানির চাহিদা থাকবে ৩ লিটার। এছাড়াও যারা অধিক পরিশ্রমই এবং শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বেরিয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে পানির চাহিদাও বেশি থাকবে। আপনার শরীরে পানির চাহিদার ঘাটি দেখা দিলে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
তাই অবশ্যই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। যারা অধিক পরিশ্রমি এবং শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বেরিয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে পানির পরিমাণ সব সময় বেশি খেতে হবে। এছাড়াও যাদের শরীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘাম বের হয় না তারা তাদের ওজন অনুযায়ী পানি খেলেই চলবে। চলুন আমরা জেনে নেই কত ওজন অনুযায়ী কত লিটার পানি পান করতে হবে সেই সম্পর্কে নিচে একটি চার্ট দেওয়া হল-
- ওজন - পানি
- ৪০ - ১.৩ লিটার
- ৪৫ - ১.৫ লিটার
- ৫০ - ১.৬ লিটার
- ৫৫ - ১.৮ লিটার
- ৬০ - ২ লিটার
- ৬৫ - ২.১ লিটার
- ৭০ - ২.৩ লিটার
- ৭৫ - ২.৫ লিটার
- ৮০ - ২.৬ লিটার
- ৮৫ - ২.৮ লিটার
- ৯০ - ৩ লিটার
আশা করছি আপনারা উপরের চারটি লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন ওজন অনুযায়ী আপনার শরীরে কতটুকু পানির প্রয়োজন।
সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা
অনেকে আছেন যারা সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাদের সুবিধার্থে আর্টিকেলের এই পর্বে সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। আশা করছি আপনারা বিষয়টি জানতে পারলে উপকৃত হবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা জেনে নেই সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু এটা ঠিক কি কি উপকারে আসে কিংবা তার সুফল কেমন করে পাওয়া যায়, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। চলুন জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে পানি পান করার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-
- ১. সকালে প্রতিদিন খালি পেটে পানি খেলে রক্তের দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায় এবং ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়।
- ২. প্রতিদিন খালি পেটে এক গ্লাস করে পানি খেলে মলাশয় পরিষ্কার হয়ে যায় এবং শরীর সহজেই নতুন করে খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।
- ৩. প্রতিদিন সকালে নাস্তার আগে এক গ্লাস পানি খেলে নতুন মাংসপেশি ও কোষ গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
- ৪. রাতে ঘুমানোর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে হজম প্রক্রিয়ার তেমন কোন কাজ থাকে না। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য অন্তত এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়া উচিত।
- ৫. ঘুম থেকে উঠে অনেকের মাথা ব্যথা করে। শরীরে পানির মাত্রা কমে যাওয়া মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। সারারাত শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি যায় না। তাই সকালে উঠে যদি খালি পেটে পানি পান করা যায় তবে মাথার যন্ত্রণা অনেকটা দূর হয়।
- ৬. প্রতিদিন সকালে মাত্র এক গ্লাস পানি বমি ভাব, গলার সমস্যা, মাসিকের সমস্যা, ডায়রিয়া, কিডনির সমস্যা,আথ্রাইটিস, মাথাব্যথা ইত্যাদি অসুখ কমতে সহায়তা করে।
- ৭. যারা ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমাতে চান, তারা অবশ্যই প্রতিদিন সকালে উঠে পানি পানের অভ্যাস করুন। কারণ যত বেশি পানি পান করবেন, তত হজম ভালো হবে এবং শরীরে বাড়তি ফ্যাট জমবে না।
আশা করছি আপনারা সকালে খালি পেটে পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার অপকারিতা
সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আপনাদের সুবিধার্থে আর্টিকালের এই পর্বে আলোচনা করা হয়েছে সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। বিস্তারিত তথ্য জানতে হলে অবশ্যই আর্টিকেলের এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। খালি পেটে পানি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে সেটা আমরা অনেকেই জানি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে অনেকেই আপনারা জানতে চান সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। সাধারণত সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার কোন অপকারিতা নেই।
তাই আপনারা নির্দ্বিধায় বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। যা আপনাদের সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। আশা করছি আপনারা সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
লেখকের মন্তব্য - প্রতিদিন কত লিটার পানি খাওয়া উচিত
প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি হয়তো পানি পান করার সঠিক নিয়ম,অতিরিক্ত পানি খেলে কি হয়,বয়স অনুযায়ী পানি পান,ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম,পানি পান করার ৬ টি সুন্নত,প্রতিদিন কত লিটার পানি খাওয়া উচিত,সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা,সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।
চেষ্টা করব আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো নতুন নতুন আর্টিকেল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার। প্রতিদিন নিত্য নতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো দিয়ে রাখুনা। আপনার কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url