ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা - ত্রিফলার জলের উপকারিতা
তিসি খাওয়ার উপকারিতা জানুনত্রিফলা অতি চমৎকার একটি ভেষজ মিশ্রণ। যা অসংখ্য রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ত্রিফলা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানব ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা - ত্রিফলার জলের উপকারিতা সম্পর্কে।
ত্রিফলা আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় ও রক্ত পরিষ্কার করে। আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কার্যকারী ও শক্তিশালী করে তোলে।
পোস্ট সূচিপত্রঃএখানে ত্রিফলা সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য দেওয়া আছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা - ভূমিকা
মানবদেহের নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে ত্রিফলার জুড়ি মেলা ভার। তিন ধরনের ফল দিয়ে আয়ুর্বেদিকের এই মিশ্রণটি তৈরি করা হয় বলে একে ত্রিফলা বলা হয়। ত্রিফলা চূর্ণ তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে।
যা আমাদের মানবদেহের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত করে। যেমন ডায়াবেটিক্স এর মত রোগ সহ অতিরিক্ত মেদ থেকে শুরু করে একাধিক রোগ সারাতে জাদুর মত কাজ করে। আজ আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে ত্রিফলা সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জানব তা হল;
ত্রিফলা কি, ত্রিফলা তৈরীর নিয়ম, ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক সময় ত্রিফলার দাম কত ত্রিফলার জলের উপকারিতা ত্রিফলা কতদিন খাওয়া যায় ত্রিফলা চূর্ণ খাবার নিয়ম ত্রিফলার অপকারিতা সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ত্রিফলা কি
ত্রিফলা কি? ত্রিফলা কথাটির অর্থ হচ্ছে তিন ফলের সমাহার বা মিশ্রণ।আমলকি, হরিতকি ও বহেড়া এই তিন ধরনের ফলের মিশ্রণে ত্রিফলা তৈরি করা হয়। হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে এই ত্রিফলা ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এই তিনটি ফলেরই নিজের নিজের স্বাস্থ্য গুণ রয়েছে।
কিন্তু এই তিনটি ফলের সংমিশ্রণে যখন একটি চূর্ণ তৈরি করা হয় তখন তার উপকারিতা অনেক গুণ বেশি বেড়ে যায়।
আমলকি: আমলকি ভিটামিন সি এর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক উৎস। এতে কমলালেবুর চেয়ে ২০ গুন বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকি অম্ল বা টক স্বাদযুক্ত। যা পিত্ত নামক সার বস্তুর ভারসাম্য রক্ষায় খুবই কার্যকর।
আলসার, পাকস্থলীর প্রদাহ, আন্তিক প্রদাহ, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, লিভারের জ্বালাপোড়া, লিভারের সংক্রমণ এবং শরীরের জ্বালাপোড়া নিরাময়ে আমলকি খুবই কার্যকরী। আমলকি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রতিরোধে। তাই আমলকির পুষ্টি ও ঔষধি গুণ অপরিবর্তিত রেখে শুকিয়ে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
হরিতকি: হরিতকী তিত্কো স্বাদযুক্ত। যা আমাদের ভাতা নামক সারবস্তু তথা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। তাই মস্তিষ্ক কিংবা স্নায়বিক রোগে হরিতকি খুবই কার্যকরী।
হরিতকি রেচন সংকোচন ও পিচ্ছিল কারক, মাংসপেশির সংকোচন পরিরোধক এবং স্নায়বিক দুর্বলতা প্রতিরোধই গুন সম্পূর্ণ। তাই দীর্ঘকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য স্নায়বিক দুর্বলতা উদ্বিগ্নতা এবং অতিরিক কম্পন বেড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় হরিতকি ব্যবহার করা হয়।
বহেরা: বহেরা একটু কষ স্বাদযুক্ত ফল। বহেড়া সংকোচক টনিক হজম শক্তি বৃদ্ধি কারক এবং মাংসপেশীর সংকোচন প্রতিরোধক সম্পন্ন। বহেরা দেহের প্রধান জীবনী শক্তি শ্লেষা তথা রসকে বিশুদ্ধ করে এবং এর ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই বহেড়া হাঁপানি, এলার্জি, ব্রংকাইটিস এবং কাশির ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী।
ত্রিফলা তৈরির নিয়ম
ত্রিফলা তৈরীর নিয়ম অনেকেই জানতে চান?তিনটি ফলের সংমিশ্রণ কে ত্রিফলা বলা হয়। এই তিনটি ফল হল আমলকি, বহেরা ও হরিতকি। ত্রিফলা রাসায়নিক গুণাবলীর জন্য উল্লেখযোগ্য।
যা আমাদের শরীর-স্বাস্থ্য ও জীবনী শক্তি বজায় রাখে ও বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকি, হরিতকি ও বহেড়া পরিমাণ মতো নিয়ে হামানদিস্তার সাহায্যে চূর্ণ করে ত্রিফলা মিশ্রণ তৈরি করা হয়।
- আমলকি দেশের সব জায়গায় পাওয়া যায় এমন ফলের মধ্যে একটি। আমলকিতে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এই ফলটি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, অন্ত্রের সমস্যা দূর করতে এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে হিসেবে কাজ করে।
- হরিতকি ত্রিফলার আরো একটি ফল। প্রাচীনকাল থেকে এটি স্বাস্থ্য উপকারী ঔষধি ফল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা পাকস্থলী, মুত্রাশয় ও যকৃতের স্বাভাবিকতা বজায় রাখে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে হরিতকীর অনেক সুখ্যাতি রয়েছে।
- বহেড়া ত্রিফলার আরো একটি ফল । বহেড়াতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, গ্যালিক এসিড, গ্লুকোসাইট ও ট্যানিন সমৃদ্ধ জৈব উপাদান। বহেরা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার ও ডায়াবেটিস বিরোধী হিসেবে ধরা হয়।
ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম
ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আর্টিকেলের এই পর্বটি আপনার জন্য। অনেকেই আছেন যারা ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানেন না। সঠিক নিয়ম না জানার ফলে ত্রিফলার যে ঔষধি গুণ রয়েছে সেই গুণগুলো আপনি পরিপূর্ণ পাচ্ছেন না।
তাই ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে হবে। যা আপনারা আর্টিকেলের এই পর্বে জানতে পারবেন। সপ্তাহে মাত্র তিন দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে হাফ চা চামচ ত্রিফলা চূর্ণ মিশিয়ে খেলে শরীরের অনেক উপকার হবে।
এছাড়াও আপনি চাইলে বাজার থেকে আস্ত ত্রিফলা কিনে এনে হামানদিস্তা সাহায্যে আধভাঙ্গা করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পানিতে ভিজিয়ে পরের দিন সেই পানি খেতে পারেন। এভাবেও ত্রিফলার অনেক উপকারিতা পাবেন। আশা করছি আপনি ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা
ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন?আমলকি, হরিতকি ও বহেড়া এই তিনটি ফলের নিজের নিজের স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। কিন্তু এই তিনটি ফলের সংমিশ্রণে যখন ত্রিফলা চূর্ণ তৈরি করা হয় তখন তার উপকারিতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। নিচে ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. কোষ্ঠকাঠিন্য বেশিরভাগ মানুষ ত্রিফলা চূর্ণ কে ব্যবহার করে থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। ত্রিফলা চূর্ণের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ইনসলিওভেল ফাইবার। ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়ার পরে এটি আমাদের পেটের মধ্যে গিয়ে ইনসলিওভেল ফাইবার প্রচুর পরিমাণে পানি ধারণ করে রাখতে পারে।
যার ফলে আমাদের মল হয় নরম ও ভারী সাথে সাথে আমাদের মলত্যাগ করতেও সুবিধা হয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি ত্রিফলা চূর্ণ নিয়মিত খেতে পারেন। এক চামচ ত্রিফলা চূর্ণ কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে রাতে শোয়ার আগে পান করে নিন। এতে আপনি অবশ্যই উপকৃত হবেন।
২. হজমে সমস্যায় ত্রিফলা চূর্ণ খেতে পারেন। কারণ ত্রিফলা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি যদি দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাস, পেট ফাঁপা, বমি ভাব ও পেটের নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছেন যারা তারা যদি নিয়মিত ত্রিফলা চূর্ণ খান তাহলে অনেক উপকৃত হবে।
সেক্ষেত্রে এক চামচ ত্রিফলা চূর্ণ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে পান করুন। কয়েকদিন খাওয়ার পরেই আপনি উপকার উপলব্ধি করতে পারবেন
৩. দাঁতের সমস্যায় ত্রিফলা চূর্ণ ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে হাফ চামচ ত্রিফলা পাউডার নিয়ে টুথপেস্ট এর পরিবর্তে আপনি ত্রিফলা পাউডার দিয়ে ধীরে ধীরে ব্রাশ করবেন। ব্রাশ করা শেষ হলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিবেন। ত্রিফলা চূর্ণের মধ্যে যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে তা আপনার দাঁতের যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো দূর করে।
৪. যদি আপনার মনে হয় সময়ের আগেই আপনার শরীরের মধ্যে বয়সের ছাপ পড়ে যাচ্ছে এবং তার সাথে সাথে আপনার স্কিনের মধ্যে রিংকেল, পিগমেন্টেশন, ফাইন লাইন এরকম ধরনের সমস্যা আপনি খেয়াল করছেন সেক্ষেত্রে ত্রিফলা আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণে উপকারে আসতে পারে।
ত্রিফলা চূর্ণের মধ্যে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টি রয়েছে তা আপনার স্কিনের সেলকে রক্ষা করবে। সেক্ষেত্রে তিন চামচ ত্রিফলা চূর্ণ, মধু ও গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন।
এটি মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। প্যাকটি শুকিয়ে এলে নরমাল পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনি পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।
৫. চুল ভালো রাখার ক্ষেত্রে ত্রিফলার চূর্ণ অনেক উপকারী। দীর্ঘদিন ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়ার ফলে ভেতর থেকে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ আমাদের চুলকে পুষ্টি জোগা। আমাদের চুলকে সুস্থ রাখার জন্য যে ধরনের প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন সে সকল প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সহজেই ত্রিফলা চূর্ণ তে পেয়ে যাই।
এছাড়াও হেয়ার প্যাক হিসেবে ত্রিফলা পাউডার তিন থেকে চার চামচ এবং টক দই ৫ থেকে ৬ চামচ নিয়ে একসাথে মিশিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। হেয়ার প্যাকটি চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর নরমাল টেম্পারেচারে থাকা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি ব্যবহার করার ফলে আপনার চুলের সমস্ত সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক সময়
ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ ত্রিফলা এমন এক উপকারী ভেষজ উপাদান যা আপনার শরীরকে বহু রোগ থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়ম মেনে সঠিক সময়ে ত্রিফলা খেতে হবে।
যে সময় ত্রিফলা খাওয়ার ফলে আপনি সবচেয়ে বেশি উপকারিতা পাবেন সেই সময়টা সম্পর্কে জানা জরুরী। সাধারণত ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক সময় হল রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি খাওয়া।
অথবা আপনি যদি ত্রিফলা চূর্ণ খেতে চান সে ক্ষেত্রে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কুসুম গরম পানির সাথে হাফ চা চামচ ত্রিফলা চূর্ণ মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবেও ত্রিফলা খেলে অনেক উপকারিতা পাবেন। আশা করছি ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
ত্রিফলার দাম কত
ত্রিফলার দাম কত সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। অনেকেই আছেন যারা ত্রিফলার দাম সম্পর্কে জানেন না। তাদের ক্ষেত্রে বলতে চাই ত্রিফলা সাধারণত তিনটি ফলের সমাহারে তৈরি। এই ত্রিফলার দাম বিভিন্ন জায়গা ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
আপনার অঞ্চলের যে কোন হারবাল ঔষধের দোকানে এই ত্রিফলা পেয়ে যাবেন অথবা আপনি চাইলে অনলাইন থেকেও ত্রিফলা বা ত্রিফলা চূর্ণ সংগ্রহ করতে পারেন। অনলাইন থেকে সংগ্রহ করলে হয়তো আপনার কাছে দাম একটু বেশি নিতে পারে তবে আপনি যদি চান তাহলে যে কোন হারবাল ওষুধের দোকান থেকে খুব অল্প টাকায় ত্রিফলা সংগ্রহ করতে পারেন।
ত্রিফলার জলের উপকারিতা
ত্রিফলার জলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আর্টিকেলের এই পর্বটি আপনার জন্য। শুকনো আমলকি, হরিতকি এবং বহেরার মিশ্রণকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। প্রায় চার হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ত্রিফলা ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমলকির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, খাদ্য তন্তু, ফলিক অ্যাসিড, প্রাকৃতিক আন্টি ক্যান্সার, অ্যান্টি এজিং, এন্টাসিড গুণাবলী এবং ব্যথা নাশক উপাদান। এছাড়াও হরিতকীর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোকেমিক্যাল, আয়রন, গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি এসিড এবং অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী।
বহেড়ার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস, জিংক, কপার, আইরন, খাদ্য তন্তু, ট্যানিন, গালিক অ্যাসিড এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী। আপনি যদি সপ্তাহে অন্তত তিন দিন কুসুম গরম পানিতে হাফ চা চামচ ত্রিফলা চূর্ণ মিশিয়ে খান তাহলে পাবেন অনেক উপকারিতা।
শক্তিশালী ভেষজ গুণে ভরপুর ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়ার কোটি টাকার ঔষধের সমান উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলের এই পর্বটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়ুন। ত্রিফলা দ্বিগুণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন ধরনের ঋতুকালীন রোগের বিরুদ্ধে শরীরকে লড়াই করতে সাহায্য করে।
ত্রিফলা রক্তকে ডিটক্সিফাই করে ব্রণের সমস্যাকে দূর করতে অত্যন্ত উপকারী। ত্রিফলা চূর্ণ লিভার ও পাকস্থলীর কার্যকারিতা হজম শক্তি এবং মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য, ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিস এবং পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। অ্যা
লজাইমার ডিমেনশিয়া এবং পার্কিনসনডিজিজ এর মত বিপদজনক নার্ভ এবং মস্তিষ্ক ঘটিত সমস্যা প্রতিরোধ করতে এবং পাইলস, ফিশার ও ফিস্টুলা জাতীয় কষ্টদায়ক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ত্রিফলা চূর্ণ অত্যন্ত উপকারী। এন্টি ক্যান্সারে ভরপুর ত্রিফলা প্রায় ৪০ ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্রিফলা রয়েছে আরো হাজারো গুন। যে কারণে নিয়মিত ত্রিফলার জল খাওয়া উচিত।
ত্রিফলা কতদিন খাওয়া যায়
ত্রিফলা কতদিন খাওয়া যায় সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ অনেকেই আছেন যারা ত্রিফলা চূর্ণ রেগুলার খান। তবে কোন কিছুই একনাগারে খাওয়া উচিত নয়। যে জিনিসটা আপনি উপকারের জন্য একনাগারে খাচ্ছেন তাই একসময় আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সবকিছুই খাওয়ার মাঝে বিরতি দেওয়া উচিত।
আপনি যদি নিয়মিত ত্রিফলা খেয়ে থাকেন তাহলে তিন মাস অন্তর অন্তর ত্রিফলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অর্থাৎ আপনি যদি একটানা তিন মাস ত্রিফলা খান তাহলে আপনাকে অবশ্যই মাঝখানে একমাস বাদ দিতে হবে। নয়তো ত্রিফলার উপকারের থেকে অপকারিতা বেশি লক্ষ্য করবেন।
ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম
ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আর্টিকেলের এই পর্বটি আপনার জন্য। অনেকে আছেন যারা ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান। ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়া খুবই সহজ। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে হাফ চা চামচ ত্রিফলা চূর্ণ মিশিয়ে খেতে হবে।
আপনি যদি নিয়ম মেনে সপ্তাহে তিন দিন এই ত্রিফলার জন্য খান তাহলে দেখবেন আপনার শরীরের পরিবর্তন। অনেক রোগ থেকে আপনি মুক্ত থাকবেন শুধুমাত্র এই ত্রিফলা চূর্ণ খাবার ফলে। আশা করছি আপনি ত্রিফলার জন্য খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
ত্রিফলার অপকারিতা
ত্রিফলার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।ত্রিফলার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনই কিছু অপকারিতা রয়েছে।ত্রিফলা সঠিক মাত্রার সেবন না করলে বা বেশি মাত্রায় খেলে এর ফলে ডায়রিয়া ও ডিসেন্ট্রি হতে পারে।
আপনি যদি অন্য কোন ওষুধ খান তবে ত্রিফলা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন কারণ ত্রিফলা অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।ত্রিফলার মধ্যে উপস্থিত হরিতকি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকারক। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ও ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাচ্চাদের ত্রিফলা খেতে দেওয়া উচিত নয়।
লেখকের মন্তব্য - ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা
নিয়মিত ত্রিফলা খাওয়া শুরু করলে দেহের পুষ্টিকর উপাদানের মাত্রা বেড়ে যায়। তার প্রভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। ফলে ছোট বড় রোগব্যাধির প্রকোপ কমে যায়। এবং ঘন ঘন অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। তাই নিয়মিত ত্রিফলা সেবন করতে পারেন।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ
আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url