তুলসী বীজের উপকারিতা - তুলসী বীজ খাওয়ার নিয়ম

সোনা পাতা খাওয়ার উপকারিতাতুলসী বীজ পুষ্টিকর এবং ভেষজ ঔষধি। ঐতিহ্যগত দিক থেকে তুলসী আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছ। এই গাছের গুণাগুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। হিন্দু সংস্কৃতিতে উল্লেখ আছে যে, তুলসী গাছ একটি পবিত্র গাছ। তুলসী গাছের শিকড়, পাতা, শাখা-প্রশাখা ও বীজ অত্যন্ত মূল্যবান। আজ আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানব তুলসী বীজের উপকারিতা - তুলসী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
তুলসী বীজের উপকারিতা - তুলসী বীজ খাওয়ার নিয়ম


তুলসী বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। তুলসি বীজে উপস্থিত এই দুইটি উপাদান হাড়কে মজবুত করতে অত্যন্ত কার্যকরী। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তারা নিয়মিত তুলসী বীজ খেতে পারেন কারণ তুলসি বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।

পোস্ট সূচীপত্রঃএই আর্টিকেলের মাধমে আমরা জানবো তুলসী বীজ স্বাস্থ্যর জন্য কতটা উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, খাওয়ার নিয়ম, দাম ও সংরক্ষণের নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

তুলসী বীজের উপকারিতা - ভূমিকা

প্রাচীন যুগ থেকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তুলসীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ তুলসী পাতা যেমন মানব শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী তেমনি এর বীজ মানব দেহের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, তুলসী পাতার মতো তুলসী বীজে রয়েছে উপকারি অনেক উপাদান। 

তাই সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত তুলসী বীজ সেবন করা অত্যন্ত জরুরী। আজ আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে তুলসি বীজ সম্পর্কে যে বিষয়গুলো তাহলে; তুলসী বীজের উপকারিতা, তুলসি বীজের পুষ্টিগুণ, তুলসী বীজ খাওয়ার নিয়ম, তুলসী বীজের দাম, তুলসি বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

তুলসী বীজ খাওয়ার নিয়ম

তুলসী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ আর্টিকেলের এই পর্বে আলোচনা করা হয়েছে তুলসী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তুলসী পাতা যেমন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী তেমনি তুলসী বীজ আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।
 
নিয়মিত তুলসী বীজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে অধিকাংশ বড় বড় রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে আগে তুলসি বীজ খাওয়ার নিয়ম ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। সঠিক নিয়মে তুলসি বীজ খাওয়ার ফলে আপনার শরীর থাকবে সুস্থ ও স্বাভাবিক।
সাধারণত তুলসী বীজ দুধ অথবা পানি দিয়ে ৭-৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে তোকমার মতো সাদা হয়ে ফেটে যায় এবং খুব পিচ্ছিল দেখায়। এমতাবস্থায় পানি সহ সেই বীজ সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে অথবা রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে খেতে হবে।
 
এভাবে টানা এক থেকে দেরমাস তুলসী বীজ পান করলে আপনার শারীরিক পরিবর্তন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। আশা করছি আপনি তুলসি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

তুলসী বীজের দাম

তুলসী বীজের দাম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ আর্টিকেলের এই পর্বে আলোচনা করা হয়েছে তুলসীবীদের দাম সম্পর্কে। আপনারা যারা তুলসি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে তুলসি বিচ ক্রয় করতে চাচ্ছেন তাদের সুবিধার্থে আর্টিকেলের এই পর্বে তুলসি বীজের দাম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
 
তুলসী বীজ সাধারণত যেকোনো সুপার শপ অথবা বড় মুদি দোকানে পেয়ে যাবেন। সাধারণত আপনি যদি খোলা অবস্থায় তুলসি বিচ ক্রয় করতে চান সেক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম তুলসী বীজের দাম ১০০ টাকা নিবে। অর্থাৎ ১ কেজি তুলসী বীজের দাম ১০০০ টাকা। তবে অঞ্চল ভেদে এই দামের পরিবর্তন হতে পারে।
বর্তমান সময়ে অর্থাৎ আর্টিকেলটি যখন লেখা হচ্ছে তখন বাজার থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ১০০ গ্রাম তুলসি বীজের দাম ১০০ টাকা অর্থাৎ ১ হাজার টাকা কেজি। তবে বর্তমান সময়ে অনলাইনে বিভিন্ন পেজে তুলসী বিচ বিক্রি করে। আপনি চাইলে সেখান থেকেও তুলসী বীজ সংগ্রহ করতে পারেন।
 
তবে যেখান থেকেই আপনি বীজ সংগ্রহ করেন না কেন অবশ্যই যাচাই করে তারপর সংগ্রহ করবেন। আশা করছি আপনি তুলসি বীজের দাম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

তুলসী বীজের উপকারিতা

তুলসী বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ আর্টিকেলের এই পর্বে আলোচনা করা হয়েছে তুলসী বীজের উপকারিতা সম্পর্কে।তুলসী বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ। 

ভিটামিন ও খনিজ একত্রে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তুলসী বীজের রয়েছে একাধিক চোখ ধাঁধানো উপকারিতা। চলুন তাহলে আর দেরি না করে আমরা তুলসি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

পাইলস নিরাময়ে তুলসী বীজ এর উপকারিতা

তুলসী বীজ পাইলসের ব্যথা, ফোলাভাব কমাতে এবং রক্তচলাচলে উন্নতি ঘটায়। যারা দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পাইলস রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত সকালে ও রাত্রীতে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ তুলসী বীজ ভিজিয়ে ৬-৭ ঘন্টা পর সেবন করুন। 

আরও ভালো ফলাফল পেতে চাইলে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে এক গ্লাস পানি পান করে তারপরে তুলসী বীজ মিশানো পানি পান করুন এবং রাতের বেলায় খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা পর তুলসী বীজ ভিজানো পানি আবার পান করুন। 

এভাবে নিয়মিত তুলসী বীজের পানি পান করলে পায়খানার রাস্তায় বের হয়ে আসা পাইলস ধীরে ধীরে শুকিয়ে ছোট হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে চামড়ার সাথে মিশে যাবে।

শ্বাসযন্ত্রের উপকারিতা 

তুলসী বীজ নিয়মিত খাওয়া ফলে শ্বাসযন্ত্রের উন্নতি ঘটায় এবং শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন দিক গুলো উপশম করতে সাহায্য করে। কারও বুকে কফ বসে গেলে তুলসি পাতা, আদা ও চা পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে তার সাথে কিছু মধু ও কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে খেয়ে ‍নিলে দ্রুত উপকার মিলে।

কিডনির পাথড় প্রতিরোধ

তুলসি পাতা ও বীজ নিয়মিত সেবন করলে কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কিডনিতে পাথড় হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। যাদের কিডনিতে পাথড় রয়েছে তারা যদি নিয়মিত মধু দিয়ে তুলসী পাতা রস খেলে কিডনির পাথড় গলে ছোট হয়ে আসবে এবং প্রসাবের রাস্তা দিয়ে বের হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাবে। 

এই পদ্ধতীতে রোগী সুস্থ করা সম্ভব। কিডনী রোগীকে তুলসী রস খাওয়ার আগে রোগীকে লক্ষ্য রাখতে হবে তার কিডনিতে পাথড়ের অবস্থা কেমন।

স্ট্রেস উপশম

তুলসী বীজে তেলের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা স্ট্রেসের ‍বিরুদ্ধে লড়াই করে অভিযোজিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শরীরকে চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে। যা শরীরের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরে উপস্থিত অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদানের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

ক্যানসার প্রতিরোধ

তুলসীতে অ্যান্টিকার্সিনোজেনিক প্রপাটিজ এবং অ্যান্টি-অ্যাক্সিডেন্ট থাকায় তুলসী পাতা ও বীজ সেবন করলে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে। যারা নিয়মিত তুলসী পাতা সেবন করে তাদের ওরাল ও ব্রেস্ট ক্যানসার ও পাকস্থলীর ক্যানসার হওযার ঝুঁকি কম থাকে। 
নিয়মিত এক গ্লাস তুলসী বীজের রস খেলে ক্ষতিকর উপাদান আমাদের শরীরকে নষ্ট করতে পারে না। নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।

ইমিউনিটি বুস্টার

তুলসী বীজে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণ হতে রক্ষা করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

তুলসী বীজ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সহায়তা করে, পাচনতন্ত্রকে উন্নীত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।

অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি যৌগ

তুলসী বীজে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি যৌগ রয়েছে যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ডিটক্সিফিকেশন

তুলসী বীজ ক্ষতিকারক টক্সিন এবং বর্জ্য পণ্য নির্মূল করে শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায়তা করে।

ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য

তুলসী বীজর পুষ্টি ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখে। ত্বক ও চুলের সমস্যার প্রধান করণ গুলো হল মানসিক চাপ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বংশগত সমস্যা এবং কিছু কিছুু ঔষধের কারণে হতে পারে। এ সকল সমস্যা হতে কিছুটা মুক্তির জন্য তুলসী বীজ বিশেষ কার্যকরী।

চোখের জন্য তুলসীর উপকারীতা

চোখ মানুষের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির একটি অংশ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দৃষ্টি শক্তি কমে আসে এবং ম্যাকুলার ক্ষয়, ছানি এবং গ্লুকোমা (চোখের প্রেশার বেড়ে যায়)। এসব রোগের চিকিৎসা তুলসীর রস দ্বারা প্রাচীন কাল হতে ব্যবহার হয়ে আসছে।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে

যাদের মুখে দুর্গন্ধ রয়েছে তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাত্রিমে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভীজানো তুলসী বীজ অথবা কয়েকটি পরিষ্কার তুলসী পাতা মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেলে মুখের ভিতরে জন্ম নেওয়া ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। যার ফলে মুখ হতে বাজে দুর্গন্ধ বেরয় না।

মাথা ব্যাথা কমায়

হঠাৎ করে মাথা ব্যাথা অনুভব করলে প্রথমে গামলা বা কোন বড় পাত্রে গরম ফুটানো পানিতে কিছু তুলসী পাতা ভালোভাবে ব্লেন্ড করে ফুটন্ত পানিতে মিশিয়ে সেই পানির উপরে মাথা রেখে তার উপরে তোয়ালে বা মোটা কোন কাপড় দিয়ে ঢেকে কিছু সময় পানির ভাপ নিলে দেখবেন মাথার যন্ত্রণা নিমেষেই কমে যাবে। তুলসি পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মাথা ব্যাথা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

লেখকের মন্তব্য - তুলসী বীজের উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি হয়তো তুলসী বীজের উপকারিতা, তুলসী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।

প্রতিদিন নিত্যনতুন ও তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখুন। আপনার কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আয়াত ওয়ার্ল্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url